X
শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪
৬ বৈশাখ ১৪৩১

ভ্যাট আদায়ে ন্যায্যতার ঘাটতি, নজর দেবে কে?

মোহাম্মদ সিরাজ উদ্দিন
০৬ জুলাই ২০২১, ১৭:৩৬আপডেট : ০৬ জুলাই ২০২১, ১৭:৩৬
মোহাম্মদ সিরাজ উদ্দিন আমাদের দেশে ভ্যাট আইন চালু হয়েছিল ১৯৯১ সালে। তখন ব্যবসা-বাণিজ্যে গতি মাত্র শুরু হয়েছিল, তবে বর্তমান সময়ের মতো ডিজিটাল গতি ছিল না। তখন ভ্যাট আইনটি চালু করার মূল উদ্দেশ্য ছিল অর্থনীতির প্রবাহে গতি আনার জন্য একটি কৌশলগত পরিকল্পনার অংশ। অর্থনীতিতে গতি ঠিকই এলো। তখনকার অর্থমন্ত্রী মরহুম এম সাইফুর রহমান সাহেব এ জন্য বাহবা কুড়িয়েছেন অনেক। তবে ভ্যাটে অভ্যস্ত করার চ্যালেঞ্জও ছিল ব্যাপক। কালের পরিক্রমায় এখন ভ্যাট সম্পর্কে ধারণা বেড়েছে!

আমাদের দেশে ভ্যাট সম্পর্কিত আইনটির নামই হচ্ছে-“মূল্য সংযোজন আইন-১৯৯১”, যা বর্তমানে “মূল্য সংযোজন ও সম্পূরক শুল্ক আইন-২০১২” নামে অভিহিত। আইন দু’টোতে সরাসরি “মূল্য সংযোজন কর” বা “ভ্যাট” এর সংজ্ঞা  খোঁজ করলাম- পেলাম না। তবে “কর” বা “মূল্য সংযোজন” সম্পর্কে ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে। যার সারমর্ম হলো এই মূসক হলো স্বনির্ধারণী পরোক্ষ কর। সরবরাহকৃত পণ্য বা সেবার ওপর প্রদেয় করের বিপরীতে উপকরণ কর সমন্বয় করে পণ্য বা সেবার মূল্যস্তরের প্রকৃত সেবা স্তরের মূল্য সংযোজনের ওপর আরোপিত করই হচ্ছে মূল্য সংযোজন কর বা মূসক [এখানে সংযোজনের কথা পাঠকগণ মনে রাখবেন] ।

আমি মূলত ট্যাক্স নিয়ে কাজ করছি এবং নিয়মিত লেখালেখিও ট্যাক্স নিয়েই। ভ্যাট সম্পর্কে গভীর জ্ঞান নেই। তবে ট্যাক্সের সঙ্গে ভ্যাটের একটা মৌলিক মিল থাকায় ট্যাক্সের কাজে বিভিন্ন জনকে পরামর্শ দিতে গেলে প্রসঙ্গক্রমে ভ্যাটের বিষয়টি সামনে চলে আসে। কখনও গুরুত্ব দেই, আবার কখনও তেমন গায়ে লাগাই না। সম্প্রতি একজন বন্ধু খুব অনুরোধ করলেন তার একটি ফার্মের ভ্যাটের কাজে সহযোগিতা করার জন্য। তার ভ্যাট পরিশোধের ইতিবাচক মানসিকতা দেখে আমি সত্যিই অবাক হলাম! কারণ লোকে বলে ব্যবসায়ীরা ভ্যাট পরিশোধ করতে চায় না। কিন্তু তিনি যেভাবে আগ্রহী, তাতে আমি নিজের শোনা তথ্যকে ভুল মনে হলো। একটু গভীরে গেলাম, বন্ধুটির মতো এরকম বহু ব্যবসায়ী ঠিকমতো ভ্যাট পরিশোধ করতে চায়। তাহলে সমস্যা কোথায়?

