X
রবিবার, ০৮ জুন ২০২৫
২৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

ইউক্রেন ইস্যুতে ভিন্ন সুর বেইজিংয়ের

বিদেশ ডেস্ক
২২ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ২০:৩৪আপডেট : ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ২০:৪০

ইউক্রেন ইস্যুতে সব পক্ষকে সংযম প্রদর্শন এবং উত্তেজনা বৃদ্ধির মতো ঘটনা এড়ানোর আহ্বান জানিয়েছে চীন। সোমবার জাতিসংঘে চীনের দূত ঝাং জুন এই আহ্বান জানিয়েছেন। তবে ইউক্রেনের বিচ্ছিন্নতাবাদী অধ্যুষিত দুই অঞ্চলকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে রাশিয়ার স্বীকৃতির কোনও নিন্দা জানায়নি দেশটি।

ইউক্রেন সংকট তীব্র হওয়ায় বেইজিং একটি জটিল বাস্তবতার মুখে পড়েছে। মস্কোর সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার পাশাপাশি বিষয়টি নিয়ে ভারসাম্য বজায় রাখার চেষ্টা করছে শি জিনপিং-এর প্রশাসন।

কী বলছে চীন

সোমবার রাতে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের জরুরি বৈঠকে ইউক্রেন ইস্যুতে কথা বলেন জাতিসংঘে নিযুক্ত চীনের দূত ঝাং জুন। তিনি বলেন, কূটনৈতিক সমাধানের প্রতিটি উদ্যোগকে বেইজিং স্বাগত জানায়। তবে যাবতীয় উদ্বেগ সমতার ভিত্তিতে বিবেচনা করা উচিত।

ঝাং জুন বলেন, ‘ইউক্রেনের বর্তমান পরিস্থিতি নানা জটিল কারণে তৈরি হয়েছে। চীন সব সময়ই বাস্তবতা অনুযায়ী তার নিজস্ব অবস্থান ঠিক করে। আমরা বিশ্বাস করি যে, সব দেশের উচিত জাতিসংঘের সনদের উদ্দেশ্য ও নীতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে শান্তিপূর্ণ উপায়ে আন্তর্জাতিক বিরোধের সমাধান করা।’

নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকটি এমন সময়ে অনুষ্ঠিত হলো যখন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ইউক্রেন ইস্যুতে বিদ্যমান উত্তেজনা প্রশমনের জন্য কাজ করছে। এর মধ্যেই ইউক্রেনের বিচ্ছিন্নতাবাদী দুই অঞ্চলকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ায় এখন সেখানে সামরিক ঘাঁটি স্থাপনের সুযোগ পাবে রাশিয়া। এতে ইউক্রেনে আগ্রাসন চালানো মস্কোর জন্য আরও সহজ হবে।

রাশিয়া অবশ্য বরাবরই ইউক্রেনে হামলা পরিকল্পনার খভর অস্বীকার করে আসছে। নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকেও একই দাবির পুনরাবৃত্তি করেছে দেশটি। রাশিয়ার দাবি, স্বঘোষিত ডোনেস্ক পিপলস রিপাবলিক এবং লুহানস্ক পিপলস রিপাবলিকের (ডিপিআর এবং এলপিআর) বাসিন্দাদের রক্ষার জন্যই এই পদক্ষেপ নিয়েছে মস্কো। ইউক্রেন ইস্যুতে ভিন্ন সুর বেইজিংয়ের

পুতিনের বেইজিং সফর

ইউক্রেন ইস্যুতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় মস্কোর নিন্দায় সরব হওয়ার মধ্যেই চীনের আরও কাছাকাছি যাওয়ার চেষ্টা করেছে রাশিয়া। শীতকালীন অলিম্পিকের আগে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং-এর সঙ্গে দেখা করতে ৪ ফেব্রুয়ারি বেইজিং সফর করেন ভ্লাদিমির পুতিন। দুই নেতার বৈঠক একটি সুস্পষ্ট বিবৃতি প্রকাশের মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, দুই দেশের মধ্যকার সম্পর্কের ‘কোনও সীমাবদ্ধতা’ নেই এবং সহযোগিতার কোনও ‘নিষিদ্ধ’ ক্ষেত্র নেই।

চীন ও রাশিয়ার মধ্যকার সংহতির এমন প্রদর্শন পশ্চিমা দুনিয়ার নজর এড়ায়নি। ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লেইন শুক্রবার মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলনে জোরালো ভাষায় মন্তব্যে শি জিনপিং এবং ভ্লাদিমির পুতিনের সাম্প্রতিক যৌথ বিবৃতির বিষয়টি উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, বেইজিং ও মস্কো আইনের শাসনকে ‘সবচেয়ে ক্ষমতাধরের শাসন’ দিয়ে প্রতিস্থাপন করতে চায়।

