X
শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪
২০ বৈশাখ ১৪৩১

‘চাঁদ মামা’কে নিয়ে জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির সিদ্ধান্ত বিতর্ক

মো. জাকির হোসেন
০৭ জুন ২০১৯, ১৫:৫৩আপডেট : ০৯ জুন ২০১৯, ১৫:৩৭

মো. জাকির হোসেন সেই শিশু বয়সেই চাঁদের সঙ্গে পরিচয়। মা যখন ঘুমপাড়ানি কবিতা শুনাতেন—‘আয় আয় চাঁদ মামা টিপ দিয়ে যা, চাঁদের কপালে চাঁদ টিপ দিয়ে যা’। এরপর স্কুলের পাঠ্যবইয়ে, ‘বাঁশ বাগানের মাথার উপর চাঁদ উঠেছে ওই, মাগো আমার শোলক বলা কাজলা দিদি কই?’। এরপর গানে ‘চাঁদের সাথে আমি দেবো না তোমার তুলনা…’। তখনও বুঝিনি চাঁদ গান-কবিতা-ছড়া-সাহিত্য ছাড়াও ধর্ম, রাজনীতি ও সুশাসনের জন্য কত গুরুত্বপূর্ণ। নব্বইয়ের দশকে জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির সিদ্ধান্তহীনতা ও ঈদুল ফিতর উদযাপনের তারিখ নিয়ে বিভ্রান্তি ঘিরে প্রথম চাঁদের গুরুত্ব অনুধাবন করি। এরপর মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার রায়কে কেন্দ্র করে চাঁদে দেলোয়ার হোসেন সাঈদীকে দেখা যাওয়া নিয়ে তোলপাড়, ধ্বংসযজ্ঞ আরেক দফা চাঁদের গুরুত্বের কথা মনে করিয়ে দেয়। সর্বশেষ ৪ জুন ২ ঘণ্টার ব্যবধানে জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির সিদ্ধান্তে প্রথমে ৬ জুন এবং রাত ১১টার পর ৬ জুনের পরিবর্তে ৫ জুন ঈদুল ফিতরের ঘোষণাকে ঘিরে তুমুল তর্কবিতর্ক আমাকে এতটাই আন্দোলিত করেছে যে কলাম লিখতে বসেছি। জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির সিদ্ধান্ত নিয়ে বিতর্কের আঁচ পাই সিদ্ধান্ত প্রচারের সঙ্গে সঙ্গেই। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সিদ্ধান্ত নিয়ে নানা ট্রল পোস্ট হতে শুরু করে—‘দুই দিন আগে থেকে ঈদের রান্না করে রাখতে হইবো! না হইলে চাঁদ মামার যে মেজাজ মর্জি কখন উঠতে মন চায় আর কখন না চায়’, ‘চাঁদ অবশেষে ভিসা পেয়েছে’, ‘চাঁদটা একটু লেইটে হলেও উঠেছে!’ ‘বহু কষ্টে চাঁদ দেখা গেছে’। একজন উপাচার্য একধাপ এগিয়ে লিখেছেন, ‘তারাবি পড়েছি। সেমাই দিয়ে সেহরিটা সেরে রাখা ভালো। সকালে যদি ঈদ না হওয়ার এলান আসে! তবু ঈদ মোবারক’। ঈদুল ফিতরের চাঁদ দেখা নিয়ে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের অবস্থান পরিবর্তনের বিষয়ে কঠোর সমালোচনা করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অবশ্য বলেছেন, সুশাসনের অভাবেই এমনটা হয়েছে।  

মির্জা ফখরুল অভিযোগ করেন, ‘এ সরকারের সবচেয়ে বড় সমস্যা, জনগণের সঙ্গে তাদের কোনও সম্পর্ক নেই। তাদের কোনও জবাবদিহি নেই। তারা একটি নির্বাচন করেছে, যেই নির্বাচনে জনগণের কোনও প্রয়োজন ছিল না। এরপর তারা দেশ চালাচ্ছেন অন্যায় ও বেআইনিভাবে।’ মির্জা ফখরুলের বক্তব্য নতুন বিতর্কের জন্ম দেবে। অন্যায় ও বেআইনিভাবে যে সরকার দেশ চালাচ্ছে সে সরকারের সংসদে বিএনপির সাংসদরা কেন যোগ দিলেন? কিছু ক্ষেত্রে সুশাসনের অভাব আছে অস্বীকার করার উপায় নেই। তাই বলে সুশাসনের অভাবের সাথে চাঁদ ওঠা না ওঠার কী সম্পর্ক তা বোধগম্য নয়। সরকারের কপাল ভালো যে, ঈদের দিনের অবিরাম বৃষ্টিকে সরকারের সুশাসনের অভাব বলে বিএনপি মহাসচিব দাবি করেননি।

