X
শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪
১৫ চৈত্র ১৪৩০

বিএনপির জনসভা নিয়ে সরকারের জন্য আপনার পরামর্শ কী?

ডা. জাহেদ উর রহমান
২৫ অক্টোবর ২০২২, ২২:১৪আপডেট : ২৫ অক্টোবর ২০২২, ২২:১৪

সম্প্রতি অতি পরাক্রমশালী ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের আচরণ দেখে কারও করুণা হতেই পারে। অবশ্য এটা ছাড়া তাদের আর উপায় কী ছিল? আমি যদি সেই দলের নীতিনির্ধারকদের একজন হতাম তাহলে কী পরামর্শ দিতাম সর্বোচ্চ নেতৃত্বকে?

বিএনপির জনসভাকে কেন্দ্র করে যা যা করছে আওয়ামী লীগ সেটাকে দূর থেকে দেখলে অনেকের কাছে অদ্ভুত মনে হতেই পারে। মনে হতে পারে বিএনপিকে কয়েকটি বড় জনসভা করতে দিলে কী এমন ক্ষতি হতো আওয়ামী লীগের? জনসভা করে তো আর সরকারের পতন করানো সম্ভব না। কিন্তু প্রায় ৭৫ বছর বয়সের পোড় খাওয়া রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের এটা না বোঝার কোনও কারণ নেই। কিন্তু তারা সেটা করছে, অর্থাৎ বুঝে-শুনেই করছে।

বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশগুলোর ক্ষেত্রে একটির চাইতে পরেরটিতে সরকারের বাধা সৃষ্টি করার পরিমাণ বেড়েছে। চট্টগ্রামেও জনসভা নির্বিঘ্ন ছিল না, ছিল নানা রকম বাধা। রাস্তায় সরকার দলীয় ক্যাডাররা জনসভায় আসতে বাধা দিয়েছে এবং কোনও কোনও ক্ষেত্রে যানবাহনের পথরোধ করা হয়েছে।

চট্টগ্রামকে অনেক বেশি ছাড়িয়ে গেলো ময়মনসিংহের জনসভা। জনসভার আগে থেকে নানা রকম বাধাবিপত্তির অভিযোগ তো বিএনপির দিক থেকে ছিলই। জনসভার দিন সকাল থেকে ময়মনসিংহের সঙ্গে ঢাকা এবং দেশের বিভিন্ন অংশের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে ফেলা হয়। ঢাকা থেকে ময়মনসিংহ যাওয়ার জন্য বহু মানুষ বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে ফিরে এসেছেন এমন রিপোর্ট আমরা মিডিয়ায় দেখেছি। এমন পরিস্থিতি অনুমান করি- বিভাগের বিভিন্ন জেলা থেকে বিএনপির কর্মী-সমর্থকরা আগের দিন রাতেই ময়মনসিংহে এসে হাজির হয়েছিলেন। সে হাজির হওয়া মানুষদের ওপরও নানা রকম হামলার অভিযোগও আছে ক্ষমতাসীন দলের লোকজনের বিরুদ্ধে। এমনকি জনসভায় যাচ্ছিল না, কিন্তু কসবায় যাচ্ছে এই সন্দেহে হামলা হয়েছে তরুণদের ওপর।

এরপর খুলনা তো ছাড়িয়ে গেলো ময়মনসিংহকে। দুদিন আগে থেকেই খুলনা শহরটিকে সড়ক ও জলপথে বিচ্ছিন্ন করে ফেলা হলো সারা দেশ থেকে। এমনকি বিএনপির সমাবেশে যাবার মতো ‘অপরাধ’ যারা করেননি, তারাও চরম দুর্ভোগের মধ্যে পড়লেন।

এভাবে যানবাহন বন্ধ করার জন্য সরকারি দল পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের ডাকা ধর্মঘটকে দোষ দিলেও দেশের বিবিসি বাংলাসহ শীর্ষস্থানীয় মিডিয়াগুলো রিপোর্ট করেছে, মালিক-শ্রমিক সংগঠনগুলোর প্রতিনিধিদের সাথে কথা বলে হাটে হাঁড়ি ভেঙে দিয়েছে। হাটে হাঁড়ি না ভাঙলেও বা কী, দেশের মানুষ জানে এগুলো আসলে কেন হতো অতীতে, কেনই বা হচ্ছে এখন।

প্রাথমিকভাবে এটা মনে হওয়ার যথেষ্ট কারণ আছে টানা তিনটি মেয়াদ ক্ষমতায় থাকা এবং অতি জনপ্রিয় দাবি করা সরকার একটি বিরোধী দলের  জনসভা ঠেকানোর জন্য এমন তো করার কথা নয়।

