X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

সৎ ও ত্যাগী তরুণরাই পারে ছাত্র রাজনীতি বাঁচাতে

সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা
২৯ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১৬:৩৩আপডেট : ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১৬:৩৩

ইডেন কলেজের ছাত্রলীগ এখন সব ছাত্রলীগের চেয়ে বিখ্যাত। এটি এ কারণে নয় যে তারা ক্যাম্পাসে মারামারি করেছে, যেটা সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে, মানুষ নানারকম ট্রল করছে। বরং এই কলেজের ছাত্রলীগের ভেতর থেকেই এমন কিছু কথা উঠে আসছে, যা ছাত্র রাজনীতিতে হচ্ছে শোনাটাও পাপ। গত রবিবার কলেজের অডিটোরিয়ামের সামনে মারধর, হামলা, সংঘর্ষ, হোস্টেল থেকে বের করে দেওয়া, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ কর্তৃক কমিটি স্থগিত করা, সবই ঘটেছে। বহিষ্কারও বাকি ছিল না।

একের পর এক ঘটনা। বহুদিন ধরেই আলোচনা-সমালোচনায় ইডেন কলেজ ছাত্রলীগ। অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের জেরে এই প্রতিষ্ঠানে লেখাপড়া বলতে গেলে শিকেয় উঠেছে। সবসময় রীতিমতো আতঙ্কে থাকেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। রবিবারের সংঘর্ষ দেখে তাদের অনেকে কলেজ ক্যাম্পাস ছেড়ে গেছেন। ইডেন কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি তামান্না জেসমিন রিভা এবং সাধারণ সম্পাদক রাজিয়া চাঁদাবাজি ও সিট বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত উল্লেখ করে কলেজ ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি জান্নাতুল ফেরদৌস কয়েক দিন আগে গণমাধ্যমে কথা বলেন। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে শনিবার রাতে সহ-সভাপতি জান্নাতুল ফেরদৌসকে মারধর করে কলেজের হল থেকে বের করে দেওয়া হয়। এরপরই কলেজে উত্তপ্ত পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। কিছু দিন আগে তামান্না জেসমিন রিভার একটি অডিও ভাইরাল হয়েছে, যেটায় শোনা যাচ্ছে তিনি কাউকে এমন ভাষায় হুমকি দিচ্ছেন, যা শ্রবণযোগ্য নয়।

ছাত্রলীগের কতিপয় নেত্রীর বিরুদ্ধে সিট-বাণিজ্য, সাধারণ শিক্ষার্থীদের নির্যাতন, চাঁদাবাজির অভিযোগ শুনে আমরা অভ্যস্ত। কিন্তু খোদ দলের আরেক নেত্রী যখন অভিযোগ করেন যে ছাত্রীদের জোর করে দেহ ব্যবসা করানোর মতো অনৈতিক কাজে বাধ্য করা হচ্ছে, সুন্দরী বাছাই করে কুপ্রস্তাব দেওয়া হচ্ছে, তখন ভাবতে হয় কোন রাজনীতি করছে এই মেয়েরা?

এই অভিযোগ কতটা সত্য সেটা নিশ্চয়ই তদন্ত সাপেক্ষ, কিন্তু অভিযোগ গুরুতর। তামান্না জেসমিন রিভার অডিওতে দুই জন ছাত্রীকে বিবস্ত্র করে ভিডিও ভাইরাল করে দেওয়ার হুমকি ছিল।

এসব নেত্রীর বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ উঠছে, সেখানকার শিক্ষক ও ছাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে যা জানা গেলো সেগুলো দাগী অপরাধীদের কাজ। গত কয়েক দিনের ঘটনা এবং অতীতের অসংখ্য ঘটনায় কলেজ প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনও ব্যবস্থা নেওয়ার তথ্য কখনও পাওয়া যায়নি।

গণমাধ্যমকে কলেজ ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি সুস্মিতা বাড়ৈ জানান, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের কাছে বারবার জানানোর পরও তারা কোনও পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। কলেজ ছাত্রলীগ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক একচ্ছত্রভাবে ক্যাম্পাসে অন্যায়-অপরাধ করে বেড়াচ্ছেন। নিশ্চয়ই সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক পক্ষ আবার তার বিরুদ্ধেও কোনও না কোনও অভিযোগ আনবে।

একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, তাও মেয়েদের প্রতিষ্ঠানে এসব কল্পনা করা যায়? কিন্তু বাস্তবতা হলো বহুদিন ধরে এসব হচ্ছে। এরকম চূড়ান্ত নৈরাজ্য যে দিনশেষে ছাত্রলীগ নামের একটি ঐতিহ্যবাহী সংগঠনকে ধ্বংস করে ফেলছে, সেটা কী দল বা সংগঠনের নেতৃত্ব বুঝতে পারছে? এই তো মাত্র কয়েকদিন আগে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে কমিটি গঠন নিয়ে কি নৈরাজ্যই না করলো ছাত্রলীগের দুই পক্ষ।

ছাত্রলীগের নিজস্ব সংঘর্ষের ঘটনা বাড়ছে, হিংসাত্মক হানাহানি চলছে, শিক্ষার্থীরা নিজেরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, শিক্ষক-অধ্যাপকরাও আক্রমণের শিকার হচ্ছেন।

এটা কোন ধরনের ছাত্র রাজনীতি? জানি, এই প্রশ্নের উত্তর নেই কোথাও। রাজনীতি ধ্বংস করা, প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করা, শিক্ষার্থীদের জীবন ধ্বংস করার এই রাজনীতি কেউ বন্ধ করবে না। দেশের ইতিহাস সৃষ্টি করা বা ইতিহাস বদলে দেওয়া নানা আন্দোলন ছাত্রদের হাত ধরেই শুরু হয়েছে। ইতিহাস তা-ই বলে। কিন্তু ১৯৯০-এর স্বৈরশাসনের বিদায়ের পর যে ছাত্র রাজনীতি হচ্ছে তার কি আদৌ কোনও প্রয়োজন রয়েছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে? সমাজ প্রশ্ন করতে বাধ্য করছে যে ছাত্রদের কি রাজনীতি করার অধিকার আদৌ থাকা উচিত?

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে রাজনীতির নামে এখন যা চলছে, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তা তাণ্ডব, বিশৃঙ্খলা, অরাজকতার নামান্তর। কিন্তু ইডেন কলেজ সম্পর্কে যা জানা গেলো সেগুলো ভয়ংকর অপরাধ। ছাত্র রাজনীতির এতখানি গুণগত অধঃপতন এ দেশে আগে কখনও দেখা যায়নি। ছাত্র ছাত্রীরা রাজনীতি করবে এটা স্বাভাবিক। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, তরুণ-তরুণীদের অভীষ্ট রাজনৈতিক চেতনা হারিয়ে গেছে দলীয় হানাহানির হিংসা-ধ্বংস-অনৈতিকতার আগ্রাসনে। এখনকার ছাত্রনেতাদের সম্পর্কে যা পড়তে হয়, শুনতে হয় বা দেখতে হয়, তাতে পরিষ্কার যে যৌবনের স্বাভাবিক মানবিকতা ও সমাজচেতনা বলতে এদের কিছু নেই।

রাজনীতির নামে শিক্ষাপ্রাঙ্গণে ভয়াবহ মাত্রায় ঘটছে অপরাধ– খুন-জখম-আক্রমণ। মূল্যবোধ তো দূরের কথা, বলা চলে নষ্টামি পাকিয়ে শিক্ষাঙ্গন নষ্টের সংস্কৃতি লালন করছে এই রাজনীতি। নেতাদের সাথে কথায় পারা কঠিন, তবে বাস্তবতা হলো অন্তঃসারশূন্য কাঠামোর বাইরেরটা ঝকঝকে করে ভেতরে চলছে বাজে ও কদর্য রাজনীতি। অসৎ ছাত্র রাজনীতিতে আজ বিপর্যস্ত আমাদের প্রতিষ্ঠানগুলো। অসংখ্য স্বচ্ছ চরিত্রের, ত্যাগী কর্মী আছে। প্রয়োজন ছাত্র রাজনীতি বাঁচাতে তাদের জ্বলে ওঠা। কেবল তারাই শিক্ষার চিন্তা-চেতনাকে রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে সবার কাছে পৌঁছে দিতে পারে। তাদের শিক্ষকরা অনেক আগেই নৈতিকতার জায়গায় হেরে বসে আছে।

লেখক: সাংবাদিক

/এসএএস/এমওএফ/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
ওসির বিরুদ্ধে নির্বাচনে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ
ওসির বিরুদ্ধে নির্বাচনে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ
মেলায় জাদু খেলার নামে ‘অশ্লীল নৃত্য’, নারীসহ ৫ জন কারাগারে
মেলায় জাদু খেলার নামে ‘অশ্লীল নৃত্য’, নারীসহ ৫ জন কারাগারে
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