X
শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪
১৫ চৈত্র ১৪৩০

শিশুরা হোক সর্বোচ্চ সুবিধাভোগী

তুষার আবদুল্লাহ
২০ নভেম্বর ২০২১, ১৬:৫৫আপডেট : ২০ নভেম্বর ২০২১, ১৬:৫৫
তুষার আবদুল্লাহ এফডিসি গেট পেরিয়ে এসে বাহন দাঁড়ালো। রেলগেট পড়েছে। আভাস পাওয়া যাচ্ছে সোনারগাঁও সিগন্যালের দীর্ঘ জটের। দুটি মুখ হেসে গাড়ির জানালায় লুটোপুটি খেতে লাগলো। ওরা গাল লাগিয়ে রেখেছে জানালার কাচে। কাকলী প্রধান তাঁর ক্যামেরা দিয়ে ওদের পোট্রেট করার চেষ্টা করছেন। আমাকে বললেন, ‘দেখেছো কী সুন্দর! কেমন মায়াবী ওদের দুজনেরই মুখ’।

আমি তাকিয়ে দেখি দুজনেই সমবয়সী। ৭/৮ বছরের হবে। রাতে ভাত খাবে বলে কিছু টাকা চাচ্ছে। কাকলী ওদের সঙ্গে কথা বলছেন। আমি ওদের দিকে তাকিয়ে বলি, কেমন ফুটফুটে দুটি শিশু। হয়তো রেললাইন বা আশপাশের কোনও বস্তিতে থাকে। না হয় এদিকের কোনও ফুটপাতে ঘুমিয়ে রাত পাড়ি দেয়। এমন কত শিশুর সঙ্গেই তো প্রতিদিন দেখা হচ্ছে। আমার এবং কাকলীর সঙ্গে ঢাকার বিভিন্ন সিগন্যালে ফুল বা অন্য পণ্য বিক্রি করা শিশুদের সখ্য আছে।

কতবার বলেছি- চলো, পড়াবো। বাড়ির কাজ করানোর কোনও মতলব ছিল না। সেটাও খোলাসা করে বলেছি। আমাদের দুই একজন বন্ধুও ওদের এরকম অফার দিয়ে সাড়া পায়নি। কারণ? প্রথমত, জন্মমুহূর্তের পর থেকেই মুক্ত পরিবেশে ওদের বেড়ে ওঠা। বাবা কিংবা মায়ের কাজের সঙ্গে পথে থাকা। তাই মুক্ত পরিবেশ ছেড়ে কোনও শৃঙ্খলায় যেতে চায় না ওরা। ওদের একটি বড় অংশ পরিবারের ভরণপোষণের জোগান দেয়। আবার এই শিশুরাই ব্যবহৃত হয় মাদক, অস্ত্র কেনাবেচাসহ বিভিন্ন অপরাধে। যে দুই সতেজ মুখ আমরা দেখছি, ধীরে ধীরে তারা জড়িয়ে পড়বে কোনও না কোনও অপরাধের সঙ্গে। খুব কম অংশই যুক্ত হবে অপরাধমুক্ত রোজগারে। ওদের স্কুলে নেওয়ারও চেষ্টা হয়েছে বহুবার। চেষ্টা চলছে সরকারি বেসরকারিভাবে। কিন্তু যাদের নেওয়া যাচ্ছে সংখ্যার তুলনায় তা অতি নগণ্য।

পথে বেড়ে ওঠা এই শিশুদের সঙ্গে ঢাকা এবং সারাদেশেই যোগাযোগ আছে কারও কারও সঙ্গে। ওদের অনেকেই এখন তারুণ্যে প্রবেশ করেছে। মন খারাপ হয়, যখন দেখি ওরা ভালো নেই। অপরাধমূলক কাজ ও নেশায় জড়িয়ে গিয়ে এক প্রকার কারাগারে বসবাস ওদের। সেখান থেকে বের হতে পারছে না ওরা। যারা বের হতে পেরেছে, তারাও ফিরতে পারছে না কোনও স্বাভাবিক জীবনে। শুধু সামাজিক জীবন নয়, পারিবারিক জীবন থেকেও বিচ্ছিন্ন তারা। ভুগছে মানসিক রোগে। এখান থেকে তাদের বের করে নিয়ে আসারও কোনও উদ্যোগ নেই। আর এই সময়ে উদ্যোগ নিয়েও খুব একটা লাভ হবে মনে হয় না। কারণ, তাদের যে মনদৈহিক ক্ষয় হয়েছে তা এই সময়ে এসে আর পূরণ করার সক্ষমতা নেই আমাদের। এই শিশুদের অনেকেই কিশোর, তরুণ পর্যায়ে আত্মহননের পথ বেছে নিচ্ছে। তাদের এই অসহায়ত্ব আমাদের মনদারিদ্র্যের প্রমাণ দেয়।

