X
বুধবার, ১৫ মে ২০২৪
১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
বঙ্গবাজার আগুন

চাপে নিউমার্কেট ও গুলিস্তানের ব্যবসায়ীরা, খুঁজছেন বিকল্প মার্কেট

কবির হোসেন ও আব্দুল হামিদ
১৬ এপ্রিল ২০২৩, ২২:০১আপডেট : ১৬ এপ্রিল ২০২৩, ২২:০১

রাজধানীর নিউ মার্কেটের বিভিন্ন দোকানের পাশাপাশি ফুটপাতের ব্যবসায়ীদের প্রায় সবাই মালামালের জন্য বঙ্গবাজারের ওপর নির্ভরশীল। সম্প্রতি বঙ্গবাজারে অগ্নিকাণ্ডে ওই এলাকার কয়েকটি মার্কেটের হাজার হাজার দোকান পুড়ে ছাই হয়েছে। আগুনে সব হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছেন হাজারো ব্যবসায়ী। ফলে বর্তমানে বঙ্গবাজারে পাইকারি মালামাল বিকিকিনি বন্ধ রয়েছে। এ কারণে ঈদের এই মৌসুমে রাজধানীর নিউমার্কেটের অনেক ব্যবসায়ী বিকল্প মার্কেট খোঁজার চেষ্টা করছেন। ফলে আগের চেয়ে অর্থ ও সময় দুইটাই বেশি ব্যয় হচ্ছে বলে জানিয়েছেন এই ব্যবসায়ীরা।

ঢাকা কলেজের বিপরীত পাশে গ্লোব শপিং মলের সামনে ফুটপাতে চৌকি বসিয়ে শার্ট, পাঞ্জাবি-পায়জামা বিক্রি করেন আমির হামজা। বঙ্গবাজারের ‘হুজাইফা গার্মেন্টস’ নামে একটি দোকান থেকে গত পাঁচ বছর ধরে পাইকারি মাল কিনে করে ফুটপাতে বিক্রি করতেন তিনি। অগ্নিকাণ্ডে ‘হুজাইফা গার্মেন্টস’ সব পুড়ে যাওয়ায় তাকেও বিকল্প মার্কেট খুঁজতে হচ্ছে।

আমির হামজা বলেন, অগ্নিকাণ্ডের সময় দুই দিন মাল আনা-নেওয়া বন্ধ ছিল। বঙ্গবাজারে ‘হুজাইফা গার্মেন্টস’ নামে দোকানটি পুড়লেও এর মালিকের গোডানের মাল অক্ষত রয়েছে। ওখান থেকে আমাদের মাল দিচ্ছে। তবে আগের মতো মাল পাচ্ছি না, সেটা সীমিত। এছাড়া বিকল্প সোর্সও থেকেও মালামাল নিয়েছি। এবার এমনিতে মালের দাম বেশি। নিউ মার্কেটের বেশিরভাগ দোকানই বঙ্গবাজার থেকে মাল সংগ্রহ করে। তাদেরকে আগুনে সব শেষ করে দিয়েছে। আগের মতো কীভাবে মাল দেবে।'

বঙ্গবাজারে আগুন (ছবি: ফোকাস বাংলা)

ওমর ফারুক গত দুই বছর ধরে নিউ মার্কেটের মেঘনা মডেল সার্ভিসের সেন্টারের সামনের ফুটপাতে বাচ্চাদের বিভিন্ন কাপড় বিক্রি করে আসছেন। বঙ্গবাজারে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় তার মাল সরবরাহ কমে গেছে। তিনি বঙ্গবাজারের কয়েকটি দোকান থেকে বাচ্চাদের কাপড় পাইকারি হিসেবে কিনতেন।

ওমর ফারুক বলেন, 'এবার এমনিতে ক্রেতার সংখ্যা মার্কেটে কম। এর মধ্যে চাহিদা অনুযায়ী ক্রেতাদের মাল দিতে পারছি না। যাদের কাছ থেকে মাল নিতাম তারা এখন নিজেরাই অসুবিধায় আছে। এবার ঈদের বাজারে শেষের দিকে মার্কেটে মালের সংকট দেখা দিতে পারে।'

নিউ মার্কেটের গ্লোব শপিং মলে নিউ জুবায়ের ফ্যাশন নামে একটি দোকান আছে ইউসুফ মিয়ার। গত ৯ বছর ধরে ওই দোকানে ছেলেদের প্যান্ট, শার্ট ও গেঞ্জি বিক্রি করে আসছে সে। এবার পহেলা বৈশাখ এবং ঈদ পাশাপাশি সময়ে উদযাপন হলেও তার দোকানে তেমন বেচাকেনা নেই।

ইউসুফ মিয়ার মতে, গার্মেন্টস কাপড়ের জন্য সেরা বঙ্গবাজার। অগ্নিকাণ্ডে তাদের সব পুড়ে যাওয়ায় গার্মেন্টস কাপড়ের সংকটে রয়েছে বর্তমানে।

