X
শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪
১৫ চৈত্র ১৪৩০

শেখ হাসিনা: পরনির্ভরশীলতার অচলায়তন ভাঙার মহানায়ক

রাশেক রহমান
২৬ জুন ২০২২, ১১:৪৫আপডেট : ২৬ জুন ২০২২, ১১:৪৫

রক্ত, ঘাম ও শোকাশ্রু। এই তিনটির উৎসর্গে যখন একজন নেতা বিনির্মিত হয় তখন তিনি বিদগ্ধ হন, হয়ে ওঠেন সুদৃঢ়, সুসংহত, সাহসী ও সত্যাগ্রহী। তিনি নিজেই হয়ে ওঠেন অমঙ্গল ও অনাচার সংহারি রণতূর্য। নিজের আত্মমঙ্গলকে পরিহার করে তিনি হয়ে ওঠেন সর্বমঙ্গলের উপলক্ষ। তাঁকে ধারণ করা যায়, তবে ধারণা করা যায় না। প্রতিটি মানুষের মুখে প্রাপ্তির হাসি ফোঁটানোই তাঁর অভিলক্ষ হয়ে যায়। এই কথাগুলো খুব প্রাসঙ্গিক বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার ক্ষেত্রে, তাঁর জীবনকে বোঝার ক্ষেত্রে।     

মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর গত ২২ জুন ২০২২ তারিখের সাংবাদিক সম্মেলনে উপস্থিত ছিলাম। তাঁর কথাগুলো যেমন শুনছিলাম, তার চেয়ে বেশি মুগ্ধ হয়ে তাঁকে দেখছিলাম। সিনেমার রিলের মতো আমার মানসপটে তিনি এক একবার এক একভাবে আবির্ভূত হচ্ছিলেন। জাতির পিতার হার না মানা কন্যা, সাহসী মা, একজন সফল সংগ্রামী মানুষ, দূরদর্শী সংগঠক, সৎ-সাহসী ও ভিশনারি প্রধানমন্ত্রী এবং সর্বোপরি বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা। তাঁকে বর্ণনা করতে গেলে একবাক্যে এসব কথা বলতেই হবে।

পঁচাত্তরে ১৫ আগস্ট কালরাত্রিতে সব হারানো একজন মানুষ দুঃখের সাগর পাড়ি দিয়ে যেভাবে নিজেকে গড়ে তুলেছেন, যেভাবে সকল প্রতিবন্ধকতা মোকাবিলা করেছেন, যেভাবে প্রতিটি অধিকারহারা মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন, তা বিশ্ব নেতৃত্বের ইতিহাসে এক এবং অনন্য বিস্ময়। 

১৯৮১ সালের ১৭ মে দেশে ফেরার আগে আমেরিকান সাপ্তাহিক পত্রিকা নিউজউইককে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, ‘জীবনে ঝুঁকি নিতেই হয়। মৃত্যুকে ভয় করলে জীবন মহত্ত্ব থেকে বঞ্চিত হয়।’ এদেশের মানুষের ভোট ও ভাতের অধিকার ফিরিয়ে দেওয়ার লড়াই ও সুখি-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ নির্মাণ তথা দিন বদলের সংগ্রাম তিনি করছেন ৪১ বছর হলো। তবুও তিনি ক্লান্ত নন, তিনি শ্রান্ত নন। সেদিন সাংবাদিক সম্মেলনে কী দৃঢ়তার সঙ্গেই না তিনি বললেন, ‘আমি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর মেয়ে। অত সহজে হারতে রাজি নই।’ 

আসলেই তিনি হারতে শেখেননি। বাইশ বা ততধিকবার মৃত্যুর মুখোমুখি হয়েও মৃত্যু-ভয়ের কাছে তিনি হার মানেননি। তিনি স্বৈরশাসক ও অগণতান্ত্রিক শক্তির কাছে হার মানেননি। তিনি বিশ্বের কোনও মহাশক্তিধর রাষ্ট্র, জোট বা সংস্থার কাছে হার মানেননি। তিনি আপস করেননি নীতিতে, বাঙালির আর্থ-সামাজিক মুক্তিতে।      