চীন আলাপ আলোচনার মধ্য দিয়ে তার স্বার্থ বজায় রেখেছে। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বেইজিং পশ্চিমা দুনিয়ার কাছে নিজেকে দোষী হিসেবে সাব্যস্ত হওয়া থেকে সতর্ক থাকবে এবং এখন তারা একটি শক্ত পথে হাঁটতে চাইবে।

কাউকে ক্ষুব্ধ করতে চায় না চীন

সিঙ্গাপুরের ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির লি কুয়ান ইউ স্কুল অব পাবলিক পলিসির একজন সহযোগী অধ্যাপক আলফ্রেড উ। তিনি বলেন, ‘তারা (চীন) জড়িত হতে চায় না এবং খুব জোরালো বিবৃতি দিতে চায় না। এতে করে যুক্তরাষ্ট্র কিংবা রাশিয়া কেউই ক্ষুব্ধ হবে না।’

তিনি বলেন, বেইজিং মস্কোর কর্মকাণ্ডের প্রতি লক্ষ্য রেখে পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা এড়াতে চাইবে। তার ভাষায়, ‘তারা প্রকাশ্যে রাশিয়াকে সমর্থন করছে এমন ভাবমূর্তি যাতে না থাকে সে বিষয়ে সতর্ক থাকবে।’

চীন এর আগে ইউক্রেন সংকটে জড়িত পক্ষগুলোকে মিনস্ক চুক্তিতে ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছিল। পূর্ব ইউক্রেনের সংঘাতের পর ২০১৪ এবং ২০১৫ সালে হওয়া চুক্তিগুলোর কথা উল্লেখ করেছে বেইজিং, যেখানে রাশিয়া-ইউক্রেন সীমান্তের ইউক্রেনীয় অংশে কিয়েভের নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখার কথা বলা হয়েছে।

মিউনিখ সম্মেলনে চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী

শনিবার মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলনে ভাষণ দানকালে চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই বলেন, ‘সব দেশের সার্বভৌমত্ব, স্বাধীনতা এবং আঞ্চলিক অখণ্ডতাকে সম্মান করা উচিত এবং এটি রক্ষা করা উচিত।’

নিউইয়র্কের কাউন্সিল অন ফরেন রিলেশনসের একজন গবেষণা ফেলো ডেভিড স্যাক্স। তার মতে, সাম্প্রতিক ঘটনাবলী চীনকে একটি ‘বাজে অবস্থার’ মুখে ঠেলে দিয়েছে।

তার ভাষায়, ‘শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত চীন মিনস্ক চুক্তিতে ফিরে আসার প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দিয়েছিল এবং পুতিন প্রকাশ্যে তা ছিঁড়ে ফেলেছিলেন। সংকট মোকাবিলায় চীনের প্রস্তাবকে তিনি মূলত উপেক্ষা করেছিলেন।’

ডেভিড স্যাক্স মনে করেন, রাশিয়ার সঙ্গে দল বাঁধার ঘটনায় চীনকে দীর্ঘমেয়াদে যে মূল্য দিতে হতে পারে বেইজিংয়ে সম্ভবত পর্দার অন্তরালে সেটি নিয়ে জোরালো বিতর্ক হচ্ছে। রাশিয়াকে আরও কাছে টানতে গেলে সেটি যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপ থেকে চীনকে আরও দূরে ঠেলে দেবে, যা তারা এড়াতে চায়।

চীন-রাশিয়ার ঐক্যবদ্ধ ফ্রন্ট

সামরিক মিত্র না হলেও অভ্যন্তরীণ বিষয়ে কথিত পশ্চিমা হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে চীন ও রাশিয়া নিজেদের একটি ঐক্যবদ্ধ ফ্রন্ট হিসেবে বিবেচনা করে। জাতিসংঘের বিভিন্ন ভোটাভুটিতে প্রায়ই মার্কিন নেতৃত্বাধীন নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে জোরালো অবস্থান নেয় দুই দেশ। এক্ষেত্রে নিরাপত্তা পরিষদে নিজেদের ভেটো ক্ষমতাও প্রয়োগ করে দুই দেশ।

৪ ফেব্রুয়ারির যৌথ বিবৃতিতে ইউক্রেন পরিস্থিতির উল্লেখ করা হয়নি। তবে ন্যাটো সম্প্রসারণের বিষয়ে পশ্চিমা দুনিয়ার কাছে রাশিয়ার যে দাবি, সে ব্যাপারে চীন একমত।

