X
বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪
১৪ চৈত্র ১৪৩০

‘নাম বললে মর্গে থাকবি’

প্রভাষ আমিন
১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১৮:২৩আপডেট : ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১৮:২৩

সাম্প্রতিক সময়ের ছাত্রনেতাদের মধ্যে সাদ্দাম হোসেন আমার খুব প্রিয়। অনেক দিন ধরেই তিনি ছাত্র রাজনীতিতে সক্রিয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের নেতৃত্ব দিয়েছেন। শিক্ষার্থীদের ভোটে ডাকসুর এজিএস হয়েছেন। দীর্ঘদিন নানা দায়িত্বে থাকলেও তার বিরুদ্ধে মারামারি, হানাহানি, চাঁদাবাজি, দখলবাজির অভিযোগ নেই। তিনি বলেন ভালো। অন্য অনেকের মতো ছাত্রলীগের অপকর্ম অস্বীকার করেন না। আমার ভালো লাগার মূল অসাম্প্রদায়িক চেতনার প্রতি তার অবিচল আস্থা। মূল দল আওয়ামী লীগ যখন ভোটের হিসাবে সাম্প্রদায়িক শক্তির সঙ্গে আপস করে, তখনও সাদ্দাম হোসেন সাম্প্রদায়িক শক্তির বিরুদ্ধে সোচ্চার কণ্ঠ। তো প্রিয় সাদ্দাম যখন ছাত্রলীগের সভাপতির দায়িত্ব পেলেন, তখন আমি দারুণ আশাবাদী হয়েছি।

গত একযুগে ছাত্রলীগ যত অপকর্ম করেছে, এবার নিশ্চয়ই একটা শুদ্ধিকরণ প্রক্রিয়া শুরু হবে। এতদিন ধরে চলে আসা অপকর্মের অবসান ঘটবে। ছাত্রলীগ ফিরে পাবে হারানো গৌরব। কিন্তু আমার আশার গুড় ঢেকে গেছে বস্তা বস্তা বালিতে।

বলছি না সাদ্দামের নির্দেশে এসব হচ্ছে। হতে পারে সাদ্দাম এখনও সংগঠনে তার পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে পারেননি। অথবা কোনও একটি অংশ সাদ্দামকে ব্যর্থ প্রমাণের জন্য এসব অপকর্ম করাচ্ছে। নইলে কাছাকাছি সময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম মেডিক্যাল, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্রলীগ আবার বেপরোয়া হয়ে উঠবে কেন?

দৈনিক প্রথম আলো তাদের প্রতিনিধিদের মাধ্যমে সারা দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গত ১ জানুয়ারি থেকে ৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ৪০ দিনের ছাত্রলীগের কর্মকাণ্ডের তথ্য সংগ্রহ করেছে। তাতে ১৩টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ২৫টি অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের তথ্য পেয়েছে তারা। এরমধ্যে সাধারণ শিক্ষার্থীদের নির্যাতন, শিক্ষক-শিক্ষিকাকে লাঞ্ছিত করা, শিক্ষার্থীদের আবাসিক হলের সিট দখলের অভিযোগ, সাংবাদিক হেনস্তা,  চাঁদাবাজি, আধিপত্য বিস্তার নিয়ে নিজেদের মধ্যে সংঘর্ষে জড়ানোর ঘটনা রয়েছে। ছাত্রলীগের আবার বেপরোয়া হয়ে ওঠার ঘটনায় সংগঠনের সভাপতি সাদ্দাম হোসেনকে আমার কিছুটা অসহায়ই মনে হয়েছে, ‘সামাজিক মূল্যবোধের সার্বিক অবক্ষয়ের কারণে কোথাও কোনও নেতিবাচক ঘটনা কেউ ঘটালে তা সংগঠনের বিষয় নয়।’

প্রিয় সাদ্দাম, এসব তাত্ত্বিক কথা বলে পার পাওয়া যাবে না। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। আমরা দেখেছি বিভিন্ন অপকর্মের কারণে গত রবিবার ছাত্রলীগের বিভিন্ন পর্যায়ের ২১ নেতাকে বহিষ্কার করা হয়েছে। তবে ‘ছাত্রলীগ থেকে বহিষ্কার’ এখন আর কোনও শাস্তি নয়। কাগজে-কলমে বহিষ্কার হলেও তারা ছাত্রলীগের শেল্টারেই থাকে। একসময় আবার দলে ভিড়ে যায়। যারা অপকর্ম করবে তারা যাতে আর কখনোই দলে ভিড়তে না পারে, তা নিশ্চিত করতে হবে। বেআইনি কিছু করলে সাংগঠনিক ব্যবস্থার পাশাপাশি তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থাও নিতে হবে।

