X
শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪
৬ বৈশাখ ১৪৩১

সোশ্যাল মিডিয়ার সহজ শিকার

মোহাম্মদ আসাদ উজ জামান
০৪ অক্টোবর ২০২১, ২০:১৩আপডেট : ০৪ অক্টোবর ২০২১, ২২:০৩
মোহাম্মদ আসাদ উজ জামান আমি বিখ্যাত হতে চাই। আমার ভেতর বিখ্যাত হওয়ার একটি হুজুগ এসেছে। কিন্তু বিখ্যাত হওয়ার মতো আমি কিছু করিনি। আমি জানি বিখ্যাত হতে গেলে বড় কিছু করতে হয়। মানুষের জন্যে দেশের জন্যে এমনকি পরিবারের জন্যেও অনেক কিছু ত্যাগ করতে হয়। কিন্তু এগুলো আমার মাঝে নেই। দেশ, সমাজ, ... এমনকি ব্যক্তি পর্যায়েও আমার কোনও ত্যাগ নেই। তারপরেও আমি আশা ছাড়ছি না, আমি বিখ্যাত হয়েই ছাড়বো। এক্ষেত্রে আমার একমাত্র পুঁজি অন্যরা কী ভুল করেছে। আসলে এই কথাটাও ঠিক হলো না, আমার চোখে অন্যের ভুল তুলে ধরেই আমি বিখ্যাত হতে চাই। এটাই আমার একমাত্র লক্ষ্য। আর বিখ্যাত বলতে মানুষ আমার কাজকর্মে উপকৃত হবে সেটা নয়, বিখ্যাত বলতে মানুষকে আমি তাতিয়ে রাখতে চাই। অন্যের দোষ-ত্রুটি তুলে ধরে নিজের সারবিহীন জ্ঞানগর্ভ কথা দিয়েই যেন বিখ্যাত হতে চাই।

আমার বিখ্যাত হওয়ার ক্ষেত্র বলতে এই সোশ্যাল মিডিয়া! এখানে আমি ওঁৎ পেতে বসে থাকি, অন্যরা কী বলতে গিয়ে কী ভুল করলো। আবার কথাটা ঠিক করে নিচ্ছি, অন্যরা ভুল করেছে এমন নয়, আমি কী ভুল মনে করি তাই দিয়েই চালিয়ে নিতে চাই। যে লেখাটা কারোর চোখেই পড়ার কথা নয়, তেমন গুরুত্বপূর্ণ কোনও লেখা নয়, এমনকি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ কেউ লিখেছেন তাও নয়। দেখা গেলো নারী পুরুষ নিয়ে কিছু একটা লেখা। অথবা ধর্ম সমাজ নিয়ে কিছু লেখা। যেগুলো আমরা পারিবারিক বা বন্ধুমহলে নিছক কথা হিসেবে চালিয়ে দেই। কিন্তু এরকম একটি লেখা যদি আমার চোখে পড়ে তাহলেই হলো, সঙ্গে সঙ্গে আমি ওটার স্ক্রিনশট নিয়ে আমার জ্ঞানগর্ভ আলোচনা শুরু করে দেবো, হয়তো আমিও এই ধরনের কথা বলে অভ্যস্ত। কিন্তু এই সুযোগ আমি হাতছাড়া করতে রাজি নই, আমাকে একটু দেখিয়ে না দিলে চলবে না, কারণ আমি বিখ্যাত হতে চাই। আর এমন না, আমি যা লিখছি সবই সঠিক! আর এতে করে সমাজ বা ফেসবুকের মানসিকতার বিশেষ উপকার দূরে থাক, দিনে দিনে আমাদের এই ধরনের মানসিকতা নিয়ে আমরা নিজেরাই নিচে নেমে যাচ্ছি, সুযোগ পেলেই আমরা এর ওর লেখা নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ছি, সারাক্ষণই তেতে থাকছি, না হয় তাতিয়ে রাখছি। কিন্তু জানেন, ফেসবুকের একটি বিশেষ সুবিধা আছে, যা মেসেঞ্জার বা ইনবক্স নামে পরিচিত।

