X
বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪
১৯ বৈশাখ ১৪৩১

গণতন্ত্র নিয়ে পশ্চিমা বিশ্বের নীতি ও দেশীয় রাজনীতি

স্বদেশ রায়
২৬ জুলাই ২০২৩, ১৯:১৪আপডেট : ২৬ জুলাই ২০২৩, ১৯:১৪

বেশ কিছু দিন ধরে লক্ষ করছি, বাংলাদেশের নির্বাচন ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার বিভিন্ন অঙ্গ নিয়ে বিশ্বের উন্নত গণতান্ত্রিক দেশগুলো সরকার, রাজনীতিক ও সুশীল সমাজের সঙ্গে কথা বলছে। আর এ নিয়ে অনেকে লেখালেখি হচ্ছে। বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতাও নানান ধরনের কথা বলছেন। পাশাপাশি অনেক লেখালেখিতে পশ্চিমা গণতান্ত্রিক দেশগুলোকে বাংলাদেশের বিরোধী বা সরকারবিরোধী হিসেবে চিহ্নিত করা হচ্ছে।

এ পর্যন্ত যেসব দেশের প্রতিনিধিরা বাংলাদেশে এসেছেন এবং বিভিন্ন মহলে এসব বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছেন, তাদের বক্তব্যে কিন্তু মনে হয়েছে, তারা সবটুকুই তাদের কূটনৈতিক নর্মের ভেতর আছেন। অর্থাৎ তারা বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির কোনও বিষয়ের সঙ্গে নিজেদের জড়াননি। যেমন, বাংলাদেশের এ মুহূর্তের বিরোধী জোটের মূল রাজনৈতিক লক্ষ্য সংসদীয় পদ্ধতি বা বর্তমান সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচনের পরিবর্তে কেয়ারটেকার সরকার পদ্ধতি চালু করে তার অধীনে নির্বাচন। বিদেশি যত প্রতিনিধি এযাবৎ এখানে এসেছেন, এমনকি তাদের হয়ে তাদের মিশনগুলোও বিভিন্ন সময়ে যে কথা বলে, তারা কিন্তু কখনোই কোনও রাজনৈতিক দলের কর্মসূচিকে সমর্থন করে না। তাদের সবার মূল উদ্দেশ্য– তারা বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করতে সহায়তা করতে চায়।

এখন প্রশ্ন আসতে পারে, বাংলাদেশের গণতন্ত্র দেশের নিজস্ব বিষয়। তারা কেন এই গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করতে এতটা উদগ্রীব। এর মূল কারণ কিন্তু ওই সব দেশগুলোর নিজ নিজ দেশের স্বার্থে। আর যেহেতু এ মুহূর্তে আমেরিকা গণতান্ত্রিক বিশ্বের নেতৃত্ব দিচ্ছে, তাই স্বার্থটা আমেরিকারই বেশি। বলা যেতে পারে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট উইড্রো উইলসন গণতন্ত্রকে টিকিয়ে রাখা ও শক্তিশালী করার জন্যে গণতান্ত্রিক বিশ্ব গড়ে তোলার যে নীতি গ্রহণ করেছিলেন তাদের পররাষ্ট্রনীতিতে, আমেরিকার বর্তমান প্রশাসন বা পররাষ্ট্রনীতি সেটাতেই জোর দিয়েছে বেশি।

আর এই জোর দেওয়ার বেশ কিছু কারণ এখন তাদের সামনে এসে দাঁড়িয়েছে। যেমন, এ মুহূর্তে অথোরেটিয়ান সরকারগুলো এক ধরনের অবকাঠামো ও টেকনোলজিক্যাল অর্থনৈতিক উন্নয়নের মাধ্যমে হিউম্যান ডেভেলপমেন্টকে আড়াল করে ফেলছে। আড়াল করে ফেলছে সোশ্যাল পাওয়ার বা সামাজিক শক্তিকে। যার ফলে গণতন্ত্র দুর্বল হচ্ছে। অন্যদিকে পার্টি সিস্টেমের অটোক্রেটিক রাষ্ট্র চীন সারা বিশ্বে ঋণ প্রবাহের মাধ্যমে তাদের রাজনৈতিক কূটনীতি নিয়ে অনেকটা নেকড়ের গতিতে দৌড়াচ্ছে। এবং নেকড়ের মুখে যেমন পচা মাংস থাকে, তাদেরও এ ঋণের সঙ্গে একটা অংশ ব্ল্যাক মানি। যা দিয়ে তারা বিভিন্ন দেশের সরকারপ্রধান থেকে শুরু করে প্রশাসন ও রাজনীতিকে অনেকখানি কিনে ফেলছে। বিশেষ করে তারা রাজনীতিকে ব্যবসায়ীকরণ করছে।

