X
বৃহস্পতিবার, ১৬ মে ২০২৪
১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

সড়ক হোক দুর্ঘটনামুক্ত

এম. খালিদ মাহমুদ
০২ জুলাই ২০২৩, ১৩:০১আপডেট : ০২ জুলাই ২০২৩, ১৩:০১

প্রতিবছর ঈদে হাজার হাজার মানুষ নাড়ির টানে বাড়ি ফেরেন, এবারের ঈদেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। ঈদযাত্রা যেন না হয় বিষাদের, ঈদে মানুষের বাড়ি ফেরা এবং শহরে ফেরা হোক আনন্দের। প্রতিবছর ঈদের ছুটিতে কর্মস্থল থেকে বাড়িতে আসা-যাওয়ার সময় সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর মিছিল বেড়েই চলেছে, এবারের রোজার ঈদেও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি। রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এ বছর ঈদুল ফিতরের ১৪ দিনে ২৪০টি সড়ক দুর্ঘটনায় অন্তত ২৮৫ জন নিহত ও ৪৫৪ জন আহত হয়েছেন। এ পরিসংখ্যানে দেখা যায় মোট দুর্ঘটনার ৫২.৯১% মোটরসাইকেল সংশ্লিষ্ট, যেখানে ৪৬.৬৬% মৃত্যু ঘটেছে। প্রতিবেদনে আরও দেখা যায়, দুর্ঘটনায় জড়িত বিভিন্ন যানবাহনের মধ্যে মোটরসাইকেল ৩২.১১%, বাস ১৪.১২% এবং তিন চাকার মোটরযান ১৬.৮৫%। বিভাগভিত্তিক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ঢাকা বিভাগে সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনা ও প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে, যথাক্রমে ২৮.৩৩% এবং ২৬.৩১%।

সড়ক দুর্ঘটনা এখন মহামারির রূপ নিয়েছে যা দেশে সব বয়সী মানুষের মৃত্যুর অষ্টম প্রধান কারণ।  এসব ঘটনায় নিহতদের অধিকাংশ ১৫-৩০ বছর বয়সী। গত ২৯ মে এসএসসি পরীক্ষার্থী দুই বন্ধুর জীবন কেড়ে নিলো মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা, তাদের আরেক বন্ধু একই দুর্ঘটনায় আহত হয়ে এখন জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে।

সড়ক দুর্ঘটনা একটি মানবসৃষ্ট দুর্যোগ, তাই সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় একে প্রতিরোধ করা সম্ভব এবং এর ফলে মৃত্যু ও আহতের সংখ্যাও কমিয়ে আনা যায়। সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধে সরকার নতুন আইন (সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮) ও বিধিমালা (সড়ক পরিবহন বিধিমালা ২০২২) প্রণয়ন করেছে। এ আইন ও বিধি কঠোরভাবে প্রয়োগ করা হলে দেশের সড়কগুলো আগের চেয়ে অনেক বেশি নিরাপদ হয়ে উঠবে তাতে সন্দেহ নেই। তবে সরকারের একার পক্ষে সড়ক দুর্ঘটনা রোধ করা সম্ভব নয়। এর জন্য জোরদার সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে, যা সড়কের নিরাপদ ব্যবহারে আমাদের সচেতন করবে। মানুষের সক্রিয় সচেতনতাই পারে সড়কে মৃত্যুর মিছিল রোধ করতে এবং পঙ্গুত্বের হাত থেকে শত শত মানুষকে রক্ষা করতে।

সড়কে দুর্ঘটনা রোধে মোটরসাইকেলের দিকে আমাদের আরও মনোযোগী দৃষ্টি দিতে হবে, যেহেতু এই বাহনের ব্যবহারের সঙ্গে সঙ্গে মারাত্মক দুর্ঘটনা ও হতাহতের সংখ্যা বাড়ছে। মোটরসাইকেল আরোহীদের মানসম্মত হেলমেট পরার বিষয়ে যথাযথভাবে সচেতন করতে হবে। কারণ, কেবল মানসম্মত হেলমেট ব্যবহারেই দুর্ঘটনার অভিঘাত অনেকটা হ্রাস করা যায়। পরিসংখ্যান অনুযায়ী মানসম্মত হেলমেট পরার ফলে মোটরসাইকেল আরোহীদের ৪২% মৃত্যুঝুঁকি এবং ৭০% আহত হওয়ার ঝুঁকি হ্রাস পায়।

