X
রবিবার, ১৯ মে ২০২৪
৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

দেশকে মান্য করেই দেশের হয়ে খেলতে হবে

মোস্তফা হোসেইন
২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১৬:৩৮আপডেট : ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১৬:৩৮

বিখ্যাত ক্রিকেট খেলোয়াড় তানজিম হাসান সাকিব বিসিবি’র কাছে বলেছেন, তার পোস্টের কারণে কেউ যদি আঘাত পেয়ে থাকেন, তাহলে তিনি দুঃখিত। বিসিবির পক্ষ থেকে গণমাধ্যমে এই তথ্য জানানো হয়। জাতীয় দলের খেলোয়াড় এবং অতি সম্প্রতি দক্ষতার প্রমাণ দেওয়ার সুবাদে বিষয়টি ওখানেই শেষ হয়ে যেতে পারতো। কিন্তু তার ফেসবুক পেজে নারীর প্রতি অবমাননাকর পোস্টে যারা ক্ষুব্ধ হয়েছেন, তাদের ক্ষোভের মাত্রা আরেক দাগ বেড়ে যায়। ফেসবুক অ্যাকটিভিস্টরা একের পর এক আপত্তিকর পোস্ট ফেসবুকে ভাইরাল করতে থাকে– তার ফেসবুক পেজ থেকে নিয়ে। তারা একজন জাতীয় ক্রিকেটারের কর্মকাণ্ড-বিশ্বাসকে দেশদ্রোহিতার শামিল হিসেবে আখ্যায়িত করতে থাকে একইসঙ্গে।

জাতীয় খেলোয়াড়, বয়সে তরুণ, তাই তার বক্তব্যকে ওইভাবে গুরুত্ব না দেওয়ার পরামর্শ কারো কারো। কিন্তু এখানেও তর্ক চলে। যে ব্যক্তিটি বিদেশের মাটিতে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করার মতো ক্ষমতাধর, তার পক্ষে নিজ দেশের রক্তার্জিত স্বাধীনতাকে অবজ্ঞা করার ঘটনাকে তারাও মেনে নিতে পারেন না। ইউটিউবে প্রচারিত একটি ফুটেজে দেখা গেছে, ক্রিকেট খেলা শুরু হওয়ার আগে জাতীয় সংগীত গাওয়ার সময় সব খেলোয়াড় নিজ নিজ অবস্থানে থেকে সংগীত গাইছেন। কেউ হয়তো শ্রদ্ধা জানাতে গিয়ে বুকে হাত রেখেছেন। একজনকে দেখা গেলো মোবাইল সামনে রেখে জাতীয় সংগীত গাইছেন। উদ্দেশ্য সংগীতটা যেন নির্ভুল হয়। এসবই জাতীয় সংগীতের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ। এটা নাগরিক হিসেবে সবাইকে করতে হয়। ফুটেজে দেখা গেলো তানজিম হাসান সাকিব ঠাঁয় দাঁড়িয়ে আছেন। জাতীয় সংগীত চলাকালে কারো সংগীত গাইতে হবে কিংবা বুকে হাত দিতে হবে এমন কোনও নির্দেশনা নেই। কিংবা ঠোঁট মিলানোও আইনি বাধ্যবাদকতা নেই। কিন্তু দেশের প্রতি আনুগত্য পোষণকারী রীতি হিসেবে কিছু আচরণ করেন যা তাদের শ্রদ্ধার বহিপ্রকাশ। কিন্তু সেই ফুটেজে যা দেখা গেলো, তাতে স্পষ্ট মনে হয় তিনি মনের বিরুদ্ধে ওই সময় দাঁড়িয়ে ছিলেন।

ফেসবুকে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ চালাচালি হচ্ছে– তিনি বিজয় দিবস সম্পর্কে বিরূপ মন্তব্য করেছেন।

এমতাবস্থায় স্বাভাবিকভাবেই বিসিবির বক্তব্যকে সাধারণ মানুষ সহজভাবে গ্রহণ করেনি। কিংবা জালাল সাহেব যেভাবে এই ক্রিকেটারকে রক্ষা করতে চেয়েছেন, তাতেও সাধারণ মানুষের মনকে নরম করতে পারেনি। তিনি বলেছেন, তার দেওয়া পোস্টের কারণে ‘কেউ যদি আঘাত পেয়ে থাকেন’। ক্ষুব্ধ মানুষজন বলছে, তানজিম তার বক্তব্য প্রত্যাহার করেননি, শুধু তাই নয় তিনি বলেছেন ‘যদি কেউ আঘাত পেয়ে থাকেন’। তার মানে তার ভাষায় বোঝা যায়, তিনি যা বলেছেন তা ঠিক আছে তারপরও যদি কেউ আঘাত পেয়ে থাকেন। অর্থাৎ বিষয়টি আঘাত পাওয়ার মতো নয়। তার বক্তব্য– তিনি কাউকে আঘাত দেওয়ার উদ্দেশ্য নিয়ে এই পোস্ট দেননি। এটাও কেউ গ্রহণ করতে পারছে না। তিনি জগতের সব নারীকে লক্ষ্য করে বলেছেন, নারী চাকরি করলে সমাজ ধ্বংস হয়ে যায়।

অথচ তানজিম একবারও ভাবছে না, তিনি যে খেলার জন্য বিদেশ ভ্রমণ করেন, সেই বিদেশ ভ্রমণের জন্য যে ডলার ব্যয় হয়, সেটা কিন্তু নারীর উপার্জিত।

বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্পের নারী শ্রমিকরা মাথার ঘাম মাটিতে ফেলে যে ডলার আয় করে সেই ডলারে তার ও তার মতো খেলোয়াড়দের বিদেশ ভ্রমণ সম্ভব হয়। ফেসবুকে এসব নিয়ে যা আলোচনা হয় অনেক সময়ই আক্রমণাত্মক এবং চরমভাবে বিরক্তি প্রকাশের বলেও মনে হয়।

তার এসব ভাবনাকে তিনি ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গিতে লেখা বলে মনে করেন বলে ইউটিউব মাধ্যমে জানা গেছে। বহুল আলোচিত পোস্টটি বিশ্লেষণ করলেও এমনই মনে হয়। প্রশ্ন হচ্ছে, ইসলাম কি তাহলে নারীর চাকরি অর্থাৎ আয়-রোজগারের পথকে নিষিদ্ধ করেছে? মুসলমান মাত্রই জানেন, হজরত মোহাম্মদ (সা.) বিয়ে করেছিলেন একজন ব্যবসায়ী নারীকে। খেলাফায়ে রাশেদীন ও সাহাবাদের আমলে মুসলমান নারীদের পেশায় সংশ্লিষ্ট হতে দেখা যায়। সাহাবাদের আমলের পরে এমনকি এই সময়ও পৃথিবীর সব মুসলিম দেশ এগিয়ে যাচ্ছে নারী-পুরুষের যৌথ প্রচেষ্টায়। তাহলে কোটি কোটি নারী কর্মী কি ইসলাম বিরোধী কাজের সঙ্গে যুক্ত? নারীর কর্মবিরোধী, শিক্ষা বিরোধী মানসিকতা পোষণ করে আফগানিস্তানের তালেবানরা। তিনি কি মন মানসিকতায় তেমনি একজন মানুষ?

তার এই বক্তব্য ইসলামের পক্ষে বলার কোনও সুযোগ নেই। আবার আমাদের যে সংবিধান তারও স্পষ্ট বিরোধিতা। বিজয় দিবস সম্পর্কে তার কটূক্তির বিষয়টি যদি সত্য হয়ে থাকে, তাহলে সেটা হবে দেশদ্রোহিতার শামিল। এমন একজন ব্যক্তি জাতীয় চরিত্র হলেও কি আইনের হাত থেকে রক্ষা পেতে পারেন? সেই অবস্থায় বিসিবি যে বলেছে, তাকে মৌখিক সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে, এতে করে কি তার চিন্তা-বিশ্বাসের পরিবর্তন হবে?

তার বিশ্বাসের পরিবর্তন করার ক্ষমতা বিসিবির নেই, কিন্তু ক্রিকেটের মাঠে যদি জাতীয় সংগীত না গেয়ে কিংবা অবজ্ঞা প্রদর্শন করে থাকে, সেটা দেখার দায়িত্ব বিসিবি’র অবশ্যই। সে কেন জাতীয় সংগীত বাজানোর সময় বিরক্তি প্রকাশের ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে ছিল, তার ব্যাখ্যা বিসিবি চাইতে পারে। আর যদি সে বাংলাদেশের স্বাধীনতা মুক্তিযুদ্ধে আমাদের অর্জনকে অস্বীকার করে কিংবা মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী ভূমিকার কেউ হয়ে থাকে, তাহলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের ক্ষমতাও তাদের আছে।

মনে রাখা প্রয়োজন, আমাদের ভালো খেলোয়াড় যেমন প্রয়োজন তেমনি মনেপ্রাণে বাংলাদেশের প্রতি আস্থাশীল মানুষও তাকে হতে হবে। একজন খেলোয়াড়কে মানুষ ভালোবাসবে তার খেলার কারণে, তার আচরণের কারণে এবং অবশ্যই মানুষ তাকে তাদের সাংস্কৃতিক প্রতিনিধি হিসেবেই দেশ-বিদেশে দেখতে চায়। সেক্ষেত্রে কোনও অবস্থাতেই নারী বিদ্বেষী, দেশের সংবিধান বিরোধিতাকারী কাউকে এই দুই আসনে বসাতে চাইবে না। এটাই বাস্তবতা।

লেখক: সাংবাদিক, শিশুসাহিত্যিক ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গবেষক।

/এসএএস/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
ঈদের পরও শনিবার ক্লাস চলবে ডাবল শিফটের স্কুলে
ঈদের পরও শনিবার ক্লাস চলবে ডাবল শিফটের স্কুলে
প্রতারণার অভিযোগে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি বাতিল করলো ইসি
প্রতারণার অভিযোগে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি বাতিল করলো ইসি
মধ্যরাতে হলের আরেক শিক্ষার্থীর বিছানাপত্র নামিয়ে দিলো ছাত্রলীগ
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়মধ্যরাতে হলের আরেক শিক্ষার্থীর বিছানাপত্র নামিয়ে দিলো ছাত্রলীগ
১৬ ভরি সোনা ছিনতাই করে পালানোর সময় জনতার হাতে আটক এসআই
১৬ ভরি সোনা ছিনতাই করে পালানোর সময় জনতার হাতে আটক এসআই
সর্বশেষসর্বাধিক