X
শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪
৬ বৈশাখ ১৪৩১

পরিবার ও সমাজের যত্ন নেওয়া জরুরি

ড. জেবউননেছা
৩০ এপ্রিল ২০২১, ১৬:১৪আপডেট : ০১ মে ২০২১, ০০:৩২

ড. জেবউননেছা ‘ক’ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ভালো ফলাফল করে উত্তীর্ণ হয়ে বেশ কয়েক বছর ধরে বসে আছে। বেশ কয়েকবার শিক্ষকতার জন্য আবেদন করলেও সে তার কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছতে পারেনি। বর্তমানে সে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে বিদেশে পাড়ি জমাবে। ‘খ’ কৃষি বিষয়ে লেখাপড়া করেছে, কিন্তু কৃষি বিষয়ক চাকরির দিকে এখনও পৌঁছতে পারেনি। বর্তমানে সে চুক্তিভিত্তিক প্রতিষ্ঠানে কাজ করে। সেও বিদেশে যাবার জন্য তার কাগজপত্র গুছাচ্ছে। ‘গ’দেশের সর্বোচ্চ  বিদ্যাপীঠ থেকে ফলিত পরিসংখ্যান বিষয়ে উত্তীর্ণ হয়েই বিদেশে পাড়ি জমিয়েছে। ছোট ভাই বুয়েট পড়ুয়া কেমিকৌশল প্রকৌশলী। তার শ্রেণি বন্ধুদের ৫৯ জনের মধ্যে ২৭ জন বিদেশে পাড়ি জমিয়েছে।  ‘ঘ’ ভীষণ মেধাবী, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতার পদে আবেদন করে রেখেছে বেশ কয়েক বছর ধরে। কিন্তু নানা জটিলতায় সে মৌখিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারেনি। মৌখিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করলেই যে সে তার মূল্যায়ন পাবে, এটা নিয়েও সে সন্দিহান। অথচ সে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে সেরা শিক্ষক হিসেবে কাজ করছে। তবে তারও ইচ্ছা, সুযোগ পেলে বিদেশে চলে যাবে। এমনও দেখেছি এক পরিবারের কয়েকজন প্রকৌশলী, তারা দেশে থাকেন না। প্রথিতযশা প্রতিষ্ঠান থেকে অধ্যয়ন করে বিদেশে পাড়ি জমিয়েছেন। অথচ বাবা-মা থাকেন দেশে।  ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে লোকপ্রশাসন বিভাগে আমাদের ব্যাচের সহপাঠী ছিল ১২১ জন। এরমধ্যে সাতজন বিসিএস কর্মকর্তা। বেশ কয়েকজন বিদেশে পাড়ি জামিয়েছে। আমার এক সহপাঠী অস্ট্রেলিয়ার এক বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করছে। জানতে চাইলাম তার বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীর সংখ্যা কেমন। সে উত্তরে বললো, অসংখ্য শিক্ষার্থী রয়েছে। এমনকি বাংলাদেশের প্রথিতযশা প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অধ্যয়ন করে সেখানে অনেকে স্থায়ী হয়েছে। এমনও দেখা যায়, তাদের সন্তানরা বাংলায় কথা বলতে পারে না। তার এই কথা শুনে আমি ব্যথিত হই। প্রশ্ন হচ্ছে, কেন মেধাবী  শিক্ষার্থীবৃন্দ বিদেশের দিকে ঝুঁকে পড়ছে। আর সে ঝুঁকে পড়ার কারণে দেশমাতৃকা সংকটে পড়ে  যায়, পারিবারিক মমত্ববোধ ক্ষয় হয়, দেশ মানবসম্পদ হারায়।

আর এসব ঘটনার ফলশ্রুতিতে কেউ কেউ নিজ বাসায়  একাই মৃত্যুবরণ করেন।  একজন স্বনামধন্য অধ্যাপক, তার দুই সন্তান বিদেশে থাকে। সে দেশে তার স্ত্রী নিয়ে থাকেন। পরিচিত একজন ভীষণ মেধাবী দেশে সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ থেকে ডিগ্রি অর্জন করে  বিদেশে পাড়ি জমিয়েছেন,তার বাবা-মা দুজনেই কোভিড পজিটিভ। দুবার টিকিট করার পরেও আসতে পারেননি দেশে। সামাজিক মাধ্যমে তার বিলাপ আমাকেও কাঁদায়। আর একজন বিদগ্ধ লেখিকা, তাঁর তিন সন্তান বিদেশে থাকেন। তার মতে, তার সন্তান যদি পাশের ফ্ল্যাটে থাকতো পৃথিবীতে তিনি  হতেন সবচেয়ে সুখী। সমাজে এমন শত শত ঘটনা রয়েছে। এসব ঘটনা পর্যবেক্ষণ করলে বোঝা যায়, পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা এবং কর্মসংস্থান এবং সামাজিক নিরাপত্তার  অভাবে বেশিরভাগ মেধাবী দেশ ছাড়ছেন।