যে কথাটা আমার কাছে মনে হয়েছে আপত্তিকর, বা ঠিক নয়, ইনবক্সে তার সঙ্গে যোগাযোগ করেও বলা যায়, এবং যথেষ্ট সম্মানের সঙ্গে বললে অন্যের পক্ষে কথাটা বুঝতে সহজ হয়। মাঝে মাঝে ইনবক্সেও এরকম কথা বলি, কিন্তু সে কথায় অন্যের প্রতি কোনও সম্মান খুব একটা থাকে না, শিক্ষা দেওয়ার একটা বাসনা থেকেই অন্যের ভুল ধরিয়ে দিতে চাই। এতে হয়তো অন্যপক্ষও অন্য রকম আচরণ করতে পারে। এই সুযোগ নিয়ে দেখা যায় আবার মেসেঞ্জারের স্ক্রিনশট, আবার একপাক্ষিক ভালো মন্দ আলোচনা, আবার সেই তেতে ওঠা, অথবা তাতিয়ে রাখা!

এই স্ক্রিনশট নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে এমনও হয় যে একজন মানুষের পুরো লেখাটার স্ক্রিনশট নেওয়া হচ্ছে না। কারোর চিন্তায় যতটুকু ভুল মনে হচ্ছে সেটুকু নিয়ে একপাক্ষিক আলোচনা চালিয়ে নেওয়া হচ্ছে। হয়তো আংশিক স্ক্রিনশট নেওয়া পুরো লেখাটায় বিশেষ একটি অর্থ থাকলেও থাকতে পারে। আর কোনও অর্থ না থাকলেই কী, অন্যের অনর্থ টেনে এনে কেন নতুন করে বিতর্ক সৃষ্টি করতে হবে, যখন এই বিতর্ক আমাদের পারস্পরিক সম্পর্কে সম্মানজনক কোনও ভূমিকা রাখতে পারছে না।  
জীবনে আমি অনেকবারই রেগে গেছি। খুব বাজেভাবেই রেগে গেছি। এখানে আমার রাগের কৈফিয়ত বা কী কারণে রেগেছি সেটা বিবেচ্য নয়। আমি গড়পড়তায় একজন সাধারণ মানুষ। ঘরে বাইরে অফিসে আমাদের অনেক ধরনের সীমাবদ্ধতা থাকে, এটা নিয়েই আমাদের চলতে হয়। চাইলেই পুরো মনোভাব আমরা প্রকাশ করি না, বা করতে পারি না। কিন্তু এই মানসিক চাপ মনের মধ্যে থেকেই যায়। তাই রেগে যাওয়ার সুযোগ পেলে আমরা হয়তো রাগের মাত্রা ধরে রাখতে পারি না, আমরা পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলি। পড়ে কিন্তু ঠিকই মনে হয় কাজটা ঠিক করিনি, মনে মনে অনুশোচনাও হয়। কিন্তু অন্যের বেলায় এই আমিই আবার অন্যরকম।