এই বাস্তবতায় পশ্চিমা হিউম্যান ডেভেলপমেন্ট, সোশ্যাল পাওয়ার ডেভেলপমেন্টের মাধ্যমে যে লিবারেল ডেমোক্র্যাটিক সমাজ ও রাষ্ট্র গঠিত হওয়ার পদ্ধতি তা দুর্বল হয়ে যাচ্ছে।

অন্যদিকে এর পাশাপাশি বুশ থেকে ওবামা অবধি মিডলইস্ট সম্পর্কে ভুল, বিশেষ করে দখলদারিত্বের নীতি নেবার ফলে আজ আমেরিকাসহ গণতান্ত্রিক বিশ্ব মিডলইস্টে তাদের স্টেক অনেকটা হারিয়েছে। তারা যেভাবে সেখানে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিল তা যে ভুল পদ্ধতি ছিল সেটা মিসর থেকে লিবিয়া সবখানে প্রমাণিত হয়ে গেছে। সর্বোপরি চীন সমর্থ হয়েছে আমেরিকাকে অনেকখানি বুড়ো আঙুল দেখিয়ে ইরান ও সৌদির মধ্যে বন্ধুত্বের মধ্যস্থতা করতে। অন্যদিকে ট্রাম্প ক্ষমতায় এসে একেবারে উল্টো পররাষ্ট্রনীতি ও রাশিয়ার পুতিনকে শক্তিশালী করার নীতি গ্রহণ করার ফলে সিরিয়ার ক্রাইসিস বেড়েছে। অন্যদিকে পুতিন রাশিয়াকে সম্পূর্ণরূপে একটা মাফিয়া স্টেটে পরিণত করতে সমর্থ হয়েছেন। তিনি আজ গণতন্ত্রকে ধ্বংস শুধু নয়, প্রতিবেশী কম সামরিক শক্তিশালী গণতান্ত্রিক দেশ দখল করতে নেমে গিয়েছেন।

এমন একটা সময়ে বাস্তবে গণতান্ত্রিক বিশ্বকে সত্যি অর্থে শক্তিশালী করতে না পারলে, বিশেষ করে হিউম্যান ডেভেলপমেন্ট, ডেমোক্র্যাটিক ইনস্টিটিউট ও সোশ্যাল ফোর্স এবং সর্বোপরি রাজনীতি যদি শক্তিশালী না হয় তাহলে খুব অল্প সময়ের মধ্যে গণতন্ত্রও সমাজতন্ত্রের মতো অটোক্রেসির কাছে হেরে যাবে সারা পৃথিবীতে। এই লক্ষণ ইতোমধ্যে শুধু তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতে নয়, আমেরিকা ও ইউরোপেও দেখা যাচ্ছে। আমেরিকাতে একবার ট্রাম্প জিতেছেন। এখনও তিনি শক্তিশালী রিপাবলিকানদের রাজনীতিতে। অন্যদিকে ইউরোপেরও দেশে দেশে কট্টরপন্থিরা এগিয়ে চলছেন। কট্টরপন্থিদের কারণেই ব্রেক্সিটের গণভোটে হেরেছে গণতন্ত্রের পিতৃভূমি ইংল্যান্ড। তাই এমন একটা সময়ে উইড্রো উইলসনের নীতিকে পশ্চিমারা জোরেশোরেই গ্রহণ করবেই।

পশ্চিমাদের বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে সহায়তা করার জন্যে যে দৌড়ঝাঁপ সাম্প্রতিক সময়ে– সেটাকে এর থেকে বেশি কিছু মনে করার খুব কারণ আছে বলে যুক্তি কম। তাই তাদের সফর ও কাজগুলোকে মূলত বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করার সহায়ক হিসেবেই চিন্তা করলে বিষয়টা আরও বেশি পরিষ্কার হয়।

