X
বুধবার, ১৮ জুন ২০২৫
৪ আষাঢ় ১৪৩২

বাজেটে দেশীয় শিল্পকে টেকসই করার কোনও দিকনির্দেশনা নেই: বাংলাদেশ চেম্বার

বাংলা ট্রিবিউন রিপোর্ট
০৩ জুন ২০২৩, ২০:১৭আপডেট : ০৩ জুন ২০২৩, ২১:১৭

বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজ (বিসিআই) মনে করে— প্রস্তাবিত বাজেটে দেশীয় শিল্প সক্ষমতা ও টেকসই করার কোনও দিকনির্দেশনা নেই। বিশেষ করে মাইক্রো, কুটির ও স্মল শিল্পের উন্নয়নে কোনও দিকনির্দেশনা নেই। বিসিআই সভাপতি আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী (পারভেজ) বলেন, ‘‘এবারের বাজেট প্রস্তাবের শিরোনাম নির্ধারণ করা হয়েছে ‘উন্নয়নের অভিযাত্রার দেড় দশক পেরিয়ে স্মার্ট বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা’। বাজেটে সরকার ৫টি ক্ষেত্রকে অগ্রাধিকার দিয়েছে, যার মধ্যে আছে মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, কৃষি ও সামগ্রিক খাদ্য নিরাপত্তা, মানবসম্পদ উন্নয়ন, অভ্যন্তরীণ বিনিয়োগ বৃদ্ধি, রফতানি বৃদ্ধি এবং রফতানি বহুমুখীকরণ, কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং গ্রামীণ উন্নয়ন।’’

নতুন অর্থবছরের (২০২৩-২৪) বাজেটের প্রতিক্রিয়ায় শনিবার (৩ জুন) বিসিআই সভাপতি এক বিবৃতিতে এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, ‘‘মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণই প্রস্তাবিত বাজেটের মূল চ্যালেঞ্জ। প্রস্তাবিত বাজেটে মূল্যস্ফীতি ৬ শতাংশের মধ্যে রাখার কথা উল্লেখ করা হয়েছে, যা এখন ৯ শতাংশের বেশি। অর্থমন্ত্রী তার বাজেট বক্তৃতায় বলেন, ‘দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণ, কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং আমদানি বিকল্প পণ্য উৎপাদনে জোর দেওয়া হবে।’ কিন্তু দেশীয় শিল্প সক্ষমতা ও টেকসই করার কোনও নির্দিষ্ট দিকনির্দেশনা নেই। বিশেষ করে মাইক্রো, কুটির ও স্মল শিল্পের উন্নয়নে কোনও দিকনির্দেশনা নেই। মাইক্রো, কুটির ও স্মল শিল্প করোনা এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে ইতোমধ্যে প্রায় ৪৫ শতাংশ ঝরে পড়েছে। রাজস্ব আয়  প্রধানত বেসরকারি খাত হতে সংগ্রহ করা হয়ে থাকে। কিন্তু বর্তমানে উচ্চমূল্যস্ফীতি, ডলার সংকট, জ্বালানি সমস্যার কারণে মানুষের ক্রয় ক্ষমতা হ্রাস পাচ্ছে। ফলে উৎপাদনশীল কারখানাগুলোর প্রবৃদ্ধি হারিয়েছে। এদিকে বেসরকারি খাতের ক্রেডিট গ্রোথ নিম্নগামী। রফতানিও মন্থর এবং রেমিট্যান্সও ওই পরিমাণে প্রবৃদ্ধি হচ্ছে না। দেশের অর্থনীতিকে টিকিয়ে রাখতে গেলে আমদানির বিকল্প শিল্প এবং কীভাবে কারখানাগুলোর প্রবৃদ্ধির সক্ষমতা ফিরিয়ে আনা যায়, সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। কিন্তু প্রস্তাবিত বাজেটে এর কোওন দিকনির্দেশনা নেই।’’  

