X
বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪
১১ বৈশাখ ১৪৩১

ক্রিকেট এবং নায়ক খলনায়ক প্রসঙ্গ

রেজানুর রহমান
১৬ মার্চ ২০২৩, ১৯:৪৮আপডেট : ১৬ মার্চ ২০২৩, ১৯:৫৪

যতদিন আপনি দিতে পারবেন ততদিনই আপনি নায়ক অর্থাৎ আপনি বেশ গুরুত্বপূর্ণ সবার কাছে। পরিবার, সংসার, সমাজ ব্যবস্থা, রাজনীতি, সমাজনীতি, করপোরেট সেক্টর, ব্যবসা-বাণিজ্য, শিক্ষা সংস্কৃতি খেলাধুলা সব ক্ষেত্রেই আপনি যতদিন কিছু দিতে পারবেন ততদিনই আপনি সম্মান পাবেন। ততদিনই মানুষ আপনাকে মাথায় তুলে রাখবে। এটাই সত্যি। এটাই নিয়তি।

আমাদের ক্রিকেটের কথাই যদি ধরি, টি-২০-তে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডকে ধবল ধোলাই করেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। এটি বাংলাদেশের জন্য অবিশ্বাস্য সাফল্য। বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ড বাংলাদেশের কাছে ধবল ধোলাই হবে, এটা বাংলাদেশরই কেউ বোধকরি কল্পনাও করেনি। ইংল্যান্ড বিশ্ব ক্রিকেটের মোড়ল। ক্রিকেটে শক্তিধর দেশ। র‌্যাংকিংয়ের প্রায় তলানিতে থাকা বাংলাদেশ ক্রিকেট দল ইংল্যান্ডকে ‘হোয়াইট ওয়াশ’ করবে এটা অনেকের ভাবনার মধ্যেও ছিল না। বিশেষ করে ওয়ানডেতে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের বাজে পারফরম্যান্স টি-২০-তে শঙ্কাটা বাড়িয়ে দিয়েছিল। ক্রিকেটের তিন ফরমেটের মধ্যে একমাত্র ওয়ানডেতেই বাংলাদেশের সাফল্য বেশি। টি-২০-তে আহামরি কোনও সাফল্য নেই। সেই ওয়ানডেতে বাজে পারফরম্যান্সের পর টি-২০ নিয়ে আশঙ্কাটা বেড়েই যাচ্ছিল। অথচ সেই টি-২০-তেই বাংলাদেশ এখন বলতে গেলে রাজা। জয়ের নায়ক। ফলে অব্যাহতভাবে সমালোচনার মুখে পড়া বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা এখন আবার সোনার ছেলের মর্যাদায় অভিষিক্ত। আগের দিনও যারা বিরক্ত ছিলেন বাংলাদেশের ক্রিকেট নিয়ে, যারা সাকিব আল হাসানের কঠোর সমালোচনায় মুখর ছিলেন, তারাই এখন বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের নিয়ে আনন্দ বার্তা ছড়াচ্ছেন। এই ঘটনাই প্রমাণ করে আপনি যতদিন দিতে পারবেন ততদিনই নায়ক। দিতে না পারলেই নায়ক থেকে খল নায়কে পরিণত হবেন।

টি-২০ সাফল্যের পর দেশের প্রচারমাধ্যম বাংলাদেশের ক্রিকেটের ব্যাপারে অনেক আকর্ষণীয় শিরোনাম ও খবর প্রকাশ করেছে। এটাই স্বাভাবিক। ক্রিকেটের এত বড় সাফল্য। আবেগ ধরে রাখাই মুশকিল। আবেগে ভাসছে প্রচারমাধ্যম, আবেগে ভাসছে ক্রিকেট ভক্তরা। আবেগে ভাসছে গোটা দেশ। একটি জাতীয় দৈনিক শিরোনাম করেছে– অবিশ্বাস্য, অভাবনীয়, অকল্পনীয়। সবই বাংলাদেশের লড়াকু ক্রিকেটারদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। টি-২০ ফরমেটে বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের এমন স্মরণীয় সাফল্য তো এর আগে দেখা যায়নি। কাজেই আবেগ, আনন্দ উত্তেজনা তো একটু বেশি হবেই। কিন্তু একটা প্রশ্ন। যতদিন আপনি দিতে পারবেন ততদিনই নায়ক। এটাই কি চির সত্য হয়ে থাকবে? নায়ক তো নায়কই। আজ তিনি সাফল্য ছড়াচ্ছেন বলেই কি তাকে মাথায় তুলে নেবো। সাফল্য দেখতে না পারলেই তাকে ছুড়ে ফেলে দেবো। এই মানসিকতার কি কোনও পরিবর্তন ঘটানো যায় না?

