X
বুধবার, ১৫ মে ২০২৪
১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

সরকারের সহায়তায় বঙ্গবাজারেই ফিরতে চান ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা

কবির হোসেন
০৫ এপ্রিল ২০২৩, ১৬:৪৩আপডেট : ০৫ এপ্রিল ২০২৩, ১৭:১৭

ঈদ, পহেলা বৈশাখসহ জাতীয় যেকোনও উৎসবকে ঘিরে আগেভাগেই দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বঙ্গবাজারের পাইকারি ব্যবসায়ীদের কাছে ভিড় জমান খুচরা বিক্রেতারা। গত কিছুদিন ধরে তাই বিকিকিনি চলছিল পুরোদমে। এরইমধ্যে মঙ্গলবার (৪ এপ্রিল) ভোরে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের শিকার হলো বঙ্গবাজার। ভরা মৌসুমে আগুনে সব হারিয়ে পথে বসে গেছেন হাজার হাজার ব্যবসায়ী।

উৎসবের এই মৌসুমে অনেকে ধারদেনা করেও ব্যবসায় বিনিয়োগ করেছিলেন। কিন্তু আগুনে এক নিমিষে সব শেষ। রাজ্যের দুশ্চিন্তা, উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা আর হতাশা চোখে নিয়ে পুড়ে ছাই হয়ে যাওয়া মার্কেটের সামনে বসে আছেন ব্যবসায়ীরা।

পোড়া মালামালের ভেতরে অক্ষত কিছু আছে কিনা খুঁজে দেখছেন ব্যবসায়ী

বুধবার (৫ এপ্রিল) সকালে বঙ্গবাজারে গিয়ে দেখা যায়, আগুনের লেলিহান শিখা থেকে কোনও মালামাল বেঁচে গেলো কিনা তা খুঁজে বের করার চেষ্টা করছেন অনেকে। ছাইয়ের স্তূপ ঘাঁটছেন তারা। যেখানে আগুনে সব মাল পুড়ে যায়নি, সেখান থেকে ভালো পণ্যগুলো বেছে বের করছেন ব্যবসায়ীরা। পর্যাপ্ত জায়গা না থাকায় রাস্তার পাশেই রাখতে হচ্ছে এসব মালামাল। এগুলো নিয়ে অনেককে বেকায়দায়ও পড়তেও দেখা গেছে। মালগুলো এখন কোথায় নেবেন, কী করবেন, বিক্রি হবে কিনা এমন নানা প্রশ্ন উঁকি দিচ্ছে তাদের মাথায়।

আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে যাওয়া বঙ্গবাজার

ফায়ার সার্ভিসের তথ্যমতে, আগুনের সূত্রপাত হয়েছিল আদর্শ মার্কেটে। তবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন কাঠের মার্কেটের ব্যবসায়ীরা। সেখানকার পুড়ে যাওয়া দোকানের স্মৃতিচিহ্ন বলতে শুধু কয়লা আর ছাই।। পুড়ে কয়লা হয়ে মাটির সঙ্গে মিশে গেছে সব।

এনেক্সকো মার্কেটের চার তলার রকি স্টলের মালিক গোলাম মুস্তফা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, আমার ১০ লাখ টাকার মাল বেঁচে গেছে। এখনও বের করা শেষ হয়নি। বের করে রাস্তার পাশেই রাখছি। বস্তায় পানি ঢুকছে, মালামাল কতটুকু ভালো আছে বস্তা খুলে পরে বোঝা যাবে। এতোগুলো মালামাল এখন কোথায় রাখবো? বিভিন্ন জেলা থেকে যে ব্যবসায়ীরা আসতো তারা এখন আসবে না। এখন আবার এই মার্কেটে ফিরে আসতে পারবো কি না জানি না।

ঈদের আগে যেখানে ব্যবসা হচ্ছিলো জমজমাট, সেখানে চোখের নিমিষে এমন দুর্যোগ নেমে আসবে এটা কেউ দুঃস্বপ্নেও ভাবেননি

