X
সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪
১৬ বৈশাখ ১৪৩১

আমেরিকায় কি মানবাধিকার ঠিক আছে?

লীনা পারভীন
২৩ জুলাই ২০২৩, ১৭:৩১আপডেট : ২৩ জুলাই ২০২৩, ১৭:৩১

ফোর্বস বলছে– “More than 300 mass shootings have occurred across the country this year, according to data compiled by the Gun Violence Archive, as 2023 remains on pace to become the deadliest year for mass shootings in recent history.” । বছরের মাত্র ছয় মাস গেলো কিন্তু এর মধ্যেই বন্দুক হামলার ঘটনা সব রেকর্ড ভেঙে দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে ওপরের দিকে চলে এসেছে।

এই পরিসংখ্যান বিশ্বমোড়ল যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ ঘটনার। এসব বন্দুক হামলায় মারা যাওয়া সাধারণ মানুষের সংখ্যাটাও ঊর্ধ্বমুখী। মৃত ও আহতের তালিকায় আছে রেকর্ড সংখ্যক শিশুরা। গান ভায়োলেন্স আর্কাইভের তালিকায় সেসব হামলায় কতজন দোষী গ্রেফতার বা বিচারের সম্মুখীন হয়েছে সেটাও দেখা যায়। অবাক করা বিষয় হচ্ছে, সেই তালিকা অত্যন্ত হতাশাজনক। অথচ আমেরিকা আমাদের দেশের যেকোনও হামলাতে উদ্বেগের যন্ত্রণায় ভোগেন। তার চেয়েও বিস্ময় হচ্ছে এসব হামলায় আমাদের বিশ্ব মানবাধিকার নিয়ন্ত্রক সংস্থা জাতিসংঘের কোনও বিবৃতি বা বক্তব্যের দলিল পাইনি কোথাও। শিশুরা মারা যাচ্ছে কিন্তু জাতিসংঘ সেখানে টুইট করার দায় দেখায়নি।

এই আলোচনায় হয়তো যেতাম না যদি না আমেরিকা ও জাতিসংঘ আমাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে এতটা উদ্বিগ্ন হতো। ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচন হয়ে গেলো। ভোটার সংখ্যার উপস্থিতি কম হলেও বিজয়ী হয়েছেন সরকার দলের প্রার্থী। আলোচনায় প্রথম থেকেই ছিলেন ইউটিউবার, টিকটকার হিরো আলম। যিনি নামের আগে ‘হিরো’ লাগালেও নেই কোনও সিনেমা বা নাটকে অভিনয়ের রেকর্ড। একজন টিকটকার থেকে জাতীয় সংসদের প্রার্থী হওয়ার জন্য অবশ্যই হিরো আলমের প্রশংসা প্রাপ্য।

এই ব্যর্থতার দায় আমাদের সবার হলেও সফলতা পুরোটাই হিরো আলমের। ভোটের দিন সবকিছু স্বাভাবিক থাকলেও দিনশেষে হঠাৎ করে কিছু অতি উৎসাহী বা দুর্বৃত্তদের আক্রমণে হিরো আলম আবারও চলে আসে লাইম লাইটে। এই কাজটা একদম অপ্রয়োজনীয় হলেও যেভাবেই হোক ঘটেছে আর এই ব্যর্থতার দায় আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকেও নিতে হবে।

ভোটের দিন মানেই কিছুটা উত্তেজনা থাকবেই। তাই যেকোনও প্রকার উত্তেজনাকে প্রতিহত করাই পুলিশ বা নিয়ন্ত্রক সংস্থার প্রধান দায়িত্ব। আর সরকারি দলেরও বিশেষ সতর্কতা রাখা উচিত ছিল যেন কোনও সুবিধাবাদী গ্রুপ কোনোভাবেই সুযোগ নিতে সাহস না পায়। এই একটা জায়গায় ব্যর্থ হয়েছে সরকারি দলের লোকজন।

আমরাও চাই হিরো আলমের ওপর হামলাকারীরা অতি দ্রুত গ্রেফতার ও বিচারের আওতায় আসুক। ইতোমধ্যে হামলাকারী সন্দেহে কয়েকজন গ্রেফতার হয়েছে বলে সংবাদে জানা গেছে। বিজয়ী সংসদ সদস্যও হামলার পরপরই বিচার চেয়ে বিবৃতি দিয়েছেন। সবকিছুই ইতিবাচক চলছে। এমন ঘটনা কিন্তু আলোচিত হিরো আলমও ঘটিয়েছিল। তিনি নিজেই হামলা করেছিলেন সাধারণ মানুষের ওপর। তখন কোনও আলোচনা হয়নি। যুক্তরাষ্ট্র বা জাতিসংঘের বিবৃতিদাতারা তখন কোথায় ছিলেন জানি না।

