X
বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪
১১ বৈশাখ ১৪৩১

ভাষা বাঁচায় আম মানুষ

তুষার আবদুল্লাহ
২০ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ১৫:২৫আপডেট : ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ১৫:২৮

তুষার আবদুল্লাহ
আরেক ভণিতাময় সময়ের মুখোমুখি আমরা। এবার করোনাকালের জন্য দৃশ্যমানতা কম। প্রদর্শন কেন্দ্র বইমেলা যেহেতু শুরু হয়নি ভণিতা কিছুটা কম বাজারজাত হচ্ছে। বাস্তবিক বক্তৃতার আয়োজনও নেই। তবে পরাবাস্তব মাধ্যম বেশ সরব হয়ে উঠেছে। বাংলা ভাষা চর্চা, বাংলা সাহিত্য, বাংলাকে প্রাত্যহিকের অংশ করা অর্থাৎ সর্বস্তরে বাংলা ভাষার বাস্তবায়ন ঘটাতে না পারার ব্যর্থতা এবং উপায় নিয়ে বিস্তর কথা হচ্ছে। পরামর্শের শেষ নেই। সরকার বা রাষ্ট্রের ওপর দায় চাপানোর অস্থিরতায় যেন সামাজিক মাধ্যম কেঁপে উঠছে। কী সুন্দর সাদা কালো পোশাক ও সাজে আত্মপ্রতারণা করে চলছে দেশে-বিদেশে থাকা বাঙালিরা। আত্মপ্রতারণার অপবিত্র মন নিয়েই তারা শহীদ মিনারের বেদীতে ফুল দেবেন। দেওয়ার ভঙ্গিটাও হবে প্রদর্শনের তরে। শহীদদের প্রতি ভালোবাসা সেখানে হয়তো শূন্যই রয়ে যাবে। কারণ ২১ ফেব্রুয়ারি দিনটি বাঙালির কাছে নিছক একটি ছুটির দিন, নতুন পোশাক পরিধান ও সাজের দিন হয়ে উঠেছে। সেখানে ভাষা শহীদ দিবসের স্থান নেই। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদযাপনের ছুঁতোয়,বিদেশ মনস্কতা প্রদর্শনের উপায় খুঁজে নেওয়া। নিজ মায়ের ভাষাকে ভালো না বেসে,যাপনে ব্যবহার না করে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালনের দৃশ্যমান আয়োজনটিও তো প্রতারণার বহিঃপ্রকাশ।

আমরা যারা বাংলা সাহিত্যে নিজেদের গুরুত্বপূর্ণ মনে করি, সংস্কৃতি রক্ষার পাহারাদার ভাবি,তাদের নিজেদের যাপনেই বাংলা নেই। উচ্চারণে এবং যাপন দুটোতেই অনুপস্থিত। যারা মাস জুড়ে কিংবা বছর ব্যাপি বাংলা বাংলা বলে ক্লান্ত। দিস্তা দিস্তা বাংলা লিখে পাঠকের জন্যে হা পিত্যেস করেন,তার নিজ ঘরেই বাংলা পড়ুয়া মানুষ নেই। কারণ তারা ইংরেজি মাধ্যমে দীক্ষা নেওয়া এবং উড়াল দেওয়ার প্রতীক্ষায়।কেউ কেউ তো সেখানেই পরিবার পরিজন রেখে দেশে বক ধার্মিক সেজে ওয়াজ নসিহত করে যাচ্ছেন। আবার দেশে অরুচি যারা তারা নিত্য সকাল সন্ধ্যা বাংলা নিয়ে মায়া কান্নায় প্রবাসে বিশেষ সংস্কৃতি সেবক হয়ে বসে আছেন। নিরাপদ দূরত্বে থেকে দেশের পরামর্শকের ভূমিকায়। বাহান্ন থেকে দুই হাজার একুশ, বাংলা যে সর্বস্তরের হলো না। শিক্ষায় ক্রমশ উপেক্ষিত হতে থাকলো, আমাদের কণ্ঠে মাতৃভাষা কেবলই বিকৃত হয়েছে, যাপনের ভাষা হয়ে উঠলো না, আমরা ভাষাকে ধর্ম করে তুলতে পারলাম না এজন্য দায়ী আমাদের তথাকথিত বুদ্ধিবৃত্তিক ও সংস্কৃতি কর্মী শ্রেণির আত্ম-প্রতারণা।

