X
রবিবার, ১১ মে ২০২৫
২৮ বৈশাখ ১৪৩২

স্বস্তির ঈদ উৎসবে অনেক শুভ কামনা

রেজানুর রহমান
২২ এপ্রিল ২০২৩, ০৮:১১আপডেট : ২২ এপ্রিল ২০২৩, ১৪:০১

১৬ কোটি মানুষের ৬ কোটিই এবারের ঈদে নাড়ির টানে বাড়ি গেছেন অথবা এখনও বাড়ির পথে আছেন। বলতে গেলে দেশের অর্ধেক মানুষ বাড়িমুখো। বাড়িতে কে আছেন? বাবা-মা, ভাই বোন, চাচা-চাচি, ফুফা-ফুফু আরও কতো আত্মীয়-স্বজন। যৌথ পরিবার ভেঙে গেলেও পারিবারিক টান, মায়া-মমতা, স্নেহ, শ্রদ্ধা এতটুকু কমেনি। সে কারণেই ঈদে বাড়িমুখো হয় মানুষ। যত কষ্টই হোক বাড়ি যেতেই হবে। বাড়িমুখো মানুষেরা অনেকেই যাত্রাপথের সেলফি প্রকাশ করেন। আবির হোসেন লিখেছেন, অবশেষে বাড়ি পৌঁছে গেলাম। মা বাড়ির দরজায় দাঁড়িয়ে আছেন। আগে বাবা দাঁড়িয়ে থাকতেন। এখন বাবা নেই। তিনি না ফেরার দেশের বাসিন্দা। এখন মা আমার জন্য দাঁড়িয়ে থাকেন। মগবাজার মোড়ে একদল তরুণ বাসে উঠবেন বলে দাঁড়িয়েছিলেন। সমবয়সী। সবার কাঁধে ব্যাগ। একজনকে জিজ্ঞেস করলাম– ঈদের ছুটিতে বাড়ি যাচ্ছেন? ব্যস্ততার সঙ্গে উত্তর দিলেন– হ্যাঁ, মাকে দেখতে যাচ্ছি। এদের অনেকেই হয়তো বাসে সিট পাবে না। অনেকটা পথ দাঁড়িয়েই যাবে। তবু ঈদে বাড়ি যেতেই হবে। নাড়ির টান বলে কথা। কমলাপুর রেলস্টেশনে কথা হলো রাশেদ জামানের সঙ্গে। ঢাকায় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। বিবাহিত। গ্রামে স্ত্রী, সন্তান মা-বাবার সঙ্গে থাকেন। এক বছর হয় গ্রামে যাননি। যদিও প্রতিদিনই যখন তখন ফেসবুকে বাবা-মা, স্ত্রী-সন্তানের সঙ্গে কথা হয়। তবু তাদের কাছ থেকে দেখার প্রহর গুনছেন তিনি। বললেন, বাড়ি গিয়েই প্রথমে বাবা-মায়ের পায়ে সালাম করবো। তারপর আমার আদরের ধন একমাত্র কন্যাকে বুকে জড়িয়ে ধরবো। কতদিন তাকে দেখি না। রাশেদ জামানের চোখ ছলছল...।

ঢাকা আন্তর্জাতিক হযরত শাহজালাল এয়ারপোর্টে একজনকে বিদায় জানাতে গিয়েছিলাম। সৈয়দপুরের যাত্রী। এয়ারপোর্টে ভিড় দেখে অবাক হলাম। ওয়েটিং লাউঞ্জে তিল ধারণের ঠাঁই নেই। একটা সময় ভাবা হতো আকাশপথ উচ্চবিত্তের জন্য। এখন পরিস্থিতি বদলে গেছে। আকাশপথের ওয়েটিং লাউঞ্জকে মনে হলো সাধারণের ওয়েটিং লাউঞ্জ। তার মানে দেশ সত্যিকার অর্থে বদলে গেছে।