তিনি বলেছেন, ‘আমার সাহসের উৎস জনগণ’। এক্ষেত্রে আমি বিশ্বাস করি, আমাদের সাহসের উৎসও তিনি। আমরা তাঁর কাছ থেকেই শিখেছি আর্থ-সামাজিক মুক্তির-সাহস, স্বপ্ন দেখার সাহস, স্বপ্ন জয়ের সাহস, অধিকার আদায়ের সাহস, সারা বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর সাহস, চিৎকার করে ‘আমি বাঙালি’ বলার সাহস। তিনি আমাদের সুসাহসের মুলমন্ত্র, মূল-উৎস।

সাংবাদিক সম্মেলনের এক পর্যায়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তাঁর প্রথম শাসনামলে (১৯৯৬-২০০১) তৈরি করা কিছু সেতুর কথা বলেছেন। সব সেতুর নাম এক নিঃশ্বাসে বলে ফেললেন এবং কোন সেতু কোন এলাকাকে সংযুক্ত করেছে, তাও বলে ফেললেন। আমি উপলব্ধি করলাম, অবিকল্প নেতা হতে হলে দেশকে জানতে হয় পত্র-পুষ্প-পল্লবের মতো, দেশের প্রতিটি শিরা-উপশিরায় রক্তের মতো করে নেতাকে বিচরণ করতে হয়। যেটি শুধুই জননেত্রী শেখ হাসিনা পারেন। তিনি দেশকে জেনেছেন নিবিড়ভাবে, দেশের মানুষকে বুঝেছেন প্রকৃষ্টরূপে। তিনি এই অগ্রগামী বাংলাদেশের আর্কিটেক্ট। 

হতে পারে অর্থনৈতিক বিবেচনায় আমরা আজ উন্নয়নশীল দেশের কাতারে, তবে পররাষ্ট্রনৈতিক বিবেচনায় আমাদের অবস্থান অনেক উন্নত দেশের চেয়েও শক্তিশালী। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে বাংলাদেশ এখন জাতিসংঘে বিশ্ব শান্তির মডেল উপস্থাপন করে, ক্লাইমেট চেঞ্জের নেতৃত্ব দেয়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশের প্রতি সত্য কথা বলতে গিয়ে পিছপা হয় না। একটু ভাবুন তো অথবা পুরনো পত্রপত্রিকা খুঁজে দেখুন তো, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্রমনিম্নগামী মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে কয়টি দেশের রাষ্ট্রপ্রধান উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বা সমালোচনা করেছে। আমাদের প্রধানমন্ত্রী করেছেন। অত্যন্ত সাহসিকতার সাথে করেছেন। তিনি বলেছেন, তারা (মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র)আমাদের কী মানবাধিকার শেখাবে? মানবাধিকার শেখাতে আসবে কারা, যারা খুনিদের আশ্রয় দেয়! আর যেদেশে প্রতিনিয়ত স্কুলে গুলি হয়ে ছাত্রছাত্রী মারা যায়, রাস্তাঘাটে পুলিশ গলায় পাড়িয়ে মেরে ফেলে- তাদের কাছ থেকে মানবাধিকার শিখতে হবে?’ কী সাহসী পররাষ্ট্রাচার! কী নির্মোহ সত্য! এ-কথার পরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশ বিষয়ে কথা বলার আগে বা নাকগলানোর আগে দুই বার ভাববে নিশ্চয়ই।           

সূচনাতেই বলেছি, তিনি জাতির পিতার হার না মানা কন্যা। সবাইকে হারিয়েও দেশে ফিরে এসেছেন। মানুষের জন্য লড়াই করেছেন। পিতার হত্যাকারীদের বিচারের জন্য সংগ্রাম করেছেন। তিনি সফল। সুযোগ্য কন্যা। অধিকাংশ অপরাধীর ফাঁসি হয়েছে। বাকি আসামি যারা পলাতক আছে তাদেরকেও তিনি দেশে ফিরিয়ে আনবেন প্রিয় নেত্রীর ওপর এ আমার দৃঢ় বিশ্বাস।   

জননেত্রী শেখ হাসিনা একজন দূরদর্শী সংগঠক। জাতি পিতা বঙ্গবন্ধুকে হারানোর পরে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ধীরে ধীরে ম্রিয়মাণ হয়ে পড়ছিল। ঠিক এমন সময় তিনি ফিনিক্স পাখির মতো ফিরে এলেন। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ নতুন জীবন পেলো। তিনি ঝড়-বৃষ্টি-বজ্র উপেক্ষা করে টেকনাফ থেকে তেতুলিয়া, রূপসা থেকে পাথুরিয়ায় সংগঠন ও নেতা-কর্মীদেরকে উজ্জীবিত করলেন, তাদের মাঝে প্রাণের সঞ্চার সৃষ্টি করলেন। 

