X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১১ বৈশাখ ১৪৩১

 ২১ আগস্ট: সমাজ ও রাষ্ট্রে এর অভিঘাত

মো. জাকির হোসেন
২১ আগস্ট ২০২২, ১৬:৩৭আপডেট : ২১ আগস্ট ২০২২, ২০:০৩

মানব সভ্যতার ইতিহাসে নজিরবিহীন ঘটনা ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা। প্রকাশ্য দিবালোকে রাজনৈতিক সমাবেশে গ্রেনেড হামলা করে নারকীয় হত্যাযজ্ঞ পৃথিবীর ইতিহাসে দ্বিতীয়টি খুঁজে পাওয়া বিরল। নিয়মতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত ক্ষমতাসীন দল কর্তৃক স্বাধীনতা যুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী সেই সময়ের প্রধান বিরোধী রাজনৈতিক দলকে নিশ্চিহ্ন করার লক্ষে রাষ্ট্র ও জঙ্গি এক হয়ে হামলার দ্বিতীয় কোনও উদাহরণ বিশ্বের কোনও প্রান্তে আছে বলে আমাদের জানা নেই।

বাংলাদেশে ২১ আগস্ট হামলার আগে-পরে যত জঙ্গি হামলা হয়েছে, তার বেশিরভাগেরই উদ্দেশ্য ছিল ব্যক্তি বা গোষ্ঠীকে আঘাত করা। সাংস্কৃতিক কর্মী, রাজনৈতিক কর্মী বা পুরোহিত-যাজককে হত্যা করে তারা বুঝিয়ে দিয়েছে, তারা তাদের শত্রু মনে করে। কিন্তু ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলার উদ্দেশ্য ছিল স্বাধীনতাযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগকে নেতৃত্বশূন্য করা এবং অনিবার্যভাবে মূল লক্ষ্যবস্তু ছিলেন তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দেশে দেশে রাজনৈতিক দলের মধ্যে বিরোধ স্বাভাবিক ঘটনা। কিন্তু ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলায় হরকত-উল-জিহাদ বাংলাদেশ হুজি-বি জঙ্গিদের সঙ্গে রাষ্ট্র যুক্ত হয়েছে একটি রাজনৈতিক দলের প্রধানসহ শীর্ষ নেতাদের হত্যা করতে। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের নেতা, মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, উপ-মন্ত্রীরা জড়িত ছিল এই নৃশংস যজ্ঞে।

পুলিশ, রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থা এনএসআই, প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা সংস্থা ডিজিএফআই’র শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তাদের সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ মিলেছে আদালতের বিচারে। এখন এটা সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হচ্ছে যে তৎকালীন বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের উচ্চপর্যায়ের পরামর্শেই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থা, প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা সংস্থা (কিছু কর্মকর্তা), সিআইডি ও পুলিশের তখনকার উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলার তদন্তকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করেছিলেন।  তারা পেশাদার খুনি চক্র, আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব এবং ভারতের ওপর এই হামলার দায়দায়িত্ব চাপিয়ে দেওয়ার অপচেষ্টা করে প্রকৃত অপরাধীদের বাঁচানোর চেষ্টা করেছিলেন। জঙ্গিদের বাঁচাতে বিএনপি মরিয়া হয়ে উঠেছিল। প্রহসনের মামলার জজ মিয়া নামের এক নিরপরাধ ব্যক্তিকে জড়িত করেছে। বিচারপতি জয়নুল আবেদীনকে দিয়ে পার্শ্ববর্তী দেশ জড়িত বলে বানোয়াট ও ডাহা মিথ্যা তদন্ত রিপোর্ট তৈরি করেছে। প্রকৃত আসামিদের আড়াল করতে উদ্দেশ্যমূলকভাবে মামলার আলামত নষ্ট করা হয়েছে।