হ্যাঁ, বদলের চিত্র স্পষ্ট। পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের জীবনযাত্রা পুরোটাই পাল্টে গেছে। যে পথে সময় লাগত ৭/৮ ঘণ্টা, সে পথ এখন দেড় থেকে দুই ঘণ্টায় পার হওয়া যায়। ঈদযাত্রায় দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ বেশ স্বস্তি পেয়েছে। যদিও ঐতিহ্যবাহী লঞ্চযাত্রায় ভাটা পড়েছে। সদরঘাট দক্ষিণাঞ্চলের প্রবেশদ্বার। কী যে ভিড়, ঝক্কি-ঝামেলা পোহাতে হতো ঈদে ঘরমুখো মানুষকে। পদ্মা সেতুর বাস্তবতা নদীপথকে অনেকটাই গুরুত্বহীন করে তুলেছে। একটি টেলিভিশন চ্যানেলে একটি লঞ্চের কর্মকর্তার সাক্ষাৎকার দেখলাম। তিনি বললেন, আমরা চাতক পাখির মতো বসে আছি। কিন্তু আগের মতো যাত্রী নেই। সঙ্গে সঙ্গে আমার এক বন্ধুর কথা মনে পড়লো। এবার লঞ্চেই সে বরিশাল গেছে। কথা প্রসঙ্গে সে একটা প্রস্তাব তুলেছে। তার মতে, নদীপথের জার্নিকে এখনও আকর্ষণীয় করে গড়ে তোলা সম্ভব। এজন্য প্রয়োজন আধুনিক ধ্যান-ধারণার বাস্তবায়ন। অতীতকালের সেই যাত্রীকে টেনেহিঁচড়ে লঞ্চে তোলার অভ্যাস, পাশাপাশি লঞ্চের পরিবেশ বদলাতে হবে। ভাড়া যাই হোক সেবার মান আরও আন্তরিক করতে পারলেই মানুষ আবার নদীপথের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠবে।

প্রতি বছরই প্রচারমাধ্যমে ঈদযাত্রায় ভোগান্তির চিত্রই গুরুত্ব পায়। তবে অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার ভোগান্তি কিছুটা কমেছে। ট্রেনের অর্থাৎ রেলপথের পরিবেশ বেশ ভালো। দুই একটি ব্যতিক্রম ছাড়া প্রতিটি ট্রেনই কমলাপুর স্টেশন থেকে নিজ নিজ গন্তব্যে নির্ধারিত সময়েই ছেড়ে গেছে। যদিও ট্রেনের টিকিট পাওয়া না পাওয়া নিয়ে এবারও অভিযোগ কমেনি। আমার একজন সাংবাদিক বন্ধু, দেশের পরিবহন ব্যবস্থা নিয়েই লেখালেখি করেন। তিনি বললেন, ঈদে সারা দেশে প্রায় ৬ কোটি মানুষ একযোগে নাড়ির টানে বাড়ির পথে নামে। ঢাকা থেকে প্রায় দেড় কোটি মানুষ গ্রামে চলে যায়। সংগত কারণেই যাতায়াত ব্যবস্থায় চাপ পড়ে। তবে আশার কথা, পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় দক্ষিণাঞ্চলের ভোগান্তি নেই বললেই চলে। উত্তরাঞ্চলের ক্ষেত্রেও আগের চেয়েও ভোগান্তি কম। উত্তরাঞ্চলের সড়কপথে ওভারব্রিজ, ফোর লেনের কাজ শেষ হলে আগামীতে কোনও ভোগান্তিই থাকবে না।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আবুল বাশার নামে একজন লিখেছেন, সৃষ্টিকর্তার কাছে অনেক কৃতজ্ঞতা। এবার তেমন ঝক্কি-ঝামেলা ছাড়াই বাড়ি পৌঁছে গেলাম। তবে ঝক্কি-ঝামেলার মধ্যেও এক ধরনের আনন্দ আছে রে ভাই...।

ঈদে মূলত আমাদের গ্রামগুলো মুখর হয়ে ওঠে। সেই তুলনায় শহর ফাঁকা হয়ে যায়। গ্রামে এ বাড়ি ও বাড়ি নতুন মুখের উপস্থিতি। আত্মীয়-স্বজনের আনাগোনা। নতুন পোশাক। সব মিলিয়ে ঈদ উৎসব মূলত গ্রামেই জমে বেশি। পরিচিত একজনকে জানি, তার কাজই হলো ঈদে গ্রামে গিয়ে তরুণদের সংগঠিত করা। তাদের নিয়ে আড্ডা, আলোচনার ব্যবস্থা করেন। তার মটিভেশনাল স্পিচ শুনে গ্রামের অনেক তরুণ সাবলম্বী হওয়ার পথ খুঁজে নিয়েছে। আরেকজনের কথা বলি, প্রতি ঈদে গ্রামে গিয়ে তিনি পাঠাগার আন্দোলন নিয়েই তরুণদের সংগঠিত করেন। তার গ্রামে একটি পাঠাগার গড়ে তুলেছেন। বইয়ের সংখ্যা আড়াই হাজার ছাড়িয়েছে। এই পাঠাগারকে নিয়ে অনেক স্বপ্ন তার। এটি একটি বৃহৎ প্রতিষ্ঠান হবে। বইয়ের সংগ্রহ বাড়বে। একটি কমপ্লেক্স হিসেবে গড়ে তোলার স্বপ্ন তার।