এখন অনেক বেশি জাতীয়তাবাদী দৃষ্টিভঙ্গি বা জাতীয়তাবাদী মৌলবাদের ওপর দাঁড়িয়ে বলা যেতে পারে, আমাদের গণতন্ত্র যদি শক্তিশালী করতে হয় সেটা আমরা করবো। বিদেশিদের এত মাথাব্যথা কেন? জাতীয়তাবাদী মৌলবাদের দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে এমন কথা বলা যায় ঠিকই। এবং সেটা শুনতেও ভালো লাগে। আর যেহেতু বিভিন্ন সময়ে উপনিবেশ থেকে বেরিয়ে আসার জন্যে আমরা এভাবেই জাতীয়তাবাদের ট্রেনিং পেয়েছি, তাই এ ধরনের কথা আমাদের রক্তেও একটা আবেগ তোলে। কিন্তু আবেগকে পিছে ফেলে বাস্তবতা হলো, গণতন্ত্রকে সারা বিশ্বে সম্মিলিতভাবে টিকে থাকতে হবে। তা না হলে গণতন্ত্রও একসময় সমাজতন্ত্রের মতো অটোক্রেসি বা অথোরেটিয়ানইজমের কাছে পরাজিত হবে।

তাই এই পরাজয় ঠেকাতে হলে বাংলাদেশকেও গণতান্ত্রিক বিশ্বের সঙ্গে হাতে হাত ধরে কাজ করতে হবে। তবে সেখানে গণতান্ত্রিক বিশ্বকে অবশ্যই বাংলাদেশের প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়তে হবে, কোনোরূপ বল প্রয়োগের হাত নয়। কারণ, বল প্রয়োগের মাধ্যমে কখনও গণতন্ত্র শক্তিশালী হয় না। আর এখানে কোনোরূপ মৌলবাদী জাতীয়তার ওপর দাঁড়িয়ে নয় বা আবেগের ও রাজনৈতিক বিভাজনের ওপর দাঁড়িয়ে নয়, বাস্তবতার ওপর দাঁড়িয়ে বাংলাদেশের রাজনীতিকদের ও দেশের মানুষকে এই গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করতে হবে।

বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করতে হলে, আগেই দেশের গণতন্ত্রের মূল সমস্যাগুলো চিহ্নিত করতে হবে। যেকোনও দেশের গণতন্ত্র শক্তিশালী করা একটা চলমান প্রক্রিয়া। শত শত বছর ধরে বিভিন্ন ধরনের যোগ-বিয়োগের মাধ্যমেই এটা শক্তিশালী হবে। তবে বাংলাদেশের গণতন্ত্রের এ মুহূর্তে মোটা দাগে যে সমস্যাগুলো চিহ্নিত করা যায় সেগুলো মোটামুটি এমনই।

এক. নির্বাচনে জনগণ অংশগ্রহণ করছে না।

দুই. রাজনীতিতে ব্যবসায়ী ও আমলা আধিপত্য, রাজনীতিকরা বিলুপ্তের পথের প্রাণীর মতো লাল খাতায় এখন।

তিন. দুর্নীতি।

এখন এই তিনটি কারণের তিন নম্বর থেকেই আলোচনা করা যেতে পারে। বাংলাদেশে এই দুর্নীতি শুরু থেকেই। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, বারবার কারাপশনের বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন। তিনি চোরাচালানি, মজুতদারদের বিরুদ্ধে অভিযানও চালান। ওই সময়ে আসলে সমস্যাগুলো পারমিট হস্তান্তর, চোরাচালানি ও মজুতদারদের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। এবং যারা এই কাজগুলো করতো তাদের কোনও রাজনৈতিক শক্তি ছিল না। এমনকি সে সময়ে পরিত্যক্ত সম্পত্তিও যা লুটপাট হয় তার মধ্যে কিছু মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন, কিন্তু রাজনৈতিকভাবে সেটা হয়নি। বা রাষ্ট্র সর্বোতভাবে কোনও সহায়তা করেনি। বরং বড় আকারের পরিত্যক্ত সম্পত্তি সবই রাষ্ট্রীয়করণ করে জনগণের মালিকানায় নিয়ে আসা হয়েছিল।

রাষ্ট্র সম্পত্তি ও জনগণের সম্পত্তি লুটপাটের দুর্নীতি রাষ্ট্রের সহায়তায় করার প্রক্রিয়া শুরু হয় জিয়াউর রহমানের আমল থেকে। বিরাষ্ট্রীয়করণের নামে নামমাত্র মূল্যে ব্যবসায়ীদের হাতে এই সম্পদ তুলে দেওয়ার প্রক্রিয়া সেই ১৯৭৬-৭৭ থেকে শুরু হয় এবং সে প্রক্রিয়া আর কেউই বন্ধ করেননি। বিরাষ্ট্রীয়করণের নামে বা যেহেতু ক্যাপিটালইজমের ফর্মুলা অনুযায়ী এসব সম্পত্তি সব আমলেই ব্যবসায়ীদের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে– কিন্তু জনগণ অর্থাৎ রাষ্ট্র কখনোই সঠিক মূল্য পাচ্ছে না দুর্নীতির কারণে।

