X
শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪
৭ বৈশাখ ১৪৩১

প্রতিবন্ধীরা হতে পারে জাতীয় সম্পদ

রিয়াজুল হক
০৩ মার্চ ২০২১, ১৮:১২আপডেট : ০৩ মার্চ ২০২১, ১৮:১২

রিয়াজুল হক
আমরা কেউই জানি না, সামনের দিনে আমাদের জন্য কী অপেক্ষা করছে। জীবনের অনেক কিছু আমাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে। সুস্থভাবে বেঁচে থাকা মহান আল্লাহর সবচেয়ে বড় নিয়ামত। কেউ কেউ জন্মাবধি প্রতিবন্ধী। কেউ কেউ আবার দুরারোগ্য ব্যাধি, দুর্ঘটনা বা যুদ্ধকবলিত হয়ে প্রতিবন্ধী। এদের জীবনে পদে পদে বাধা। এরা পৃথিবীর রঙ রূপ রসের বিলাস-বৈচিত্র্য অনেক কিছু উপভোগে অক্ষম। এরা সুস্থ মানুষের মতো হেঁটে চলে বেড়াতে অপটু। চারদিক যে বিচিত্র কর্মধারা নিত্য প্রবাহিত, সেখানে যোগ দিতে অপারগ। অনিশ্চয়তার অন্ধকারে জীবন চলে ভেসে। আসলে এরা যে আমাদেরই স্বজন, আত্মীয়-পরিজন এ কথাটা আমরা ভুলে যাই। যে জন্ম দৈবের অধীন, যে পঙ্গুতা নিয়তির বিধান, তাকে কর্মের মহিমায় বরণ করার সহৃদয়তা কোথায়? অতি দরদও এদের জীবনের সহজ বিকাশকে করে তুলেছে আরও অসহায়। এরা আত্মনির্ভর হতে শেখে না, আত্মবিশ্বাসও হারিয়ে ফেলে। অথচ প্রশিক্ষণের মাধ্যমে এই প্রতিবন্ধীদের আত্মবিশ্বাস ফিরিয়ে আনা সম্ভব। একইভাবে, এদের আমরা জাতীয় সম্পদে পরিণত করতে পারি।

জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৬১তম অধিবেশনে ১৩ ডিসেম্বর, ২০০৬ প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অধিকার সনদ অনুমোদন করা হয়। ৫০টি আবশ্যিক ধারা ও ১৮টি ঐচ্ছিক প্রতিপালনীয় বিধিবিধান সংবলিত এ সনদ বৈষম্য, উপেক্ষা, দমন-পীড়ন আর নির্যাতনের অভিজ্ঞতা থেকে থেকে ওঠে আসা প্রতিবাদ ও সমান অধিকারের দাবির প্রতি সাড়া দিয়ে বেশ কিছু মৌলিক মানবাধিকারের প্রতি বিশেষ মনোযোগ দিয়েছে। প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের এ অধিকার সনদের লক্ষ্য হলো সব প্রতিবন্ধী ব্যক্তির পূর্ণ ও সমান মানবাধিকার ও মৌলিক স্বাধীনতাসমূহ চর্চার প্রসার, সুরক্ষা ও সুনিশ্চিতকরণ। তাদের চিরন্তন মর্যাদার প্রতি সম্মান সমুন্নত করা। সঙ্গে সমতার ভিত্তিতে যে কোনও ভেদাভেদ, বর্জন অথবা নিষেধাজ্ঞা, যার উদ্দেশ্য বা পরিণতিতে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা অন্যদের সঙ্গে সমতার ভিত্তিতে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, নাগরিক অথবা অন্য যেকোনও ক্ষেত্রের সকল মানবাধিকার ও মৌলিক স্বাধীনতাসমূহের স্বীকৃতির উপভোগ বা অনুশীলনে বাধাগ্রস্ততা বিলোপ সাধন এ সনদের মূল প্রতিপাদ্য। বাংলাদেশ এ অধিকার সনদের ৯১তম রাষ্ট্র হিসেবে স্বাক্ষর এবং ৮ম শরিক রাষ্ট্র হিসেবে অনুস্বাক্ষর করেছে। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিবন্ধকতা শনাক্তকরণ কর্মসূচির আওতায় পরিচালিত জরিপ অনুযায়ী প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠীর সংখ্যা বর্তমানে ১৬ লাখ ৬৫ হাজার ৭০৮ জন।