১৫ আগস্টে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যায় পাকিস্তানের সম্পৃক্ততা যেমন সুবিদিত তেমনই ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলায়ও পাকিস্তানের জড়িত থাকার প্রমাণ মেলে। হামলার পরিকল্পনায় ও গ্রেনেড সরবরাহে যেমন পাকিস্তানের নাগরিক জড়িত ছিল তেমনই আওয়ামী লীগ নিজেই এই হামলা চালিয়েছিল বলে বিএনপি-জামায়াত জোটের মতো এক সুরে কথা বলেছে তৎকালীন পাকিস্তানি রাষ্ট্রদূত। বিএনপি-জামায়াত হামলার ঘটনার প্রকৃত অপরাধীদের আড়াল করতে প্রচার করা শুরু করে আওয়ামী লীগ নিজেরাই জনগণের সহানুভূতি ও সমর্থন পেতে ওই গ্রেনেড হামলা চালিয়েছিল। তাদের বক্তব্য ছিল, গ্রেনেড হামলা এমনভাবে করা হয়েছে যেন শেখ হাসিনা বেঁচে যান এবং জোট সরকারকে একটি বিব্রতকর অবস্থায় ফেলা যায়। একটি শীর্ষ জাতীয় দৈনিকের সম্পাদক মন্তব্য কলামে লিখেছেন, ‘মনে পড়ে, ২১ আগস্টের ঘটনার পরপর তৎকালীন পাকিস্তানি রাষ্ট্রদূত সে সময়ই আমাকে হুবহু একই রকম কথা বলেছিলেন। তিনিও বলেছিলেন, এটা আওয়ামী লীগেরই কাজ। এ ঘটনায় তারাই তো লাভবান হবে। তারা সহানুভূতি পাবে। এমনকি ঘটনার আগের মুহূর্তে শেখ হাসিনা আইভি রহমানকে মঞ্চে ডেকে নিতে চেয়েছিলেন। সে কথাও তিনি বলেছিলেন। শেখ হাসিনার জ্ঞাতসারেই এ ঘটনা ঘটেছে বলে ওই পাকিস্তানি কূটনীতিক বলেছিলেন।’

’৭৫-এর ১৫ আগস্টে বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবার এবং ওই বছরের ৩রা নভেম্বর বঙ্গবন্ধুর ছায়াসঙ্গী মুক্তিযুদ্ধে মুজিবনগর সরকারের নেতৃত্বদানকারী চার জাতীয় নেতাকে কারাগারের মতো নিরাপদ স্থানে নৃশংসভাবে হত্যার মধ্য দিয়ে অপূরণীয় ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছিল বাংলাদেশ।

সমাজ ও রাষ্ট্রে মারাত্মক অভিঘাত নেমে এসেছিল। কেবল রাষ্ট্রের নাম আর জাতীয় পতাকা ছাড়া সবই বদলে গিয়েছিল। আইনের শাসন গুম হয়েছিল। বিচার চাওয়ার পথ আইন করে রুদ্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। সংবিধানকে খেলার পুতুল বানিয়ে গণতন্ত্রকে রাষ্ট্রের ত্রিসীমানা থেকে নির্বাসনে পাঠানো হয়েছিল। বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বিচারের পথ রুদ্ধ করতে ইনডেমনিটি আইন পাস করে আইনের শাসনকে নির্বাসন দিয়ে একটি বর্বর রাষ্ট্রে পরিণত হয় বাংলাদেশ। বিচারহীনতার সংস্কৃতির পাশাপাশি শুরু হয় রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়নের। উত্থান ঘটে স্বাধীনতাবিরোধীদের। ‘মানি ইজ নো প্রবলেম’ ও ‘আই উইল মেইক পলিটিকস ডিফিকাল্ট ফর দ্য পলিটিশিয়ান’ নামে দুষ্টু নীতি প্রবর্তন করে নির্বাসনে পাঠানো হয় ত্যাগের মহিমায় উদ্ভাসিত আদর্শের রাজনীতিকে। শুরু হয় সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্পের রাজনীতি। পাকিস্তানি তাহজীব-তমুদ্দুন দ্বারা পরিচালিত হতে শুরু করে বাংলাদেশ। ‘জয় বাংলা’ নির্বাসিত হয়, তার স্থলে ‘বাংলাদেশ জিন্দাবাদ’ প্রতিষ্ঠিত হয়। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশের মৃত্যু হয়। মুক্তিযুদ্ধের আদর্শকে ধারণ করে প্রণীত সংবিধান পাল্টে যায়। বাঙালি জাতীয়তাবাদকে ‘খতনা’ করে বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদে পরিণত করা হয়। স্বাধীনতাবিরোধীদের মন্ত্রী বানানো হয়। পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর জুলুম-নির্যাতনের ইতিহাস আড়াল করতে স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসকে ৯ মাসের যুদ্ধের মধ্যে সীমাবদ্ধ করা হয়। পাকিস্তানকে খুশি করতে তাই ১৯৭৮ সালে সংবিধানের প্রস্তাবনার ‘জাতীয় মুক্তির জন্য ঐতিহাসিক সংগ্রাম’ এর পরিবর্তে ‘জাতীয় স্বাধীনতার জন্য ঐতিহাসিক যুদ্ধ’ শব্দাবলি যুক্ত করা হয়।