আমাদের ভাষার যে আঞ্চলিক বৈচিত্র্য ও সৌন্দর্য,তাকে আমরা স্বস্তা বিনোদনে রূপ নিয়েছি। আদিবাসী বা ক্ষুদ্র নৃতাত্ত্বিক জাতিগোষ্ঠী,যাই বলি না কেন, তাদের ভাষা রক্ষার কোনও দায় নেইনি আমরা। এমনকি আঞ্চলিক ভাষা সংরক্ষণেও আমাদের তাগিদ নেই। আমরা রমনা বটমূলে যাচ্ছি, প্রভাত সংগীত গাইছি, নগ্ন পায়ে দাঁড়াচ্ছি প্রভাত ফেরীর মিছিলে,করোটিতে ঔপনিবেশিক দাসত্ব নিয়ে।

প্রমিত বাংলাকে যখন থেকে আমরা বিজ্ঞাপিত করতে শুরু করি, তখন থেকেই বাংলা বা মায়ের ভাষা নিয়ে শ্রেণি বিভাজন আমরা তৈরি করা শুরু করি। সমাজের বিশেষ একটি শ্রেণির ভাষাকে ভদ্র মানুষের ভাষা বলে স্বীকৃতি দিয়ে, জীবিকা ও যাপনের অন্যান্য ভাষা, উচ্চারণকে আমরা হেয় করতে শুরু করে দেই। এখনও দিচ্ছি। কিন্তু বাস্তবতা হলো নিম্ন বর্গের শ্রেণির কাছেই মায়ের ভাষা ষোলআনা নিখাদ ভালোবাসা, শ্রদ্ধা পেয়েছে এবং তাঁরা ভাষাটি বাঁচিয়ে রেখেছে। উচ্চ ও মধ্যবিত্তের অন্দরে এখনও বিদেশি ভাষা ব্যবহৃত হয় ভাব বিনিময়ে।

বাংলা ভাষা বিপন্ন।শিল্প,সাংস্কৃতিক ও পণ্যের উপনিবেশিকতায় বাংলা টেকসই হবে কিনা, এ নিয়ে সংশয় তৈরি করা হয়েছে। এ সংশয় তৈরিও করেছে, যারা সমাজে, রাষ্ট্রে শ্রেণি বিভাজন ও বিভক্তি তৈরি করেছে। আসলে তাঁদের মনোবলে চিড় ধরেছে অনেক আগেই। দ্বিধায় জড়োসড়ো তারা শুরু থেকেই কিন্তু ভাষা রক্ষার যে মূল প্রাণ, শরীর তারা কিন্তু মোটেও বিচলিত নয়। বিচলিত হবেই বা কেন, মায়ের ভাষাকে তাদের চেয়ে অধিক আলিঙ্গন কে করেছে আর?

আমরা পূর্বাচল নতুন শহরে একটি শহীদ মিনার নির্মাণ করতে গিয়ে আরেক বার জানলাম। ভাষা কেন্দ্রীক ভালোবাসার যে মিনার, সেই মিনারের কারিগর তাঁরাই। আমরা তথাকথিত সুশীলরা নয়। আমরা ভাষা প্রেম বেচি। আর ভাষা তাঁদের বিক্রয় অযোগ্য প্রেম।

লেখক: গণমাধ্যম কর্মী

/এসএএস/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
ডিইউজে নির্বাচনে সভাপতি পদের মীমাংসা মামলার শুনানি ২৫ এপ্রিল
ডিইউজে নির্বাচনে সভাপতি পদের মীমাংসা মামলার শুনানি ২৫ এপ্রিল
জুড়ী উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে মারধরের অভিযোগ
জুড়ী উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে মারধরের অভিযোগ
দক্ষিণখানে ভবনের চার তলা থেকে পড়ে নির্মাণ শ্রমিকের মৃত্যু
দক্ষিণখানে ভবনের চার তলা থেকে পড়ে নির্মাণ শ্রমিকের মৃত্যু
ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনাল গ্র্যাজুয়েট হলেন ১৯ জ্যেষ্ঠ রাজনীতিক
ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনাল গ্র্যাজুয়েট হলেন ১৯ জ্যেষ্ঠ রাজনীতিক
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