অর্থাৎ দেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় শতকরা ৭ ভাগেরও অধিক প্রতিবন্ধী। এই বিরাট জনসংখ্যাকে বাদ রেখে সার্বিক অর্থনৈতিক উন্নয়ন সম্ভব নয়। তাদের আর্থিক কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত করা প্রয়োজন। এজন্য প্রয়োজন প্রশিক্ষণ। কারণ, প্রশিক্ষণের মাধ্যমেই তারা বিভিন্ন কারিগরি কর্মকাণ্ডে নিয়োজিত রাখতে পারবে।

সোশ্যাল মিডিয়ায় অদম্য সাহসী এক প্রতিবন্ধীর ঘটনা পড়েছিলাম। মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার দীগি গ্রামে হতদরিদ্র এক জেলে পরিবারে চুমকি রানী হালদারের জন্ম। ছয় ভাইবোনের মধ্যে তিনি তৃতীয়। জন্মের মাত্র তিন বছর বয়সে চুমকি টাইফয়েড জ্বরে আক্রান্ত হলে সঠিক চিকিৎসার অভাবে চিরতরে পঙ্গু হয়ে যান। তার শারীরিক গঠন ঠিক থাকলেও দুটি পা সম্পূর্ণ বিকল হয়ে পড়ে। পৃথিবীটা তার কাছে দুঃসহ হয়ে ওঠে। মন বেশি খারাপ হলে বাড়ির পাশে রাস্তায় বসে নিজের করুণ অবস্থার কথা ভাবতে থাকেন। স্বাবলম্বী হওয়ার স্বপ্নে মনোযোগ দিয়ে কিছু দিনের মধ্যেই তিনি টেইলারিং কাজ শিখে ফেলেন। বাড়িতে বসে তৈরি করছেন সালোয়ার, কামিজ, ব্লাউজসহ মহিলাদের বিভিন্ন রকম পোশাক। এলাকার সুস্থ-সবল আরও অনেকে এই পেশার সঙ্গে জড়িত থাকলেও চুমকির কাজের মান ভালো হওয়ায় তার কাছে লোকজন বেশি কাজ দেয়। অল্প সময়ের মধ্যেই তার কাজের সুনাম চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। চুমকির মনের শক্তি ও কাজ করার মনোবল দেখে ২০১১ সালে সুস্থ-সবল কর্মঠ পরিতোষ হালদার তাকে বিয়ে করেন। এখন স্বামী-সংসার নিয়ে চুমকি ভালো আছেন। শারীরিক প্রতিবন্ধী হলেও তিনি কারও ওপর নির্ভরশীল নন। বরং তার আয়ের ওপর পরিবারের অনেকে নির্ভর করছেন।

চিকিৎসা ও স্বাস্থ্য-ব্যবস্থার অপ্রতুলতা এবং দারিদ্র্য ও অশিক্ষা হচ্ছে প্রতিবন্ধী হওয়ার মূল কারণ এবং তা দূর করা নিঃসন্দেহে পারিবারিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব। প্রয়োজন জাগ্রত চেতনার যথার্থ কর্মসূচি গ্রহণ। শুধু মধুবর্ষী শব্দবিলাস নয়, চাই মহৎ অনুভবের বাস্তব রূপায়ণ। ইতোমধ্যে প্রতিবন্ধীদের জন্য সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান সাহায্যের হাত সম্প্রসারিত করেছে। প্রয়োজনের তুলনায় আয়োজন এখনও সামান্য। মূলত প্রতিবন্ধীদের উন্নয়নের জন্য বহু ক্ষেত্র বিশিষ্ট ও বহু পেশাভিত্তিক কৌশল প্রয়োজন। প্রতিবন্ধীরা দেশ, জাতি বা পরিবারের বোঝা নয়। সঠিকভাবে প্রশিক্ষিত করতে পারলে তারা হতে পারে অর্থনীতি গড়ার কারিগর। তাদের অংশগ্রহণে সমাজপ্রবাহ হবে আরও গতিময়। সম্মিলিত কর্মতরঙ্গের মধ্য দিয়েই গড়ে উঠবে এক সমৃদ্ধ বিশ্ব।

জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশনের তথ্যমতে, অটিজমসহ অন্যান্য প্রতিবন্ধিকতা বিষয়ে সাধারণ মানুষকে সচেতন করে তোলার লক্ষ্যে ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে ২০০৯ সাল থেকে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ কর্মসূচি বাস্তবায়িত হচ্ছে। এসব প্রশিক্ষণে প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠীর পাশাপাশি তাদের পিতামাতা ও অভিভাবককেও সম্পৃক্ত করা হচ্ছে। তথ্যমতে, ২০০৯-২০১০ থেকে ২০১৪-২০১৫ সময়কালে সারা দেশের ৬৪টি জেলা ও ৩৯টি উপজেলায় সর্বমোট ১০৩টি প্রতিবন্ধী সেবা ও সাহায্য কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। এসব কেন্দ্র থেকে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের অটিজমসহ অন্যান্য প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠীকে বিনামূল্যে থেরাপিউটিক, কাউন্সেলিং ও রেফারেল সেবা এবং সহায়ক উপকরণ প্রদান করা হচ্ছে। ২ এপ্রিল ২০১০ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিবন্ধী সেবা ও সাহায্য কেন্দ্র শীর্ষক কর্মসূচি উদ্বোধন করেন। এ কর্মসূচি পর্যায়ক্রমে উপজেলা পর্যায় পর্যন্ত সম্প্রসারণ করা হবে। উক্ত কেন্দ্রের মাধ্যমে জুন/২০২০ পর্যন্ত নিবন্ধিত সেবা গ্রহীতার সংখ্যা ৫,২৭,৪২৯ জন ও মোট প্রদত্ত সেবা সংখ্যা ৬৯,৯৮,৫২৮টি। এ পর্যন্ত কৃত্রিম অঙ্গ, হুইল চেয়ার, ট্রাইসাইকেল, ক্র্যাচ, স্ট্যান্ডিং ফ্রেম, ওয়াকিং ফ্রেম, সাদাছড়ি, এলবো ক্র্যাচ, আয়বর্ধক উপকরণ হিসেবে সেলাই মেশিনসহ মোট ৪৫,৫৩৪টি সহায়ক উপকরণ প্রতিবন্ধী ও প্রতিবন্ধিকতার ঝুঁকিতে থাকা ব্যক্তিদের মাঝে বিনামূল্যে বিতরণ করা হয়েছে।

অক্টোবর, ২০১১ সালে ফাউন্ডেশন ক্যাম্পাসে একটি সম্পূর্ণ অবৈতনিক স্পেশাল স্কুল ফর চিলড্রেন উইথ অটিজম চালু করা হয়। পরবর্তীতে ঢাকা শহরে মিরপুর, লালবাগ, উত্তরা ও যাত্রাবাড়ী, ৬টি বিভাগীয় শহরে ৬টি (রাজশাহী, খুলনা, চট্টগ্রাম, বরিশাল, রংপুর ও সিলেট) এবং গাইবান্ধা জেলায় ১টি-সহ মোট ১১টি অটিজম স্পেশাল স্কুল চালু করা হয়েছে। এসব স্কুলে অটিজম ও এনডিডি সমস্যাগ্রস্ত শিশুদের অক্ষর জ্ঞান, সংখ্যা, কালার, ম্যাচিং, এডিএল, মিউজিক, খেলাধুলা, সাধারণ জ্ঞান, যোগাযোগ, সামাজিকতা, আচরণ পরিবর্তন এবং পুনর্বাসন ইত্যাদি বিষয়ে শিক্ষা প্রদান করা হয়। মানসিক, শ্রবণ ও দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ছাত্রছাত্রীদের জন্য তিনটি পৃথক স্কুলসহ রয়েছে তিনটি হোস্টেল। বিশেষ শিক্ষা শিক্ষক প্রশিক্ষণ কলেজে বিএসএড (ব্যাচেলর অব স্পেশাল এডুকেশন) কোর্স চালু রয়েছে। এ কেন্দ্রে ৩০০ জন ছাত্রছাত্রী লেখাপড়া করার সুযোগ পাচ্ছে। প্রত্যন্ত অঞ্চলের প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠীকে বিনামূল্যে ফিজিওথেরাপি, অকুপেশনাল থেরাপি, হিয়ারিং টেস্ট, ভিজুয়্যাল টেস্ট, কাউন্সেলিং, প্রশিক্ষণ, সহায়ক উপকরণ ইত্যাদি সেবা প্রদানের লক্ষ্যে ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে ২০১০ সালে প্রথমবারের মতো ভ্রাম্যমাণ ওয়ান স্টপ থেরাপি সার্ভিস (মোবাইল ভ্যানের মাধ্যমে) চালু করা হয়েছে। ৩২টি মোবাইল থেরাপি ভ্যানের মাধ্যমে জুন ২০২০ পর্যন্ত বিনামূল্যে নিবন্ধিত থেরাপিউটিক সেবা গ্রহীতার সংখ্যা ৩,৩৯,০৫৫ জন এবং প্রদত্ত সেবা সংখ্যা ৭,৯০,৮৬৬টি।