কারোর রাগ বা ঝগড়ার একটি ভিডিও করতে পারলেই হলো, এই ধরনের একটি ভিডিও বেশ কিছু দিনের জন্যে বিখ্যাত হয়ে থাকায় বিশেষ ভূমিকা রাখে; সোশ্যাল মিডিয়া এরকম একটি ভিডিও ছাড়তে পারলে নানা রিঅ্যাকশন, কমেন্ট, শেয়ারে কয়েক দিনের জন্যে আমি রীতিমতো তেতে থাকবো। এর সঙ্গে দুই একটি যুক্তিগ্রাহ্য বাক্য ব্যবহার করতে পারলে তো কথাই নেই। এরকম একটি ভিডিওতে পক্ষ-বিপক্ষ দোষ গুণ সমাজ ধর্ম, কত ধরনের যে অভিব্যক্তি আর অনুভূতি চলে আসে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। এতে মনে হয় আমাদের একটা অংশ যেন বলার জন্যে মুখিয়েই থাকি, বলার সুযোগটা পেলেই হলো। রেগে যাওয়ার বা ঝগড়ার একটি ভিডিওতে রিঅ্যাকশন বা কমেন্ট করতে পারলেও মনের মধ্যে একটি জোশ চলে আসে, দেখিয়ে দেওয়ার জোশ। কিন্তু কাকে দেখাচ্ছি, কী দেখাচ্ছি, কে দেখছে, কী দেখছে ... এই হিসাবটা জানা হয় না। কিছু একটা বলার জন্যে মুখিয়ে থাকার কারণেই হয়তো আমরা এখন শুধু সোশ্যাল মিডিয়া না, বাস্তবেও চলতে ফিরতে খুঁজে বেড়াই এরকম সহজ শিকার!

তবে এই বিখ্যাত হওয়ার তাড়না শুধু আমার একার মধ্যেই না,  হয়তো আরও অনেকেই আমার মতো বিখ্যাত হওয়ার আশায় বসে থাকতে পারেন।

এই ধরনের ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচারে একটি সুবিধা হতে পারে, অপরাধীকে সহজে ধরা যায়। কিন্তু এটাই কি আইনের সহজ পথ হওয়ার কথা! আইন তার নিজস্ব গতিতে চলবে, এবং যেকোনও অপরাধই সহজভাবে আইনের আওতায় চলে আসবে এটাই সবার চাওয়া হতে পারে। যেহেতু সোশ্যাল মিডিয়ায় বয়সের ওপর তেমন কোনও নিয়ন্ত্রণ রাখে না, সেহেতু অনেক সময় ‘মারাত্মক’ কিছু ভিডিও অনেকের মনে বড় ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে, বিশেষ করে ছোট বা অনেক বয়স্কদের মনে। তারা এ ধরনের মানসিক ধাক্কা থেকে সহজে বের হয়ে আসতে পারেন না। আবার কিছু কিছু মানুষের মনে এই ধরনের ভিডিও তাদের মনের “দানব” প্রভাবকেও বের করে আনতে পারে। মনে রাখতে হবে, সবার ভেতরেই ভালো এবং মন্দ আছে।  

আমাদের মনে রাখতে হবে যে আমরা একটি সমাজে বাস করি। যে সমাজে একজন মানুষের সামাজিক সম্মান থাকার কথা, ব্যক্তি সম্মান থাকার কথা, তা মানুষটির পেশা বা পরিচয় যাই হোক না কেন। একই সঙ্গে এটি অনেক বড় একটি সমাজ, নানা কারণেই আমাদের সবার মাঝেই কমবেশি অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। মাঝে মাঝেই আমাদের এই অস্থিরতা সামাজিক দুর্ঘটনা হিসেবে দেখা যায়। হাসপাতালে ডাক্তার নার্সের সঙ্গে রোগী বা রোগীর আত্মীয়ের, রাস্তায় পুলিশ বা ট্রাফিক পুলিশের সঙ্গে পথচারীর, ভ্রাম্যমাণ আদালতের সঙ্গে দোকানির, শিক্ষকের সঙ্গে ছাত্রের– অনেক ধরনেরই অস্থিরতা থেকে বাগবিতণ্ডা থেকে ভাঙচুর, হাতাহাতি হয়ে থাকে।