ইউসুফ মিয়া বলেন, 'বঙ্গবাজারে অগ্নিকাণ্ডে সব শেষ হয়ে গেছে। এখন আমাদের গার্মেন্টসের কাপড়ের বদলে লোকাল মাল, মাস্টার কপি বিক্রি করতে হচ্ছে। কাস্টমারদের নানান কথা বলে এসব বিক্রি করছি। বঙ্গবাজারের বাজারের বদলে মিরপুর, সাভার এর বিভিন্ন স্থান মাল সংগ্রহ করতে হচ্ছে। তারপরও আমরা প্রকৃত গার্মেন্টস কাপড় পাচ্ছি না। লোকাল কাপড়কে এখন অনেকে গার্মেন্টস কাপড় বলে বিক্রি করছে। গার্মেন্টস কাপড়ের জন্য বঙ্গই সেরা।'

বঙ্গবাজারে আগুন (ছবি: নাসিরুল ইসলাম)

একই মার্কেটের বিএসবি কালেকশন দোকানের কর্মচারী সাগর বলেন, ‘বঙ্গবাজারে অগ্নিকাণ্ডের পর থেকে আমরা উত্তরার বিভিন্ন বায়িং হাউজ, কারখানা থেকে কাপড় সংগ্রহ করছি। বঙ্গবাজার থেকে যে প্যান্ট বা শার্ট ৩৫০ টাকায় নিয়েছি এখন সেটা ৪৫০ থেকে ৫০০ মধ্যে নিতে হচ্ছে। মালের দাম বাড়তি। এছাড়া চাহিদা মতো বাজারে মালও পাচ্ছি না।

নূরহাজান মার্কেটের নব নন্দিত শো রুমের ব্যবসায়ী মো. আনোয়ার বলেন, 'বঙ্গবাজারে আগুনের ঘটনায় শুধু নিউ মার্কেটে না, সারা বাংলাদেশের কাপড়ের ব্যবসায় প্রভাব পড়েছে। যে মালগুলো বঙ্গবাজার থেকে নিয়ে আসতাম সে মালগুলো এখন মার্কেটে কম। যেগুলো দেখছেন এগুলো তাদের গোডাউনে থাকা অবশিষ্ট মাল, এখন মার্কেটে ব্যবসায়ীদের দিচ্ছে। এছাড়া মাল সংকটও আছে।'

তাদের মতো নিউ মার্কেটের আরও কয়েকজন ব্যবসায়ী পারভেজ, রুবেল, তানভীরও একই মতামত ব্যক্ত করেন।

‘বঙ্গবাজারের বিকল্প নেই’

বঙ্গ মার্কেটে গার্মেন্টস আইটেমের চারটি দোকান ছিল মো. শাহ আলমের। তার সব কয়টি দোকানই আগুনে পুড়েছে। তার মতে, বঙ্গবাজারের তুলনা অন্য কোনও মার্কেটের সঙ্গে করলে চলবে না, বঙ্গ বঙ্গই। বঙ্গতে যে মাল পাওয়া যায়, তা অন্য কোথাও পাওয়া যায় না। আন্তর্জাতিক মানের ক্রেতারা এখানে আসেন। গার্মেন্টসের জন্য রাজধানীতে শ্রেষ্ঠ মার্কেট হলো এই বঙ্গবাজার। সুতরাং আমরা চাইলেও আমাদের মালামাল বঙ্গ ছাড়া অন্য কোথাও বিক্রি করতে পারবো না।'

গত ৭ এপ্রিল এই প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে ব্যবসায়ী আতাউর রহমান বলেন, বঙ্গবাজারের কোনও বিকল্প নাই। এই মাল অন্য কোথাও নেই। আমরা সব মাল পাইকারি বিক্রি করি। যে কোনও স্থানে আমরা চাইলেও গিয়ে বসতে পারবো না। মাল ঘরে ফেলে রাখবো তবুও অন্য কোথাও যাবো না। বসলে বঙ্গতেই বসবো।'

বঙ্গবাজারে অস্থায়ীভাবে চৌকি বিছিয়ে পণ্য বিক্রির সুযোগ পেয়েছেন ব্যবসায়ীরা (ছবি: ফোকাস বাংলা)

এ বিষয়ে মহানগর মার্কেট নিচ তলার সুমাইয়া গার্মেন্টস দোকানের ব্যবসায়ী শাওন মাহাম্মদ বলেন ভিন্ন কথা। বঙ্গবাজার ছাড়াও তিনিসহ আরও কয়েকজন বিকল্প মার্কেট খুঁজছেন। শাওন মাহাম্মদ বলেন, আমরা ৩০০ জন একসঙ্গে মুভ করার চেষ্টা করতেছি। ইতোমধ্যে গুলিস্থান ট্রেড সেন্টারের পাঁচ তলায় যেতে আলোচনা করেছি। এছাড়া বঙ্গবাজারেই পাশেই রোজ মেরিনেস মার্কেটের দ্বিতীয় তলায় ব্যবসা শুরু করতে পারি। মার্কেট মালিক বলেছেন পজিশন খালি করে দেবে।

