X
শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪
৬ বৈশাখ ১৪৩১

বাংলাদেশের উন্নয়নে শেখ হাসিনা ফ্যাক্টর

ড. প্রণব কুমার পান্ডে
০৭ আগস্ট ২০২২, ১৮:০৪আপডেট : ০৭ আগস্ট ২০২২, ১৮:০৪

১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর স্বাধীনতার পর, বঙ্গবন্ধু ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে বাংলাদেশে ফিরে আসেন। মাতৃভূমিতে ফিরে তিনি অর্থনীতির উন্নয়ন, অবকাঠামো নির্মাণ এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্ক জোরদার করার দিকে মনোযোগ দিয়ে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ গড়ার দিকে মনোনিবেশ করেছিলেন। তাঁর পরিকল্পনা অনুযায়ী বাংলাদেশ বেশ ভালোভাবেই এগিয়ে যাচ্ছিল। কিন্তু পাকিস্তানপন্থি ঘাতকরা তাঁকে সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠা করতে দেয়নি। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবারের বেশিরভাগ সদস্যকে হত্যার পর দেশের জনগণদের বন্দুকের মুখে রেখে বিভিন্ন স্বৈরাচারী শাসকরা ১৯৯০ সাল পর্যন্ত দেশ শাসন করে। তাদের মধ্যে আবার কেউ কেউ নিজেকে গণতন্ত্রের প্রবক্তা বলে দাবি করে, যা হাস্যকর। ১৯৯০ সালে এরশাদ সরকারের পতনের পর গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হলে বাংলাদেশের মানুষ সরকার পরিবর্তনকে কেন্দ্র করে প্রতি পাঁচ বছর পর পর এক ধরনের নির্বাচনি সহিংসতার সাক্ষী হতে থাকে।

১৯৯১ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের পর বাংলাদেশে একটি নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়। তবে খুব অল্প সময়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের গ্রহণযোগ্যতা প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়ে। ২০০৭ থেকে ২০০৮ পর্যন্ত বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সমর্থনে ভিন্ন ধরনের তত্ত্বাবধায়ক সরকার দেশ শাসন করেছে। আওয়ামী লীগ পরবর্তীতে সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত ২০০৮ সালের নির্বাচনে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে ক্ষমতায় আসে।

২০০৯ সালে ক্ষমতায় এসে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর পিতার আজন্ম লালিত ‘সোনার বাংলা’ প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন বাস্তবায়নের পরিকল্পনা শুরু করেন। তিনি ধীরে ধীরে বিভিন্ন পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করে বাংলাদেশকে উন্নয়নের রোল মডেলে পরিণত করতে সমর্থ হয়েছেন। ২০০৯ সালে যখন তিনি সরকার গঠন করেন, তখন বাংলাদেশের বাজেটের আকার ছিল ৮৭ হাজার কোটি টাকা। তবে গত সাড়ে ১৩ বছরে বাংলাদেশের বাজেটের আকার ছয় লাখ কোটি টাকা অতিক্রম করেছে, যা একটি বিস্ময়কর ব্যাপার। শেখ হাসিনা বছরের পর বছর বাজেটের আকার বাড়াতে শুরু করলেও অনেকে বাজেটকে অতি উচ্চাভিলাষী দাবি করে তাঁর পরিকল্পনার সমালোচনা করেছেন বিভিন্ন সময়। তাদের মতে, এই বিশাল বাজেট বাস্তবায়ন করার সক্ষমতা বাংলাদেশের ছিল না। অনেকের সমালোচনার পরও শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার প্রমাণ করেছে ইচ্ছাশক্তি থাকলে যে কোনও লক্ষ্য অর্জন করা যায়। এরই ধারাবাহিকতায়, বাংলাদেশ একটি শক্তিশালী অর্থনৈতিক ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়েছে গত এক দশকের কিছু বেশি সময়ে।

যেকোনও দেশকে উন্নয়নের শিখরে নিয়ে যেতে সরকার প্রধানের দূরদর্শী নেতৃত্ব অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নেতার কাজ দেশ পরিচালনা করা। নেতানেত্রীরা যদি নিজেদের সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য সম্পর্কে ধারণা না রাখেন তাহলে দেশ কখনোই সঠিকভাবে এগিয়ে যেতে পারবে না। বঙ্গবন্ধু যেমন তাঁর দূরদর্শী নেতৃত্বের মাধ্যমে বাংলাদেশের জনগণকে ধীরে ধীরে স্বাধীনতার জন্য প্রস্তুত করেছিলেন, তেমনি শেখ হাসিনাও তাঁর পিতার আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে বাংলাদেশকে উন্নয়নের রোল মডেলে পরিণত করতে বিভিন্ন কার্যক্রম বাস্তবায়ন করে যাচ্ছেন। তাঁর নেতৃত্বের গুণাবলির কারণেই এ অর্জন সম্ভব হয়েছে।

