X
সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪
১৫ বৈশাখ ১৪৩১

পাঠের রুচি-অরুচি

তুষার আবদুল্লাহ
০৫ আগস্ট ২০১৭, ১৪:০৩আপডেট : ০৫ আগস্ট ২০১৭, ১৪:১০

তুষার আবদুল্লাহ অভিভাবকের অবস্থান থেকে আমরা সন্তানদের হুকুম দিতে অভ্যস্ত। নিজেদের রুচি ও ভাবনা চাপিয়ে দিতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি। তারা সেই হুকুম গ্রহণে বা ভাবনার সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারছে কিনা, বিষয়গুলো পছন্দ করছে কিনা, সেই বিষয়গুলো বিবেচনায় নেইনা। বই পাঠের রুচি তৈরির বেলাতেও সেই অভিজ্ঞতা থেকে বেরোতে পারিনি। আমরা আমাদের সন্তানদের হাতে যে বই তুলে দিচ্ছি, সেই বইটি আমাদের রুচির। সময় বদলের সঙ্গে সঙ্গে পাঠকের রুচির পরিবর্তন অনিবার্য। এই সত্য আমরা স্বীকার করি না। আবার একথাও বিবেচনায় রাখা দরকার, অভিভাবকদের সন্তানদের রুচি তৈরি করে দেওয়ারও দায়িত্ব নিতে হয়। অভিভাবক হিসেবে আমরা দায়িত্ব পালন করতে ব্যর্থ হচ্ছি। এই বোধে পৌঁছেছি সন্তানদের কাছ থেকে পাওয়া অভিব্যক্তি, অনুযোগ থেকে। বছর পেরিয়ে গেলো বিদ্যায়তনে শ্রেণিকক্ষের পাশে বইমেলা আয়োজনের। এই উদ্যোগে আমরা কথা বলি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে। তারা বই নিয়ে যে মূল্যায়ন এবং পর্যবেক্ষণ তুলে ধরছে, তা আমাদের বিস্মিত  করেছে যেমন, তেমনি আত্মসমালোচনার মুখামুখি দাঁড় করিয়ে দিয়েছে।
শিক্ষার্থীরা বলছে প্রতিবছর তাদের সামনে প্রকাশকরা যে বই নিয়ে আসেন, তাতে বৈচিত্র্য নেই। তাদের শিশু-কিশোর প্রকাশনা গুটিকয় লেখক কেন্দ্রিক। বাণিজ্যিক কারণে এই ক’জনা লেখকদের নিয়েই প্রকাশকদের মাতামাতি। নতুন লেখক উপস্থাপনে তাদের আগ্রহ কম।
এই লেখকরাও প্রতিবছর একই বিষয় নিয়ে লিখে যাচ্ছেন। বিষয় বৈচিত্র্যের ঘাটতিতে ভুগছেন তারা। কোনও কোনও প্রকাশক নতুন লেখক নিয়ে যে আসছেন না তা নয়, পরিমাণে সেটা মন্দ নয়। তবে বই বিপণনের বাজার জনপ্রিয়মুখী। এই জনপ্রিয়তার ছকটি আবার গণমাধ্যমের তৈরি করে দেওয়া। গণমাধ্যমের লেখক গোষ্ঠীতে যারা অনুপ্রবেশ করার সুযোগ পান বা সুযোগ করে নেন, তারাই জনপ্রিয়তার বিজ্ঞাপনের মডেল লেখক হয়ে ওঠেন। এই বিজ্ঞাপন সমাজে এমন একটি ধারণা করে তৈরি করে দেয় যে, এই লেখকরাই সেরা লেখক এবং তাদের লেখাই শ্রেষ্ঠ লেখা। তারা যে বিষয় নিয়ে লিখছেন, সেটিই পৃথিবীর এসময়কার প্রতিপাদ্য। শিক্ষার্থীরাতো বটেই, অভিভাবকরাও সেই বিজ্ঞাপনের কারেন্টজালে আটকা পড়ে যান। তারা ভাবেন এই জনপ্রিয় ধারার বইগুলো সন্তানের হাতে তুলে দিতে পারলেই তারা সৃজনশীলতা এবং শুভ চিন্তার মাইলফলক ছুঁয়ে ফেলবে।

