X
বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪
১৯ বৈশাখ ১৪৩১

শুভ জন্মদিন বাংলা ট্রিবিউন

মুহম্মদ জাফর ইকবাল
১২ মে ২০১৬, ২৩:৩২আপডেট : ১৩ মে ২০১৬, ০০:০২

মুহম্মদ জাফর ইকবাল আমরা যখন ছোট তখন কলকাতা থেকে প্রকাশিত সাহিত্যপত্রিকা ‘দেশ’ নিয়মিত আমাদের বাসায় আসত। এটা মোটেও ছোটদের ম্যাগাজিন ছিল না। কিন্তু আমরা ভাইবোনেরা কাড়াকাড়ি করে পড়তাম। তখন আমি একটা মজার বিষয় আবিষ্কার করেছিলাম, সেখানে যেসব লেখা প্রকাশিত হতো পরের সংখ্যাগুলোতে সেই লেখাগুলো নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা প্রকাশিত হতো এবং সেই আলোচনা-সমালোচনা হতো মূল লেখা থেকেও বেশি চমকপ্রদ! মাঝে মাঝেই টের পেতাম মূল লেখা যিনি লিখেছেন, তার চেয়েও বেশি জানেন তারা, যারা লেখাগুলো নিয়ে আলোচনা করেছেন!
তবে পত্রপত্রিকায় একটা লেখা বের হলে সেটা নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা প্রকাশ করার বিষয়টি নিশ্চয়ই একটু জটিল, বেশির ভাগ পত্রপত্রিকা ম্যাগাজিন সাময়িকীতে আমরা কিন্তু সেটা দেখতে পেতাম না! বিষয়টা হঠাৎ করে পাল্টে গেল, যখন কাগজে ছাপা পত্রিকার পাশাপাশি অনলাইন পত্রিকায়ও প্রকাশিত হতে শুরু করল। প্রযুক্তির কারণে বিষয়টা তখন হয়ে গেল পানির মতো সহজ। একটা লেখার নিচে যে কেউ মন্তব্য করতে পারতেন। বিষয়টা দেখে আমি আনন্দ পেয়েছিলাম, ভেবেছিলাম হয়তো মূল লেখা থেকে আলোচনা-সমালোচনাগুলো হবে আরও বেশি চমকপ্রদ। কিন্তু আমার তখন খুব ভয়ানকভাবে আশাভঙ্গ হলো। আমি এক ধরনের আতঙ্ক নিয়ে আবিষ্কার করলাম, একটা লেখা প্রকাশিত হলে তার নিচের মন্তব্যগুলো হয় ঢালাও প্রশস্তি, নয় একেবারে নোংরা কাঁচা খিস্তিখেউড়। শুধু যে লেখাকে গালাগাল করা শুরু হলো তাই নয়, লেখকের লেখার ওপরে মন্তব্যটুকু পছন্দ না হলে মন্তব্যটাকে পর্যন্ত নির্দয় ভাষায় গালি দেওয়া শুরু হলো। যেহেতু দেশে এখনও মানবতাবিরোধী অপরাধীদের দলীয় লোকজন আছেন, সেহেতু তারা রীতিমতো রুটিন করে প্রগতিশীল মানুষের লেখালেখি নিয়ে একটা তুলকালাম যুদ্ধ শুরু করে দিলেন।

আরও পড়তে পারেন:  দুই বছর পূর্তি তিন বছরে পা



বিষয়টা যে শুধু আমাদের দেশে ঘটেছে তা নয়, এটি ঘটেছে সারাপৃথিবীতে। তখন পৃথিবীর বড় বড় অনলাইন ম্যাগাজিনগুলো ধীরে ধীরে পাঠকদের মন্তব্য করার সুযোগ বন্ধ করে দেওয়া শুরু করল! এখন একটি লেখা একজন পড়তে পারেন কিন্তু তার বিরুদ্ধে এক-দুই লাইনের কুৎসিত বিষোদ্গার করার যত ইচ্ছাই করুক, সেটি করার আর কোনও সুযোগ থাকল না! অর্থাৎ বলা যেতে পারে, অনলাইন ম্যাগাজিনে একটি নতুন বিষয়ের জন্ম-মৃত্যু আমরা নিজের চোখেই দেখতে পেলাম।

আমাদের দেশের অনলাইন পত্রিকাগুলোয় এখনও সেটা ঘটেনি, মন্তব্য করার সুযোগ এখনও আছে কিন্তু পাঠকেরা সেটা কতটুকু পড়েন আমার জানা নেই। আমার ধারণা, যদি মন্তব্যের মান উঁচু না হয়, তাহলে সব জায়গাতেই এটা ঘটতে থাকবে। লেখা পড়ার সুযোগ দেওয়া হবে কিন্তু খিস্তিখেউড় করতে দেওয়া হবে না!

