X
সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪
১৫ বৈশাখ ১৪৩১

যুক্তরাষ্ট্রের ‘গণতান্ত্রিক মডেল’

লীনা পারভীন
১৫ নভেম্বর ২০২৩, ১৭:২৫আপডেট : ১৫ নভেম্বর ২০২৩, ১৭:২৫

বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে এই সময়ের আলোচিত বড় রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল; যাকে সংক্ষেপে বিএনপি বলা হয়। এই দলটির সৃষ্টির ইতিহাস খুব বিতর্কিত। প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান একজন সেনা কর্মকর্তা থেকে গণতান্ত্রিক রাজনীতির ‘কান্ডারি’ হতে চেয়েছিলেন সম্পূর্ণ অগণতান্ত্রিক পন্থায়। নিজেই দলের নেতা, নিজেই সিদ্ধান্ত প্রণেতা এবং পরবর্তীতে নিজেকেই নিজে প্রেসিডেন্ট বানিয়ে সিংহাসনে বসিয়ে দিলেন।

তবে এ কথা অস্বীকারের উপায় নেই যে অগণতান্ত্রিক উপায়ে হলেও জিয়া তার দলকে এই দেশের অর্ধেক জনগোষ্ঠীর কাছে পৌঁছে দিতে পেরেছিলেন। কীভাবে ও কোন প্রেক্ষাপটে সেই ইতিহাস নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না।

জেনারেল জিয়ার অগণতান্ত্রিক ক্ষমতা দখলের সময় বাদ দিলেও তার স্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপির মতো একটি বড় রাজনৈতিক দল দুইবারের মতো পূর্ণ সময় ক্ষমতায় ছিল। ১৯৯১ সালে স্বৈরাচারী এরশাদের পতনের পর প্রথমবারের মতো জনগণের ভোটে ক্ষমতায় আসে খালেদা জিয়ার সরকার। সেই সময় পূর্ণ মেয়াদকালই তারা ক্ষমতায় ছিল। ১৯৯৬ সালের বিতর্কিত ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনের পর ক্ষমতার মেয়াদ ছিল মাত্র ৪৫ দিন। এরপর আবার ২০০১ সালে তারা নির্বাচিত হয়ে আসে। ইতিহাস ঘাঁটলেই দেখা যায় বিএনপি যতবার ক্ষমতায় ছিল ততবারই বিতর্কের জন্ম দিয়েই ক্ষমতা থেকে বিদায় নিতে হয়েছে। ৯৬ সালের নির্বাচনকে বলা হয় প্রহসনের নির্বাচন, আর তাই তারা ক্ষমতায় থাকতে পারেনি।

২০০১ সালে আবারও সুযোগ পেয়েছিল আগের ভুলত্রুটিকে শুধরে নিয়ে জনগণের স্বার্থকে মাথায় রেখে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার। আবারও তারা ব্যর্থ। কানসাটে বিদ্যুতের দাবিতে গড়ে ওঠা আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে ১০ জনেরও বেশি সাধারণ গ্রামবাসী নিহত হয়েছিল। এছাড়াও ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানেই এমন সংঘবদ্ধ জনতার আন্দোলনকে তারা গণতান্ত্রিক উপায়ে সামলাতে ব্যর্থ হয়।

এটা তো সেই বিএনপি যাদের আমলেই দেশের আনাচে-কানাচে ৩৬৪টি জেলায় একসাথে বোমা হামলার মতো ঘটনা ঘটেছিল। এরা সেই বিএনপি যারা ২০১৩/১৪ সালে সরকার বিরোধী আন্দোলনের নামে গোটা দেশে আগুন সন্ত্রাসের জন্ম দিয়েছিল। সরকারি স্থাপনাসহ রাষ্ট্রীয় সম্পত্তির ওপর আঘাত হেনেছিল। পুলিশ বাহিনীর অনেক সদস্যের জীবন নিয়েছিল। সাধারণ মানুষকে আগুনে পুড়িয়ে মেরেছিল। আগুন, পেট্রোল বোমা ছিল তাদের নিত্য খেলার হাতিয়ার। সেই দল যখন জনগণের সামনে এসে আবারও গণতন্ত্র রক্ষার কথা বলে গলা ফাটাচ্ছে তখন একজন বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে সত্যি মনে ভয়ের আশঙ্কা জাগে। আবার কোন গণতন্ত্রের কথা বলতে চাইছে বিএনপি?