এমনিভাবে আজ যে ঋণখেলাপি কালচার চালু হয়েছে, যার ফলে ব্যাংকগুলো থেকে জনগণের অর্থ চলে যাচ্ছে কয়েকজন দুর্নীতিবাজ ব্যবসায়ীর কাছে। এই ঋণখেলাপি কালচারও চালু হয় জিয়াউর রহমানের আমলে। তারপরে এটা ক্রমেই সাগরের মোহনার দিকে এগিয়ে যাওয়া নদীর মতো আকারে বৃদ্ধি পেয়ে চলেছে। শামসুর রাহমান বেঁচে থাকলে উনি যেমন একসময়ে তাঁর ‘একটি  মোনাজাতের খসড়া’ কবিতায় লিখেছিলেন, ... ‘আমাকে একজন খাস রাজাকার করে দাও’। আজ তিনি নিশ্চয়ই লিখতেন, ... ‘আমাকে একজন খাস ঋণখেলাপি বা ব্যাংক লুটেরা করে দাও’।

এরপরে যদি দুই নম্বর সমস্যার দিকে তাকানো যায় তাহলে আজ যে রাজনীতিকদের হটিয়ে ব্যবসায়ী ও আমলারা রাজনীতির জায়গা দখল করে নিচ্ছে, এটা শুরু করেন খালেদা জিয়া ১৯৯১ সালের নির্বাচনের আগে। জিয়া ও এরশাদ সামরিক শাসক হলেও তারা দলছুট রাজনীতিকদের নিয়েই রাজনীতি করেছিলেন। ব্যবসায়ী ও আমলাদের আধিপত্য রাজনৈতিক দলে আসতে দেননি। কিন্তু খালেদা জিয়া নয় বছর রাজপথে আন্দোলনে থেকেও নির্বাচনে জয়লাভের জন্য ১৯৯১-তে রাজনীতিকে ব্যবসায়ী ও আমলাকরণ করেন। এবং তিনি তার ওই পথের মাধ্যমে রাষ্ট্র ক্ষমতা দখল করতে সমর্থ হন। ১৯৯১ সালে আওয়ামী লীগ পরাজিত হয়ে খালেদা জিয়ার ওই পথকে রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা না করে বরং তারা নিজেরাই সেই পথ গ্রহণ করে। এবং তারই ধারাবাহিকতায় আজ রাজনীতিকরা বিলুপ্তের পথের লাল খাতার প্রাণী। রাজনীতি ব্যবসায়ী ও আমলাদের দখলে। দৃশ্যত এখন মনে হচ্ছে এই ব্যবসায়ী ও আমলারা আওয়ামী লীগের সঙ্গে। কিন্তু বাস্তবে আমলা ও ব্যবসায়ীরা সবসময়ই সরকারি দলের। কাল যদি আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় না থাকে তাহলে আজ আওয়ামী লীগের পাশে ও নেতৃত্বে যেসব বড় ব্যবসায়ীকে দেখা যাচ্ছে, ওরা তখন ক্ষমতাসীনদের সঙ্গেই থাকবে। একটু অতীতে তাকালে সবাই দেখতে পাবেন এরা এরশাদ ও খালেদার লোকজনের পিছে পিছেই ঘুরতেন।

এখন প্রথম কারণ অর্থাৎ জনগণ ভোটে অংশগ্রহণ করার ইচ্ছা হারিয়ে ফেলেছে। সাম্প্রতিক উপনির্বাচনগুলোতে ১০ বা ১১ পারসেন্ট ভোট পড়েছে। তাও নানান প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে। প্রথমেই যদি বলি, জনগণের এই ভোটবিমুখ হবার দায় বিরোধী দলেরও আছে, তাহলে অনেকেই বলবেন, সরকারের মুখ পরোক্ষভাবে রক্ষা করার জন্যেই এ যুক্তি। কিন্তু একটু শান্ত মাথায় চিন্তা করলে বা দলীয় গণ্ডি থেকে বের হয়ে চিন্তা করলে বিষয়টি কিন্তু তা নয়। কারণ, গণতন্ত্র একটি চলমান প্রক্রিয়া। এবং এটা সব গণতান্ত্রিক দল মিলে রক্ষা করতে হয় এবং এগিয়ে নিতে হয়। তা এ ভূখণ্ডের ইতিহাসের মধ্যেই আছে। আইয়ুব খানের সামরিক শাসনের মধ্যে রাজনৈতিক দলগুলো সব ধরনের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছে। এমনকি নিশ্চিত পরাজয় জেনেও আইয়ুবের বিরুদ্ধে ফাতেমা জিন্নাহকে নিয়ে নির্বাচন করেছে। ইয়াহিয়া খানের ‘এলএফও’ মেনে বঙ্গবন্ধু ১৯৭০-এর নির্বাচনে গেছেন এবং জয়লাভও করেন।

