X
শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪
১৫ চৈত্র ১৪৩০

ধন্যবাদ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী

সাইফুর মিশু
২৮ নভেম্বর ২০১৫, ১৩:২২আপডেট : ২৩ ডিসেম্বর ২০১৫, ১৫:৪১

Saifur Mishuবাংলাদেশের প্রেক্ষাপট বিবেচনায় শিরোনাম দেখে অনেকেই ভাবতে পারেন কোনও চাটুকারিতাপূর্ণ লেখা এটি। না, একেবারেই তা নয়। নানা সময়ে সরকারের ভুল সিদ্ধান্তের কঠোর সমালোচনা করা মানুষ আমি। প্রত্যক্ষভাবে কোনও রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান আমি নই, একজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান। বাবার যৌবন কেটেছে মুক্তিযুদ্ধের পরে স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধুর আদর্শে প্রথমে ছাত্রলীগ, পরবর্তীতে যুবলীগ এবং আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে। এরপর রাজনীতিতে ব্যবসায়ীদের অনুপ্রবেশ এবং বিশেষ করে বঙ্গবন্ধু হত্যার পরে প্রত্যক্ষ রাজনীতি থেকে তিনি দূরে সরে গেছেন নীরবে।

একেবারে শিশুকাল থেকে কৈশোর পর্যন্ত দেখে এসেছি এই দেশের সর্বত্র একজন কালো চশমা পরিহিত ব্যক্তির ছবি। সবাই বলতো ওই ব্যক্তিটি নাকি বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষক। স্কুলের পাঠ্যপুস্তকে আলাদা অধ্যায় ছিল সে ব্যক্তির নামে। প্রাতিষ্ঠানিকভাবে বঙ্গবন্ধু কিংবা শেখ মুজিবুর রহমান নামের মানুষটি সম্পর্কে জানার খুব একটা সুযোগ ছিল না। ১৯৯৬ সালের নির্বাচনের সময় আমি বেশ ছোট। সেই নির্বাচনের সময় প্রথম প্রকাশ্যে বঙ্গবন্ধুর ছবি দেখি ঘরের বাইরে। মাঝে মাঝে বাবাকে চেপে ধরলে মুক্তিযুদ্ধের নানা ঘটনা জানতে পারতাম। তবে বাবার ভয় ছিল রাজনীতিতে না জড়িয়ে যাই ওই বয়সে। কারণ সে বয়সটা ছিল ইতিহাস না জেনে চাকচিক্যের পেছনে ছুটে ভুল পথে পা বাড়ানোর। তাছাড়া তখন পর্যন্ত আমাদের দেশের সাধারণ মানুষই ভুল করত স্বাধীনতার স্বপক্ষের শক্তি কিংবা দলকে চিহ্নিত করতে। ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর কালো চশমা পরিহিত ব্যক্তিটি মুক্তিযুদ্ধের একমাত্র কান্ডারি এবং সব সাফল্যের দাবিদার এমনভাবে হিসেবে প্রচার করা হয়েছে যে, এটা খুবই স্বাভাবিক ছিল।

চট্টগ্রামে প্রতি ডিসেম্বর মাসে মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলা অনুষ্ঠিত হয়। ছোটবেলা থেকেই পরিবারের সবাইকে নিয়ে বিজয় মেলায় যেতেন বাবা। আমরা নানারকম এটা-ওটা কিনে আনলেও প্রতিবছর বাবাকে দেখতাম একই জিনিস কিনতে। একজন মহামানবের ছবি। বাবা প্রতিবছর কেন এই ছবি কিনতো তখনও বুঝতে না পারলেও সেই মহামানবের প্রতি বাবার গভীর শ্রদ্ধাবোধ এবং অকৃত্রিম ভালোবাসা টের পেতাম। তখন থেকেই এই মহামানব সম্পর্কে জানার আগ্রহ জমতে থাকে ভেতরে ভেতরে। তখন থেকেই আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নিয়ে জানতে চেষ্টা করি।

যতই মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানতে থাকি, এ নিয়ে পড়াশোনা করতে থাকি ধীরে-ধীরে পরিচিত হতে থাকি পাকিস্তানি এবং তাদের এদেশীয় দোসরদের ভয়ঙ্কর সব চেহারার সাথে। কী বীভৎস সেসব চেহারাগুলো। তারা কী পরিমাণ নৃশংসতা চালিয়েছে এই দেশের সাধারণ মানুষের ওপর।

পাকিস্তানি সেনাসদস্যদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে পাশবিক নির্যাতন চালাতো এদেশীয় স্থানীয়দের নিয়ে গঠিত রাজাকার বা আলবদর বা আলশামসের সদস্যরা। এসব ইতিহাস জানার পর এই খুনিদের চোখের সামনে দেখলে আইন হাতে তুলে নিতে দুইবার ভাববার কথা না। কোনও সুস্থ স্বাভাবিক মুক্তিযুদ্ধার পক্ষের এটি সম্ভব ছিল না। তবুও আমরা তা করিনি। আমরা ধৈর্য ধরেছি। চেয়েছি ন্যায়বিচার।