অথচ অনলাইন পত্রিকা আসলে একটা বিপ্লবের মতো। একটা সময় ছিল যখন পত্রিকা প্রকাশের বিষয়টা ছিল একেবারে হাতেগোনা অল্প কিছু মানুষের ক্ষমতার ভেতরে। তারা সংবাদপত্র প্রকাশ করতেন এবং তারা মানুষের পড়ার বিষয়টা নিয়ন্ত্রণ করতেন। সংবাদপত্রগুলোর দায়িত্ব হচ্ছে নির্মোহভাবে সংবাদ প্রকাশ করা। কিন্তু দেখা গেছে তারা তা করে না। সংবাদপত্রগুলো নিজেদের প্রকাশ্য এবং গোপন এজেন্ডার সঙ্গে মিশিয়ে খবরগুলো প্রকাশ করে। আমরা একেবারে চোখ বন্ধ করে কোন পত্রিকা কোন খবরকে কিভাবে প্রকাশ করবে কিংবা আদৌ প্রকাশ করবে কিনা, সেটা বলে দিতে পারি।

শুধু তাই নয়, আমরা একটু খোঁজ নিলেই জেনে যাই যে, এ দেশের সব বড় বড় গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের নিজেদের একটা করে দৈনিক পত্রিকা আছে। দৈনিক পত্রিকাগুলো খবর পরিবেশনের সঙ্গে-সঙ্গে মালিকের ব্যবসাপাতির স্বার্থ রক্ষা করে। তাই আমরা অবাক হয়ে লক্ষ করি, বড় বড় ভূমিদস্যুদের বিশাল বিশাল অপকীর্তির কথা খবরের কাগজে ছাপা হয় না। দেখে মনে হয়, কোনও কোনও সংবাদপত্রের মুখ্য উদ্দেশ্য হচ্ছে মালিকের স্বার্থ রক্ষা করা, গৌণ উদ্দেশ্য হচ্ছে সংবাদ পরিবেশন করা! শুধু আমাদের দেশে নয়, সারাপৃথিবীতেই একই ছবি, বিশাল বিশাল সম্পদ রক্ষা করার জন্য সব কলাকৌশল, সাধারণ মানুষের বলার জায়গা নেই, তাদের কথা বলারও কেউ নেই; অন্তত সেটাই আমরা জানতাম।

আমাদের চোখের সামনে দেখতে দেখতে সেই ছবি পাল্টে গেছে। ইন্টারনেটের একটা বিশাল জগৎ সারাপৃথিবীর সবকিছুতে নতুন একটা মাত্রা যোগ করেছে, যে মাত্রাটির কথা কিছুদিন আগে আমরা কল্পনা পর্যন্ত করতে পারতাম না! একটা সংবাদপত্র প্রকাশ করার মতো ভয়ঙ্কর কঠিন কাজ যেটি করা সম্ভব ছিল শুধু হাতেগোনা দু-একজন কুবেরের, হঠাৎ করে অনলাইন সংবাদপত্র নামে সেই প্রতিক্রিয়ারও একটি সম্পূর্ণ ভিন্ন সমাধান বের হয়ে গেল। যে সমাধানটি এত অসাধারণ, আমাদের প্রচলিত কাগজের সংবাদপত্র দেখতে দেখতে পৃথিবীর বুক থেকে অদৃশ্য হয়ে যেতে শুরু করেছে। স্মার্টফোনের দাম কমার আগে ইন্টারনেটে আমাদের দেশের মানুষের অংশগ্রহণের সংখ্যা ছিল খুবই কম, হঠাৎ করে সেটি বেড়ে উঠতে শুরু করেছে। এখন একেবারে নিশ্চিতভাবে বলা যায় দেখতে দেখতে সবাই অনলাইন সংবাদমাধ্যমে খবর পড়তে শুরু করবেন। সম্পদশালী ভূমিদস্যুদের খবরের কাগজের সঙ্গে একেবারে সমান শক্তিতে পাল্লা দিতে পারবে একদল তরুণের একটি অনলাইন পোর্টাল! সারাপৃথিবীর এই নতুন একটি বিপ্লব আমরা আমাদের নিজের চোখে দেখতে পারছি। বিপ্লবটি মাত্র হয়েছে, এটি কখন শেষ হবে জানি না। যখন শেষ হবে পৃথিবীর রূপ কী হবে, আমরা সেটাও জানি না। দেখার আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করছি।

বাংলা ট্রিবিউন নতুন পৃথিবীর নতুন সংবাদমাধ্যমের একটি নতুন সংযোজন। তারা নতুন বছরে পা দিতে যাচ্ছে, তাদেরক অভিনন্দন। সেইসঙ্গে তাদের বিনয়ের সঙ্গে মনে করিয়ে দিতে চাই, সংবাদমাধ্যম কিংবা অনলাইন পোর্টালের দায়িত্ব কিন্তু অনেক বড়। আমরা আশা করব, তারা সার্বিকভাবে সেই দায়িত্ব পালন করে এ দেশের নতুন প্রজন্মকে সঙ্গে নিয়ে নতুন বাংলাদেশ গড়ার আন্দোলনের শক্তিশালী একজন কমরেড হিসেবে মাথা তুলে দাঁড়াবে।

লেখক: কথাসাহিত্যিক; শিক্ষক, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়

 

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
হজ এজেন্সিগুলোর কথার সঙ্গে কাজের কোনও মিল নেই: ধর্মমন্ত্রী
হজ এজেন্সিগুলোর কথার সঙ্গে কাজের কোনও মিল নেই: ধর্মমন্ত্রী
পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষ, খুলনা-মোংলায় শুরু হচ্ছে ট্রেন চলাচল
পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষ, খুলনা-মোংলায় শুরু হচ্ছে ট্রেন চলাচল
টিভিতে আজকের খেলা (২ মে, ২০২৪)
টিভিতে আজকের খেলা (২ মে, ২০২৪)
ঘরের মাঠে পিএসজিকে হারিয়ে এগিয়ে থাকলো ডর্টমুন্ড
চ্যাম্পিয়নস লিগ সেমিফাইনালঘরের মাঠে পিএসজিকে হারিয়ে এগিয়ে থাকলো ডর্টমুন্ড
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