বাংলাদেশ বনাম ইংল্যান্ডের মধ্যে ওয়ানডে খেলার কথাই যদি ধরি তাহলে বাংলাদেশের ক্রিকেট ও ক্রিকেটারদের অবস্থা কেমন ছিল একটু ভাবুন তো। বাংলাদেশের ক্রিকেট ওয়ানডে ফরমেটে ব্যাপক আলোচিত। সবার ধারণা ছিল টি-২০-তে বাংলাদেশ ইংল্যান্ডের সঙ্গে পারবে না। তবে ওয়ানডেতে ইংল্যান্ডকে হারাবে বাংলাদেশ। কিন্তু ঘটলো তার  উল্টোটা। ওয়ানডেতেই বলতে গেলে ধবল ধোলাই হলো বাংলাদেশ। ব্যাস! ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়লো বাংলাদেশ ও বাংলাদেশের ক্রিকেট। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বাংলাদেশের ক্রিকেট নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা ও ট্রল করা শুরু হলো। খেলোয়াড়দের নাম ধরে ধরে নানা ধরনের মন্তব্য প্রকাশ করতে থাকলেন অনেকে। অবস্থাটা এমন দাঁড়ালো যে বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা অপরাধী। কাজেই কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে তাদের।

এমন পরিস্থিতিতেই টি-২০ টুর্নামেন্ট শুরু হলো ঢাকায়। প্রথম খেলায় জিতলো বাংলাদেশ। সমালোচনামুখর ব্যক্তিরা একটু যেন অবাক হলেন। অনেকের যেন বিশ্বাসই হচ্ছিল না। বাংলাদেশ বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডকে হারিয়ে দিলো? অনেকের মনোভাব ছিল অনেকটা এরকম– ঝড়ে বক পড়েছে... কিন্তু দ্বিতীয় ম্যাচে বাংলাদেশের অব্যাহত জয় বদলে দিলো পরিবেশ। যারা বলেছিলেন এই ক্রিকেটারদের দিয়ে কিছুই হবে না তারাই আবার বলতে শুরু করলেন– শাবাশ বাংলাদেশ। এই ক্রিকেটাররাই বাংলাদেশের গর্ব। এরাই বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে...।

প্রিয় পাঠক, এবার বুঝলেন তো লেখার শুরুতে কথাটা কেন বলেছিলাম। হ্যাঁ এটাই সত্য– আপনি যতদিন দিতে পারবেন ততদিনই নায়ক। ততদিনই আপনার গুরুত্ব আছে। পরিবারের কথাই যদি ধরি। বাবা-মা অনেক কষ্ট করে ছেলেমেয়েদের মানুষ করেন। অথচ ছেলেমেয়েরা বড় হয়ে অনেকে বাবা-মায়ের খোঁজও রাখেন না। বাবা-মাকে বৃদ্ধাশ্রমে রেখে আসার ঘটনাও তো ভূরি ভূরি। অথচ বাবা-মার কঠোর সংগ্রাম না থাকলে ছেলেমেয়েরা হয়তো সাফল্যের মুখ দেখতো না। একজনের কথা জানি। ভাইবোনদের মধ্যে বড়। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে টিউশনি করে ছোট ছোট ভাইবোনদের জন্য টাকা পাঠাতেন। ঈদ পার্বণে নতুন কাপড় নিয়ে আসতেন। ওই সময় বড় ভাই ছিলেন অন্য ভাইবোনদের কাছে দেবতার মতো। আর এখন ভাইবোনেরা যে যার মতো সাফল্য পেয়েছে। বড় ভাইয়ের খোঁজও নেয় না। বরং বড় ভাই তাদের কাছে এখন অতীত ইতিহাস। তাদের কাছে খল নায়ক।

বড় ভাই খল নায়কে পরিণত হয়েছেন এই জন্য যে তিনি এখন কাউকে কিছু দিতে পারেন না। তার সে সামর্থ্য নাই। তাই নায়ক থেকে খল নায়কে পরিণত হয়েছেন। আমাদের নাটক সিনেমার অবস্থাও অনেকটা ক্রিকেটের মতোই। যতদিন ভালো অভিনয় করতে পারবেন ততদিন আপনি লক্ষ লক্ষ মানুষের অনুপ্রেরণা। আপনার জন্য জীবন দিতেও প্রস্তুত। অভিনয়ের বয়স শেষ। নায়ক-নায়িকা হওয়ার আর কোনও যোগ্যতা নাই। অভিনয়ে অক্ষম আপনি। ব্যাস আপনাকে ভুলে যাবে সবাই। এটাই বাস্তবতা, এটাই নিয়তি।

তবে এই অবস্থার পরিবর্তন দরকার। একজন নায়ক সব কাজেই পারদর্শী হবেন, প্রতিদিন সাফল্য পাবেন এটা আশা করা যায় না। কাজেই হঠাৎ ব্যর্থতায় নায়ক-নায়িকাকে অসম্মান করা উচিত নয়। আমাদের ক্রিকেটাররা এখন জয়ের নায়ক। তাদের মাথায় তুলে নিয়েছি। আজ যেমন সাফল্যের দিনে তাদের পাশে আছি, ব্যর্থতার দিনেও থাকতে চাই। এটাই হোক সমবেত প্রার্থনা।

বাংলাদেশের ক্রিকেটের জয় হোক।

লেখক: কথাসাহিত্যিক, নাট্যকার, সম্পাদক- আনন্দ আলো

/এসএএস/এমওএফ/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
নির্মাণাধীন ভবনমালিকদের মেয়র তাপসের হুঁশিয়ারি
নির্মাণাধীন ভবনমালিকদের মেয়র তাপসের হুঁশিয়ারি
বুকে ব্যথা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি তেভেজ
বুকে ব্যথা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি তেভেজ
২৪ ঘণ্টা পর আবার কমলো সোনার দাম
২৪ ঘণ্টা পর আবার কমলো সোনার দাম
চিকিৎসা-খাদ্য-কৃষি সরঞ্জামের আন্তর্জাতিক প্রদর্শনী শুরু হচ্ছে ঢাকায়
চিকিৎসা-খাদ্য-কৃষি সরঞ্জামের আন্তর্জাতিক প্রদর্শনী শুরু হচ্ছে ঢাকায়
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