মাঝে ২০০১ সালের নির্বাচনের পরে বিএনপি-জামায়াত জোট দুই চিহ্নিত রাজাকারের গাড়িতে আমাদের লাল-সবুজের পতাকা তুলে দিল। আমার বাবা সরাসরি গেরিলাযুদ্ধে অংশগ্রহণ করা একজন মুক্তিযোদ্ধা। তার বেদনা আর কষ্ট আমি বুঝতে পেরেছিলাম।

অতঃপর ২০০৮ সালের ডিসেম্বর মাসের নির্বাচনে বঙ্গবন্ধুকন্যা পুরো জাতির সামনে ওয়াদা করলেন, তার দল সরকার গঠন করলে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হবে। নির্বাচনে জয়ী হয়ে প্রচণ্ড যোগ্য একজন মানুষকে দায়িত্ব দিলেন এই বিচারের সবরকম ব্যবস্থা করার। টেকনোক্রেট মন্ত্রী হিসেবে আইন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দিলেন তার কাঁধে। খুবই সুচারুভাবে তিনি সবকিছু গুছিয়ে অবশেষে ২০১০ সালে প্রতিষ্ঠা করলেন প্রথম ট্রাইব্যুনাল, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।

বিচার শুরু হলে ১৯৭১ সালে সংগঠিত মানবতাবিরোধী সব অপরাধের বিচার। নানা সময় বিচারের নানা ফাঁক-ফোকর আবিষ্কার হতে থাকল, সময়ে সেসবের সংশোধনও হলো। সবাই অস্থিরভাবে অপেক্ষা করতে লাগল। একসময় রায় আসা শুরু হলো। এসব অপরাধের জন্য বিশ্বের অন্য কোথাও অভিযুক্তরা যে আইনি সুবিধা পায়নি তাও নিশ্চিত করা হলো। বিচারের প্রতিটি ধাপে নিশ্চিত করা হলো স্বচ্ছতা। ইতিমধ্যে বেশকিছু রায় আসলেও প্রতিটি ধাপ পার হয়ে কার্যকর হয়েছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ চারটি রায়। দেশ-বিদেশের নানারকম ষড়যন্ত্র এবং আন্তর্জাতিক চাপ উপেক্ষা করে শুধু ৩০ লাখ শহীদের আত্মা এবং সম্ভ্রম হারানো দুই লক্ষাধিক নারী মুক্তিযোদ্ধা, (যাদেরকে আমরা বীরাঙ্গনা হিসেবেই জানি) পাশাপাশি মুক্তিযোদ্ধা এবং শহীদ পরিবারগুলোকে ন্যায়বিচার দেওয়ার লক্ষ্যে শক্তহাতে যেই মানুষটি এই বিচারটিকে চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি আর কেউ নন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আর তাই সব মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ পরিবারের সদস্যদের পক্ষ হতে আমি জানাতে চাই, আপনার প্রতি কৃতজ্ঞ আমরা, কৃতজ্ঞ সমগ্র জাতি, কৃতজ্ঞ ৩০ লাখ শহীদের আত্মা। আপনাকে ধন্যবাদ জানানোর ভাষা আমার জানা নেই, তবে একথা বলতে পারি- আপনি দীর্ঘায়ু হোন, এভাবেই আমাদের সোনার বাংলাকে আপনার নেতৃত্বে সামনে এগিয়ে নিয়ে যান, জাতিকে অভিশাপমুক্ত করার এই ধারা চলমান থাকুক ততদিন, যতদিন এই দেশে একটা রাজাকারও জীবিত থাকবে।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনাকে নিশ্চিতভাবে বলতে পারি, আপনার প্রতি পূর্ণ সমর্থন আমাদের মুক্তিযোদ্ধা এবং শহীদ পরিবারগুলোর ছিল, আছে, থাকবে। আপনাকে স্যালুট।

লেখক: মুক্তিযোদ্ধা সন্তান, ব্লগার এবং প্রকৌশলী, সুইডেন।

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব। বাংলা ট্রিবিউন-এর সম্পাদকীয় নীতি/মতের সঙ্গে লেখকের মতামতের অমিল থাকতেই পারে। তাই এখানে প্রকাশিত লেখার জন্য বাংলা ট্রিবিউন কর্তৃপক্ষ লেখকের কলামের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে আইনগত বা অন্য কোনও ধরনের কোনও দায় নেবে না।

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
ছুটির দিনে নিউ মার্কেটে জনসমুদ্র
ছুটির দিনে নিউ মার্কেটে জনসমুদ্র
ভারতের নিখিলের হ্যাটট্রিকে ঊষার বড় জয়
ভারতের নিখিলের হ্যাটট্রিকে ঊষার বড় জয়
বাংলাদেশে আইসিটির ভবিষ্যৎ কেন হুমকির মুখে?  
বাংলাদেশে আইসিটির ভবিষ্যৎ কেন হুমকির মুখে?  
মস্কোতে কনসার্টে হামলা: ৯ সন্দেহভাজনকে আটক করলো তাজিকিস্তান
মস্কোতে কনসার্টে হামলা: ৯ সন্দেহভাজনকে আটক করলো তাজিকিস্তান
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