আরেকজনকে জানি ঈদের ছুটিতে গ্রামে গিয়ে তিনি দুস্থ, বিধবা মহিলাদের যথাসাধ্য সহায়তা দানের চেষ্টা করেন। এবার গ্রামের তিনজন দরিদ্র মেধাবী ছাত্রকে সহায়তা করবেন বলে বাড়তি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এদের কেউই নাম প্রকাশ করতে চাইলেন না। বরং বিনীত কণ্ঠে বললেন, আমাদের নাম প্রকাশের কোনও প্রয়োজন নাই। বরং আমাদের উদ্যোগের কথাগুলো তুলে ধরুন, যাতে অন্য কেউ তার বা তাদের সাধ্য অনুযায়ী নতুন উদ্যোগ নিতে আগ্রহী হয়।

ঈদ মানেই উৎসব। ঈদ মানেই আনন্দ। কিন্তু এই আনন্দ কখনই পরিপূর্ণ হবে না যদি না পাশের বাড়ির মানুষটি বিপদগ্রস্ত থাকে। কাজেই আমাদের সবার উচিত পাশের বাড়ির অভাবগ্রস্ত মানুষকে যথাসাধ্য সহায়তা করা। এই লেখায় কয়েকজনের মানবিক দৃষ্টান্তের কথা তুলে ধরা হয়েছে। ইচ্ছে করলে অনেকেই এ ধরনের দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করতে পারেন। ঈদে গ্রামে গেছেন। আপনার প্রিয় স্কুলটির খোঁজ নিন। কেমন আছে ছোটবেলার সেই প্রিয় স্কুলটি? সম্ভব হলে প্রিয় শিক্ষকদের সঙ্গে দেখা করুন। তাদের দোয়া নিন। স্কুলে লাইব্রেরি আছে কিনা, লাইব্রেরিতে বইয়ের সংকট মেটানোর উদ্যোগ নিতে পারেন। গ্রামের তরুণদের ডেকে আপনার জীবন সংগ্রাম ও সাফল্যের দৃষ্টান্ত তুলে ধরুন। এতে একজনও যদি উদ্বুদ্ধ হয় সেটাই বা কম কীসে? পারলে এলাকার দরিদ্র মেধাবী ছাত্রছাত্রীদের পাশে দাঁড়ান। সাধ্যমতো আর্থিক সহায়তা করুন। মনে অনেক শান্তি পাবেন। এমনও হয়, ঈদে গ্রামে বেড়াতে গিয়ে অনেকে বাড়িতেই বসে, শুয়ে, টেলিভিশনে অনুষ্ঠান দেখে সময় পার করেন। তারা সঠিক কাজ করেন না। ঈদে গ্রামে গেছেন, আত্মীয় স্বজন বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে দেখা করুন। গ্রামের উন্নয়নে আপনি কোনও সহযোগিতা করতে পারেন কিনা পরামর্শ দিন। দেখবেন আপনার ঈদ উৎসব অনেক আনন্দময় হয়ে উঠবে।

প্রিয় পাঠক, শুভ কামনা সবার জন্য। ঈদ মোবারক...। 

 

লেখক: কথাসাহিত্যিক, নাট্যকার, সম্পাদক: আনন্দ আলো।  

/এসএএস/এমওএফ/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
কালবৈশাখী ঝড়ে গাছ পড়ে দুই জনের মৃত্যু 
কালবৈশাখী ঝড়ে গাছ পড়ে দুই জনের মৃত্যু 
প্রথম বিদেশ সফরে মধ্যপ্রাচ্য যাচ্ছেন ট্রাম্প
প্রথম বিদেশ সফরে মধ্যপ্রাচ্য যাচ্ছেন ট্রাম্প
পাকিস্তান সফরের জন্য আমরা প্রস্তুত, বাকিটা বোর্ড জানে: সালাউদ্দিন
পাকিস্তান সফরের জন্য আমরা প্রস্তুত, বাকিটা বোর্ড জানে: সালাউদ্দিন
যশোরে ট্রেন ও ট্রাকের সংঘর্ষে আহত ২
যশোরে ট্রেন ও ট্রাকের সংঘর্ষে আহত ২
সর্বশেষসর্বাধিক