X
শনিবার, ০৪ মে ২০২৪
২০ বৈশাখ ১৪৩১

থামো মতিহার

তুষার আবদুল্লাহ
২৩ এপ্রিল ২০১৬, ১৩:৩৬আপডেট : ২৪ এপ্রিল ২০১৬, ০০:২৫

তুষার আবদুল্লাহ শুক্রবার রাতে জোছনায় ভেসেছিল বাংলাদেশের আকাশ। আমি যেমন নিমের পাতার ফাঁক দিয়ে দেখেছিলাম রূপবতী চাঁদ। তেমনি মতিহারের আম, লিচু, জারুল কিংবা কনকচুঁড়া পাতার আড়ালে যাওয়া চাঁদ কি দেখছিলেন ড. রেজাউল করিম? নাকি নিজ বাড়ির শোবার ঘরে বসে বা শুয়ে সারারাত কাটিয়ে দিয়েছিলেন জোছনার সঙ্গে? কী জানি হয়তো কাউকে মুঠোফোনে বা পরিবারের পাশে থাকা কোনও সদস্যকে বলেছিলেন শুভরাত্রি। সকালে ইংরেজির অধ্যাপকের ক্লাস নেওয়ার তাড়া ছিল কিনা জানি না। হয়তো গ্রীষ্মের ফুলে ফুলে মাতোয়ারা মতিহারকে শুভ সকাল বলতেই তিনি বেরিয়ে ছিলেন ঘর থেকে। পথে দুই-একটি পরিচিত মুখকেও বলে থাকতে পারেন শুভ সকাল। কিন্তু সকালটি যেমন শুভ হয়ে এলো না ড. রেজাউল করিমের জন্য, তেমনি আমাদের জন্যও। অশুভ বার্তা দিয়ে দিনের শুরু।
ড. রেজাউল করিমকে কে বা কারা শালবাগান এলাকায় কুপিয়ে হত্যা করলো, তাৎক্ষণিকভাবে তা জানা যায়নি। তড়িঘড়ি করে জানতে চাইও না। কারণ প্রতিটি হত্যাকাণ্ডের পরপর করা তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় হত্যার কারণ উল্লেখ করা, মূল কারণকে আড়াল করার কৌশল হিসেবেও কাজ করে কখনও কখনও। তাই পুলিশ বা তদন্ত দল প্রকৃত অনুসন্ধান করেই অপরাধীদের চিহ্নিত করুক। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক হত্যার ঘটনা এবারেই প্রথম নয়। এর আগেও তিনটি হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। ২০০৪ সালের ২৪ ডিসেম্বর হত্যা করা হয় অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ইউনুসকে, ২০০৬ সালে হত্যা করা হয় ভূতত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক এস তাহের আহমেদকে। সর্বশেষ ২০১৪ সালের ১৪ নভেম্বর একইভাবে হত্যা করা হয়েছিল সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক একেএম শফিউল ইসলাম লিলনকে। নিহত প্রত্যেকেই তার বাড়ির কাছেই হত্যার শিকার হয়েছেন। বাড়ি থেকে বেরিয়ে প্রিয় ক্যাম্পাসে যাওয়ার মুহূর্তে তাদের ঘাতকের হাতে প্রাণ দিতে হয়েছে। পূর্বের কোনও হত্যাকাণ্ডের বিচার প্রক্রিয়ার চূড়ান্ত নিষ্পত্তি হয়নি। হত্যাকাণ্ডের পর দেখা গেছে বক্তৃতা বিবৃতিতে তাদের মুক্তমনা, সংস্কৃতিমনা বলে চিহ্নিত করে সম্ভাব্য হত্যাকারী হিসেবে কোনও কোনও গোষ্ঠীর দিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে। শিক্ষক মুক্তচিন্তার মানুষ হবেন, সংস্কৃতিমনা হবেন এটাই স্বাভাবিক। তাই বলে কোনও বিশেষ গোষ্ঠী তাকে হত্যা করতে পারে বা করছে, এই ভেবে তো হাত গুটিয়ে বসে থাকা যাবে না। শিক্ষক যদি ক্যাম্পাসে বা সমাজে নিরাপদ বোধ না করেন, তাহলে সংস্কৃতি ও চিন্তার চর্চাও বিকশিত হবে না। নিরাপদ বোধ করবেন না এই চর্চার অনুশীলনকারীরাও। হত্যার পেছনে ব্যক্তিগত বিরোধ, বিশ্ববিদ্যালয় রাজনীতি বা জাতীয় রাজনীতিরও যোগ থাকতে পারে। থাকুক। তাই বলে শিক্ষক হত্যা কেন? কারণ যাই থাকুক না কেন, অতীতের তিনটি হত্যাকাণ্ডের বিচারকাজে কেন নিষ্পত্তি আনা গেল না? যদি অতীতের হত্যার বিচার প্রক্রিয়া শেষ করা যেত তাহলে অপরাধীরা রেজাউল করিম সিদ্দিকীকে হত্যার দুঃসাহস কী দেখা তো?