শাওয়ালের চাঁদ দেখা ও ঈদুল ফিতর উদযাপন নিয়ে ধর্ম মন্ত্রণালয় দুই ঘণ্টার ব্যবধানে দু’রকম সিদ্ধান্তের ব্যাখ্যায় ধর্মমন্ত্রী বলেছেন, পবিত্র শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখা সম্পর্কে সব জেলা প্রশাসন, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ৬৪ জেলা কার্যালয়, বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদফতর, মহাকাশ গবেষণা ও দূর অনুধাবন প্রতিষ্ঠান থেকে পাওয়া তথ্য নিয়ে পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে যে, আজ (৪ জুন) সন্ধ্যায় বাংলাদেশের আকাশে পবিত্র শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখা যায়নি। তাই, আগামী বৃহস্পতিবার (৬ জুন) থেকে পবিত্র শাওয়াল মাস গণনা শুরু হবে। এদিন পবিত্র ঈদুল ফিতর উদযাপিত হবে। কিন্তু রাত ১০টা ১৫ থেকে কুড়িগ্রাম জেলার নাগেশ্বরী, ভূরুঙ্গামারী উপজেলা ও লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার শতাধিক ব্যক্তি মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বাংলাদেশের আকাশে পবিত্র শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখেছেন বলে সংবাদ পাওয়া যায়। এ ব্যাপারে কুড়িগ্রাম ও লালমনিরহাটের জেলা প্রশাসকের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা হয়। কুড়িগ্রাম ও লালমনিরহাটের জেলা প্রশাসকরা জানান, এই দুই জেলার কিছু কিছু মানুষ চাঁদ দেখেছেন। পাটগ্রাম উপজেলার ইউএনও জানিয়েছেন, সেখানকার সাত জন ব্যক্তি সরাসরি চাঁদ দেখেছেন এবং আরও ১১ জন চাঁদ দেখেছেন বলে জানিয়েছেন। শরিয়ত মোতাবেক, কোনও ইমানদার ব্যক্তি চাঁদ দেখলে এবং দুই জন তাদের চাঁদ দেখার স্বীকৃতি দিলে মেনে নেওয়া উচিত। তাই কোরআন-হাদিস অনুযায়ী শরিয়ত মোতাবেক আমরা আগামীকাল বুধবার অর্থাৎ ৬ জুনের পরিবর্তে ৫ জুন ঈদ উদযাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

ধর্মমন্ত্রী, কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক সুলতানা পারভিন ও ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উপ-পরিচালক মুস্তাফিজুর রহমানের বক্তব্য এবং সংবাদপত্র ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার খবর পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, রাত ৯টা পর্যন্ত শাওয়ালের চাঁদ দেখার বিষয়টি কুড়িগ্রাম ও লালমনিরহাটের মুষ্টিমেয় কয়েকজন ছাড়া আর কারও জানা ছিল না। যারা চাঁদ দেখেছেন তারাও ফোন করে জেলা প্রশাসনকে জানায়নি। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, কোনও সংবাদপত্র বা টেলিভিশনেও রাত ১০টা পর্যন্ত বাংলাদেশের কোথাও চাঁদ দেখা গেছে মর্মে কোনও সংবাদও পরিবেশিত হয়নি। কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক সুলতানা পারভীন একাধিক সংবাদপত্রের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে জানান, ‘টিভিতে ৯টার সংবাদে বুধবার ঈদ হচ্ছে না মর্মে সংবাদ প্রচারের পর কুড়িগ্রামের ভুরুঙ্গামারী, নাগেশ্বরী ও ফুলবাড়ীর লোকজন আমাকে ফোন করা শুরু করেন। প্রায় ৫০-৬০ জনের ফোন রিসিভ করি। সবার একই কথা আমরা চাঁদ দেখেছি। পরে সচিব স্যারের সঙ্গে কথা বলি। স্যার লিখিত দিতে বলেন। ইউএনওদের মাধ্যমে লিখিত নিই। তাদের তথ্য নিয়ে আমি লিখে পাঠাই।’ ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উপ-পরিচালক মুস্তাফিজুর রহমান মোবাইল ফোনে সাক্ষাৎকারে একটি পত্রিকাকে জানান, ‘রাত ৯টা পর্যন্ত আমরা অফিসে ছিলাম। হঠাৎ করে ১০টা পৌনে ১০টার দিকে ভূরুঙ্গামারীর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফোন দিলেন, তার সামনে ৩০-৪০ জন আছেন, যারা চাঁদ দেখেছেন।’ প্রশ্ন হলো, চাঁদ দেখার সংবাদ না জেনেও ধর্মমন্ত্রী ঈদের ঘোষণা দিতে পারতেন কিনা? সৌদি আরব, ভারত, পাকিস্তানে ঈদ উদযাপনের ভিত্তিতে বাংলাদেশেও ঈদ উদযাপনের ঘোষণা দিতে পারতেন কিনা? চাঁদ দেখার সংবাদ জানার পরও ৬ জুন ঈদ ঘোষণায় মন্ত্রী অটল থাকতে পারতেন কিনা? এ বিষয়ে ইসলাম কি বলে আসুন দেখে নিই। আবু হুরায়রা (র.) বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, তোমরা চাঁদ দেখে রোজা রাখো এবং চাঁদ দেখে রোজা ভাঙো। আর যদি তোমাদের উপর আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকে তবে তোমরা ৩০ দিন পূর্ণ কর (বুখারি, মুসলিম, মুসনাদে আহমাদ)।