আরও একটু গভীরে যাই। ভ্যাটের চলমান আইন-কানুন ও পদ্ধতি দেখে আমি নিজেও রীতিমতো আতঙ্কিত হওয়ার অবস্থা।

ভ্যাট নির্ধারণ বিষয়ে এনবিআরের দেওয়া ব্যাখ্যাটি এরূপ: ধরা যাক কোনও একটি পণ্য ১,০০০ টাকা ক্রয় করে ১,৫০০ টাকায় বিক্রি করলে ওই পণ্যটির ক্রয়ে ১,০০০ টাকায় ১৩০.৪৩ টাকা ভ্যাট অন্তর্ভুক্ত ছিল (১,০০০ * ১১৫*১০০)। আবার ১৫০০ টাকায় বিক্রি করায় মূসক দাঁড়ায় ১৯৫.৬৫ টাকা-(১৫০০*১৫/১১৫)। পণ্যটি ১৫০০ টাকা বিক্রি করায় এখানে মূল্য সংযোজন করা হয়েছে ৫০০ টাকা। পণ্যটি ক্রয়কালে ভ্যাট/মূসক পরিশোধ করা হয়েছিল। তাই প্রকৃত সংযোজন হবে ৫০০ টাকা এবং বিক্রেতা ক্রয় স্তরের মূসক ফেরত নিয়ে বিক্রয় স্তরের প্রকৃত সংযোজনের ওপর অর্থাৎ ৫০০ টাকার ওপর মূসক পরিশোধ করবেন।

অর্থাৎ ১৫০০ টাকার ওপর পরিশোধযোগ্য মূসক ১৯৫.৯৬ টাকা থেকে ১০০০ টাকার ওপর পরিশোধিত ১৩০.৪৩ টাকা বাদ দিয়ে পরিশোধযোগ্য মূসক হবে ৬৫.৬২ টাকা (৫০০ * ১৫*১১৫)(সূত্র: https://nbr.gov.bd/faq/vat-faq/ban)

উপরের উদাহরণটি ব্যাখ্যা করলে দেখা যাবে (১০০০-১৩০.৪৩)=৮৬৯.৫৭ টাকা পণ্যে সর্বশেষ ক্রেতা/ভোক্তাকে ভ্যাট দিতে হলো (১৩০.৪৩+১৯৫.৯৬) টাকা=৩২৬.০৮৭ টাকা। বিক্রেতা লাভ করলেন =(১৫০০-৮৬৯.৫৭-৬৫.৬২)=৫৬৫.২১২ টাকা, যা বিক্রেতা বা ব্যবসায়ীর ক্রয়কৃত পণ্যের মূল্যের ৬৫% লাভ করলেন। এটা একটা উদাহরণ। প্রকৃত পক্ষে অধিকাংশ ব্যবসায়ী তাদের ক্রয়কৃত পণ্যের প্রকৃত ক্রয়মূল্য প্রকাশ না করেই ইচ্ছাকৃত লাভ ধরে বাজারে পণ্য বিক্রি করে থাকেন। ফলে  ভোক্তাকে অতিরিক্ত ভ্যাটের বোঝা বহন করতে হচ্ছে। বিপণনযোগ্য খাদ্যশস্য, জীবন রক্ষাকারী বিভিন্ন মেডিক্যাল সামগ্রী, প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের ব্যবহৃত বিভিন্ন সহায়ক যন্ত্র ইত্যাদি ভ্যাটের অন্যায্যতা থেকে রক্ষা পাচ্ছে না।