দুই ভাই তোয়া ফারুকী ও ইমন ২০০৪ সালে লক্ষ্মীপুর জেলার রামগঞ্জ থেকে রাজধানীর বঙ্গবাজার এসেছিলেন সংসারের হাল ধরতে।  প্রথমে দুই ভাই বঙ্গবাজারে কাঠের মার্কেটে দোকানে কর্মচারী হিসেবে কাজ শুরু করেন। পরে ২০১৫ সালে ‘পলক কালেকশন’ নামে ছোট একটি দোকান নিয়ে নিজেরাই ব্যবসা শুরু করেন। তারা বিক্রি করতেন মেয়েদের ওয়ান পিস কাপড়। ঈদকে সামনে রেখে স্বজনদের কাছ থেক ১৫ লাখ টাকা ধার করে একটু বেশি করে মাল তুলছিলেন এবার। আগুনে সব হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায়  সময় পার করছেন তারা।

আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে যাওয়া বঙ্গবাজারে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের ভিড়

দুই ভাইয়ের একজন ইমন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে দোকান মালিককে এক বছরের জন্য আট লাখ টাকা ভাড়া দিয়েছি। ঈদের জন্য ১৫ লাখ টাকার নতুন কাপড় তুলেছিলাম। আজ আমার সব কিছু পুড়ে মাটির সঙ্গে মিশে গেছে। দোকানের চাবিটি শুধু আমার হাতে আছে। এছাড়া সব আমার শেষ। কোনও সহায়তা পাবো কিনা এ বিষয়ে এখনও কোনও আশ্বাস আমরা পাইনি। করোনার সময় থেকে আমরা ঋণগ্রস্ত। আমাদের জীবন শেষ। আমাদের সামনে স্বপ্নের বঙ্গবাজার পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। চাবিটা ছাড়া আর কিছু নাই আমার কাছে।

ইমন উল্লেখ করে আরও বলেন, মা-বা স্বজনদের নিয়ে সুন্দরভাবে ঈদ পালনের ইচ্ছে ছিল। সে ইচ্ছে আর পূরণ হলো না। আমাদের এখন একটি আবেদন, আমরা আবার এ জায়গায়ই ব্যবসা শুরু করতে চাই।

যেসব গোডাউন ও দোকান পুরোপুরি ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি, সেখান থেকে মালামাল সরিয়ে নিচ্ছেন অনেকে

এনেক্সকো টাওয়ারের আরেকজন ব্যবসায়ী করিম খান। বেঁচে যাওয়া মাল ফিরে পেতে পাগলপ্রায় দশা তার। ওপর থেকে মাল নামাতে হাঁপিয়ে উঠচ্ছেন বার বার। তিনি বলেন, আমার দোকান পাঁচ তলায়। ৫০ লাখ টাকার মাল ছিল আমার দোকানে। সবই বাচ্চাদের পোশাক। অর্ধেকের বেশি নষ্ট হয়ে গেছে। এখন যেটুকু পারি নামানোর চেষ্টা করছি। আমার আত্মীয়স্বজনের পাঁচটি দোকান পুড়েছে। কম হলেও তাদের ৫০ কোটি টাকার মালামাল নষ্ট হয়েছে। এখন আমাদের দাবি একটাই। নতুন করে ব্যবসায় ফিরতে চাই। এ জন্য সরকারের কাছে সহযোগিতা চাই।

অগ্নিকাণ্ডের পর বঙ্গবাজার এখন ধ্বংসস্তূপ

কাঠের মার্কেটের ‘মামুনা গার্মেন্টসের’ মালিক মো. সাদ্দাম হোসেন, তিন মাস আগে ভাইবোন ও স্বজনদের কাছে ধার করে ব্যবসা শুরু করেছিলাম। আগুন লাগার দুই দিন আগেও মাকে ফোন করে বলেছি, ঈদের পর কিছু দেনা পরিশোধ করে দেবো। ওই দেনা পরিশোধ করার পথ আজ বন্ধ হয়ে গেছে।

দোকানের বাক্সে থাকা ৫০ হাজার টাকার পোড়া ব্যান্ডিল আর পোড়া কাগজপত্র নিয়ে রাস্তা রাস্তায় হাঁটছিলেন আর কাঁদছিলেন সাদ্দাম। বাংলা ট্রিবিউনকে তিনি বলেন, আমার ব্যবসা পোড়েনি, আমার জীবনও পুড়ে গেছে। আমার মা অসুস্থ। মাকে বলছিলাম চিন্তা করো না, আমি উঠে দাড়াঁচ্ছি।