এ হাদিসের বয়ান অনুযায়ী চাঁদ দেখার সংবাদ না জেনে ঈদের ঘোষণা দেওয়ার এখতিয়ার ইসলাম ধর্মমন্ত্রীকে দেয়নি। কেউ কেউ প্রশ্ন তুলতে পারেন, বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে চাঁদ তো উদয় হয়েছে বলা হয়েছিল, তাহলে ঘোষণা দিতে অসুবিধা কোথায়? মহাকাশ গবেষণা ও দূর অনুধাবন প্রতিষ্ঠান বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণ করে বলতে পারেন কোন রাষ্ট্রে চাঁদ কখন উঠবে, কত সময় আকাশে থাকবে। উদাহরণস্বরূপ, বাংলাদেশ মহাকাশ গবেষণা ও দূর অনুধাবন প্রতিষ্ঠানের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা এসএম মিজানুর রহমান বলেন, ‘এবার আমরা বলেছিলাম, ৪ মে বাংলাদেশের আকাশে বিকালে ৫টা ৫১ মিনিটে চাঁদ উঠবে। ৪৫ মিনিট স্থায়ী হয়ে ৭টা ৪১ মিনিট পর্যন্ত দৃশ্যমান হবে। একই সঙ্গে বাংলাদেশের কোন কোন এলাকা মেঘমুক্ত থাকবে, কোথায় চাঁদ দেখা যাওয়ার সম্ভাবনা থাকবে সেসব তথ্যও চাঁদ দেখা কমিটিকে জানাই। কিন্তু যেহেতু ধর্মীয় বিধান অনুযায়ী দু’জন মানুষকে দেখতে হবে, তাই কেউ না দেখা পর্যন্ত চাঁদ দেখার ঘোষণা দেওয়া হয় না।’ ইসলামি শরিয়তের নীতি হলো, মানুষ যে দেশে বাস করেন সে দেশের স্বীকৃত চাঁদের হিসাবে রোজা রাখবে ও ঈদ করবে। এখন পর্যন্ত দেশের আলেমরা একমত যে, চাঁদ স্বচক্ষে দেখার পরই রোজা-ঈদ শুরু করতে হবে এবং কমপক্ষে ২ জন ব্যক্তি লাগবে, যারা নিজ চোখে চাঁদ দেখেছেন। হাদিসে এসেছে রাসুল (সা.) নিজে চাঁদ দেখতেন এবং সাহাবায়ে কেরামকেও দেখতে উৎসাহিত করতেন। চাঁদ দেখা রাসুল (সা.)-এর ব্যক্তিগত আমলের কারণে প্রত্যেক মুমিনের জন্য আকাশে চাঁদের অনুসন্ধান করাকেও আলেম সমাজ মোস্তাহাব মনে করেন। রাসুল (সা.) নতুন চাঁদ দেখে দোয়া পড়তেন। নতুন চাঁদ শুধু দেখা নয়, বরং দেখে দোয়া পড়াও রাসুল (সা.)-এর সুন্নাত। হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, রাসুল (সা.) যখন নতুন চাঁদ দেখতেন তখন বলতেন, ‘আল্লাহ মহান, হে আল্লাহ! এ নতুন চাঁদকে আমাদের নিরাপত্তা, ইমান, শান্তি ও ইসলামের সঙ্গে উদয় কর। আর তুমি যা ভালোবাস এবং যাতে তুমি সন্তুষ্ট হও, সেটাই আমাদের তাওফিক দাও। আল্লাহ তোমাদের এবং আমাদের প্রতিপালক’ (তিরমিজি, মিশকাত, দারেমি)। সৌদি আরব বা ভারত, পাকিস্তানে যেদিন ঈদ হবে তার ভিত্তিতে বাংলাদেশেও ঈদ ঘোষণা দেওয়ার ক্ষমতা মন্ত্রীর আছে কি?