বাস্তবতা হলো প্রকাশক, গণমাধ্যম এবং অভিভাবকদের এই যৌথ উদ্যোগ আমাদের সন্তানদের স্বপ্ন এবং চিন্তার  ঘেরাটোপে বন্দি করে রেখেছে। আমাদের প্রকাশক, লেখক এবং অভিভাবকদের চিন্তার সীমাবদ্ধতা হচ্ছে, ইন্টারনেট পৃথিবী যে আমাদের সন্তানদের বিশ্বসাহিত্যের সীমানার নিয়ে যে গেছে, এটা তাদের ধারণার বাইরে। আমাদের সন্তানরা এখন বিশ্ব সাহিত্যের একেবারে আনকোরা লেখকের নাম এবং তাদের কাজের সঙ্গে পরিচিত। তারা এখন তুলনা করতে পারছে  দেশের লেখকদের সঙ্গে বিদেশি লেখকদের। ফলে আমাদের সন্তানদের ফাঁকি দেওয়ার আর এখন সুযোগ নেই।

অভিভাবক হিসেবে আমাদের দায়িত্ব ছিল বাংলা সাহিত্যের সেরা লেখক এবং তাদের লেখার সঙ্গে সন্তানদের পরিচয় করিয়ে দেওয়ার। এর মাধ্যমে আমরা সন্তানদের রুচি তৈরি করে দিতে পারি। সন্তানকে যদি শৈশব থেকেই আমরা বাংলা সাহিত্যের সেরা লেখাগুলোর সঙ্গে পরিচিয় করিয়ে দেই, তাহলে তাদের ভালো বই বেছে নেওয়ার অভ্যেস তৈরি হবে। এতে তারা জনপ্রিয় ধারার বইয়ের বিজ্ঞাপনে বিভ্রান্ত হবে না।

সন্তানরা বই বিমুখ হচ্ছে, এই ধারণাটি পুরোপুরি আমাদের মনগড়া। তারা বইয়ের সঙ্গেই আছে, আমরা তাদের কাছে চাহিদা মতো বই তুলে দিতে পারছি না। তাদের কাছে তাদের প্রয়োজন ও রুচির বইটি তুলে দিয়ে পাঠ্যাভ্যাসে আটকে রাখতে হবে। যদি তাদের রুচি নিয়ে আমাদের আপত্তি থাকে, তবে তার দায় কিন্তু আমাদেরই। অভয়বাণী হচ্ছে- আমাদের সন্তানরা বইয়ের সঙ্গে আছে। বই নিয়ে তাদের উত্সাহে কমতি নেই। সতর্কবাণী হলো- আমরা যদি ধারণার বলয় ভেঙে না বের হই, তবে সন্তানদের সঙ্গে আমাদের দূরত্ব বাড়বেই। এই দূরত্ব আমাদের প্রকাশনা, সাহিত্য ও চিন্তার দুনিয়াকে পুষ্টিহীন করে তুলবে। এই পুষ্টিহীনতা নিয়ে সুষম চিন্তার বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখা আকাশকুসুমই বটে!

লেখক: বার্তা প্রধান, সময় টিভি

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
বন ও বনভূমি রক্ষায় কর্মকর্তাদের নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করতে হবে: পরিবেশমন্ত্রী
বন ও বনভূমি রক্ষায় কর্মকর্তাদের নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করতে হবে: পরিবেশমন্ত্রী
মোনাকোর হারে লিগ ওয়ান চ্যাম্পিয়ন পিএসজি
মোনাকোর হারে লিগ ওয়ান চ্যাম্পিয়ন পিএসজি
বাজারে এলো বাংলা ভাষার স্মার্টওয়াচ ‘এক্সপার্ট’
বাজারে এলো বাংলা ভাষার স্মার্টওয়াচ ‘এক্সপার্ট’
চার বছরে আট ফ্লপ, আসছে আরও এক হালি!
চার বছরে আট ফ্লপ, আসছে আরও এক হালি!
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