এমন আচরণ, যেটা সরকারের ইমেজের জন্য খুবই ক্ষতিকর সেটা কেন করছে তারা? নেহায়েত একটা জনসভার লোকসমাগম ঠেকানোর জন্য সরকারের এমন আচরণ কি অন্তর্নিহিত কোনও দুর্বলতার প্রমাণ দিচ্ছে না? বাধা এড়িয়ে মানুষের জনসভায় আসা কি বিএনপিকে মানুষের সামনে আরও কিছুটা শক্তিশালীরূপে উপস্থাপন করে না? এভাবে বাধাবিপত্তি ছাপিয়ে বিরাট সব জনসভাকে বিএনপির মনোবল আরও অনেক বেশি চাঙা করে দেয় না? আওয়ামী লীগের মতো একটি পোড় খাওয়া রাজনৈতিক দলের এগুলো না বোঝার কোনও কারণ নেই। কিন্তু তারপরও তারা সেটা করছে।

অতীতের অভিজ্ঞতা বলে বিভাগীয় জনসভার কয়েকটিসহ বিএনপির অনেক জনসভা পুরোপুরি পণ্ড করে দেওয়ার কথা ক্ষমতাসীনদের। কিন্তু এতদিনের চরম স্বস্তির অবস্থায় সরকার হয়তো নেই। সামনের নির্বাচনকে ঘিরে বিভিন্ন দেশের, বিশেষ করে পশ্চিমা দেশগুলোর কূটনীতিকদের দৌড়ঝাঁপ চোখে পড়ার মতো। এটা দেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে বিদেশি হস্তক্ষেপ কিনা বা সেটা আমাদের দেশের জন্য কতটা অসম্মানজনক, সেই বিতর্কটা সরিয়ে রেখেই বলছি, বিষয়গুলো সরকারের ওপর কি চাপ তৈরি করছে না?

দেশে এখন মানুষ অর্থনৈতিক সংকটে আছে। করোনার সময় দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড সংকুচিত হয়ে পড়ায় মানুষ আর্থিক সংকটে ছিল। এরপর জ্বালানির দাম বৃদ্ধির কারণে মূল্যস্ফীতি মানুষের জীবনকে আরও সংকটে ফেলেছে। এখন আবার ধেয়ে আসছে একটি বিশ্বমন্দা।

বহু বছর হয়ে গেলো, এটা বিশ্বায়নের যুগ। তাই করোনা মহামারি, ইউক্রেনের ওপরে রাশিয়ার আগ্রাসন, বৈশ্বিক মন্দা, সবকিছুর প্রভাব পৃথিবীর প্রতিটা দেশের ওপর কম বেশি পড়বেই, পড়ছেও।

বিএনপির জনসভাগুলোতে এখন অনেক আমজনতা যোগ দিচ্ছেন এমন দাবিও অনেকে করছেন। এটা হয়তো ক্ষমতাসীনদের জন্য বড় দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে উঠতে পারে।

বর্তমান পরিস্থিতিতে সরকারের ওপর যৌক্তিক কারণে ক্ষোভ আছে দেশের অনেক মানুষের। বিএনপির জনসভাকে কেন্দ্র করে মানুষ যদি রাস্তায় নেমে আসতে শুরু করে, তাহলে পরিস্থিতি সরকারের ভীষণ প্রতিকূলে চলে যাবে, এটা খুবই সাধারণ কাণ্ডজ্ঞান দিয়েই বোঝা যায়।

বুঝতেই পারছি আমরা, খুব স্বতঃস্ফূর্তভাবে বিএনপিকে জনসভা করতে দেওয়া সম্ভব না। আবার আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কিংবা দলীয় ক্যাডারদের দিয়ে বন্ধ করা কঠিন। কারণ, বিদেশিদের চোখ আছে সরকারের কর্মকাণ্ডের ওপরে। আবার এরকম হরতাল ধর্মঘটের নামে যা করা হচ্ছে সেটাও সরকারের অহমের জন্য ভীষণ ক্ষতিকর, যা সরকারের ‘শক্তিমান’ ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করে।

আসুন, আমরা যে কেউ এবার নিজেদের আওয়ামী লীগের কোনও পদে থাকা মানুষ হিসেবে কল্পনা করে দেখি বিএনপির জনসভা এবং রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিয়ে কী করা উচিত, কীভাবে করা উচিত- এই চিন্তায় আপনার ঘুম হারাম করে দিচ্ছে নিশ্চয়ই? তাহলে আপনার পরামর্শ কী হতো?

লেখক: শিক্ষক ও অ্যাকটিভিস্ট

 

 

/এসএএস/এমওএফ/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
ধাক্কা মেরে ফেলে চাপা দিলো কাভার্ডভ্যান, মোটরসাইকেলচালক নিহত
ধাক্কা মেরে ফেলে চাপা দিলো কাভার্ডভ্যান, মোটরসাইকেলচালক নিহত
ডিভোর্স দেওয়ায় স্ত্রীকে কুপিয়ে নিজেও আত্মহত্যার চেষ্টা করেন স্বামী
ডিভোর্স দেওয়ায় স্ত্রীকে কুপিয়ে নিজেও আত্মহত্যার চেষ্টা করেন স্বামী
এক সপ্তাহের মাথায় ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে আরেকজন নিহত
এক সপ্তাহের মাথায় ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে আরেকজন নিহত
‘উচিত শিক্ষা’ দিতে পঙ্গু বানাতে গিয়ে ভাইকে হত্যা
‘উচিত শিক্ষা’ দিতে পঙ্গু বানাতে গিয়ে ভাইকে হত্যা
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