আরও পড়তে পারেন: এক যুগে রাবির চার অধ্যাপক খুন

একইসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় সিনেট, সিন্ডিকেট, প্রশাসন এবং সরকারকেও ভাবনায় আনতে হবে- কেন মতিহারে একের পর এক শিক্ষক হত্যার শিকার হচ্ছেন। এর পেছনে নীল নকশার শানে-নুজুল কী। কে বা কারা এর ফায়দা নিচ্ছেন? বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার কোনও ত্রুটি, বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশের কোনও বিপর্যয়ের ফলাফল এটা, এ নিয়ে এখন রাষ্ট্রকেও মাথা ঘামাতে হবে। রাষ্ট্র যদি মনে করে, এটা কেবল মতিহারের চার দেয়ালের সমস্যা, তাহলে সেটা হবে বড্ড ভুল। রাষ্ট্রকে স্মরণে রাখতে হবে আরেকটি পরিসংখ্যানও, গত তিনমাসে দেশে ৮৬৫টি হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। যার অনেক বিষয়েই সরকারের কপালে ভাঁজ পড়ার কথা। আমরা প্রতিরাতে নির্ভয়ে শুভরাত্রি বলে ঘুমাতে যেতে চাই, ঘুম থেকে উঠে প্রিয়জনকে বলতে চাই শুভ সকাল। যেমনটি হয়তো আজ সকালের প্রথম ক্লাসে গিয়ে প্রিয় শিক্ষার্থীদের বলতে চেয়েছিলেন অধ্যাপক রেজাউল করিম সিদ্দিকী।

 

আরও পড়তে পারেন: রাবি অধ্যাপক রেজাউল হত্যার দায় স্বীকার আইএসের!

লেখক: বার্তা প্রধান, সময় টিভি

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
ছেলের মৃত্যুর ৪ দিনের মাথায় চলে গেলেন বাবা, গ্রামজুড়ে শোকের ছায়া
ছেলের মৃত্যুর ৪ দিনের মাথায় চলে গেলেন বাবা, গ্রামজুড়ে শোকের ছায়া
গাজা ও ইউক্রেনে যুদ্ধ বন্ধে যুক্তরাজ্যের সঙ্গে কাজ করতে চায় বাংলাদেশ: পররাষ্ট্রমন্ত্রী
গাজা ও ইউক্রেনে যুদ্ধ বন্ধে যুক্তরাজ্যের সঙ্গে কাজ করতে চায় বাংলাদেশ: পররাষ্ট্রমন্ত্রী
অনেক নার্ভাস ছিলেন সাইফউদ্দিন
অনেক নার্ভাস ছিলেন সাইফউদ্দিন
বকশিবাজার মোড়ে বাসের ধাক্কায় পথচারী নিহত
বকশিবাজার মোড়ে বাসের ধাক্কায় পথচারী নিহত
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