X
শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪
১৪ চৈত্র ১৪৩০

মেয়েদের ছেলে বন্ধু!

রেজানুর রহমান
০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ১৭:৪৫আপডেট : ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ১৭:৪৫

রেজানুর রহমান আমাদের সময়ে পরিবারের মধ্যে ‘সান্ধ্য আইন’ নামে অলিখিত একটি আইন ছিল। পরিবারের ছেলেমেয়েদের এই আইন মেনে চলতে হতো। কী ছেলে কী মেয়ে, দু’জনকেই এই আইন মানতে হতো। সন্ধ্যার পরই পড়ার টেবিলে বসে যাও। ক্লাসের পড়া তৈরি করো। রাতের খাবার খেয়ে ঘুমাতে যাও। এমন নয় যে বাবা-মায়েরা ছেলেমেয়েদের বাধ্য করতো সন্ধ্যার পর বাসায় ফিরতে। ছেলেমেয়েরাই নিজের গরজে সন্ধ্যার আগেই বাসায় ফিরতো। না ফিরে তো উপায় ছিল না। সন্ধ্যার পর করার তো কিছু থাকতো না। সবাই যার যার পড়ার টেবিলে বসে যেতো। কাজেই আড্ডা দেওয়ার লোক কোথায়? ফলে ঘরের টানেই ছুটতো সবাই!

আজকের দিনে এই একই আইন যদি কার্যকর করতে চায় কোনও পরিবার সেটা কি সম্ভব? 'সন্ধ্যার আগেই বাসায় ফিরবি'- একথা বললেই কী ছেলেমেয়েরা শুনবে? এখন তো সন্ধ্যার পরই সবকিছু জমে ওঠে। কোচিং ক্লাস, সন্ধ্যার পর। ভার্সিটির ক্লাস, সন্ধ্যার পর। পারিবারিক আড্ডা, আচার অনুষ্ঠান, তাও সন্ধ্যার পর। বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা, তাও সন্ধ্যার পর। গানের ক্লাস, নাটকের মহড়া, তাও সন্ধ্যার পর। কাজেই সন্ধ্যার আগেই বাসায় ফিরিস, এটা এখন কথার কথা! বাস্তবে যে কথার কোনও মূল্য নেই। তাই বলে আমরা কি দিনে দিনে মূল্যহীন হয়ে যাচ্ছি? পরিবারকে কি নিয়ন্ত্রণ করতে পারছি? সম্প্রতি এক বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রীর মৃত্যুর ঘটনা আবারও অনেক প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। পত্রিকার খবরে প্রকাশ, টানা ৩৩ ঘণ্টা পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন ছিল মেয়েটি। এক বিকেলে ছেলেবন্ধুর স্কুটিতে চেপে বাসা থেকে বেরিয়েছিলেন ওই ছাত্রী। দিনটি ছিল বৃহস্পতিবার। সেদিন তো বটেই, শুক্রবারও মেয়ের কোনও খোঁজ পাচ্ছিলেন না বাবা-মা। শনিবার সকালে বাবা-মা খবর পান তাদের মেয়েকে একটি হাসপাতালে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়েছে। কী ভয়াবহ দুঃসংবাদ। মেয়েটি তার বন্ধুর স্কুটিতে চেপে বাসা থেকে বেরিয়ে গিয়েছিল বেশ হাসি-খুশি মন নিয়ে। অথচ ওই বন্ধুই নাকি তার অন্য সহপাঠীসহ মেয়েটিকে মদপান করিয়ে ধর্ষণ করে বলে অভিযোগ উঠেছে। মারাত্মক অসুস্থ অবস্থায় মেয়েটিকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে মেয়েটিকে বাঁচানো যায়নি।

কী এক অসহায় সময় অতিক্রম করছি আমরা? বিশ্বাস কি তাহলে উঠে গেলো? প্রতিটি মানুষের জীবনে বন্ধুর ভূমিকা অপরিসীম। একজন ভালো বন্ধু আপনার জীবনকে পজিটিভ অর্থে বদলে দিতে পারে। কিন্তু বন্ধুর মুখোশ পরা এসব কী দেখছি আমরা? মানুষ, নাকি জানোয়ার? কলাবাগানের সেই স্কুলছাত্রীর লোমহর্ষক মৃত্যুর ঘটনা এখনও অনেকের মন থেকে মুছে যায়নি। দুটি ঘটনা প্রায় একই রকম। কলাবাগানে স্কুলছাত্রীকেও একইভাবে ডেকে নিয়ে ধর্ষণ করেছে বন্ধুরূপী কয়েকজন জানোয়ার। বন্ধু কীভাবে হয় জানোয়ার? আসলে এরা বন্ধু নয়। বন্ধুর পরিচয়ে মুখোশধারী শয়তান। সময় এসেছে মুখোশধারী বন্ধুকে শনাক্ত করার।

সেটা কীভাবে সম্ভব? সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের এই বিস্ময়কর যুগে বন্ধু খুঁজে নেওয়া খুবই সহজ। ফেসবুকে সকালেই হয়তো বন্ধুত্ব হলো কারও সাথে। দুপুরেই তার সঙ্গে শুরু হলো কত যে কথা... মিষ্টি কথায় মিষ্টি সম্পর্কের সূত্রপাত্র। কয়েকদিনেই ‘তোমাকে ছাড়া আমি বাঁচবো না’ এমন নির্ভরতার সম্পর্ক তৈরি হয়ে গেলো। তারপর শুরু হলো ডেটিং। আহা! জীবন যে কত সুন্দর। কিন্তু জীবনের এই উপলব্ধিতে যখন টান পড়ে, প্রতারণার জাল যখন স্পষ্ট হয় চোখের সামনে, তখন আর করার কিছুই থাকে না।