এ কি সেই গণতন্ত্র যেখানে জামায়াতে ইসলামীর মতো একটা স্বাধীনতাবিরোধী দলের কাঁধে ভর করে মানুষের জীবন নিয়ে খেলা করতে চায়। এ কি সেই গণতন্ত্র যেখানে দিনের পর দিন হরতাল, অবরোধের নামে দেশের কলকারখানা, মানুষের জীবিকা বন্ধ করে দিয়ে জীবনকে হুমকির মধ্যে ফেলে দিয়েছিল। এ কেমন গণতন্ত্রের নমুনা যেখানে মানুষের নামে মানুষকেই পুড়িয়ে ফেলা হয়? হ্যাঁ।

বিএনপি ২০২৩ সালের ২৮ অক্টোবর আবারও আগুন সন্ত্রাস, পুলিশ হত্যার মাধ্যমে প্রমাণ করলো তারা আসলে মানুষ হত্যার গণতন্ত্রের কথাই বলছে।

সেই দলের আশ্রয়দাতা হয়েছে বিশ্বের অন্যতম শক্তিধর দেশ যুক্তরাষ্ট্র। এই সেই যুক্তরাষ্ট্র যারা গণতন্ত্র রক্ষার কথা বলে দেশে দেশে যুদ্ধ লাগায়। যারা গাজায় ফুটফুটে শিশুদের হত্যাকারী ইসরায়েলকে পিঠ চাপড়ে “শাবাশ” বলে আসে। যাদের নিজেদের দেশেই প্রকাশ্যে গুলি করে একসাথে ২০/২২ জন মানুষকে মেরে ফেলে খুনি পালিয়ে যায়, অথচ তাদের পুলিশ খুঁজে পায় না।

আবার কখনও কখনও সেই বন্দুকধারীকেও তারা ক্রসফায়ারে মেরে ফেলে। যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বব্যাপী মানবাধিকার রক্ষার কথা বলে অথচ তাদের দেশেই কোমলমতি শিশুরা বেড়ে উঠছে “গানফাইট” দেখতে দেখতে।

এ কেমন মানবাধিকার যেখানে মানুষ হাসিমুখে রাস্তায় বেরিয়ে লাশ হয়ে বাসায় ফিরছে? এ কেমন গণতন্ত্র যেখানে স্কুলে স্কুলে বাচ্চাদের বন্দি করে গুলি করে মেরে ফেলছে কিন্তু সরকারের কোনও জবাবদিহি নেই। ইউক্রেনের মতো একটা সুন্দর দেশকে তছনছ করে দিলো যুক্তরাষ্ট্রের কূটরাজনীতি। তারাই আবার গণতন্ত্রের কথা সবসময় বলে।

দুঃখিত হয়েই বলতে হয়, আপনাদের এমন গণতন্ত্র আমাদের চাই না। আমরা নিজেদের শক্তিতে গণতন্ত্রকে রক্ষা করতে জানি। অন্তত আপনাদের সাধারণ মানুষের চাইতেও হয়তো বেশিই জানি।

আমাদের সরকার সবসময় জনগণের মনিটরিংয়ের আওতায় আছে। গণমাধ্যম, সামাজিক মাধ্যমসহ সব জায়গায় সাধারণ মানুষ সরকারের সমালোচনা করতে পারছে। আর তাই তো আপনাদের মতো অগণতান্ত্রিক চিন্তার মানুষেরা আমাদের দেশের অগ্নিসন্ত্রাস করা দল বিএনপি সমর্থনে কথা বলার পরেও সরকার আলোচনা করে যাচ্ছে। অন্য কোনও দেশে কি অভ্যন্তরীণ বিষয়ে কি এভাবে কথা বলতে পারবে? খুব বেশি দূরে নয়, আমাদের পাশের দেশ ভারতের অভ্যন্তরীণ কোনও বিষয়ে নাক গলাতে পারবে?

আসলে যুক্তরাষ্ট্র শুরু থেকেই আমাদের এই আজন্ম লড়াকু মনকে মানতে পারেনি। তারা ১৯৭১ সালে আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় পাকিস্তান রাষ্ট্রকে সমর্থন দিয়েছিল অগণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থাকে টিকিয়ে রাখতে। তারা চায় অন্য দেশগুলো তাদের কথামতো চলবে।

শেখ হাসিনা তো বঙ্গবন্ধুর কন্যা। তিনিও তাঁর বাবার মতোই পরাধীনতার গণতন্ত্রের শিক্ষাকে দু’পায়ে দলেই সামনে বাড়তে শিখেছেন।

সুতরাং তাদের শেখানো গণতন্ত্রে হয়তো বিএনপি বেড়ে উঠেছে কিন্তু এই বাংলার জনগণ চিরকালই সর্বজনীন গণতন্ত্রে বিশ্বাসী, যার সার্থক রূপকার আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। আপনাদের ‘গণতান্ত্রিক মডেল’ বরং আপনাদের কাছেই রেখে দেন।  

লেখক: কলামিস্ট

/এসএএস/এমওএফ/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
মাড় ফেলে ভাত রান্না হলে ‘১৫ ভাগ অপচয় হয়’
মাড় ফেলে ভাত রান্না হলে ‘১৫ ভাগ অপচয় হয়’
শরীরের তাপ কমায় এই ৮ খাবার
শরীরের তাপ কমায় এই ৮ খাবার
বন ও বনভূমি রক্ষায় কর্মকর্তাদের নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করতে হবে: পরিবেশমন্ত্রী
বন ও বনভূমি রক্ষায় কর্মকর্তাদের নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করতে হবে: পরিবেশমন্ত্রী
মোনাকোর হারে লিগ ওয়ান চ্যাম্পিয়ন পিএসজি
মোনাকোর হারে লিগ ওয়ান চ্যাম্পিয়ন পিএসজি
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