দিনকাল বা সময়ের পরিবর্তনের কারণে বিশেষত চাঁদ উদয়ের ভিন্নতার কারণে সারা বিশ্বে একই দিনে রোজা ও ঈদ পালন করা যাবে না। পৃথিবীর কোনও প্রান্তে চাঁদ দেখা গেলে অপর প্রান্তে রোজা ও ঈদ পালন করা শুদ্ধ হবে না। এ মর্মে হাদিস রয়েছে। হজরত কোরাইব (র.) বলেন, আমি সিরিয়ায় হাজির হয়ে দেখলাম মাহে রমজানের নতুন চাঁদ আমাদের মাঝে উদয় হয়েছে। আমরা সিরিয়ায় বৃহস্পতিবার দিবাগত জুমার রাতে রমজানের চাঁদ দেখেছি। অতঃপর আমি রমজান মাসের শেষভাগে মদিনায় গমন করেছি। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (র.) আমাকে চাঁদ সম্পর্কে প্রশ্ন করলে আমি বলি, আমরা জুমার রাতে চাঁদ দেখেছি। পুনরায় জিজ্ঞেস করায় আমি বললাম সিরিয়াবাসীও দেখেছেন। তারা এবং বিশেষত হজরত মুয়াবিয়া (র.) রোজাও শুরু করে দিয়েছেন। হজরত ইবনে আব্বাস (র.) বললেন, আমরা (মদিনায়) শুক্রবার দিনগত রাতে রমজানের চাঁদ দেখেছি, ফলে আমরা রমজান মাসের ৩০ দিন পূর্ণ করবো, অথবা ঈদের চাঁদ না দেখা পর্যন্ত রোজা পালন করবো। হজরত কোরাইব (র.) বললেন, হজরত মুয়াবিয়ার দেখা ও রোজা শুরু করা কি যথেষ্ট নয়? ইবনে আব্বাস (র.) দ্ব্যর্থহীনভাবে বললেন, না। এ রকমই আল্লাহর রাসুল (সা.) আমাদের আদেশ করেছেন (তিরমিজি শরিফ-সিয়াম পর্ব)।

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, সিরিয়া ও মদিনার মধ্যে সময়ের কোনও পার্থক্য নেই। আধুনিক বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে সিরিয়া ও মদিনায় চন্দ্র উদয়ের সময়ের মধ্যেও তেমন পার্থক্য নেই। উদাহরণস্বরূপ, ৬ জুন ২০১৯ তারিখ সিরিয়ায় চন্দ্র উদয়ের সময় ৮টা ০৯ মি. ও মদিনায় ৮টা ২২ মিনিট। তবুও সিরিয়ার চাঁদ মদিনার জন্য গ্রহণযোগ্য হয়নি। চাঁদের কক্ষপথ বিভিন্ন দেশে ভিন্ন ভিন্ন। চাঁদ দেখার সংবাদ জানার পরও মন্ত্রী ৬ জুনের ঈদ উদযাপনের ঘোষণা বহাল রাখতে পারতেন কি? উত্তর, অবশ্যই না। হজরত আবু উমাইর ইবনে আনাস (র.) থেকে বর্ণিত, মেঘের কারণে আমরা শাওয়ালের চাঁদ দেখিনি বলে রোজা রেখে ছিলাম। পরে দিনের শেষভাগে একটি কাফেলা এলো। তারা রাসুল (সা).-এর কাছে রাতে চাঁদ দেখেছে বলে সাক্ষী দিলো। রাসুল (সা.) লোকজনকে সে দিনের রোজা ভঙ্গ করার আদেশ দিলেন এবং তার পরের দিন সকলকে ঈদের সালাতে আসতে বললেন (আহমাদ, নাসাঈ, ইবনে মাযাহ, আবু দাউদ)। অন্য এক হাদিসে বর্ণিত, একবার লোকেরা রমজানের শেষে শাওয়ালের চাঁদ দেখা নিয়ে মতভেদ করেন। তখন দুজন বেদুইন রাসুল (সা.)-এর কাছে হাজির হয়ে আল্লাহর কসম করে সাক্ষ্য প্রদান করেন যে, গত সন্ধ্যায় তারা শাওয়ালের চাঁদ দেখেছেন । তখন রাসুল (সা.) লোকদের সাওম ভাঙার নির্দেশ দেন। রাবী খালফ তার হাদিসে অতিরিক্ত বর্ণনা করেছেন যে, রাসুল (সা.) আরও বলেন যে, লোকেরা যেন আগামীকাল ঈদগাহে আসেন (আবু দাউদ)।

বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে চাঁদ দেখে সিদ্ধান্ত গ্রহণ হাদিস অনুযায়ী সমর্থনযোগ্য নয়। চোখ দিয়ে চাঁদ দেখা রাসুল (সা.)-এর সুন্নাত। অন্যদিকে নবী (সা.) বলেছেন, ‘মাস কখনও ত্রিশ দিন, কখনও ঊনত্রিশ দিনে হয়’ (বুখারি ও মুসলিম)।

ইবনু মাসঊদ (র.) থেকে বর্ণিত—তিনি বলেন, রাসুল (সা.)-এর সাথে আমরা যতবার ত্রিশ দিন রোজা পালন করেছি, এরচেয়ে বেশি ঊনত্রিশ দিন রোজা পালন করেছি। (ইবনু মাজাহ)। কখনও ঊনত্রিশ দিনে মাস হয় জেনেও রাসুল (সা.) আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকলে ত্রিশ রোজা পূর্ণ করতে বলেছেন। যদি এমন হয়, রমজানের ২৯তম দিন আকাশ মেঘাচ্ছন্ন অবস্থায় বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে দেখা গেলো চন্দ্র উদয় হয়েছে, কিন্তু কেউই স্বচক্ষে চাঁদ দেখতে পেলো না; সেক্ষেত্রে হাদিসের বিধান অনুযায়ী ত্রিশ রোজা পূর্ণ করা হবে, নাকি বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি প্রয়োগে প্রাপ্ত ফলাফল অনুযায়ী ২৯ রোজায় রমজান মাস পূর্ণ হবে—এ বিতর্ক শুরু হয়ে যাবে।

বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে আগাম খবর জেনে যে সময়ে যে এলাকায় চাঁদ উদয়ের তথ্য থাকে, সে এলাকার প্রশাসন ও চাঁদ দেখা কমিটি তৎপর হলে এবং চাঁদ দেখার খবর প্রচারে ওই এলাকার জনগণকে উদ্বুদ্ধ করা গেলে সমস্যার অনেকখানিই সমাধান হবে বলে আশা করা যায়। আর এটা করা গেলে চাঁদ মামাকে নিয়ে বিতর্ক ও রাজনীতির সুযোগও কমে আসবে।

লেখক: অধ্যাপক, আইন বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।

ই-মেইল: [email protected]

 

/এমওএফ/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
‘তীব্র গরমে’ মারা যাচ্ছে মুরগি, অর্ধেকে নেমেছে ডিম উৎপাদন
‘তীব্র গরমে’ মারা যাচ্ছে মুরগি, অর্ধেকে নেমেছে ডিম উৎপাদন
ইসরায়েলের সঙ্গে সব ধরনের বাণিজ্য বন্ধ করলো তুরস্ক
ইসরায়েলের সঙ্গে সব ধরনের বাণিজ্য বন্ধ করলো তুরস্ক
তিউনিসিয়ায় নৌকাডুবিতে মারা যাওয়া ৮ যুবকের লাশের অপেক্ষায় স্বজনরা
তিউনিসিয়ায় নৌকাডুবিতে মারা যাওয়া ৮ যুবকের লাশের অপেক্ষায় স্বজনরা
‘বাংলাদেশ ও ভারত একই লক্ষ্যে এগোচ্ছে’
‘বাংলাদেশ ও ভারত একই লক্ষ্যে এগোচ্ছে’
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