তিনি একজন সফল সংগ্রামী মানুষ। তিনি এদেশের মানুষের মানবিক অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছেন। এদেশে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেছেন, আজ দেশে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সুরক্ষিত ও নিরাপদ। তিনি স্বৈরতন্ত্রের যাঁতাকল থেকে গণতন্ত্রকে মুক্ত করেছেন। সমাজের প্রতিটি স্তরের মানুষের সাথে নিবিড় সম্পর্ক স্থাপন করেছেন। আজ একজন স্কুল ছাত্র প্রধানমন্ত্রীর কাছে চিঠি লিখতে পারে পরম আবদারে, একজন গরিব কৃষক যোগাযোগ করতে পারে তাঁর সাথে, একজন অদম্য মেধাবী শিক্ষার্থীর (প্রতিবন্ধী) সাথেও প্রধানমন্ত্রীর কথা হয় ফোনে, কেউ পদ্মা সেতুর নামে সন্তানের নাম রেখে প্রধানমন্ত্রীর উপহার ও শুভেচ্ছা পায়। এসব কিছু একজন সফল সংগ্রামী মানুষের উদাহরণ, যিনি সংগ্রাম করেছেন মানবিক মুক্তির জন্য, সকলের দিন বদলের জন্য। 

বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা একজন সৎ-সাহসী ও ভিশনারি প্রধানমন্ত্রী এবং সর্বোপরি বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা। সুনিপুণ শিল্পীর মতো করে তিনি এদেশের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সমৃদ্ধ চিত্রপট সৃষ্টি করছেন। তাঁর নেতৃত্বে আমরা এমডিজি অর্জন করেছি, এসডিজি অর্জনের পথেও অগ্রগামী। তাঁর নেতৃত্বে ভিশন ২০২১ অর্জিত হয়েছে, ২০৪১ বাস্তবায়নের পথে আমরা কর্মমুখর। আজ বাংলাদেশের মানুষের মাথাপিছু আয় ২৫৯১ ডলার। বাংলাদেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। দেশে পদ্মা সেতু হয়ে গেছে, নতুন সময়ে বাংলাদেশ। আজ দেশে মেট্রোরেল হচ্ছে, কর্ণফুলি টানেল হচ্ছে, মহাসড়কগুলো ফোর লেন হচ্ছে, অর্থনৈতিক জোন হচ্ছে, গভীর সমুদ্রবন্দর হচ্ছে, পারমাণবিক ও  কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র হচ্ছে, হাইটেক পার্ক হচ্ছে, স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় হচ্ছে, বড় বড় হাসপাতাল হচ্ছে, গবেষণা হচ্ছে, উদ্ভাবন হচ্ছে, আবিষ্কার হচ্ছে, মহাকাশে বাংলাদেশে স্যাটেলাইট উড়ছে। এসবই মূলত বঙ্গবন্ধুকন্যার হাত ধরে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা নির্মাণ। একটি আত্মনির্ভরশীল বাংলাদেশের আত্মপ্রকাশ। অভিবাদন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, অভিনন্দন জননন্দিত নেত্রী।

লেখক: সদস্য, কেন্দ্রীয় প্রচার ও প্রকাশনা বিষয়ক উপকমিটি, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ

/এসএএস/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
গাজায় ইসরায়েলি হামলায় নিহত সাংবাদিকের সংখ্যা বেড়ে ১৩৭
গাজায় ইসরায়েলি হামলায় নিহত সাংবাদিকের সংখ্যা বেড়ে ১৩৭
কানে ডিভাইস নিয়োগ পরীক্ষার কেন্দ্রে বোন, বাইরে থেকে উত্তর বলার অপেক্ষায় ভাই
কানে ডিভাইস নিয়োগ পরীক্ষার কেন্দ্রে বোন, বাইরে থেকে উত্তর বলার অপেক্ষায় ভাই
কাভার্ডভ্যান-লরির মুখোমুখি সংঘর্ষে দুই গাড়িতেই আগুন, প্রাণ গেলো একজনের
কাভার্ডভ্যান-লরির মুখোমুখি সংঘর্ষে দুই গাড়িতেই আগুন, প্রাণ গেলো একজনের
বাড়লো ব্রয়লার মুরগির দাম, কারণ জানেন না কেউ
বাড়লো ব্রয়লার মুরগির দাম, কারণ জানেন না কেউ
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