ঠিক তেমনি জিয়া বা এরশাদের সামরিক শাসনের আমলে সামরিক শাসনের অধীনে আওয়ামী লীগ যে বারবার নির্বাচনে গেছে সেখানে কিন্তু সিনিয়র আওয়ামী লীগ নেতাদের মূল বক্তব্য থাকতো, নির্বাচনে জেতা নয়, জনগণকে নির্বাচনমুখী রাখাই মূল বিষয়। জনগণ নির্বাচনমুখী থাকলে গণতন্ত্র শক্তিশালী হবে। এবং গণতান্ত্রিক শক্তি বিজয়ী হবে। একপক্ষীয় নির্বাচন বারবার হলে জনগণ নির্বাচন প্রক্রিয়া থেকে দূরে চলে যায়। তার ফলে গণতন্ত্র শুধু দুর্বল হয় না, গণতান্ত্রিক বায়ুমণ্ডলে শূন্যতা সৃষ্টি হয় ধীরে ধীরে। আর বায়ুমণ্ডলের যেকোনও শূন্যতার ফল শেষ অবধি ভালো না। তাই ২০১৪ সালে বিএনপি নির্বাচনে অংশ না নিয়ে নির্বাচন প্রতিহত করার কাজ করতে গিয়ে মূলত একপক্ষীয় নির্বাচনের প্রক্রিয়াকেই সহায়তা করেছে। ২০১৮ সালে তারা ড. কামাল হোসেনের অধীনে জোট করে নির্বাচন করেছিল ঠিকই, তবে তারা জনগণের কাছে যায়নি। কারণ, তাদের মূল নেতা নির্বাচনে মাত্র তিনটি জনসভা করেন। তারা জনগণের কাছে গেলে, জনগণ নির্বাচন প্রক্রিয়ায় একাত্ম হলে নির্বাচনের প্রকৃতি হয়তো ভিন্ন হতো।

তাই আজ বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া যে শক্তিশালী করার প্রশ্ন উঠেছে, এ কাজ বাস্তবে সরকার ও বিরোধী পক্ষ দুইকে মিলেই করতে হবে। এবং এটার প্রয়োজন দুই পক্ষেরই। কারণ, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া শক্তিশালী না হলে কখনোই গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক শক্তি শক্তিশালী হবে না। আর অনেক শক্তিশালী গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক শক্তি ছাড়া বাংলাদেশের মতো একটি আর্গুমেনটেটিভ সোসাইটি নিয়ে কখনোই একটি উন্নত দেশের পথে যাওয়া যাবে না।

তাই বিদেশিদের বিপক্ষে না দাঁড়িয়ে, সরকারের বা বিরোধী দলের বিপক্ষে না দাঁড়িয়ে, এখন উচিত হবে সবাই মিলে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকেই শক্তিশালী করা।

লেখক: সাংবাদিকতায় সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত  

 

/এসএএস/এমওএফ/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
থাইল্যান্ড সফর একটি মাইলফলক হয়ে থাকবে
সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীথাইল্যান্ড সফর একটি মাইলফলক হয়ে থাকবে
‘গরমে অসুস্থ’ হয়ে মারা যাওয়া সেই শ্রমিকের পরিবারের পাশে জেলা প্রশাসন
‘গরমে অসুস্থ’ হয়ে মারা যাওয়া সেই শ্রমিকের পরিবারের পাশে জেলা প্রশাসন
ওমরাহ করতে স্ত্রীসহ সৌদি আরব যাচ্ছেন মির্জা ফখরুল
ওমরাহ করতে স্ত্রীসহ সৌদি আরব যাচ্ছেন মির্জা ফখরুল
ঢাকার অধস্তন আদালতগুলোতে এসি লাগাতে আইনি নোটিশ
ঢাকার অধস্তন আদালতগুলোতে এসি লাগাতে আইনি নোটিশ
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