বিসিআই সভাপতি বলেন, ‘শুধু আইএমএফ -এর শর্তের দিকে গুরুত্ব না দিয়ে দেশের অর্থনীতি কীভাবে সামনের দিকে এগিয়ে যাবে, সে দিকে গুরুত্বারোপ করতে হবে। আমাদের এখন স্থানীয় শিল্প, আমদানি বিকল্প শিল্পের সক্ষমতা ফিরিয়ে আনা এবং টেকসই করা এবং কর্মসংস্থান ধরে রাখার দিকে অধিক গুরুত্ব দিতে হবে।’

‘প্রস্তাবিত বাজেটে ব্যক্তি শ্রেণির করমুক্ত আয়ের সীমা সাড়ে ৩ লাখ করা হয়েছে, যা বিসিআই স্বাগত জানায়। তবে উচ্চমূল্যস্ফীতি ও জীবনযাত্রার ব্যয় বিবেচনায় আগামী করবছরের ব্যক্তি শ্রেণির করমুক্ত আয়ের সীমা ৫ লাখ টাকা করার প্রস্তাব করছি। এবং উচ্চমূল্যস্ফীতির এ সময়ে করযোগ্য নয়— এমন টিনধারীদের ওপর ন্যূনতম ২ হাজার টাকা আয়কর আরোপের সিদ্ধান্ত, স্বল্প আয়ের জনগোষ্ঠীর ওপর করের বোঝা তৈরি করবে। তাই এ প্রস্তাব প্রত্যাহারের আহ্বান জানাচ্ছি।’

আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী বলেন, ‘মোট আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৫ লাখ কোটি টাকা। যার মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৪ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা, যা বিগত বছরের সংশোধিত বাজেটের তুলনায় ১৬.২০ শতাংশ বেশি। অথচ গত এপ্রিল পর্যন্ত চলতি অর্থবছরে রাজস্ব আদায় হয়েছে মোট লক্ষ্যের মাত্র ৬১ শতাংশ। বিদ্যমান ডলার সংকট এবং আমদানিতে নানা ধরনের বিধিনিষেধ থাকায় এই রাজস্ব আদায় নতুন র্অবছরে চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘সরকারের আয় মূলত বেসরকারি খাত ও রাজস্ব বোর্ডের মাধ্যেমে হয়ে থাকে। বিসিআই মনে করে, বেসরকারি খাতে জ্বালানি স্বল্পতা, বিদ্যুৎ-গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি এবং নিরবচ্ছিন্ন সাপ্লাই না থাকার কারণে শিল্প কারখানাগুলো ৫০-৬০ শতাংশের বেশি উৎপাদন ক্ষমতা ধরে রাখতে পারছে না। সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের কন্ট্রাকশন পলিসির কারণে গত ১০ মাসে শিল্পগুলো মূলধনি যন্ত্রপাতি ৫৬ শতাংশ, মধ্যবর্তি কাঁচামাল ৩১.৩ শতাংশ এবং কাঁচামাল ৩১.৫ শতাংশ কম ঋণপত্র খুলেছে। এ ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা থাকা দরকার, যেন কোনও অবস্থাতেই শিল্পের কাঁচামাল, মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানি বাধাগ্রস্ত না হয় এবং সরকারকে কমমূল্যে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। তা না করলে দেশীয় শিল্প তাদের সক্ষমতা ধরে রাখতে পারবে না। উৎপাদন খরচ বেড়ে যাবে, তাতে করে মূল্যস্ফীতি কমবে না, বেকারত্বের হার বেড়ে যাবে। যার ফলে এনবিআরও তাদের কর আহরণে বাধাগ্রস্ত হতে হবে। বেসরকারি খাত এবং এনবিআরকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। এক্ষেত্রে রাজস্ব বোর্ডের প্রাকটিসেরও পরিবর্তন আনা বাঞ্ছনীয়।’