আইনের দৃষ্টিতে এগুলো সবই অপরাধ, এবং বিচারযোগ্য অপরাধ। এগুলোর ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট করে বিভিন্ন পেশার মানুষকে প্রশ্নবিদ্ধ করার যে একটা চেষ্টা, এটা পুরো সমাজের জন্যেই ভীষণ ক্ষতিকর। ঘটনা বা দুর্ঘটনা যাই হোক না, দায়িত্বশীল মহল বা আইনের আওতায় এনে এগুলোর সুরাহা হওয়ার কথা। কিন্তু দেখা যায়, ঘটনার চেয়ে বিশেষ পেশার মানুষকে নিয়ে নিয়ন্ত্রণহীনভাবে আমরা বিষোদগারে মেতে উঠি। পক্ষ-বিপক্ষ নিয়ে যে যেভাবে পারি আমরা তেতে উঠি। এমনকি কিছু কিছু ঘটনায় দেখা যায়, ঘটনার চেয়ে ঘটনা কে ঘটিয়েছে সেটা বেশি বিবেচ্য হয়ে ওঠে। তখন পক্ষ-বিপক্ষ হয়ে ওঠে দল বা মতের ওপর, অপরাধের ওপর নয়। বিচারযোগ্য অপরাধেও যখন এরকম ‘দল’ বা ‘মত’-এর ওপর নির্ভর পক্ষ-বিপক্ষে যুক্তি-তর্ক নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়া তোলপাড় করা হয়, তখন বলা যায় সোশ্যাল মিডিয়ার ভূমিকা নিয়ে নতুন করে ভাবার সময় এসে গেছে।  

সোশ্যাল মিডিয়ার কারণে আমার সঙ্গে আরও একটি দল মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। এই দলের শিকার হলো বিশেষ ধরনের খবর। তারপর এই খবর নিয়ে যৌক্তিক-অযৌক্তিক নানাভাবে আলোচনা বা পর্যালোচনা; এই খবর কীভাবে পড়তে হবে, এই খবরের মানে কী, পত্রিকা কীভাবে খবরটা প্রকাশ করেছে, অন্যভাবে প্রকাশ করলে কী হতো, খবরে কী ভুল আছে, কী শুদ্ধ আছে ... এই নিয়ে নানান বিশ্লেষণ, যেন তারা হয়ে গেছেন আমাদের সমাজের খবর-পরিপাচক।

এসব লেখায় দিনে দিনে আমাদের বিভাজনটা পরিষ্কার হয়ে উঠছে। এই বিভাজন একটি সমাজের জন্যে ভয়ানক। আমাদের ধর্ম, সমাজ, মানবতা, মুক্তি এগুলো যেন যুক্তিতর্কেই সীমাবদ্ধ, তা না হলে কোনটা ভালো আর কোনটা খারাপ এই নিয়ে হাজার বছর ধরেই যুক্তি তর্ক হয়ে আসছে, কিন্তু সেই ভালোকে ধারণা করার মতো মানসিকতা আমরা গড়ে তুলে পারিনি। যার ফলে সমাজের মানুষ যেমন দিনে দিনে আরও অস্থিরতার দিকে যাচ্ছে, তেমনই মানুষের প্রতারিত হওয়ার হারও যাচ্ছে বেড়ে! ভালোর নামে, ধর্মের নামে, মুক্তির নাম, মানবতার নামে মানুষ প্রতারিত হচ্ছে প্রতিনিয়ত; খবরে কাগজ এবং সোশ্যাল মিডিয়া থেকে শুরু করে পারিবারিক মণ্ডলেও এই নিয়ে আলোচনা পর্যালোচনা চলছে, কী হলে কী হতে পারতো, কী হয়নি বলে আজকের এই অবস্থা আলোচনা চলছে ঠিকই, তেতে আছি বা তাতিয়ে রাখি, কিন্তু কোনও কিছুর কি সুরাহা হচ্ছে!        