রাজনীতিতে ধর্মের অপব্যবহারের পুনরাবৃত্তি রোধে ৭২-এর সংবিধানে যে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছিল তা বাতিল করে ধর্মের অপব্যবহারের রাজনীতিকে অবারিত করে দেওয়া হয়। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর খুনিরা সামরিক আইন জারি করলেও সংবিধান বাতিল করেনি। সংবিধান অনুযায়ী রাষ্ট্রপতির পদ শূন্য হলে কিংবা অনুপস্থিতি, অসুস্থতা বা অন্য কোনও কারণে দায়িত্ব পালনে অসমর্থ হলে উপ-রাষ্ট্রপতি কিংবা স্পিকার রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করবেন। খন্দকার মোশতাক মন্ত্রী ছিলেন, উপ-রাষ্ট্রপতি কিংবা স্পিকার ছিলেন না। সে সময় উপ-রাষ্ট্রপতি ছিলেন সৈয়দ নজরুল ইসলাম আর স্পিকার ছিলেন আব্দুল মালেক উকিল। খুনিরা উপ-রাষ্ট্রপতি ও স্পিকারকে রাষ্ট্রপতি না করে মোশতাককে অবৈধভাবে রাষ্ট্রপতি করে। সংবিধান লঙ্ঘন করে একের পর এক বিচারপতি সায়েম, জিয়া ও এরশাদ স্বঘোষিত রাষ্ট্রপতি বনে যান। এমনকি জিয়া একই সঙ্গে সেনাপ্রধান ও রাষ্ট্রপতির পদ দখল করেন। রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের জন্য সংবিধানে বর্ণিত বিধানকে পায়ে দলে ‘হ্যাঁ, না’ ভোট নামক অভিনব, অশ্রুত পদ্ধতি চালু করা হয়। মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের জন্য বঙ্গবন্ধু সরকার কর্তৃক গঠিত ৭৩টি বিশেষ ট্রাইব্যুনাল বাতিল করে আইনের শাসনবিরোধী বিচারহীনতার সংস্কৃতিতে নতুন মাত্রা যোগ করা হয়। ট্রাইব্যুনালে দণ্ডপ্রাপ্ত ও বিচারাধীন সব আসামিকে মুক্তি দেওয়া হয়।

১৫ আগস্টের মতো ২১ আগস্টের নৃশংসতার রাজনৈতিক অভিঘাতও রাষ্ট্র ও সমাজ জীবনে গভীরভাবে পড়েছে। রাষ্ট্র ও জঙ্গিদের যৌথ প্রযোজনায় ২১ আগস্ট নরমেধ যজ্ঞের পর আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি-জামায়াতের রাজনীতিতে একটি স্থায়ী বিভক্তি রেখা টেনে দিয়েছে। ১৫ আগস্টের নৃশংস হত্যার সঙ্গে জিয়ার সম্পৃক্ততা, খুনিদের আশ্রয়-প্রশ্রয়, জিয়া কর্তৃক  ইনডেমনিটিকে সংবিধানের অংশে পরিণত করা, ইনডেমনিটি বাতিল আইনের বিরুদ্ধে খালেদা জিয়ার সংসদ বর্জন ও হরতাল আহ্বান, বঙ্গবন্ধু হত্যা বিচারে খালেদা জিয়া সরকারের পদে পদে বাধা সৃষ্টি এবং আত্মস্বীকৃত খুনিদের বিএনপি সরকার কর্তৃক রাজনীতিতে পুনর্বাসন সত্ত্বেও বঙ্গবন্ধুকন্যা ও আওয়ামী লীগ সকল কষ্ট, ক্ষোভ, ক্ষত বুকে চাপা দিয়ে দেশের স্বার্থে বিএনপির সঙ্গে রাজনৈতিক শিষ্টাচার দেখিয়ে আসছিল। কিন্তু ২১ আগস্ট বিএনপি-জামায়াত জোটের নির্দেশে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনাকে হত্যা এবং আওয়ামী লীগকে নিশ্চিহ্ন করার উদ্দেশ্যে গ্রেনেড হামলার পর বাংলাদেশের রাজনীতিতে যে বিভাজন সৃষ্টি হয়েছে তা সহজে সেরে উঠবার নয়। রাজনীতি, গণতন্ত্র, স্বাধীন মতপ্রকাশ, মানবাধিকার, সুশাসন, নির্বাচন, অসাম্প্রদায়িকতা সবকিছুতেই ২১ আগস্টের অভিঘাত স্পষ্ট।