দেশের বাজারে যেসব হেলমেট পাওয়া যায়, দেখে বোঝার কোনও উপায় নেই সেগুলো মানসম্মত কিনা। তাছাড়া বাড়তি আমদানি শুল্কের কারণেও দাম বেশি হওয়ায় মানসম্মত হেলমেট ব্যবহারে ক্রেতাদের মধ্যে আগ্রহ কম। দুর্ঘটনায় মৃত্যুঝুঁকি কমাতে মানসম্মত হেলমেট ব্যবহারের কোনও বিকল্প নেই, এ সত্যটি অনুধাবনের জন্য মোটরসাইকেল আরোহীদের আরও বেশি সচেতন হয়ে ওঠা জরুরি।  যত দ্রুত তারা সচেতন হবেন ততই মঙ্গল।  

সড়ক নিরাপত্তা আইন-২০১৮ অনুযায়ী মোটরসাইকেল আরোহীর মানসম্মত হেলমেট পরা বাধ্যতামূলক। তবে এতদিন মানসম্মত হেলমেটের সুনির্দিষ্ট মানদণ্ড ছিল না। সম্প্রতি বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন (বিএসটিআই) নিরাপদ ও মানসম্মত হেলমেটের মান চূড়ান্ত করেছে। ২০২২ সালের ১০ অক্টোবরে সরকার এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। প্রজ্ঞাপনে মোটরসাইকেল হেলমেট বিক্রি ও পরার ক্ষেত্রে হেলমেটের মান মেনে চলা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে ও প্রস্তুতকৃত ও আমদানিকৃত উভয় ধরনের হেলমেটেই বিএসটিআইয়ের লোগো থাকা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।

সরকার হেলমেটের মানদণ্ড নির্ধারণ ও চালকদের মানসম্মত হেলমেট পরা বাধ্যতামূলক করে যে আইন করেছে তা সর্বসাধারণকে অবহিত করা এবং এই আইন যথাযথভাবে প্রয়োগ করা এখন সময়ের দাবি। আশা করি মানসম্মত মোটরসাইকেল হেলমেট পরা নিশ্চিত করতে সরকার অচিরেই কার্যকর নির্দেশনা প্রদান করবে এবং এ কাজে সরকারকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দিতে সংশ্লিষ্ট সুশীল সমাজের সংগঠনগুলো এগিয়ে আসবে।

শুধু মোটরসাইকেল নয়, সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধে প্রত্যেকটি যানবাহনের চালক ও আরোহীদের সচেতন হতে হবে। একইসঙ্গে পথচারীদেরও সতর্কতার সঙ্গে রাস্তা পারাপার হতে হবে। বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনায় হতাহতদের বড় অংশ পথচারী। সবার সম্মিলিত চেষ্টা, সতর্কতার সঙ্গে সড়ক ব্যবহার এবং আইন মেনে চলার সংস্কৃতিই পারবে বাংলাদেশের সড়কগুলোকে নিরাপদ করে তুলতে।

লেখক: ব্র্যাকের রোড সেফটি প্রোগ্রামের কর্মকর্তা

/এসএএস/এমওএফ/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
রাজশাহীতে গুটি আম পাড়া শুরু, কেজি ৪০ টাকা
রাজশাহীতে গুটি আম পাড়া শুরু, কেজি ৪০ টাকা
রাজস্থানের শীর্ষ দুইয়ে থাকা কঠিন করে দিলো পাঞ্জাব
রাজস্থানের শীর্ষ দুইয়ে থাকা কঠিন করে দিলো পাঞ্জাব
লন্ডনে অবৈধ অভিবাসীদের খোঁজে অভিযান, বাঙালিপাড়ায় উৎকণ্ঠা
লন্ডনে অবৈধ অভিবাসীদের খোঁজে অভিযান, বাঙালিপাড়ায় উৎকণ্ঠা
মাধ্যমিকে ছেলেরা কেন পিছিয়ে?
মাধ্যমিকে ছেলেরা কেন পিছিয়ে?
সর্বশেষসর্বাধিক