এনবিআর কর্তৃক দেওয়া এ ব্যাখ্যাকে আরও গভীরভাবে বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, একজন ব্যবসায়ী শুধু ভ্যাট আদায়কারী। সব স্তরে যুক্ত হওয়া ভ্যাট পরিশোধ করতে হবে সর্বশেষ ভোক্তাকে। পণ্যটি যতবার  হাত বদল হবে ততবারই ভ্যাট যোগ হবে এবং ব্যবসায়ীরা তাদের পূর্বে পরিশোধিত ভ্যাট সমন্বয় করার সুযোগ পাবেন। কিন্তু শেষ ভোক্তাকে সব স্তরে যোগ হওয়া ভ্যাট পরিশোধ করতে হবে। আমাদের অধিকাংশ ব্যবসায়ী তাঁর ক্রয়মূল্য প্রকাশ করতে আগ্রহী নয়। আবার কত টাকা লাভ করবেন তা মনিটরিং করা যাচ্ছে না। ফলে ক্রেতাকেই ভ্যাটের ওপর ভ্যাট দিতে হচ্ছে। শুধু তা নয়, ভ্যাটের ওপর ভ্যাট যোগ হতে থাকে। অনেকটা সুদের চক্রবৃদ্ধির মতো। এটা বড় অন্যায্যতা! এদিকটা গভীরভাবে মনোযোগ দেওয়া প্রয়োজন।

কিন্তু যদি ব্যবসাকে নির্দিষ্টভাবে জবাবদিহির মধ্যে রাখা যেত তাহলে লাভবান হতেন উভয়পক্ষ। অযাচিতভাবে ভ্যাটের পরিমাণ বৃদ্ধি হতো না, যার ফলে সব স্তরের ভোক্তা পণ্যের ব্যবহারের ক্ষেত্রে সমান সুযোগ পেতেন। অন্যদিকে ব্যবসায়ীদের আয়ের স্বচ্ছতা নিশ্চিত হলে তারা সরকার পরিচালনায় ট্যাক্স পরিশোধ করে কী পরিমাণ অবদান রাখছেন তা স্পষ্টভাবে দেখা যেত, যা তারা দাবি করতে পারতেন। উল্টো এখন ব্যবসায়ীরা অভিযোগের শিকার হন, তারা জনগণ থেকে ভ্যাট আদায় করেন, কিন্তু সরকারকে দিচ্ছেন না।

অন্যদিকে ব্যবসায়ী যেহেতু পণ্যের প্রকৃত ক্রয়মূল্য গোপন রাখেন সেহেতু পুরো বিক্রয়মূল্যের ওপর ভ্যাট পরিশোধ করতে হয়, যার ভার পড়ে শেষ পর্যন্ত সর্বশেষ ক্রেতার ওপর বা ভোক্তার ওপর। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির এটাও একটা বড় কারণ। ভ্যাট আইনেও এমনটা সমর্থন করেন। যা সরাসরি অন্যায্য।  ভ্যাট আদায়ে বা পরিশোধে এ যে অন্যায্যতা বিরাজমান এটা অনেকে জানেন, কিন্তু মুখ খুলছেন না কেউ-ই।

ভ্যাটের গরমিল আদায় খোদ একটা কেক উৎপাদনকারী সুমিস নামনীয় একটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে। প্রতিষ্ঠানটি ২০১৯ সালের জুলাই থেকে ২১ সালের এপ্রিল পর্যন্ত ভ্যাট ফাঁকি দিয়েছে ৭ কোটি ১৩ লাখ ১৪৩ টাকা, যার ওপর সুদ আসে ৩ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। ওই প্রতিষ্ঠানের মালিক বলছেন এনবিআর-এর লোকজন কারাখানা পরিদর্শন করে ৫% ভ্যাট নির্ধারণ করেছেন। এখন ভ্যাট গোয়েন্দা এসে বলে ১৫% ভ্যাট দেওয়া প্রয়োজন। (সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো অনলাইন-২৬ জুন ২০২১)

প্রশ্ন হলো ক্রিমযুক্ত কেক যা শিশুদের প্রিয় খাদ্য, সেখানেও ১৫% ভ্যাট বা ৫% ভ্যাট আছে। কিন্তু  ক্রেতাদের কোন অবস্থায় পরিষ্কার করা হচ্ছে না, কেকের দামের মধ্যে কত % ভ্যাট প্রকৃতপক্ষে দোকানি আদায় করছেন। এটাও ভ্যাট আদায়ে অন্যায্যাতা, যার অবসান হওয়া দরকার।    