গবেষণায় দেখা গেছে, মেয়েরাই এই প্রতারণার জালে বেশি আটকে যাচ্ছে। এর একটাই কারণ, ব্যক্তিস্বাধীনতা ও পারিবারিক অনুশাসন না মানা! বন্ধু নির্বাচনের ক্ষেত্রে মেয়েদের উচিত একটু সাবধান ও সতর্ক থাকা। ইদানীং মেয়েদের অনেকের মধ্যে এমন ভাবনার জন্ম হচ্ছে যে, ছেলেরা গভীর রাতে বন্ধুদের নিয়ে হইচই করতে পারলে মেয়েরা কেন পারবে না? ব্যক্তিস্বাধীনতায় আচ্ছন্ন অনেক মেয়ে অবাধ মেলামেশাকে তার অধিকার ভাবছে। নারী-পুরুষের অধিকার নিয়ে আমি কিছু বলতে চাই না। আধুনিক এই সময়ে পুরুষের পাশাপাশি নারীরও সমঅধিকার প্রয়োজন। নারীকে ঘরে বন্দি রেখে দেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রা এগিয়ে নেওয়া যাবে না। কিন্তু নারীর উচিত তার নিরাপত্তার বিষয়ে অধিকমাত্রায় সচেতন থাকা। নারীদের কেউ যদি ভাবেন পুরুষ তার নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে সেটা ভুল। এই ভুলের কারণেই নারীকে তার মাশুল দিতে হচ্ছে।

তাহলে আমাদের কী করা উচিত? মেয়েদের উচিত বন্ধু নির্বাচনের ক্ষেত্রে আরও সাবধানী হওয়া। সম্পর্ক তৈরির ক্ষেত্রে ‘শরীর’ যখন মুখ্য হয় তখন সে সম্পর্ক টেকে না। ছেলেদের মধ্যে অনেকেই আছে ‘শরীর পাবার জন্য' মেয়েদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করে। এমন বন্ধুত্বের হাতছানিতে দুর্বল না হওয়াই ভালো। আবার অনেক মেয়ে আছে উচ্ছৃঙ্খল জীবনাচরণের সঙ্গী করতে ছেলেদের বন্ধু বানায়। এমন সম্পর্কের ক্ষেত্রে ছেলেদের উচিত সাবধান থাকা। মনে রাখতে হবে, ‘বন্ধুত্ব’ অনেক পবিত্র সম্পর্ক। জীবনে একজন ভালো বন্ধুর ভূমিকা অনেক। আজ যারা সমাজে প্রতিষ্ঠিত, যাদের জীবন আমাদের জন্য অনুকরণীয়, তাদের সবার ক্ষেত্রেই কোনও না কোনও ভালো বন্ধুর ভূমিকা ছিল অনেক বেশি।

বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ সৈয়দ মঞ্জুরুল ইসলাম বলেছেন, এই যে আমাদের সমাজে এত ধর্ষণসহ অনৈতিক ঘটনা ঘটছে, তার পিছনে বাবা-মায়ের দায়িত্বহীনতা অনেক। কথা সত্য। সকল বাবা-মায়ের উদ্দেশে আবারও একটি পুরনো প্রশ্ন রাখতে চাই। ‘জানেন কী আপনার প্রিয় সন্তান প্রতিদিন কোথায় যায়? কার সঙ্গে মিশে? তার বন্ধু কারা? জানেন কী?

একই সঙ্গে প্রিয় সন্তানদের প্রতিও একটি ছোট্ট জিজ্ঞাসা- যে তোমার বন্ধু বা বান্ধবী তাকে কতটুকু চেনো? কতটুকু জানো? সম্পর্ক তৈরির ক্ষেত্রে আবেগ নয় বাস্তবতাকে গুরুত্ব দেওয়া উচিত। মনে রেখো, একজন ভালো বন্ধু তোমাকে সৎ পথের ঠিকানা দেবে। কিন্তু দুষ্ট বন্ধু কখনও তোমার মঙ্গল চাইবে না। ভালো পথের ঠিকানাও দেবে না। কাজেই বন্ধু নির্বাচনে সাবধানী হও!

লেখক: কথাসাহিত্যিক, নাট্যকার, সম্পাদক- আনন্দ আলো।

/এসএএস/এমওএফ/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
এক সপ্তাহের মাথায় ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে আরেকজন নিহত
এক সপ্তাহের মাথায় ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে আরেকজন নিহত
‘উচিত শিক্ষা’ দিতে পঙ্গু বানাতে গিয়ে ভাইকে হত্যা
‘উচিত শিক্ষা’ দিতে পঙ্গু বানাতে গিয়ে ভাইকে হত্যা
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে মানবাধিকার উইং চালুর পরামর্শ সংসদীয় কমিটির
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে মানবাধিকার উইং চালুর পরামর্শ সংসদীয় কমিটির
পণ্ড হলো না পরাগের শ্রম, দিল্লিকে হারালো রাজস্থান
পণ্ড হলো না পরাগের শ্রম, দিল্লিকে হারালো রাজস্থান
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