রাজনৈতিক সহাবস্থান দূরে থাক, ন্যূনতম যোগাযোগের জায়গাটুকুও রুদ্ধ হয়ে গিয়েছে। শাসন ব্যবস্থায় প্রভাব লক্ষণীয়। প্রতিপক্ষ যখন ক্রমাগত ‘ফাউল’ করতে থাকবে আপনি কতক্ষণ ফেয়ার খেলতে পারবেন? বঙ্গবন্ধু যথার্থই বলেছেন, ‘When you play with a gentleman, you play like a gentleman. But when you play with bastards, make sure you play like a bigger bastard. Otherwise, you will lose.’

ফলে রাজনীতিতে এখন যেকোনও মূল্যে জিততে হবে নীতি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। রাষ্ট্রের স্বার্থকে জলাঞ্জলি দিয়ে, নিজের দেশকে শ্রীলঙ্কার মতো ব্যর্থতায় পর্যবসিত করে হলেও ক্ষমতায় যেতে চাই। ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলার মতো অবিশ্বাস্য ভয়াবহ ঘটনাবলির প্রায় সব তথ্য যখন বের হয়ে এসেছে, তখন এটা সত্যি বিশ্বাস করা কঠিন হয়ে পড়ে যে, একটি নির্বাচিত সরকার ও নেতৃত্ব তাদের প্রতিপক্ষ শক্তিকে ধ্বংস করতে কী নির্লজ্জভাবে জঙ্গি ও রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করেছে। এরপর বিএনপিকে বিশ্বাস করার, আস্থায় নেওয়ার সুযোগ কোথায়? একুশে আগস্টের হামলায় কেন বিএনপির নাম এসেছে, বিএনপি কি কখনও এই সূত্র অনুধাবন করার চেষ্টা করেছে?

এ হামলার সঙ্গে বিএনপির যেসব নেতার নাম এসেছে, আদালতের বিচারে দণ্ডিত হয়েছেন, বিএনপি নেতৃত্ব তাদের দল রাখা না রাখা নিয়ে ভেবেছে? গ্রেনেড হামলার দণ্ডিত ব্যক্তিদের সঙ্গে নিয়ে যে দল বেশি দূর যেতে পারবে না এটি অনুধাবন করে বিএনপি? বিএনপির মধ্যে আত্মশুদ্ধি বা আত্মজিজ্ঞাসার কোনও লক্ষণ আছে কি?

