X
বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪
৫ বৈশাখ ১৪৩১

পরীমণির অপরাধ খুঁজে ফেরা

নাজনীন মুন্নী
০৬ আগস্ট ২০২১, ১৪:২৫আপডেট : ০৬ আগস্ট ২০২১, ১৪:২৫

নাজনীন মুন্নী পরীমণিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। চলচ্চিত্র জগতের নায়িকা গ্রেফতার হয়েছেন ‘চলচ্চিত্রের ভঙ্গিতে’। পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রের চেয়েও বেশি সময় ধরে চলেছে এই গ্রেফতার প্রক্রিয়া। টানটান উত্তেজনা, টেনশন। কিন্তু এই চলচ্চিত্রের মূল কাহিনি আসলে কী, সেটা কেউ বুঝলো না।

পরীমণির বিরুদ্ধে অভিযোগ কী আসলে? তার বাড়ি তল্লাশির আদেশ ছিল কিনা, তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা ছিল কিনা, তিনি কোনও অপরাধী চক্রের সঙ্গে জড়িত কিনা– কিছু জানা গেলো না। তার বাসায় পাওয়া গেলো মদ। আর চারদিকে উল্লাস ধ্বনি শুনতে পেলাম আমি। আরে এই তো পাওয়া গেছে খুনের আসামি। সিরিয়াসলি? আপনারা মনে করেন নায়িকার বাসায় শুধু ধর্মগ্রন্থ পাওয়া যাবে?

‘পাওয়া গেছে তোমারে’– এমন এক ভাব নিয়ে ধরা হলো পরীমণিকে। অপরাধ সঙ্গে সঙ্গে জানা গেলো না। বিপুল মদ আর মদের গ্লাসও আটক করে পরীমণির সঙ্গে নিয়ে যাওয়া হলো।

অপরাধ জানা গেলো ২৪ ঘণ্টা পর। আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলন খুব মনোযোগ দিয়ে শুনলাম।

সেখানে পরীমণির বিরুদ্ধে অভিযোগ দেখানো হলো– তার বাড়িতে  বিদেশি মদের বোতল পাওয়া গেছে, তিনি মদে আসক্ত, তার বাড়িতে একখানা মিনি বার আছে, ডিজে পার্টি হতো পরীমণির বাড়িতে। সে বিয়ে করেছে একাধিক।

এরমধ্যে কোনটা অপরাধ আমার মাথায় এলো না। যদি এগুলো সব অপরাধ হয় তাহলে তো অভিজাত এলাকার সব মানুষই জেলে থাকার কথা।

আমি কোনও বড় অপরাধ খুঁজছিলাম। বড়লোকের আলাভোলা সরল পুরুষদের ধরে এনে পরীমণি জোর করে মদ খাইয়ে তাদের নষ্ট করছেন– নিদেনপক্ষে এই অভিযোগ এলেও হতো। পরীমণি যা করেছে একা করেছেন। ব্রিফিংয়ের পরও বোঝা গেলো না তিনি আসলে কার কী ক্ষতি করলেন বা কোন অপরাধে অপরাধী।

পরীমণি গরিব ঘর থেকে এসে নায়িকা হয়েছেন। সেই নায়িকা হতে নানা সিঁড়ি ব্যবহার করেছেন অভিযোগ তার বিরুদ্ধে। কিন্তু সেই সিঁড়ি ভাঙতে তিনি কাউকে বিপদে ফেলেছেন কিনা সেটা বলা হলো না কোথাও। গ্রাম থেকে উঠে আসা মেয়ে কেবল সিঁড়ি ভেঙেছেন অন্যের দয়ায় নয় নিশ্চয়ই, শ্রম- মেধা ও তার সৌন্দর্যও ছিল চলচ্চিত্রে প্রতিষ্ঠা পাওয়ার।

যেহেতু জানা গেলো না অপরাধ কী, তাই সবাই সবার মতো গল্প বলছে। সবচেয়ে বেশি চালু গল্প হলো যেহেতু বোট ক্লাবের ঘটনায় পরীমণি ক্ষমতাবানদের বিরুদ্ধে আঙুল তুলেছেন, তাদের জেলে নিয়েছেন, সেই প্রতিশোধ এটি। কারণ, নাসির ইউ আহমেদকে যে কায়দায় গ্রেফতার করা হয়েছে তিনিও সেরকমভাবেই হয়েছেন। পার্থক্য একটাই– নাসির ইউ আহমেদের নামে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ছিল। অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা না পেলে গ্রেফতারও সম্ভব নয়, কাজেই সেই প্রমাণ নিশ্চয়ই ছিল। কিন্তু পরীমণির বিরুদ্ধে অভিযোগ কী আসলে?

তিনি একটা প্রতিষ্ঠিত গোষ্ঠীকে হেনস্তা করেছেন? মৌমাছির চাকে ঢিল মেরেছেন। বিষয়টা কি এমন?

ফিরে আসি মদ রাখা প্রসঙ্গে। এই দেশের অভিজাত এলাকার কোন বাসায় মদ বা অ্যালকোহল পাওয়া যাবে না? কেবল অভিজাত নয়, মধ্যবিত্তরাও এই আয়োজনে ঢুকে গেছেন। এই দেশে মদ রাখার লাইসেন্স তো দেওয়া হয়। এসব নতুন করে অপরাধ হিসেবে ভাবা হচ্ছে কিনা সেটাও সবাইকে জানানো দরকার।

পরীমণি অপরাধ করলে অবশ্যই শাস্তি হবে। মদ খাওয়াই যদি অপরাধ হয় তবে তার সঙ্গে বসে মদ খাওয়া মানুষগুলো কেন আড়ালে থাকবেন? তাদের চেহারাগুলোও আমরা দেখতে চাই। নাকি পরীমণি মদ খেলেই কেবল দোষের? অন্য যে কেউ খেতে পারবেন!

পরীমণিকে রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। হন্যে হয়ে খোঁজা হচ্ছে তার বড় বড় অপরাধ। আমিও চাই অপরাধ খুঁজে পাওয়া যাক। প্রমাণিত অপরাধ। গুরুতর অপরাধ। আর তা না হলে গুজব ছড়াতে থাকবে। জনগণ জানবে এই দেশে ক্ষমতাবানদের বিপক্ষে দাঁড়ানো যায় না, জনগণ জানবে অভিযোগ ছাড়াই গ্রেফতার করা যায়, জনগণ জানবে হঠাৎ তার দরজায় কলিং বেল বাজতে পারে। সেটা কখন ঘটে, কবে ঘটেছিল একটু ভাবলেই মনে পড়বে।

লেখক: সাংবাদিক

/এসএএস/এমওএফ/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
বৈধপথে রেমিট্যান্স কম আসার ১০ কারণ
বৈধপথে রেমিট্যান্স কম আসার ১০ কারণ
জয়পুরহাটে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ও চট্টগ্রামে কাস্টমসে দুদকের অভিযান
জয়পুরহাটে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ও চট্টগ্রামে কাস্টমসে দুদকের অভিযান
বাংলাদেশ ও আর্জেন্টিনা যেসব খেলায় সহযোগিতা প্রত্যাশী
বাংলাদেশ ও আর্জেন্টিনা যেসব খেলায় সহযোগিতা প্রত্যাশী
জনসচেতনতাই টেকসই উন্নয়নের পথ সুগম করতে পারে: স্পিকার
জনসচেতনতাই টেকসই উন্নয়নের পথ সুগম করতে পারে: স্পিকার
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