ভারী বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট, ধোবাউড়া ও ফুলপুর উপজেলার বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটেছে। তবে কিছু এলাকায় উন্নতি হয়েছে। এসব এলাকার মানুষ খাবারসহ নানা সংকটে রয়েছেন।
বুধবার (৯ অক্টোবর) সকালে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন জেলা ত্রাণ ও দুর্যোগ পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. সানোয়ার হোসেন। তিনি জানান, উপজেলার প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে বর্তমানে নারী-শিশুসহ দুই হাজার মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন। তিন উপজেলায় ৬৩ মেট্রিক টন চাল ও নগদ ৭ লাখ টাকা সহায়তা দেওয়া হয়েছে। দুর্গতদের মাঝে ত্রাণবিতরণ কার্যক্রম চলছে। এ ছাড়া রান্না করা খাবারও দেওয়া হচ্ছে বন্যাদুর্গতদের।
স্থানীয় রফিকুল ইসলাম জানান, ধোবাউড়ায় বন্যাদুর্গতদের মাঝে শুকনো খাবার ও সুপেয় পানির চরম সংকট দেখা দিয়েছে। তবে কিছু এলাকায় খাবারের ব্যবস্থা করছেন প্রশাসন। এ ছাড়াও নেতাই নদীর আশপাশের এলাকায় কমপক্ষে অর্ধশত ঘরবাড়ি বিলীন হয়ে গেছে। পানিবন্দি অনেকে বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নিচ্ছেন। উজানের পানি নেমে প্লাবিত হচ্ছে নিম্নাঞ্চল। চার দিনের টানা দুর্ভোগে দিশেহারা মানুষ।
উপজেলা সদর থেকে কলসিন্দুর পাকা রাস্তা, ঘোষগাঁও ধোবাউড়া পাকা রাস্তা, ঘোষগাঁও বালিগাঁও পাকা রাস্তা, মুন্সিরহাট বাজার থেকে শালকোনা পাকা রাস্তা বন্যার পানিতে তলিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
ধোবাউড়া সদর উপজেলার তারাকান্দি গ্রামের কুলসুম আক্তার বলেন, ‘৫ দিন ধরে পানিবন্দি অবস্থায় আছি। বাড়ির উঠান ও চারপাশে হাঁটুপানির কারণে রান্নাও করা যাচ্ছে না। হাঁস-মুরগিগুলো মরে গেছে। কেউ একটু সহযোগিতাও করেনি।’
ফুলপুর উপজেলার ছনধরা, রামভদ্রপুর, সিংহেশ্বর, ফুলপুর ইউনিয়নের অধিকাংশ ও অন্যান্য ইউনিয়নের ২৫টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এর মধ্যে নতুন করে প্লাবিত হয়েছে ১০টি গ্রাম। এসব এলাকার আমন ধান ও সবজিক্ষেত তলিয়ে গেছে। ভেসে গেছে মাছের খামার। সিংহেশ্বর গ্রামের রুহুল বলেন, ‘গত রবিবার বিকালে আমাদের এলাকায় পানি প্রবেশ করায় দুর্ভোগ বাড়ে। আমন ধান তলিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি পুকুরের মাছ পানিতে ভেসে গেছে। কৃষকের ঘুরে দাঁড়ানোর কোনও পথ নেই।’
এদিকে হালুয়াঘাটের প্রায় সব ইউনিয়ন প্লাবিত হয়ে পানি নামতে শুরু করেছে। পানি নামার কারণে নতুন করে আরও ১০ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। তলিয়ে গেছে কয়েক হাজার হেক্টর জমির ধান, সবজিক্ষেত। ভেসে গেছে পুকুরের মাছ। পানিবন্দি হয়ে আছেন ১০ হাজার মানুষ। ঘরের মধ্যে পানি ঢোকার কারণে রান্নার কাজও ব্যাহত হচ্ছে। অনাহারে-অর্ধাহারে দিনাতিপাত করছেন মানুষজন।
আমতৈল গ্রামের সুরুজ বলেন, ‘গত শুক্রবারের টানা বৃষ্টিতে আমাদের বাড়িঘরে পানি প্রবেশ করে। কদিন ধরে বাচ্চাকাচ্চা নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছি।’
ধোবাউড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নিশাত শারমিন জানান, নতুন করে উপজেলার দুটি ইউনিয়নের ২৬টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। তবে উজানের পানি কিছুটা কমছে। আশা করা যাচ্ছে, দুই-একদিনের মধ্যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে।
হালুয়াঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এরশাদুল আহমেদ বলেন, ‘উজানে প্লাবিত হওয়া গ্রামের পানি নামতে শুরু করেছে। উপজেলার নড়াইল, কৈচাপুর, ধুরাইল এবং আমতৈল ইউনিয়ন দিয়ে পানি ফুলপুর হয়ে ব্রহ্মপুত্র নদে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে নতুন কয়েকটি গ্রাম প্লাবিত হলেও সার্বিক পরিস্থিতি ভালো।’
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের আবহাওয়া অধিদফতরের ইনচার্জ মো. আনোয়ার হোসেন জানান, আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ময়মনসিংহ অঞ্চলে ভারী বৃষ্টিপাতের কোনও সম্ভাবনা নেই। তবে কিছু কিছু এলাকায় হালকা বৃষ্টি হতে পারে।