অতীতের ভুল থেকে মানুষ শিক্ষা নেয়। কিন্তু ছাত্রলীগ শিক্ষা তো নেয়ই না, উল্টো একই ভুল বারবার করে। ক’দিন আগে ইডেন কলেজ নিয়ে সারা দেশে তোলপাড় হয়েছে। আর এবার মাঠে নেমেছেন ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয় শাখার নেত্রীরা। কথা না শোনায় ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের এক নেত্রী ও তার অনুসারীরা নতুন ভর্তি হওয়া এক ছাত্রীর ওপর সাড়ে চারঘণ্টা ধরে নির্যাতন চালায়। অকথ্য ভাষায় গালাগাল, মারধর, বিবস্ত্র করে ভিডিও ধারণ করে তারা। ঘটনা কাউকে জানালে ভিডিও ফাঁস করা, প্রয়োজনে মেরে ফেলার হুমকি দেওয়া হয়। ভয়ে ওই শিক্ষার্থী বাড়ি চলে যান। ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ নেত্রীর মাথায় ছাত্রীকে বিবস্ত্র করে ভিডিও ধারণ ও তা ছড়িয়ে দেওয়ার বুদ্ধি, দারুণ শিক্ষা পেয়েছেন বটে তিনি।

বলছিলাম, ভুল থেকে শিক্ষা নেওয়ার কথা। বিশ্বজিৎ হত্যা থেকে শিক্ষা নিলে বুয়েটে আবরার হত্যাকাণ্ড ঘটতো না। আবরার হত্যা থেকে শিক্ষা নিলে চট্টগ্রাম মেডিক্যালের ঘটনা ঘটতো না। ৮ ফেব্রুয়ারি মধ্যরাতে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজের চার শিক্ষার্থীকে ডেকে নিয়ে অমানুষিক নির্যাতন করে ছাত্রলীগ নেতারা। টর্চার রুমে চার জনকে সারা রাত পেটানো হয় লোহার রড ও স্ট্যাম্প দিয়ে। এদের মধ্যে ভয়ে দুজন ক্যাম্পাস ছেড়েছেন। বাকি দুজন মারের ধকল সইতে না পেরে ভর্তি হয়েছেন চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে। যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তাদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা তো নেওয়া হয়ইনি, বরং তারা মহড়া দিয়ে বেড়াচ্ছে। আইসিইউতে গিয়ে তারা আহতদের হুমকি দিয়েছে,  ‘এখন আইসিইউতে আছিস, নাম বললে মর্গে থাকবি!’

এই লেখা যখন শেষ করে এনেছি তখন দেখলাম, রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে একুশে বইমেলায় চার ব্যক্তির কাছ থেকে পুলিশ পরিচয় দিয়ে চাঁদাবাজির সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই ছাত্রলীগ নেতাকে আটক করেছে পুলিশ। তারা হলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সূর্যসেন হল শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি মোহাইমেনুল ইসলাম এবং জহুরুল হক হল শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি রাজীব হোসেন।

আসলে ছাত্রলীগের অপকর্মের ফিরিস্তি দিতে গেলে শেষ হবে না। আবার এটাও সত্য সারা দেশে ছড়িয়ে থাকা এত বড় সংগঠনের সবাইকে নিয়ন্ত্রণে রাখা সত্যি কঠিন। তবে কেন্দ্র থেকে একটা কঠিন বার্তা দিতে হবে তৃণমূল পর্যন্ত। অপকর্ম করে সংগঠনের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করলে কেউ ছাড় পাবে না। সবার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক এবং আইনি সব ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

প্রিয় সাদ্দাম, আপনার ওপর আমার আস্থা আছে। আড়াই মাসে তা ক্ষুণ্ন হয়নি। আপনি শক্ত হন। কঠোর হাতে সংগঠনের নিয়ন্ত্রণ নিন। ছাত্রলীগকে ফিরিয়ে আনুন গৌরবের পথে। আমি জানি আপনি পারবেন। আসলে আপনাকে পারতেই হবে।

লেখক: হেড অব নিউজ, এটিএন নিউজ

/এসএএস/এমওএফ/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
কেনাকাটার একাল-সেকাল
অনলাইন শপিংকেনাকাটার একাল-সেকাল
প্রথম গানে ‘প্রিয়তমা’র পুনরাবৃত্তি, কেবল... (ভিডিও)
প্রথম গানে ‘প্রিয়তমা’র পুনরাবৃত্তি, কেবল... (ভিডিও)
বিএনপির ‘ইন্ডিয়া-আউট’ ক্যাম্পেইন: বাস্তবতা ও সম্ভাব্য ফলাফল
বিএনপির ‘ইন্ডিয়া-আউট’ ক্যাম্পেইন: বাস্তবতা ও সম্ভাব্য ফলাফল
নায়কের জন্মদিনে নায়িকারা...
নায়কের জন্মদিনে নায়িকারা...
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