সরকারি ৩৮ ধরনের সেবা নিতে গেলে ন্যূনতম ২ হাজার টাকা করের বিধানটি প্রস্তাবিত বাজেট থেকে বাদ দেওয়ার সুপারিশ করেছে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। সংস্থাটি বলছে, একদিকে মূল্যস্ফীতির চাপ থেকে সাধারণ মানুষকে স্বস্তি দিতে করমুক্ত আয়সীমা বাড়ানো হয়েছে, অন্যদিকে সেবার বিপরীতে ন্যূনতম কর ২ হাজার টাকা বাধ্যবাধকতা করা হয়েছে।
শুক্রবার (২ জুন) রাজধানীর গুলশানের একটি হোটেলে প্রস্তাবিত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট পর্যালোচনা তুলে ধরে সিপিডি। এ উপলক্ষে আয়োজিত মিডিয়া ব্রিফিংয়ে বাজেটের বিভিন্ন দিক নিয়ে পর্যালোচনা তুলে ধরেন সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন। ব্রিফিং শেষে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন সিপিডির বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান, গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম, জ্যেষ্ঠ গবেষণা ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘যাদের করযোগ্য আয় নেই, তারাও এই করের আওতায় পড়বেন। এ কারণে উদ্যোগটি নৈতিকতার দিক থেকে ঠিক নয়, আবার যৌক্তিকও নয়।’
সিপিডি বলেছে, ‘বর্তমান পরিস্থিতিতে অর্থনীতি ও মানুষের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ও বাস্তবতা হচ্ছে উচ্চ মূল্যস্ফীতির চাপ। এ চাপ মোকাবিলায় বাজেটে কার্যকর তেমন কোনও পদক্ষেপই নেই। উল্টো অর্থমন্ত্রী বলেছেন— আগামী অর্থবছরে মূল্যস্ফীতি ৬ শতাংশের মধ্যে রাখা হবে। এ ছাড়া বাজেটে এমন কিছু রাজস্ব ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে, যাতে কিছু পণ্যমূল্য বাড়বে, যার প্রভাব সরাসরি মানুষের, তথা ভোক্তার ওপর পড়বে।’
বাজেটে সরকার মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে সাড়ে ৭ শতাংশ। সিপিডি বলছে, বাজেটে যেসব প্রক্ষেপণ করা হয়েছে, তার বেশির ভাগই বাস্তবভিত্তিক নয়। তাই এসব লক্ষ্য অর্জন শেষ পর্যন্ত হবে না।
সিপিডির বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান উল্লেখ করেন, ‘আগামী ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের বাজেটের অনুমতিগুলো দুর্বল। তাই প্রস্তাবিত বাজেট বাস্তবায়নে হোঁচট খেতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘চলমান অর্থনীতিতে যে স্থিতিশীলতার সংকট রয়েছে, সেটা ঠিক করা জরুরি। কিন্তু এবারের বাজেট যেসব অনুমিত ধারণার ভিত্তিতে করা হয়েছে, সেই জায়গায় দুর্বলতা রয়েছে। পরবর্তী সময়ে এসব দুর্বল জায়গার প্রতিটিতে বাজেট পরিকল্পনা হোঁচট খাবে। এই বাজেট বাস্তবায়ন করতে গিয়ে আমাদের সামনে অনেক চ্যালেঞ্জে পড়তে হবে।’
ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়া প্রসঙ্গে সিপিডির এই বিশেষ ফেলো বলেন, ‘আমরা অনেক দিন ধরে বলছি একটি ব্যাংকিং কমিশন করার জন্য। ২০০৯ সালে যখন এই সরকার ক্ষমতায় আসে তখন ঋণ খেলাপি ছিল ২১ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু আজকে ঋণ খেলাপি ১ লাখ ৩১ হাজার কোটি টাকা। যেন এটা নিয়ে কি কারও কোনও দুশ্চিন্তা নেই? এই ঋণ কারা নিচ্ছেন, আর কারা দিচ্ছেন?’
প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবার (১ জুন) জাতীয় সংসদে ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেট পেশ করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।