একদিন পরও আগুন জ্বলতে দেখা গেছে বঙ্গবাজারের ধ্বংসস্তূপের কোনও কোনও জায়গায়

বঙ্গবাজার কাঠের মার্কেটের মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক  জহিরুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, প্রধানমন্ত্রী আমাদের কাছে লোক পাঠায়েছেন। তারা এসে আমাদের কাছে ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা চেয়েছেন। আমরা এ বিষয়ে আজ একটি বৈঠক করবো। এরপর আমরা তাদের তালিকা দেবো।

সরকার থেকে যে ক্ষতিপূরণ বা পুনর্বাসনের কথা বলা হচ্ছে সেই সহায়তা কি শুধু মার্কেট মালিকদের দেওয়া হবে, না কি ব্যবসায়ীরাও পাবেন– এমন প্রশ্নের উত্তরে সমিতির সাধারণ সম্পাদক বলেন, মালিক-ব্যবসায়ী যারাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন সবাইর তালিকা আমরা দেবো। বাকিটা সরকারের সিদ্ধান্ত।

ছবি: নাসিরুল ইসলাম।

/এফএস/
টাইমলাইন: বঙ্গবাজারে আগুন
০৮ এপ্রিল ২০২৩, ০০:০৫
০৫ এপ্রিল ২০২৩, ২৩:০০
০৫ এপ্রিল ২০২৩, ১৭:১৯
০৫ এপ্রিল ২০২৩, ১৬:৪৩
সরকারের সহায়তায় বঙ্গবাজারেই ফিরতে চান ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা
সম্পর্কিত
রাজধানীর ফিটনেসবিহীন গাড়ি স্ক্র্যাপ করার সিদ্ধান্ত
এডিসের বিস্তার নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছি: তাপস
ঢাকায় চলবে না ব্যাটারিচালিত রিকশা
সর্বশেষ খবর
উদ্ভাবনে কৃষকরা উপকৃত হবেন, ফসলের উৎপাদন বাড়বে: কৃষিমন্ত্রী
উদ্ভাবনে কৃষকরা উপকৃত হবেন, ফসলের উৎপাদন বাড়বে: কৃষিমন্ত্রী
‘জিম্মিকালে মৃত্যুর দুয়ারে বসে ৩৩ দিনরাত কাটাতে হয়েছে’
ঘরে ফেরা এমভি আব্দুল্লাহর নাবিক‘জিম্মিকালে মৃত্যুর দুয়ারে বসে ৩৩ দিনরাত কাটাতে হয়েছে’
মোটর‍যানের গতিসীমা নির্দেশিকা সড়কে দুর্ঘটনা কমাবে
মোটর‍যানের গতিসীমা নির্দেশিকা সড়কে দুর্ঘটনা কমাবে
কার্যকর জনসংখ্যা ব্যবস্থাপনার ওপর জোর প্রধানমন্ত্রীর
কার্যকর জনসংখ্যা ব্যবস্থাপনার ওপর জোর প্রধানমন্ত্রীর
সর্বাধিক পঠিত
সোনার অলংকার কেনাবেচায় নতুন হার নির্ধারণ
সোনার অলংকার কেনাবেচায় নতুন হার নির্ধারণ
নিজের বাসায় পরীক্ষা নিয়েছিলেন কর কর্মকর্তা!
নিয়োগ বাণিজ্য করে কোটি টাকা আত্মসাৎনিজের বাসায় পরীক্ষা নিয়েছিলেন কর কর্মকর্তা!
পেঁয়াজ আমদানি শুরু
পেঁয়াজ আমদানি শুরু
একীভূত হতে পারে কেউ পাস না করা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান
একীভূত হতে পারে কেউ পাস না করা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান
যে কারণে রাজশাহীর তিন প্রতিষ্ঠানের শতভাগ শিক্ষার্থী ফেল
যে কারণে রাজশাহীর তিন প্রতিষ্ঠানের শতভাগ শিক্ষার্থী ফেল