X
সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪
১৬ বৈশাখ ১৪৩১

আর্থিক খাতের সুশাসনই হোক নতুন সরকারের প্রধান কাজ

লীনা পারভীন
২৯ ডিসেম্বর ২০২৩, ১৯:০২আপডেট : ২৯ ডিসেম্বর ২০২৩, ১৯:০২

সরকার আসে, সরকার যায়। জনগণ তার জায়গাতেই থাকে। ভোটের অধিকার চর্চা করতে পারুক আর না পারুক, জনগণের ইস্যুগুলো একই জায়গায় থাকে। আর যুগের পর যুগ কেবল এই ইস্যুগুলোর মীমাংসার মাধ্যমে নাগরিক জীবনে স্বস্তির আশায় সরকার পরিবর্তন করে জনগণ।

তাহলে কি ১৯৭১ সালের পর নতুন বাংলাদেশ কেবল না পাওয়ার গল্পেই সীমাবদ্ধ? এই প্রশ্নটার উত্তর একেকজনের কাছে একেক রকম হবে। যারা দলীয় দৃষ্টির বাইরে যেতে পারে না তাদের কাছে এক রকম, আবার যারা দলীয় হলেও রাজনৈতিক দলের বাইরে অবস্থান করছে তাদের উত্তর আরেক রকম হবে।

আমি নির্দলীয় বা নিরপেক্ষ নই, কারণ কেউই দল বা মতের বাইরে হতে পারে না। সেই অর্থে আমার দলের নাম ‘বাংলাদেশ’। আমি এই দলটির আমৃত্যু সদস্য। কোনও পদের বালাই নেই এখানে। নেই কোনও ব্যক্তিস্বার্থের হিসাব। সবচেয়ে নিরাপদ ও নিঃস্বার্থ দলটির নাম ‘বাংলাদেশ’। আমার সরকার নির্বাচনও তাই সেই দলটিকে কেন্দ্র করেই হয়।

আমি স্বাধীনতা যুদ্ধ দেখিনি, কিন্তু যুদ্ধের ক্ষয়ক্ষতিকে বহন করে চলেছি। আমি বাংলাদেশের জন্মের সঙ্গে যুক্ত নই, কিন্তু জন্মের পর থেকে এর দেওয়া সুবিধা অসুবিধাকে কাঁধে করে বেঁচে আছি। আমার কাছে একটা শান্তির জীবন মানেই সুশৃঙ্খল বাংলাদেশ। দেশ যদি ভালো থাকে তাহলে আমিও ভালো থাকবো। আমার সন্তান ভালো থাকবে। কেউ জানতে চাইতে পারেন, কীভাবে? উত্তর হচ্ছে দেশের সবকিছু যদি সুন্দর ও সুশৃঙ্খলভাবে চলে তাহলে নাগরিক হিসেবে আমি আমার অধিকার ভোগ করতে পারবো। আমার মাথার বোঝাগুলোকে যদি রাষ্ট্র স্বীকৃতি দেয় তাহলে আমার হৃদযন্ত্রটি আরামে ক্রিয়া করতে পারবে। আর নিশ্চিত করেই বলা যায় যে এই একটা উদ্দেশ্যই আমাদের পরিচালিত করে একটা নির্বাচন প্রক্রিয়াকে বেছে নিতে। সেই নির্বাচনের মাধ্যমে আমরা আমাদের একদল অভিভাবককে নির্বাচন করে দেই যারা পদাধিকার বলে আমাদের অভিভাবক হলেও বাস্তবে আমাদের ‘কেয়ারটেকার’।

এবার আসল কথায় আসি। আর বেশি দিন নেই সংসদ নির্বাচনের। দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের মাধ্যমে আবারও আমাদের সেই ‘কেয়ারটেকার’ অভিভাবকদের নির্বাচিত করবো। ভোটের আগে তাই সেসব অভিভাবকের কাছে কিছু কথা বলতে চাই। নতুন সরকার আসবে। আবারও তারা পাঁচ বছরের জন্য আমাদের ভালোমন্দের দায়িত্ব নিবে আমাদেরই প্রদত্ত ক্ষমতাবলে। সুতরাং কথাগুলো সরাসরি বলাই সমীচীন।

বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। অর্থনীতির সূচক ঊর্ধ্বমুখী সে কথা একজন রাস্তার ভিখারিও স্বীকার করবে। কারণ, তার ভিক্ষাবৃত্তিকে এখন সে পেশা হিসেবে বিবেচনা করছে যেখানে ন্যূনতম একটা অঙ্ক নির্ধারণে সে পারদর্শী। এখন আর আপনি ভিক্ষুককে ইচ্ছামতো অঙ্কের দান দিয়ে পার পেয়ে যাবেন না। বাংলাদেশ তার অনেক সূচকে এগিয়ে গেলেও জনগণের আয়কৃত অর্থের সঠিক ও বিশ্বস্ত সংরক্ষকের জায়গাটি হয়ে পড়েছে দারুণভাবে নাজুক। আমি বলছি আমাদের ব্যাংকিং খাতের কথা। আর্থিক সুশৃঙ্খলা এখন যারপরনাই প্রশ্নবিদ্ধ। একদিকে আয় বাড়ছে অন্যদিকে পাচারের রাস্তা বড় হচ্ছে।