আমরা অভিবাসীদের রেমিট্যান্স নিয়ে গর্ব করি। কিন্তু তাদের এই রেমিট্যান্স পাঠানোর পিছনের বেশিরভাগ মানুষের গল্পই হয়তো এমন যে, সর্বস্ব বিক্রি করে বিদেশে পাড়ি জমিয়েছে।  ব্যক্তিগতভাবে অধীত বিদ্যা অনুযায়ী পেশা গ্রহণ করতে আমার সময় লেগেছে ছয় বছর। প্রশ্ন হচ্ছে, যে শিক্ষা আমি গ্রহণ করবো তা যদি বাস্তবায়নের সুযোগ না পাই, তাহলে দেশের জনগণের অর্থে আমি লেখাপড়া করেছি, তার পুরোটাই ব্যর্থ। তাহলে সমাধান কী?

‘দ্য ইকোনমিস্ট’সাময়িকীর প্রতিবেদন বাংলাদেশের স্নাতক সম্মান ডিগ্রিধারীদের প্রায় ৪৭ শতাংশ বেকার। প্রতিবছর লাখো শিক্ষার্থী তাদের শিক্ষা জীবন সমাপ্ত করে শ্রমবাজারে প্রবেশ করে, যার ৫০ শতাংশ বেকার। আমার জানামতে এমন একজন আছে, যে ভীষণ মেধাবী এবং সৃজনশীল। কিন্তু সে চাকরি করে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চুক্তিভিত্তিক এবং অত্যন্ত কম বেতনে। যা দিয়ে তার সংসার চালানো ভীষণ কষ্টের। করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে গত  বছর থেকে সে বেতন পায় না। সে একটি চাকরির জন্য বাড়ি বিক্রি করে অর্থও জোগাড় করতে চায়। এমতাবস্থায় সেও চায় সুযোগ পেলে বিদেশে চলে যাবে।

একসময় প্রশাসন ক্যাডারে লোকপ্রশাসনের শিক্ষার্থীদের প্রাধান্য ছিল। এখন সেটিও নেই। প্রশাসন,পুলিশ,পররাষ্ট্র ক্যাডারে সকলের অসীম আগ্রহ। অন্যদিকে কৃষিবিদ, চিকিৎসক, প্রকৌশলী তারাও প্রশাসনে ঝুঁকছে। সব মিলিয়ে একটি জগাখিচুড়ি অবস্থা।

বহু মেধাবী শিক্ষার্থী দেশ ছাড়ছে। কেউ মেধার মূল্যায়ন পায়নি সেই কষ্টে। কেউবা ভালো সুযোগ পাচ্ছে, তাই চলে যাচ্ছে। এই যে মেধা পাচার হচ্ছে এর খেসারত একদিন হয়তো আমাদের গুনতে হবে। একদিকে কেন মেধাবীরা বিদেশে যেতে চাইছে, সেটা নিয়ে বিষোদগার করছি। অন্যদিকে চিকিৎসক, প্রকৌশলী, কৃষিবিদ তাদের নিজ দক্ষতায় সাধারণ ক্যাডারে কেন আসবে সেটি নিয়ে সমালোচনা। অন্যদিকে যে যে বিষয়ে দক্ষ তার সে রকম কাজ নেই, হতাশ হয়ে ঘুরছে শত শত বেকার। একজন তরুণ যখন পরিবার সমাজ রাষ্ট্রীয় জায়গায় যথাযোগ্য মর্যাদা এবং সম্মান পায় না তখন সে স্বাভাবিকভাবে বেঁচে থাকার জন্য বিদেশ-বিভুঁইয়ে হতে চাইতে পারেন। অথচ তরুণরাই ইতিহাস সৃষ্টি থেকে শুরু করে সর্বস্তরে রুখে দাঁড়ায়। একসময় বাংলাদেশের রাজনীতিতে মেধাবীরা অংশগ্রহণ করতেন। সাহিত্য সংস্কৃতিতে পদচারণা করতেন ভীষণ মেধাবীরা। এখন পর্যাপ্ত পৃষ্ঠপোষকতা, খেলার মাঠ, সাহিত্য আড্ডা পরিলক্ষিত হয় না। সবকিছুর মধ্যে তৈরি হয়েছে এক ধরনের শূন্যতা।

এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, দেশ থেকে প্রতি বছর পাঁচ হাজার মেধাবী শিক্ষার্থী পাড়ি জমান। তার মধ্যে ৭৫ থেকে ৮০ শতাংশই ফিরছে না। জানা যায়, সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর একজন শিক্ষার্থীর পেছনে ব্যয় হয় ৫ লাখ টাকার অধিক, বুয়েটের একজন শিক্ষার্থীর পেছনে ১০ লক্ষ টাকা, মেডিক্যাল শিক্ষার্থীর পেছনে ব্যয় হয় ১৫ লাখ টাকা। আর এই অর্থগুলো আসে সাধারণ জনগণের করের টাকায়। আর এই মেধাবীদের সুফল ভোগ করছে উন্নত বিশ্ব। অথচ যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডা ১৯৬০ থেকে ১৯৯০ সালের মধ্যে দরিদ্র দেশগুলো থেকে এক মিলিয়ন কারিগরি ও পেশাদারিত্ব গ্রহণ করেছে।

সমাজে শান্তি ও স্থিতিশীলতার সংকট, দারিদ্র্য, ক্ষমতার ভারসাম্যহীনতা,গতানুগতিক আমলাতন্ত্রের চর্চা,দুর্নীতির প্রসার, নেতৃত্বের সংকট, নাগরিক অসচেতনতা, কর্তৃত্বমূলক ক্ষমতা কাঠামো, প্রাতিষ্ঠানিকীকরণের অভাবে মেধাবীরা দেশে থাকতে চায় না। তখন তারা দেশ থেকে চলে যাওয়াটাকেই সঠিক সিদ্ধান্ত মনে করেন। তবে সর্বস্তরে নাগরিক সচেতনতা বৃদ্ধি, শুদ্ধাচার প্রতিষ্ঠা, দুর্নীতি প্রতিরোধ, গণতন্ত্রের প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ, দারিদ্র্য বিমোচন, স্বশাসিত রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান, উগ্রবাদের বিস্তার রোধ, গণমুখী সেবা উদ্ভাবন, স্বাধীন বিচার বিভাগ প্রতিষ্ঠা, আইন-শৃঙ্খলার উন্নয়ন,সামাজিক নিরাপত্তা বিধান নিশ্চিতকরণ, যোগ্যতা ও মেধার ভিত্তিতে নিয়োগের মাধ্যমে মেধাবীদের দেশ ছেড়ে চলে যাওয়ার ঢেউ রুখতে পারে। অথচ এই সীমাবদ্ধতায়ও বাংলাদেশের কৃষি বিজ্ঞানীরা ৫০টির ও অধিক উচ্চ ফলনশীল ধান আবিষ্কার করেছেন। বাংলাদেশ এখন খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। আর এই কৃষিকে বাঁচিয়ে রেখেছেন এ দেশের কৃষকরা। তাদের সঙ্গে যদি মেধাবীদের প্রতিভা যুক্ত করা যেতো, বাংলাদেশের অর্জন হতো আকাশচুম্বী।

বিদেশের মাটিতে বাংলাদেশের তরুণেরা গবেষণা,তথ্য প্রযুক্তি এবং শিক্ষকতায় ছড়িয়ে পড়েছে।  অথচ তারা দেশের প্রথিতযশা প্রতিষ্ঠান থেকে শিক্ষালাভ করে গিয়েছেন। বিশ্বায়নের যুগে মেধাবীরা তাল মিলিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে ঠিকই। কিন্তু হারিয়ে যাচ্ছে তারা আমাদের দেশ থেকে। এভাবে হারাতে থাকলে ঘোর বিপদ। উন্নত বিশ্বে বিশ্ববিদ্যালয় এবং বিভিন্ন  প্রতিষ্ঠানের গবেষকরা তথাকথিত রাজনীতি না করে আবিষ্কারের নেশায় মত্ত থাকেন। সেই গবেষণার ফলাফল বিস্তার লাভ করে বিশ্বব্যাপী। আমরাও পারবো। কিন্তু তার পূর্বে দরকার সর্বস্তরে আন্তরিকতা, জবাবদিহি, স্বচ্ছতা।