অটিজমসহ অন্যান্য প্রতিবন্ধিতার বিষয়ে সাধারণ মানুষকে সচেতন করে তোলার লক্ষ্যে ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে প্রতিবন্ধী সেবা ও সাহায্য কেন্দ্রে কর্মরত জনবলকে দক্ষ করে গড়ে তোলার জন্য পর্যায়ক্রমে অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক্ষ প্রশিক্ষণ প্রদান করা হচ্ছে। উল্লেখ্য, এ পর্যন্ত ৪০৩৫ জনকে অভ্যন্তরীণ ও ২১৫ জনকে বৈদেশিক প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে।

সমাজ সেবা অধিদফতর দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণের মাধ্যমে আত্মনির্ভরশীল করে গড়ে তোলার উদ্দেশ্যে ১৯৭৮ সালে জাতীয় দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন কেন্দ্রটি চালু করে। আবাসিক সুবিধাসম্পন্ন এ প্রতিষ্ঠানে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের বিভিন্ন প্রকার কারিগরি প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়ে থাকে, অনুমোদিত আসন সংখ্যা ৫০, বর্তমান নিবাসীর সংখ্যা ৮। এ পর্যন্ত এই প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে পুনর্বাসিতের সংখ্যা ৭১২। এই প্রতিষ্ঠান থেকে বিভিন্ন সেবাসমূহ প্রদান করা হয়। যেমন, প্রতিবন্ধীদের আবাসন, ভরণপোষণ, চিকিৎসাসেবা প্রদান; বাঁশ ও বেতের কাজের প্রশিক্ষণ (৬ মাস মেয়াদি) ও হাঁস-মুরগি প্রতিপালন এবং চলাচলের ওপর প্রশিক্ষণ (৬ মাস মেয়াদি) প্রদান; খেলাধুলা ও চিত্তবিনোদনের ব্যবস্থা; কর্মসংস্থান ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা; প্রশিক্ষণ শেষে ৪০০০ টাকা হারে পুনর্বাসন ভাতা প্রদান; বেসরকারি ও সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চাকরি প্রাপ্তিতে সহযোগিতা; এবং আবাসন ও প্রতিপালন।

একই বছর ১৯৭৮ সালে বাক-শ্রবণ প্রতিবন্ধী ও শারীরিক প্রতিবন্ধী যুবকদের বিভিন্ন প্রকার কারিগরি প্রশিক্ষণ দেওয়ার উদ্দেশ্যে গাজীপুর জেলার টঙ্গীতে শারীরিক প্রতিবন্ধীদের বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন কেন্দ্রটি চালু করে। এই প্রতিষ্ঠানে অনুমোদিত আসন সংখ্যা ৮৫, বর্তমান নিবাসীর সংখ্যা ৫২। এখন পর্যন্ত পুনর্বাসিতের সংখ্যা ২৮৮৪। এই প্রতিষ্ঠান থেকে বিভিন্ন সেবা প্রদান করা হয়। যেমন, প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের আবাসন, ভরণপোষণ, চিকিৎসাসেবা প্রদান; বিভিন্ন ধরনের প্রতিবন্ধী ব্যক্তির স্বল্পমেয়াদি ইন্ডাস্ট্রিয়াল প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়, যেমন- ম্যাকানিক্যাল ওয়ার্কশপ- এক বছর মেয়াদি (আসন সংখ্যা-৩০), কাঠের কাজ- এক বছর মেয়াদি (আসন সংখ্যা-১০), টেইলারিং- এক বছর মেয়াদি (আসন সংখ্যা-২৫), হাঁস-মুরগি পালন প্রশিক্ষণ- ৬ মাস মেয়াদি (আসন সংখ্যা-১০) এবং নার্সারি প্রশিক্ষণ- ৬ মাস মেয়াদি (আসন সংখ্যা-১০); খেলাধুলা, চিত্তবিনোদন ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা; কর্মসংস্থান ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা; প্রশিক্ষণ শেষে ৪০০০ টাকা হারে পুনর্বাসন ভাতা প্রদান; পদ খালি সাপেক্ষে কেন্দ্রে চাকরি প্রদান; এবং বেসরকারি ও সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চাকরি প্রাপ্তিতে সহযোগিতা। সরকার প্রতিবন্ধীদের উন্নয়নে সর্বাত্মকভাবে কাজ করে যাচ্ছে। কিন্তু আগেই উল্লেখ করেছি, প্রতিবন্ধীর সংখ্যা মোট জনসংখ্যার প্রায় শতকরা ৭ ভাগ। তাই তাদের জন্য আরও ব্যাপকভাবে কর্মপরিকল্পনা প্রয়োজন। বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে এগিয়ে আসতে হবে। প্রতিবন্ধীরা আমাদের সমাজে বোঝা নয়, তারা আমাদের সম্পদ। তাদের কারিগরি প্রশিক্ষণের মাধ্যমে গড়ে তুলতে পারলে দক্ষ কারিগর হিসেবে গড়ে তোলা সম্ভব হবে। তাই সমাজের প্রতিবন্ধীদের জন্য কারিগরি শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা থাকতে হবে। সেখান থেকেই তাদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হবে। একজন মানুষ যখন অর্থ উপার্জন করে, তখন সে অন্যের বোঝা থাকে না। পরিবারের জন্য কিছু করার মাধ্যমে পরিবার, সমাজ, দেশের জন্য তার অবস্থান সুদৃঢ় করতে পারবে।