আত্মহননের দুঃখবোধ এখন সমাজের সব শ্রেণিতেই ছড়িয়ে পড়েছে। মূল কারণ সমাজ ও পারিবারিক বিচ্ছিন্নতা। লেখাপড়ার চাপ। কাঙ্ক্ষিত বিষয়ে পড়তে না পারা। পড়ার সঙ্গে মিল রেখে কাজ না পাওয়া। কাজ চলে যাওয়া।

পরিবারের সদস্যদের মধ্যকার বিচ্ছিন্নতা। সাংস্কৃতিক ও সৃজনশীল কাজ থেকে শিশু, কিশোর ও তরুণদের দূরে রাখার কারণে শিশুকাল থেকেই তাদের মধ্যে বিষণ্নতা তৈরি হচ্ছে। এখন তো প্রযুক্তিনির্ভর হয়ে পড়ছে সবাই। মোবাইল, অনলাইন আসক্তি, মাদকের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ার কারণেও শিশুরা কৈশোর, তারুণ্যে যাত্রা করছে অবসাদ নিয়ে। করোনাকাল সেই অবসাদ আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।

শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকা, বন্ধু, সহপাঠীদের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হওয়া যেমন এই অবসাদের কারণ, তেমনই পরিবারে বাবা, মা এবং উপার্জনক্ষম সদস্যের কাজ হারানোর প্রভাবও পড়ছে শিশু থেকে তরুণ সবার মাঝে।

শিশুদের প্রতি আমাদের যেমন যত্নবান হওয়ার দরকার ছিল, সেটা শুধু বাংলাদেশই নয়, পৃথিবীই পারেনি। পারেনি বলেই স্কুল থেকে ঝরে পড়ার সংখ্যা কমেনি; বরং বাড়ছে। শিশু শ্রমিকের সংখ্যা ঊর্ধ্বমুখী। শিশু মৃত্যুর হার, বাল্যবিবাহ কমানো যাচ্ছে না। মুশকিল হলো, আমাদের ভাবা দরকার ছিল– দেশ এবং পৃথিবীর সবচেয়ে সুবিধাভোগী শ্রেণি হবে শিশুরা। এমনকি সমাজতান্ত্রিক দেশেও একটি শ্রেণিই বিশেষ সুবিধা পাবে, অগ্রসর হবে, সেই শ্রেণিটি হচ্ছে শিশু। আমরা যদি শিশুদের অগ্রাধিকার শ্রেণির বলে মর্যাদা দিতে পারি ভাবনায় ও কাজে, তবে আমার বিশ্বাস তখন তারুণ্যের হতাশা ও বিষণ্ন তার মেঘও কেটে যাবে।
 
লেখক: গণমাধ্যমকর্মী
/এসএএস/এমওএফ/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
শনিবার সকালে আবার অবস্থান কর্মসূচির ঘোষণা বুয়েট শিক্ষার্থীদের
শনিবার সকালে আবার অবস্থান কর্মসূচির ঘোষণা বুয়েট শিক্ষার্থীদের
ইসরায়েল যা যা অস্ত্র চেয়েছিল সব পায়নি: মার্কিন সেনাপ্রধান
ইসরায়েল যা যা অস্ত্র চেয়েছিল সব পায়নি: মার্কিন সেনাপ্রধান
ছুটির দিনে নিউ মার্কেটে জনসমুদ্র
ছুটির দিনে নিউ মার্কেটে জনসমুদ্র
ভারতের নিখিলের হ্যাটট্রিকে ঊষার বড় জয়
ভারতের নিখিলের হ্যাটট্রিকে ঊষার বড় জয়
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