ভ্যাটের এ অন্যায্যতা শুধু ম্যানুয়াল ব্যবসায় ক্ষেত্রেই বিরাজমান তা নয়। একইভাবে আমরা দেখি অনলাইন ব্যবসার ক্ষেত্রেও। যেমন, বর্তমান প্রেক্ষাপটে প্রচলিত ম্যানুয়াল ব্যবসা ও অনলাইন শপ/ ই-কমার্সের ক্ষেত্রে ভ্যাটের অন্যায্যতার একটি তুলনামূলক চিত্র:

অনলাইনে/ই-কমার্সের ক্ষেত্রে ভ্যাট নিবন্ধনের বাধ্যবাধকতা: বার্ষিক টার্নওভার যাই হোক না কেন ধারা ৬ অনুযায়ী নিবন্ধনের বাধ্যবাধকতা আছে। (সূত্র: সাধারণ আদেশ নং ১৭/মূসক/২০১৯)।

ম্যানুয়্যাল ব্যবসার ক্ষেত্রে: বার্ষিক টার্নওভার ৩ কোটি টাকা পর্যন্ত নিবন্ধনের প্রয়োজন নাই। বার্ষিক টার্নওভার ৫০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত তালিকাভুক্তিরও প্রয়োজন নাই। বার্ষিক টার্নওভার ৫০ লক্ষ টাকা থেকে ৩ কোটি পর্যন্ত হলে টার্নওভার করদাতা হিসেবে তালিকাভুক্তির বাধ্যবাধকতা আছে।

অনলাইনে/ই-কমার্সের ক্ষেত্রে সেলস কমিশনের ওপর ৫% ভ্যাট পরিশোধযোগ্য (সূত্র: ব্যাখ্যা পত্র ০২/মূসক/২০১৯ এবং মূসক আইন ও সম্পূরক শুল্ক আইন ২০১২-এর তৃতীয় তফসিল)।

ম্যানুয়াল ব্যবসার ক্ষেত্রে বার্ষিক টার্নওভার ৫০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ভ্যাট ০%। বার্ষিক টার্নওভার ৫০ লক্ষ টাকা থেকে ৩ কোটি পর্যন্ত হলে ভ্যাট হার হবে ৪%। কিন্তু এখানে বিক্রেতা কত টাকা লাভ করলেন তার কোনও তথ্য মনিটরিং ব্যবস্থা নাই। যার ফলে ভোক্তা থেকে বিভিন্ন হারে ভ্যাট আদায় করলেও সরকার পাচ্ছে মাত্র ৪%।

অনলাইনে/ই-কমার্সের ক্ষেত্রে বিক্রয়কৃত পণ্যের ক্রয় মূল্যের ওপর ভ্যাট: পণ্য ক্রয় পর্যায়ে ক্রয় মূল্যের ওপর ভ্যাট পরিশোধ থাকার বাধ্যবাধকতা আছে (সূত্র: ১৮৬- আইন/২০১৯/৪৩-মূসক, ব্যাখ্যা পত্র ০২/মূসক/২০১৯ এবং এস আর ও নং ২৩৪-আইন/২০১৯/৭০ মূসক সেবা কোড S০৯৯.৬০)।  

ম্যানুয়াল ব্যবসার ক্ষেত্রে এই আইন প্রযোজ্য নয়।

অনলাইনে/ই-কমার্সের ক্ষেত্রে  উৎসে আয়কর কর্তন: পণ্য ক্রয়ের ক্ষেত্রে মার্চেন্ট/ভেন্ডরকে তার পাওনা পরিশোধের ক্ষেত্রে উৎসে আয়কর কর্তনের বাধ্যবাধকতা থাকায় মার্চেন্টরা  ৩% - ৭% অতিরিক্ত দাম দাবি করে। ফলে পণ্যের দাম বেড়ে যায় (সূত্র: আয়কর অধ্যাদেশ ১৯৮৪ এর ধারা ৫২ এর উপধারা (২)-এর  আইটেম ১৫ এবং বিধি ১৬)।