সমালোচকরা অনেক ক্ষেত্রে শেখ হাসিনার বিভিন্ন নীতি ও কর্মকাণ্ডের সমালোচনা করেছেন, কিন্তু দিনশেষে তাদের সেসব সমালোচনা ভুল প্রমাণিত হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, ২০১২ সালে বিশ্বব্যাংক যখন কল্পিত দুর্নীতির অভিযোগে পদ্মা সেতুতে অর্থায়ন না করার সিদ্ধান্ত নেয়, তখন বাংলাদেশের সুশীল সমাজ, অর্থনীতিবিদ ও বিরোধীদলীয় নেতারা বারবার বলেছিলেন যে বাংলাদেশে কখনই পদ্মা সেতু নির্মিত হবে না। এমনকি বিএনপি চেয়ারপারসন বলেছিলেন, বাংলাদেশে পদ্মা সেতু কখনোই নির্মিত হবে না, এমনকি এটি নির্মিত হলেও ভেঙে পড়বে। সেই বাস্তবতার ওপর দাঁড়িয়ে শেখ হাসিনা তাঁর  অভ্যন্তরীণ রাজস্ব দিয়ে পদ্মা সেতু নির্মাণের ঘোষণা দিয়েছিলেন।

গত ২৫ জুন পদ্মা সেতু উদ্বোধনের মাধ্যমে এটা প্রমাণিত হয়েছে যে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতুর মতো মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নের সক্ষমতা বাংলাদেশ সরকারের রয়েছে।

পদ্মা সেতু নির্মাণ করে শেখ হাসিনা জাতিকে দেওয়া তাঁর প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেছেন বিধায় পদ্মা সেতু এখন স্বপ্ন নয়, বরং এটি একটি বাস্তবতা। একইভাবে, ঢাকা মেট্রোরেল প্রকল্প, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প এবং কর্ণফুলী নদীর তলদেশে টানেলের মতো বিভিন্ন মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নের ব্যাপারে যখন পরিকল্পনা করা হয়েছিল তখন অনেকেই সমালোচনা করেছিলেন। কারণ, এই জাতীয় প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য সরকারের আর্থিক সক্ষমতা ছিল না। কিন্তু শেখ হাসিনা প্রমাণ করেছেন যে নেতৃত্বের দূরদর্শিতা ও যোগ্যতা দিয়ে যেকোনও কঠিন লক্ষ্য অর্জন করা যায়।

শেখ হাসিনার নেতৃত্বের আরেকটি দিক হলো তাঁর সততা। বাংলাদেশের রাজনৈতিক বাস্তবতায়, ক্ষমতায় থাকা ব্যক্তি এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের দুর্নীতিতে জড়িত থাকা একটি সাধারণ ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু শেখ হাসিনা ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা এখন পর্যন্ত দুর্নীতিতে জড়িত হননি। তবে দীর্ঘমেয়াদে ক্ষমতায় থাকার কারণে আওয়ামী লীগের মধ্যে একশ্রেণির নেতৃত্ব তৈরি হয়েছে, যারা নিজেদের দুর্নীতিতে নিমজ্জিত করছে এবং তাদের আশপাশের লোকজনকে দুর্নীতি করতে উৎসাহিত করছে। এটা বলার অপেক্ষা রাখে না যে দুর্নীতি বর্তমান সরকারের অন্যতম বড় সমস্যা। এই বাস্তবতায়, সরকার প্রধান এবং তাঁর পরিবারের সদস্যরা দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়লে, প্রক্রিয়াটি প্রাতিষ্ঠানিক রূপ নিতো। সে দৃষ্টিকোণ থেকে এটা নিশ্চিতভাবে দাবি করা যায়, শেখ হাসিনা ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা এখন পর্যন্ত দুর্নীতিতে জড়িত হননি। ২০১৮ সালের নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পর শেখ হাসিনা দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করেছিলেন। তাঁর সরকার বিভিন্ন ক্ষেত্রে দুর্নীতির বিরুদ্ধে দৃঢ় অবস্থান নিয়েছেন এবং অনেক ক্ষেত্রে দুর্নীতিবাজদের শাস্তির আওতায় এনেছেন। কিন্তু কখনও কখনও কোনও এক অজানা কারণে সরকারের এই মহৎ প্রয়াস সামনের দিকে এগোয়নি। আমরা বিশ্বাস করি, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বাস্তবতার নিরিখে এই বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবেন।