সোশ্যাল মিডিয়ায় আলোচনার বড় একটি অংশের মূল পুঁজি হলো – আমরা কী ভাবি এবং আমরা কী মনে করছি; এই ধরনের আলোচনার সবচেয়ে ভয়াবহ দিক হলো অন্যকে বিচার করার বা ভুল প্রমাণ করার মনোভাব। যে ভাবনটা আমি ভাবছি, সেটা যে শুধু নিছক একটা ভাবনা, এটা আমরা বুঝতে পারি না। সত্য মিথ্যা ভালো মন্দ’র ভাবনা থেকে আমরা একসময় ধরেই বসি, আমিই যেন ওরকম, কিন্তু এটাই সবচেয়ে মারাত্মক ধারণা। যার ফলে ‘ধৈর্যের’ ওপর পাইকারি আলোচনার একমাত্র পরিবেশককেও মাঝে মধ্যেই ধৈর্যহারা হতে দেখা যায় বৈকি। এর ওপর অসহিষ্ণুতার কারণে প্রায়ই নানান ধরনের প্রচ্ছন্ন হুমকি, অভিশাপ দেওয়া– এগুলোও চোখে পড়ে। অথচ এই সমাজের গড়পড়তায় আমরা সবাই একই রকম। কাজের ওপর নির্ভর করে, পারিপার্শ্বিক অবস্থার ওপর নির্ভর করে আমরা কিছু না কিছু এলোমেলো কাজের সঙ্গে জড়িত। কিন্তু বলার জন্যে সহজ শিকার হিসেবে তুলে আনছি তাদেরই, যাদের ক্ষেত্রে দোষটা সবার চোখে তুলে ধরা যায়। এর পরেই শুরু হয়ে যায় পক্ষ বিপক্ষ– সেই তেতে থাকা, না হয় তাতিয়ে রাখা।

বিশেষ পেশার মানুষের দোষ নিয়ে কথা বলাটা সত্যিই সীমার বাইরে চলে গেছে। কিন্তু একটু ভালো করে তাকালেই দেখা যায়, গড়পড়তায় সব পেশাতেই নানা দোষ বা দুর্নীতি ছড়িয়ে গেছে একই হারে। অন্যকে ভুল প্রমাণ করার আলোচনায় ‘টাকাই যে একমাত্র দুর্নীতি নয়’ এই কথাটা আমরা প্রায়ই ভুলে যাই। ফলস্বরূপ, আলোচনা এবং অন্যকে আঘাত করার নামে শুরু হয়ে যায় বিভাজন, এক পেশার মানুষের সঙ্গে অন্য পাশের মানুষের বিভাজন, একই পেশার মানুষের মানুষের মধ্যেও নানান বিভাজন, এই বিভাজনে কারও লাভ হয়েছে অনুমান করা খুব কষ্টের, কিন্তু ক্ষতিটা যে সবার এটা বুঝতে সময় লাগে না, তেতে থাকা আর তাতিয়ে রাখায় দিন দিন সমাজের মানুষের মাঝে অস্থিরতা বেড়ে যাচ্ছে।      

সমাজের এই বিভাজনের কারণে ভেতরে ভেতরে আমাদের চিন্তাটাও বিভাজিত হয়ে যাচ্ছে। যার ফলে সোশ্যাল মিডিয়ায় আমরা যেমন খুব সহজেই অন্যকে ‘দুর্নীতি’র দায়ে অভিযুক্ত করতে পারি, একই সঙ্গে আমাদের পরিচিত মণ্ডলের যে কোনও পেশার মানুষকেই “নীতিবান” বলে সাফাই গাইতে পারি। বলছি না সমাজে একজন মানুষ নীতিবান থাকতে পারবেন না, কিন্তু “দুর্নীতি”র একমাত্র পরিবেশকও যখন নিজের পরিমণ্ডলের কাউকেই শুধু নীতিবান বলে চালাতে চান, তখন স্বাভাবিকভাবেই মনের মাঝে একটি খটকা চলে আসে, এটাও আমাদের চিন্তার বড় একটি ক্ষয়রোগ এবং আমরা এখন আর কোনও কিছুকেই সহজভাবে ভালো বলে মেনে নিতে পারছি না!