১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ডের পর জিয়া ইনডেমনিটি অধ্যাদেশকে সংসদ অনুমোদন না করলেই তা বাতিল হয়ে যেত। জিয়া তা না করে ইনডেমনিটিকে সংবিধানের অংশে পরিণত করেছেন। জিয়া যখন একই সঙ্গে রাষ্ট্রপতি ও সেনাপ্রধান ছিলেন তিনি ইচ্ছা করলেই বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বিচার করতে পারতেন, কিন্তু তিনি তা করেননি। জিয়ার পর খালেদা জিয়া ইনডেমনিটি বাতিল না করলেও বঙ্গবন্ধু কন্যা যখন তা বাতিলের উদ্যোগ নিলেন তখন সহায়তা না করলেও নীরব থাকতে পারতেন। কিন্তু তা না করে খালেদা জিয়া ইনডেমনিটি বাতিলের বিরুদ্ধে সংসদ বর্জন ও হরতাল করেছেন। বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনিদের সংসদে স্থান করে দিয়েছেন। ইনডেমনিটি বাতিলের পর যখন বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার শুরু হলো খালেদা জিয়া বাধা না দিয়ে নীরব থাকতে পারতেন। কিন্তু বেগম জিয়া কূটকৌশল করে তার শাসনামলে ৫টি বছর একদিনের জন্য মামলার বিচারের শুনানি হতে দেননি। এসবই বঙ্গবন্ধু, তাঁর পরিবার ও আওয়ামী লীগের প্রতি বিএনপির বৈরী ও ভয়ংকর শত্রুতার বহিঃপ্রকাশ। গণতন্ত্র, আইনের শাসন ও বিচার পাওয়ার সহজাত মানবাধিকার ও সাংবিধানিক অধিকারের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন। যদি জিয়া বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারের পথ রুদ্ধ না করতেন, যদি জিয়া কিংবা খালেদা জিয়া খুনিদের বিচার করতেন কিংবা নিদেন পক্ষে বিচারে বিঘ্ন সৃষ্টি না করতেন, যদি খালেদা জিয়া ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার নিরপেক্ষ তদন্ত করতেন কিংবা আইনকে তার স্বাভাবিক গতিতে চলতে দিতেন তাহলে সমাজ ও রাষ্ট্রে যে অভিঘাত সৃষ্টি হয়েছিলো তার অনেকখানিই প্রশমন হতো।  কিন্তু তা হয়নি, কারণ বিএনপি তা চায়নি।

২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা করে বঙ্গবন্ধুকন্যাকে হত্যা ও আওয়ামী লীগকে নিশ্চিহ্ন করার চেষ্টা এই কথাই নির্দেশ করে যে বিএনপির ১৫ আগস্টের মনোভাবের কোনও পরিবর্তন হয়নি। রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ব্যক্তিরা সমষ্টিগতভাবে যখন সন্ত্রাসী কার্যক্রমে জড়াতে পারেন তখন এটা ভয়ংকর রাজনৈতিক-সামাজিক ব্যাধির নির্দেশ করে। এটি কেবলই একটি রায় বা শাস্তি কার্যকর করার মধ্য দিয়ে নিরাময়ের বিষয় নয়। এর পরিবর্তন হতে হবে বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতির আমূল পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে নির্মূল করার প্রতিহিংসামূলক বাসনা থেকে বেরিয়ে আসার মধ্য দিয়ে। বল বিএনপির কোর্টে। রাজনীতিতে বিশ্বাস ও আস্থা ফেরানোর দায়ভার বিএনপির। যারা এই নৃশংস ঘটনাগুলো ঘটিয়েছে দায়ভার তাদের। বিএনপিকে অনুধাবন করতে হবে, কিছু অতীত কখনও পুরনো হয় না, সে সারাক্ষণ তাড়িয়ে বেড়ায়। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা সমাজ ও রাষ্ট্রে যে অভিঘাত সৃষ্টি করেছে সে ক্ষত সারাবার উদ্যোগ বিএনপিকেই নিতে হবে। অন্যথায়, তা সেরে উঠবার নয়।

লেখক:  অধ্যাপক, আইন বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।

ই-মেইল: [email protected]

/এসএএস/এমওএফ/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
ছাত্রলীগের ‘অনুরোধে’ গ্রীষ্মকালীন ছুটি পেছালো রাবি প্রশাসন
ছাত্রলীগের ‘অনুরোধে’ গ্রীষ্মকালীন ছুটি পেছালো রাবি প্রশাসন
সাজেকে ট্রাক খাদে পড়ে নিহত বেড়ে ৯
সাজেকে ট্রাক খাদে পড়ে নিহত বেড়ে ৯
বার্সেলোনার সঙ্গে থাকছেন জাভি!
বার্সেলোনার সঙ্গে থাকছেন জাভি!
চার বছরেও পাল্টায়নি ম্যালেরিয়া পরিস্থিতি, প্রশ্ন নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি নিয়ে
চার বছরেও পাল্টায়নি ম্যালেরিয়া পরিস্থিতি, প্রশ্ন নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি নিয়ে
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