অপরদিকে, অনেক অভিভাবক তার সন্তানকে ছেলেবেলা থেকে তৈরি করেন একপর্যায়ে বিদেশে যেতে হবে সেই মানসিকতায়। আমার পাশের ফ্ল্যাটে দুজন শিক্ষার্থী অনলাইনে বিদেশি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে অধ্যয়নে যুক্ত। করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শেষ হলে তারা দুজনেই কানাডা যাবে। অথচ মা-বাবা থাকবেন দেশে। আর এক জায়গায় দেখেছি বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান প্রযুক্তি বিষয়ে লেখাপড়া করেছে। কাঙ্ক্ষিত চাকরি পায়নি বলে ক’দিন পূর্বে যুক্তরাজ্যে পাড়ি জমিয়েছেন। আসলে আমাদের মধ্যে এক ধরনের চিন্তার সমন্বয়হীনতা কাজ করছে। একদিকে সন্তানকে আধুনিক সুযোগ-সুবিধা দিয়ে বড় করছি, অন্যদিকে নিজেদের অভিপ্রায়ে যৌথ পরিবার থেকে একক পরিবার গঠন করছি। ইচ্ছা করেই ছেলেমেয়েদের বিদেশে পড়তে যেতে উদ্বুদ্ধ করছি। দিনশেষে একা একা নিজের শেষ জীবন কাটাচ্ছি। অনেক সময় বৃদ্ধাশ্রমেও বাস করছি। দিন শেষে সন্তান কাছে থাকে না বলে দুঃখ করছি। এতে  দিনে দিনে পারিবারিক বন্ধন হালকা হচ্ছে। একে অপরের প্রতি মমত্ববোধ কমে যাচ্ছে। এ বিষয়টি নিয়ে কেউ ভাবছি না। বিশেষজ্ঞরা বলেন,পারিবারিক বন্ধনে আয়ু বাড়ে। যে পিতামাতা নিজে সুখভোগ না করে সন্তান পালন করলেন, সেই সন্তানটিও যেন হয় মানবিক। আমার বিশ্বাস মানবিক সমাজের মৃত্যু ঘটেনি। সমাজটা আছে আগের মতোই। কিন্তু সমাজের ডালে জন্ম নেওয়া পরগাছাগুলোর মূলোৎপাটন করলেই মানবিক সমাজ তার পূর্বে অবস্থানে ফিরে যাবে। তখন হয়তো মেধাবীরা বিদেশ যেতে চাইবে না। আধুনিকতার নামে পশ্চিমা সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে যৌথ পরিবারের ভিত্তিকে উৎসাহিত করি, মেধাবীদের মূল্যায়ন করি। মেধা পাচার রুখতে পরিবারের মমত্ববোধ বৃদ্ধির ক্ষেত্রে নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে বিষয়টি নিয়ে ভাবা জরুরি প্রয়োজন। দেশের ভবিষ্যৎ তরুণদের হাতে। তাদের অপার সম্ভাবনাকে কাজে লাগানোর ক্ষেত্র তৈরি করে নিজ দেশেই বাস করার অভিপ্রায় জাগাতে হবে। এতে পারিবারিক বন্ধন মজবুত হবে। শক্তিশালী হবে রাষ্ট্রীয় কাঠামো।

লেখক: অধ্যাপক, লোকপ্রশাসন বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়।

/এসএএস/এমওএফ/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
নড়াইলে ‘সুলতান মেলা’ উপলক্ষে আর্ট ক্যাম্প
নড়াইলে ‘সুলতান মেলা’ উপলক্ষে আর্ট ক্যাম্প
লোকসভা নির্বাচন: রাস্তার দাবিতে ভোট বয়কট করলেন গ্রামবাসী
লোকসভা নির্বাচন: রাস্তার দাবিতে ভোট বয়কট করলেন গ্রামবাসী
ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী স্মরণে কাল নাগরিক সভা
ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী স্মরণে কাল নাগরিক সভা
শেষ ম্যাচে জিতে সুপার লিগে গাজী গ্রুপ
শেষ ম্যাচে জিতে সুপার লিগে গাজী গ্রুপ
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