উন্নত ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠীর জীবনযাত্রা উন্নয়নে অসামান্য অবদান রাখার জন্য অটিজম বিষয়ক জাতীয় উপদেষ্টা পরিষদের সভাপতি সায়মা ওয়াজেদ হোসেন পুতুল ‘ইউনেসকো-আমির জাবের আল-আহমদ আল-সাবাহ পুরস্কার’ সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক জুরিবোর্ডের সভায় সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন। এটা দেশের জন্য অত্যন্ত গৌরবের। ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিতে প্রবেশাধিকারের সুযোগ সৃষ্টি করে শিক্ষা ও কর্মসংস্থান নিশ্চিতে ‘চাকরি মেলা ২০২০’ অনুষ্ঠিত হয়। ত্বরান্বিত হোক এই উদ্যোগ, এটা আমাদের সকলের প্রত্যাশা।

উন্নতির মানদণ্ডে আমরা এগিয়ে চলেছি। আমাদের আরও অনেক দূর যেতে হবে। সেই কারণে ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশে পরিণত করার পরিকল্পনা মাথায় রেখে সরকার কাজ করছে। দেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৭ শতাংশ প্রতিবন্ধী। তাই টেকসই উন্নয়নের বিভিন্ন পর্যায়ে বিপুল এই জনগোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করা জরুরি। প্রতিবন্ধীরা পরিবার, সমাজ কিংবা রাষ্ট্রের গলগ্রহ নয়, নয় করুণার পাত্র, এই পৃথিবীতে তাদেরও কিছু দেওয়ার আছে- যদি প্রশিক্ষণের মাধ্যমে আমরা তাদের গড়ে তুলতে পারি। প্রতিবন্ধীরা জনসম্পদে পরিণত হবে।

লেখক: যুগ্ম-পরিচালক, বাংলাদেশ ব্যাংক।

/এসএএস/এমওএফ/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
হিট অ্যালার্ট উপেক্ষা করে কাজে নামতে হয় যাদের
হিট অ্যালার্ট উপেক্ষা করে কাজে নামতে হয় যাদের
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন কলেজের পাঠদানও বন্ধ
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন কলেজের পাঠদানও বন্ধ
রুশ বিদ্যুৎকেন্দ্রে ইউক্রেনের হামলা, ৫০টি ড্রোন ভূপাতিতের দাবি মস্কোর
রুশ বিদ্যুৎকেন্দ্রে ইউক্রেনের হামলা, ৫০টি ড্রোন ভূপাতিতের দাবি মস্কোর
বিয়েবাড়ির খাসির মাংস খেয়ে ১৬ জন হাসপাতালে
বিয়েবাড়ির খাসির মাংস খেয়ে ১৬ জন হাসপাতালে
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