আসলে যারা মানবাধিকার নিয়ে উদ্বেলিত হবেন তাদের যেকোনও মানুষের ওপর হামলাতেই উদ্বেগ দেখাতে হবে। না হলে সেই উদ্বেগ পক্ষপাতমূলক মনে হতেই পারে। ভুলে গেলে চলবে না যে আমাদের এই অঞ্চলের নির্বাচন মানেই মারামারি, হত্যা, লুণ্ঠন ইত্যাদির ইতিহাস ছিল একসময়। এখন সেটা অনেকটাই কমে এসেছে। এই তো সপ্তাহ আগেই পাশের দেশ কলকাতায় পঞ্চায়েত নির্বাচনে ১১ জনের মতো মানুষ মারা গেলো। হামলা, লুণ্ঠনের মতো ঘটনা ঘটে গেলো। আমেরিকা বা জাতিসংঘের টিকিটিও পাওয়া গেলো না কোথাও।

তাহলে স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন আসে, মানবাধিকারের অর্গানটা কি কেবল বাংলাদেশের সময়েই সজাগ হয়ে ওঠে? কেন ওঠে? কাদের স্বার্থে? আমরা তো এ দেশের জনগণ। সরকার আমাদের, দেশ আমাদের, নির্বাচন আমাদের, স্বার্থটাও আমাদেরই। তাহলে আমেরিকার এত ‘আলগা মাতব্বরি’র মানে কী হতে পারে?

যাদের নিজেদের দেশের মানুষের জীবনের কোনও নিরাপত্তা নেই, যাদের সরকার নিজেদের ভোটারদের, আগামী প্রজন্মের জীবন ও মরণের কোনও নিশ্চয়তা দিতে পারছে না তারা কোনও স্বার্থে, কাদের বাঁচাতে একটা স্থায়ী ও সাংবিধানিক সরকারকে বারবার এমন প্রশ্নবিদ্ধ করতে চায়?

আমেরিকার মতো দেশের চরিত্রই হচ্ছে নিজেদের স্বার্থের বাইরে এক কদমও পা না ফেলা। যুদ্ধাপরাধী দল জামায়াতের নেতাদের রায় বাস্তবায়নেও তারা মায়াকান্না নিয়ে হাজির হয়েছিল। শেখ হাসিনার দৃঢ় অবস্থান তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক গলাতে দেয়নি। সম্প্রতি ইউক্রেন ও রাশিয়ার সম্পর্কের মাঝেও কাজ করেছে আমেরিকার কূটচাল। ইউক্রেনকে উসকে দিয়েছিল রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধ করতে কিন্তু দিনশেষে জেলেনস্কি একা হয়ে গেলো। মারা গেলো সাধারণ মানুষ। সেসব মানুষগুলোর জীবনের কি কোনও মূল্য ছিল না? কোথায় আমেরিকা তো সেদিন কোনও বিবৃতি দেয়নি। কাউকে তো যুদ্ধ থামাতে বলছে না।

তাহলে আজকে কেন হিরো আলমের জন্য আমেরিকা বা জাতিসংঘ মায়াকান্না জুড়ে দিচ্ছে? হিরো আলম আসলে কে? কী তার প্রভাব আছে দেশের রাজনীতি বা উন্নয়নে?

এই সরকারের অনেক সমালোচনা থাকতেই পারে। সমালোচনার ঊর্ধ্বে কেউ নেই। কিন্তু আমরা সাধারণ মানুষ এটা বিশ্বাস করি যে একজন শেখ হাসিনার বিকল্প এখনও কোনও মানুষ আসেনি আমাদের সামনে। তাঁর রাজনৈতিক প্রজ্ঞা, সাহসিকতা সবকিছুই কি তবে আমেরিকার জন্য ভয়ের? আমেরিকা বা জাতিসংঘের এই মানবাধিকার কান্না কতটা মানবিক আর কতটা রাজনৈতিক? ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলায় কোথায় ছিল আমেরিকা বা জাতিসংঘ? কোথায় ছিল বিচার চাওয়ার আকুতি?

দিনশেষে আমেরিকা বা জাতিসংঘের প্রতি এই দেশের একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে বলতে চাই, আমরা এই দেশের মানুষ এখন রাজনৈতিকভাবে অনেক শান্তিতে আছি। আমাদের নাগরিক অধিকার দেখার মতো একজন শেখ হাসিনা আছেন। আমরা আমাদের নিরাপত্তার বিষয়টি নিজেরাই বুঝে নিতে পারবো। দয়া করে আপনাদের এই মায়াকান্না বন্ধ করার অনুরোধ থাকলো। নিজেদের দেশের মানুষদের জান বাঁচাতে এই শ্রমটুকু ব্যয় করলে নিজেদের ভোটব্যাংক বাড়বে।

লেখক: কলামিস্ট

/এসএএস/এমওএফ/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
ঘনঘন শ্যাম্পু ব্যবহারে চুল রুক্ষ হয়ে যাচ্ছে? জেনে নিন সমাধান
ঘনঘন শ্যাম্পু ব্যবহারে চুল রুক্ষ হয়ে যাচ্ছে? জেনে নিন সমাধান
সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ গেলো ব্যবসায়ীর
সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ গেলো ব্যবসায়ীর
আজ কি বৃষ্টি হবে?
আজ কি বৃষ্টি হবে?
যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যাঞ্চলে টর্নেডোর আঘাতে নিহত ৫
যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যাঞ্চলে টর্নেডোর আঘাতে নিহত ৫
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