বর্তমান ব্যক্তিকেন্দ্রিক চিন্তাচেতনায় সামাজিক দায়বদ্ধতা অনেকটাই বিলীন। এর মাঝে আমাদের ভেতর “দেখিয়ে দেয়ার” নামে তেতে থাকা বা তাতিয়ে রাখার যে প্রবণতা তা সত্যিই সমাজের জন্যে বড় একটি হুমকি! একটি সৌহার্দ্যপূর্ণ সমাজের জন্যে সবার একটি সম্মান থাকতে হয়। এই সম্মান এমনিতেই আসবে না, এর জন্য দরকার পারস্পরিক হৃদ্যতা এবং সহাবস্থান।

আমাদের লেখায় বা কথায় যদি অন্যদের প্রতি সম্মান প্রকাশ না পায়, তা আমাদের জন্যে যেমন অসম্মানের তেমনি অন্যরা এটাকে সহজেই তাদের প্রতি বিদ্বেষ বলে মনে করতে পারেন, এতে সমাজে শুরু হয় নতুন বিভাজন। এই বিভাজিত সমাজে নতুন একটি বিভাজন সত্যিই আতঙ্কের ব্যাপার এবং এতে ক্ষতিটা সবারই। সবকিছুর ভালোমন্দ নিয়ে সারাক্ষণ যুক্তিতর্কে নেমে গেলে ব্যক্তি মনে যেমন অস্থিরতা বাড়ে, তেমনি সমাজ এবং পারিবারিক পরিমণ্ডলে বিভাজন বাড়ে, দুটোর কোনোটাই সমাজের জন্যে ভালো নয়। এভাবেই মনের অস্থিরতার সঙ্গে ভালো কিছু মেনে নেওয়ার মানসিকতাও নষ্ট হয়ে যেতে পারে। যুক্তিতর্ক দিয়ে ভালোমন্দ বিচার করার ইতিহাস আজকের নয়, কিন্তু মন্দকে এড়িয়ে ভালোকে মেনে নেওয়ার সামাজিক মানসিকতা এখনও গড়ে তোলা যায়নি। এখন আমাদের দরকার সহনশীলতার চর্চা করা, একই সঙ্গে অন্যের অনুভূতির প্রতি সম্মান দেখানো, আর সম্মান না দেখাতে পারলেও খুব একটা সমস্যা নাও হতে পারে, একটু এড়িয়ে গেলেই হলো।

ব্যক্তি সহিষ্ণুতায় আবার সমাজে সৌহার্দ্য ফিরে আনতে হলে আমাদের সবকিছু নিয়ে যুক্তিতর্ক করায় লাগাম টেনে ধরা ছাড়া উপায় নেই।

লেখক: শিক্ষক
/এসএএস/এমওএফ/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
রুবেলকে শোকজ দিলো উপজেলা আ’লীগ, প্রার্থিতা প্রত্যাহারের নির্দেশ পলকের
নাটোরে উপজেলা নির্বাচনরুবেলকে শোকজ দিলো উপজেলা আ’লীগ, প্রার্থিতা প্রত্যাহারের নির্দেশ পলকের
এমপি দোলনের গাড়ি লক্ষ্য করে ইট নিক্ষেপ, সাংবাদিক আহত
এমপি দোলনের গাড়ি লক্ষ্য করে ইট নিক্ষেপ, সাংবাদিক আহত
চরের জমি নিয়ে সংঘর্ষে যুবলীগ কর্মী নিহত, একজনের কব্জি বিচ্ছিন্ন
চরের জমি নিয়ে সংঘর্ষে যুবলীগ কর্মী নিহত, একজনের কব্জি বিচ্ছিন্ন
দাবদাহে ট্রাফিক পুলিশ সদস্যদের তরল খাদ্য দিচ্ছে ডিএমপি
দাবদাহে ট্রাফিক পুলিশ সদস্যদের তরল খাদ্য দিচ্ছে ডিএমপি
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