বঙ্গবাজারের আরেক ব্যবসায়ী আরিফুর রহমান বলেন, বঙ্গবাজারকে ঘিরেই আশাপাশের মার্কেটে ক্রেতারা যায়। বঙ্গ মার্কেট ছাড়া ওদের বেচাকেনা কমে যাবে। কারণ বঙ্গবাজারে কাস্টমার যে জিনিসপত্র পায় গুলিস্থান বা আশেপাশে এগুলো কোথাও পাবে না। তাই বঙ্গবাজার নেই বলে অন্য কোথাও ভিড় হবে বিষয়টা এইরকম না।

বঙ্গবাজারের অগ্নিকাণ্ডের প্রভাব গুলিস্তানে

গুলিস্তান ট্রেড সেন্টারের একাধিক ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে বঙ্গবাজারে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার পরে তাদেরও কেনাবেচা কমে গেছে। এখন ঢাকার বাইরে থেকে পাইকারী ব্যবসায়ীরা কম আসছেন। গত ১১ এপ্রিল সরেজমিনে গিয়ে এ তথ্য পাওয়া যায়।

গুলিস্তান ট্রেড সেন্টারের রাইসা গার্মেন্টেসের ম্যানেজার রুবেল বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বঙ্গবাজারের আগুনের পরে আমাদের বেচাকেনা বাড়েনি। আগের মতোই আছে। তবে অন্যবারের চেয়ে এবার তুলনামূলকভাবে কম বেচাকেনা হচ্ছে। ঢাকা বাইরে থেকে তেমন পাইকারি ব্যবসায়ীরা আসছে না।’

ওই মার্কেটের আলিফ গার্মেন্টেসের ক্যাশিয়ার আব্দুর রহমান বলেন, ‘বঙ্গবাজারে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় আমাদের মার্কেটের বেচাকেনায় প্রভাব পড়েছে। অন্যবারের তুলনায় এবার কোনও কেনাবেচা নেই। গুলিস্তান ট্রেড সেন্টার পাঁচ তলা মার্কেটের নিচ তলা ছাড়া আর সব ফ্লোরে পাইকারি বেচাকেনা হয়। অন্যবার ঈদের এই সময়ে মার্কেটে হাঁটাচলা করা যায় না, কিন্তু এবার কোনও লোকজন নাই। ট্রেড সেন্টার মার্কেট তেমন পরিচিত না হলেও বঙ্গবাজার মার্কেটে আসলে ব্যবসায়ীরা এখানে আসতো। কিন্তু এবার তারাও আসছে না।’

/এসটিএস/আরআইজে/
টাইমলাইন: বঙ্গবাজারে আগুন
১৬ এপ্রিল ২০২৩, ২২:০১
চাপে নিউমার্কেট ও গুলিস্তানের ব্যবসায়ীরা, খুঁজছেন বিকল্প মার্কেট
০৮ এপ্রিল ২০২৩, ০০:০৫
০৫ এপ্রিল ২০২৩, ২৩:০০
০৫ এপ্রিল ২০২৩, ১৭:১৯
সম্পর্কিত
রাজধানীর ফিটনেসবিহীন গাড়ি স্ক্র্যাপ করার সিদ্ধান্ত
এডিসের বিস্তার নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছি: তাপস
ঢাকায় চলবে না ব্যাটারিচালিত রিকশা
সর্বশেষ খবর
বিশ্বাসের ঘাটতি হটিয়ে সম্পর্ক দৃঢ় করতে চায় যুক্তরাষ্ট্র
বিশ্বাসের ঘাটতি হটিয়ে সম্পর্ক দৃঢ় করতে চায় যুক্তরাষ্ট্র
একসঙ্গে ৪ সন্তানের জন্ম দিলেন এক নারী
একসঙ্গে ৪ সন্তানের জন্ম দিলেন এক নারী
জরুরি সেবার যানবাহন ছাড়া হর্ন বাজানো নিষেধ: ওবায়দুল কাদের
জরুরি সেবার যানবাহন ছাড়া হর্ন বাজানো নিষেধ: ওবায়দুল কাদের
উদ্ভাবনে কৃষকরা উপকৃত হবেন, ফসলের উৎপাদন বাড়বে: কৃষিমন্ত্রী
উদ্ভাবনে কৃষকরা উপকৃত হবেন, ফসলের উৎপাদন বাড়বে: কৃষিমন্ত্রী
সর্বাধিক পঠিত
সোনার অলংকার কেনাবেচায় নতুন হার নির্ধারণ
সোনার অলংকার কেনাবেচায় নতুন হার নির্ধারণ
নিজের বাসায় পরীক্ষা নিয়েছিলেন কর কর্মকর্তা!
নিয়োগ বাণিজ্য করে কোটি টাকা আত্মসাৎনিজের বাসায় পরীক্ষা নিয়েছিলেন কর কর্মকর্তা!
পেঁয়াজ আমদানি শুরু
পেঁয়াজ আমদানি শুরু
একীভূত হতে পারে কেউ পাস না করা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান
একীভূত হতে পারে কেউ পাস না করা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান
যে কারণে রাজশাহীর তিন প্রতিষ্ঠানের শতভাগ শিক্ষার্থী ফেল
যে কারণে রাজশাহীর তিন প্রতিষ্ঠানের শতভাগ শিক্ষার্থী ফেল