গত সাড়ে ১৩ বছরে যারা শেখ হাসিনাকে দেখেছেন তারা  স্বীকার করবেন যে নেতা হিসেবে শেখ হাসিনা নিজেকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছেন। তাঁর নেতৃত্ব শুধু বাংলাদেশের জনগণের কাছেই প্রশংসিত হননি, বিশ্বনেতাদের কাছেও প্রশংসিত হয়েছে। বাংলাদেশের একজন নেতা থেকে তিনি বর্তমানে বিশ্বনেত্রীতে রূপান্তরিত হয়েছেন। দেশে ব্যাপক উন্নয়ন কর্মকাণ্ড পরিচালনার পাশাপাশি তিনি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে জলবায়ু পরিবর্তন ও নারীর ক্ষমতায়নসহ বিভিন্ন বিষয়ে সবসময় সোচ্চার থেকেছেন। তাই আন্তর্জাতিক সংস্থা এবং অনেক দেশের রাষ্ট্রপ্রধানরা তাঁর এই উদ্যোগের প্রশংসা করেছেন। এমনকি তার অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড এবং উন্নয়ন পরিকল্পনারও প্রশংসা করেছেন বিশ্বজুড়ে নেতারা। কোভিড-১৯ মোকাবিলায় সরকারের সাফল্য বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত হয়েছে। তাঁর  নেতৃত্বে, বাংলাদেশকে উন্নয়নশীল দেশের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার সুপারিশ করা হয়েছে। শেখ হাসিনা ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে উন্নত দেশের তালিকায় নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। তাই এই লক্ষ্য অর্জনে তিনি গত সাড়ে ১৩ বছর ধরে অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন।

দেশে অনেকের মধ্যে যে প্রশ্নটি আলোচিত তা হলো শেখ হাসিনার পরিবর্তে আমাদের কাছে অন্য কোনও বিকল্প নেতৃত্ব আছে কিনা? এই প্রশ্নের সহজ উত্তর হলো বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে তাঁর জায়গা নিতে পারে এমন কোনও রাজনৈতিক নেতা আমাদের নেই। বর্তমান পরিস্থিতিতে আওয়ামী লীগেও শেখ হাসিনার মতো দূরদর্শী নেতৃত্ব নেই। বিরোধী রাজনৈতিক দলে যারা আছেন তাদের নাম এই আলোচনায় আসবে না। কারণ, তাদের অনেকেই দুর্নীতিতে নিমজ্জিত হয়ে রাজনীতির কালো গহ্বরে নিক্ষিপ্ত হয়েছেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশের ১৭ কোটি মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতীক হয়ে উঠেছেন। তাঁর দূরদর্শী নেতৃত্বের কারণে বিশ্বে দেশের ইতিবাচক ভাবমূর্তি গড়ে উঠেছে। তাঁর নেতৃত্বের পাশাপাশি, ক্ষমতার ধারাবাহিকতা তাকে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জন করতে সাহায্য করেছে।

বাংলাদেশের মানুষ তাঁর ওপর আস্থা রেখেছে এবং তাঁকে নিজের পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ করতে দিয়েছে। আমরা বিশ্বাস করি ২০২৩ সালে অনুষ্ঠিতব্য জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জনগণ তাঁর প্রতি একইভাবে বিশ্বাস রাখবে। আমাদের মনে রাখা উচিত যে বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে শেখ হাসিনার বিকল্প কেউ নেই। বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ যেমন সমার্থক হিসেবে ব্যবহৃত হয়, তেমনি শেখ হাসিনা এখন বাংলাদেশের উন্নয়নের আরেক নাম হয়ে উঠেছেন। তাই তিনি বাংলাদেশের রাজনীতি ও উন্নয়নের অবিচ্ছেদ্য অংশ।

লেখক: অধ্যাপক, লোক-প্রশাসন বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

/এসএএস/এমওএফ/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
চাটমোহরে ঐতিহ্যবাহী ঘোড় দৌড় প্রতিযোগিতা শুরু
চাটমোহরে ঐতিহ্যবাহী ঘোড় দৌড় প্রতিযোগিতা শুরু
রাজশাহীতে দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত হলো বিভাগীয় সর্বজনীন পেনশন মেলা
রাজশাহীতে দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত হলো বিভাগীয় সর্বজনীন পেনশন মেলা
রুবেলকে শোকজ দিলো উপজেলা আ’লীগ, প্রার্থিতা প্রত্যাহারের নির্দেশ পলকের
নাটোরে উপজেলা নির্বাচনরুবেলকে শোকজ দিলো উপজেলা আ’লীগ, প্রার্থিতা প্রত্যাহারের নির্দেশ পলকের
এমপি দোলনের গাড়ি লক্ষ্য করে ইট নিক্ষেপ, সাংবাদিক আহত
এমপি দোলনের গাড়ি লক্ষ্য করে ইট নিক্ষেপ, সাংবাদিক আহত
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