মার্কিন জোট নিয়ে মতৈক্য

ওহাইওর উইটেনবার্গ ইউনিভার্সিটির রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক এবং সাংহাইয়ের ইস্ট চায়না নর্মাল ইউনিভার্সিটির রাশিয়ান স্টাডিজ সেন্টারের সিনিয়র ফেলো ইউ বিন। তিনি বলেন, ইন্দো প্যাসিফিক অঞ্চলে পশ্চিমা ব্লকের ক্রমবর্ধমান ভূমিকার কারণে চীন ন্যাটোর বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। ফলে ইউরোপ এবং এশিয়া উভয় ক্ষেত্রেই মার্কিন নেতৃত্বাধীন জোট সম্পর্কে রাশিয়া ও চীনের ধারণার মিল রয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতর জানিয়েছে, সোমবার রাতে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন তার চীনা সমকক্ষ ওয়াং ই-এর সঙ্গে উত্তর কোরিয়া পরিস্থিতি এবং ‘ইউক্রেনের বিরুদ্ধে রাশিয়ার আগ্রাসন’ সম্পর্কে কথা বলেছেন। এ সময় মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইউক্রেনের সার্বভৌমত্ব এবং আঞ্চলিক অখণ্ডতা রক্ষার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন।

চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে আলাপকালে ইউক্রেন পরিস্থিতি নিয়ে ‘উদ্বেগ’ প্রকাশ করেছেন।

বিবৃতিতে বলা হয়, ‘ইউক্রেন পরিস্থিতি নিয়ে চীন উদ্বিগ্ন’ এবং ‘যে কোনও দেশের বৈধ নিরাপত্তা উদ্বেগকে সম্মান করা উচিত।’

ওয়াং ই বলেন, ‘জাতিসংঘ সনদের উদ্দেশ্য ও নীতিগুলো সমুন্নত রাখা উচিত। আর ইউক্রেনের বর্তমান পরিস্থিতি মিনস্ক চুক্তি বাস্তবায়নে ‘বিলম্বের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত।’

সোমবার নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্র দেশগুলোকে একটি পক্ষ বেছে নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। জাতিসংঘে মার্কিন রাষ্ট্রদূত লিন্ডা থমাস-গ্রিনফিল্ড বলেন, জাতিসংঘের প্রতিটি সদস্য রাষ্ট্রের এই সংকটে অংশীদারিত্ব রয়েছে। এখন সম্মিলিত পদক্ষেপ নেওয়ার সময় এসেছে। সিএনএন অবলম্বনে।

/এমপি/
টাইমলাইন: ইউক্রেন সংকট
সম্পর্কিত
ইউক্রেনে রুশ হামলায় নিহত ৬, অনিশ্চয়তায় যুদ্ধবন্দি বিনিময়
ইউক্রেনের রাশিয়ার পাল্টা হামলা শেষ হয়নি, বড় হামলার শঙ্কা যুক্তরাষ্ট্রের
লন্ডনে যুক্তরাষ্ট্র-চীন বাণিজ্য আলোচনায় বসছে সোমবার
সর্বশেষ খবর
করোনার নতুন উপধরনের সংক্রমণ, বন্দরে সতর্কতা জারি
করোনার নতুন উপধরনের সংক্রমণ, বন্দরে সতর্কতা জারি
ইউক্রেনে রুশ হামলায় নিহত ৬, অনিশ্চয়তায় যুদ্ধবন্দি বিনিময়
ইউক্রেনে রুশ হামলায় নিহত ৬, অনিশ্চয়তায় যুদ্ধবন্দি বিনিময়
ঈদের ফিরতি যাত্রায় ট্রেনে মাস্ক পরার অনুরোধ রেলপথ মন্ত্রণালয়ের
ঈদের ফিরতি যাত্রায় ট্রেনে মাস্ক পরার অনুরোধ রেলপথ মন্ত্রণালয়ের
কাদের সিদ্দিকীর স্ত্রী মারা গেছেন
কাদের সিদ্দিকীর স্ত্রী মারা গেছেন
সর্বাধিক পঠিত
ঈদ উপলক্ষে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সস্ত্রীক সাক্ষাৎ করলেন সেনাপ্রধান
ঈদ উপলক্ষে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সস্ত্রীক সাক্ষাৎ করলেন সেনাপ্রধান
অবশেষে জুলাইয়ে চালু হচ্ছে ভূমি মালিকানা সনদ
অবশেষে জুলাইয়ে চালু হচ্ছে ভূমি মালিকানা সনদ
মায়ের কবরে আবেগঘন শুভ: আকাশটাও কাঁদছিলো…
মায়ের কবরে আবেগঘন শুভ: আকাশটাও কাঁদছিলো…
প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সস্ত্রীক নৌবাহিনী প্রধানের সাক্ষাৎ
প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সস্ত্রীক নৌবাহিনী প্রধানের সাক্ষাৎ
প্রধান উপদেষ্টার দেওয়া নির্বাচনের সময় ‘এপ্রিল ফুল’ হতে পারে: ১২ দলীয় জোট
প্রধান উপদেষ্টার দেওয়া নির্বাচনের সময় ‘এপ্রিল ফুল’ হতে পারে: ১২ দলীয় জোট