ম্যানুয়াল ব্যবসার ক্ষেত্রে পণ্য ক্রয়ের ক্ষেত্রে মার্চেন্ট/ভেন্ডরকে পাওনা পরিশোধের ক্ষেত্রে উৎসে আয়কর কর্তনের বাধ্যবাধকতা না থাকায় মার্চেন্ট/ ভেন্ডরগণ ৩% - ৭% কম দামে পণ্য সরবরাহ করে। ফলে পণ্যের দাম কম থাকে।

অনলাইনে/ই-কমার্সের ক্ষেত্রে শিপিং চার্জ/পার্সেল ডেলিভারি চার্জ (আয়): ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলো পণ্যের দামের পাশাপাশি পণ্য কাস্টমারের কাছে পৌঁছানো খরচও (কুরিয়ার সার্ভিস চার্জ) ইনভয়েসে যোগ করে থাকে। পার্সেল পৌঁছানো এই সেবাটি  এসআরও নং-১৮৬- আইন/২০১৯/৪৩-মূসক অনুযায়ী সেবার কোড S০২৮.০০ কুরিয়ার ও এক্সপ্রেস মেইল সার্ভিসের অন্তর্ভুক্ত। এই সেবা মূল্যের ওপর ১৫% ভ্যাট প্রযোজ্য। যার কারণে অনলাইন পণ্য ক্রয় করে অতিরিক্ত ভ্যাট দিতে হচ্ছে  ভোক্তাকে।
ম্যানুয়াল ব্যবসার ক্ষেত্রে কাস্টমার দোকানে এসে পণ্য নিজেই নিয়ে যায় বিধায় প্রযোজ্য নয়।

অনলাইনে/ই-কমার্সের ক্ষেত্রে ব্যবসা সংশ্লিষ্ট খরচের ভ্যাট/উৎসে আয়কর কর্তন:  

ক্লাউড সার্ভিসের ওপর প্রযোজ্য মূসক ৫% (সূত্র: এস আর ও নং- ১৪৯-আইন/২০২০/১১০-মূসক, সার্ভিস  কোড S ০৯৯.১০)। আয়কর  ২০% বিদেশি কোম্পানি থেকে পণ্য বা সেবা গ্রহণের ক্ষেত্রে (সূত্র: আয়কর অধ্যাদেশ ১৯৮৪ এর ধারা ৫৬)।

ম্যানুয়াল ব্যবসার ক্ষেত্রে উৎসে কর্তনকারী সত্তা না হলে তা হওয়ায় প্রযোজ্য নয়।

অনলাইনে/ই-কমার্সের ক্ষেত্রে  ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের ওপর ভ্যাট ১৫%। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের নথি নং- ০৮.০১.০০০০.০৬৮.০৯.০০৩.১২/৩২, দেশি/বিদেশি এবং পণ্য /সেবা ভেদে উৎসে আয়কর হার ০.৬৫% থেকে ২০% পর্যন্ত (সূত্র: আয়কর অধ্যাদেশ ১৯৮৪ এর ধারা ৫২ এএ এবং ধারা ৫৬)।

ম্যানুয়্যাল ব্যবসার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়।

অনলাইনে/ই-কমার্সের ক্ষেত্রে  যেসব সেবা বা পণ্য ক্রয়ের ওপর ভ্যাট প্রযোজ্য সেসব পণ্য বা সেবা ক্রয়ের ওপর উৎসে মূসক কর্তনে বাধ্যবাধকতা আছে । এসআরও নং-১৪৯-আইন/২০২০/১১০-মূসক। একইরকমভাবে  উৎসে আয়কর কর্তনে ও পরিশোধের বাধ্যবাধকতা আছে।  রেফারেন্স: আয়কর অধ্যাদেশ ১৯৮৪-এর ধারা ৫২ থেকে ধারা ৫৬ এবং বিধি-১৬।