নিম্নবিত্ত বা মধ্যবিত্তের টাকা জমানো বা সঞ্চয়ের একমাত্র বিশ্বাসের জায়গাটা ছিল ব্যাংকিং খাত। নিশ্চিন্তে মানুষ তার কষ্টার্জিত টাকা ব্যাংকে আমানত রাখতো। সেই টাকা থেকে রিটার্ন কতটা পাবে সেই হিসাব খুব কম মানুষই করতো, কিন্তু অন্তত ঘরে রাখার বিকল্প হিসেবে সবচেয়ে নিরাপদ ও নিশ্চিন্তের জায়গা ছিল। সেই জায়গাটি কি আমাদের ব্যাংকিং খাত ধরে রাখতে পেরেছে?

আমি অর্থনীতিবিদ নই বরং অর্থনীতিবিদদের দেওয়া বিশ্লেষণ পড়ে আমার ভালোমন্দের হিসাব বুঝতে চাওয়া একজন সাধারণ নাগরিক। আর তাই গত ১০/১৫ বছরে আঁতকে উঠেছি বারবার। যতবার নিশ্চিন্ত হতে চেয়েছি ঠিক ততবারই একেকটি সংবাদ আমাদের আতঙ্কিত করে তুলছে। যারা পাচার করছে সেই অর্থের যে অঙ্ক সেটা আমাদের মোট বাজেটের চাইতেও বড় হয়ে উঠেছে দিনে দিনে। বিশ্বস্ত সঙ্গী ব্যাংকটির সংবাদ যখন পাওয়া যায় দেউলিয়া হওয়ার পথে তখন আমরা যারা পাচার করতে না পারা নাগরিক, তাদের কী অবস্থা হয় সেটি কি কেউ বুঝতে চেষ্টা করছেন?

সরকারের বড় একটি ব্যর্থতা বা আগামীর চ্যালেঞ্জ যাই বলি না কেন সেটি এখনও এই আর্থিক খাতের নিরাপত্তার বিষয়টি। যেকোনও মূল্যে আমার সঞ্চয়ের নিরাপত্তা চাই। আমার টাকাকে যারা হাপিস করে দিয়ে বিদেশে পাড়ি জমাচ্ছে তাদের কাছ থেকে সেসব অর্থ ফিরিয়ে আনার দায়িত্ব সরকারের। ব্যাংকিং চ্যানেলের বাইরে এখনও আর কোনও বিকল্প খাত তৈরি হয়নি, যেখানে সাধারণ মানুষ নিশ্চিন্তে তার জমা রাখতে পারে। নামে বেনামে ‘স্টার্টআপ’ খুলে মানুষের পকেট কেটে পালিয়ে যাচ্ছে। বড় বড় ব্যাংক খালি হয়ে যাচ্ছে। অথচ যারা করছে তারা সবাই ধরাছোঁয়ার বাইরেই থাকছে। ভোগান্তি হচ্ছে সাধারণ মানুষের।

এমনটা আর দেখতে চাই না আমরা। আগামীর সরকারের যদি একটা কাজ আগে করার হয় তাহলে সেটা হতে হবে আর্থিক খাতের সুশাসন। লুটেরা শ্রেণির হাত থেকে আর্থিক খাতকে বাঁচাতে শক্ত হতে হবে সরকারকে। আমি কষ্ট করে আয় করবো আর সেই আয়কে নিজের মতো করে মেরে দিবে কিছু দুর্বৃত্ত, সেটি মেনে নেওয়া যায় না। সেসব আর্থিক লুটেরা রাস্তায় আগুন দিয়ে মানুষ পুড়িয়ে মেরে ফেলা সেসব হত্যাকারীর চেয়ে কোনও অংশেই কম নয়। রাস্তায়, গাড়িতে আগুন দিয়ে যারা মানুষকে মারছে তাদের যেমন দৃঢ় সংকল্পে শাস্তির আওতায় আনতেই হবে, ঠিক তেমনি আমার টাকা মেরে দিয়ে যারা আমাকে রাস্তার ফকির বানিয়ে নিজেরা আয়েশের ব্যবস্থা করছে, তাদেরও দমন করার বিকল্প অন্তত আমার সামনে নেই। 

লেখক: কলামিস্ট

/এসএএস/এমওএফ/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
মাড় ফেলে ভাত রান্না হলে ‘১৫ ভাগ অপচয় হয়’
মাড় ফেলে ভাত রান্না হলে ‘১৫ ভাগ অপচয় হয়’
শরীরের তাপ কমায় এই ৮ খাবার
শরীরের তাপ কমায় এই ৮ খাবার
বন ও বনভূমি রক্ষায় কর্মকর্তাদের নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করতে হবে: পরিবেশমন্ত্রী
বন ও বনভূমি রক্ষায় কর্মকর্তাদের নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করতে হবে: পরিবেশমন্ত্রী
মোনাকোর হারে লিগ ওয়ান চ্যাম্পিয়ন পিএসজি
মোনাকোর হারে লিগ ওয়ান চ্যাম্পিয়ন পিএসজি
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