বিসিআই সভাপতি বলেন, ‘সেক্টর-ভিত্তিক থামরুলে গ্রোস প্রফিট (জিপি) ধরে শুল্কায়ন না করে কোম্পানি বিশেষে অ্যাকচুয়াল অ্যাকাউন্টিং প্রাক্টিসের ভিত্তিতে শুল্কায়ন করা উচিত। যেমন- অ্যাকচুয়াল প্রফিট অথবা অ্যাকচুয়াল লস মেনে কোম্পানি ওয়াইজ হিসেবে শুল্কায়ন করলে, যেসব কোম্পানি যারা কর দিচ্ছে না, তারা কর দিতে আগ্রহী হবে। একইসঙ্গে কর নেট বৃদ্ধির ক্ষেত্রে আমরা মনে করি— ঢাকা ও চট্টগ্রাম থেকে মোট করের ৮০ শতাংশের ওপর  সংগ্রহ হয়ে থাকে। অথচ বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রায় ৪৫ শতাংশ অন্যান্য জেলায় অবস্থিত। প্রয়োজনীয় জনবল নিয়োগ করে ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে মানুষের কাছে গেলে, কর আদায় বৃদ্ধি পাবে এবং করনেট প্রসারিত হবে। ব্যবসায়ী এবং এনবিআরকে দায়িত্ব নিয়ে দেশের এই ক্রান্তিলগ্নে এগিয়ে আসতে হবে।’

 

/জিএম/এপিএইচ/
টাইমলাইন: bajet24
০৩ জুন ২০২৩, ২০:১৭
বাজেটে দেশীয় শিল্পকে টেকসই করার কোনও দিকনির্দেশনা নেই: বাংলাদেশ চেম্বার
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
লক্ষ্মীপুর জেলা যুবদল আহ্বায়ক লিটনের পদত্যাগ
লক্ষ্মীপুর জেলা যুবদল আহ্বায়ক লিটনের পদত্যাগ
ইরান-ইসরায়েল সংঘাত নিয়ে রাশিয়ার লাভ-লোকসানের সমীকরণ
ইরান-ইসরায়েল সংঘাত নিয়ে রাশিয়ার লাভ-লোকসানের সমীকরণ
‘জুলাই-যোদ্ধা’ ভুয়া প্রমাণিত হলে দুই বছরের জেল
‘জুলাই-যোদ্ধা’ ভুয়া প্রমাণিত হলে দুই বছরের জেল
ভারতে ঢুকে পড়া কিশোরকে ফেরত দিয়েছে বিএসএফ
ভারতে ঢুকে পড়া কিশোরকে ফেরত দিয়েছে বিএসএফ
সর্বাধিক পঠিত
ইসরায়েলি হামলার পর তেহরানের হাসপাতালে ‘রক্তস্নান’
ইসরায়েলি হামলার পর তেহরানের হাসপাতালে ‘রক্তস্নান’
সিরিয়ার আকাশ দিয়ে ইরানে বোমা ফেলছে ইসরায়েল: নীরব সরকার, বাড়ছে ক্ষোভ
সিরিয়ার আকাশ দিয়ে ইরানে বোমা ফেলছে ইসরায়েল: নীরব সরকার, বাড়ছে ক্ষোভ
আরও একমাসের ছুটিতে ২ বিচারপতি
আরও একমাসের ছুটিতে ২ বিচারপতি
‘যুক্তরাজ্যে পাচারকৃত অর্থ উদ্ধারে বড় ধরনের অগ্রগতি’
‘যুক্তরাজ্যে পাচারকৃত অর্থ উদ্ধারে বড় ধরনের অগ্রগতি’
দেশে প্রথমবারের মতো চালু হচ্ছে গুগল পে: ডিজিটাল লেনদেনে নতুন যুগের সূচনা
দেশে প্রথমবারের মতো চালু হচ্ছে গুগল পে: ডিজিটাল লেনদেনে নতুন যুগের সূচনা