ম্যানুয়াল ব্যবসার ক্ষেত্রে বাধ্যবাধকতা নাই।

অনলাইনে/ই-কমার্সের ক্ষেত্রে  কালেকশনের জন্য এমএফএস/ পেমেন্ট গ্যাটওয়ের ওপর অনেক বেশি নির্ভরশীলতা থাকায় আর্থিক ব্যয় বাড়ে এবং এই খরচের ওপর ১৫% ভ্যাট পরিশোধযোগ্য। সাধারণ আদেশ নং-০৩/মূসক/২০২০।

ম্যানুয়াল ব্যবসার ক্ষেত্রে সরাসরি ক্যাশ টাকা গ্রহণ করায় এই খরচ নাই।

অনলাইনে/ই-কমার্সের ক্ষেত্রে ফুড ডেলিভারি সেবার ক্ষেত্রে ১৫ শতাংশ ভ্যাট আছে। বর্তমানে ফুড ডেলিভারি সেবার ক্ষেত্রে ১৫ শতাংশ ভ্যাট প্রযোজ্য। যা শুধু অনলাইন ও অ্যাপভিত্তিক সেবার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।

ম্যানুয়াল ব্যবসার ক্ষেত্রে সরাসরি হোটেল বা রেস্তোরাঁ থেকে অফলাইন ডেলিভারি হলে এই ভ্যাট প্রযোজ্য হয় না। বর্তমান করোনা মহামারিতে ব্যবসা বাণিজ্য চলমান রেখে আর্থিক প্রবাহ ধরে রাখার ক্ষেত্রে ই-কমার্স বা অনলাইন ব্যবসার গুরুত্ব অনেক। কিন্তু ভ্যাটের অন্যায্যতার ফলে যেন এ সেবা খাতটি ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেদিকে নজর রাখা জরুরি।

যেকোনও দেশের সরকারের সকল অঙ্গ প্রতিষ্ঠানের সমন্বিত পরিচালনার জন্য দেশের নাগরিকদের দেওয়া প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ করের ওপর নির্ভর করতে হয়। এটা স্বাভাবিক। কিন্তু ভুল নীতি বা আইনের ভুলের কারণে যেন জনগণ ক্ষতিগ্রস্ত না হয় বা অতিরিক্ত ট্যাক্সের ভার বহন করতে না হয় সেটা খেয়াল রাখতে হবে। নতুবা সমাজে অন্যায় বাড়বে, রাষ্ট্রের নাগরিকদের ক্ষোভ বৃদ্ধি পাবে। একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ীরা সরকারের ভ্যাটের দোহাই দিয়ে অর্থনৈতিক অসমতা তৈরি করবে। ফলে একটা বৈষম্যের অর্থনীতি তৈরি হবে। একশ্রেণির লোক ব্যাপক ধনী হবে। অধিকাংশ নাগরিক তাদের ক্রয় ক্ষমতা হারাবে। যেকোনও সরকারের পক্ষে তা সামাল দেওয়া কঠিন হবে। আমরা এখন মধ্যম উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা লাভ করেছি। তাই ভ্যাট আদায়ে ন্যায্যতা নিশ্চিত করা এখন সময়ের দাবি।

লেখক: আয়কর আইনজীবী
 
 
/এসএএস/এমওএফ/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
শিশুকে পালাক্রমে ধর্ষণের অভিযোগে ৪ কিশোর সংশোধনাগারে
শিশুকে পালাক্রমে ধর্ষণের অভিযোগে ৪ কিশোর সংশোধনাগারে
পাঞ্জাবের আশুতোষের ঝড়ও যথেষ্ট হলো না, মুম্বাইয়ের তৃতীয় জয়
পাঞ্জাবের আশুতোষের ঝড়ও যথেষ্ট হলো না, মুম্বাইয়ের তৃতীয় জয়
কানের সমান্তরাল বিভাগে ঢাকার দুই নির্মাতার স্বল্পদৈর্ঘ্য
কানের সমান্তরাল বিভাগে ঢাকার দুই নির্মাতার স্বল্পদৈর্ঘ্য
এআই প্রযুক্তিতে প্রথম বাংলা গানের অ্যালবাম
এআই প্রযুক্তিতে প্রথম বাংলা গানের অ্যালবাম
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