X
মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪
১০ বৈশাখ ১৪৩১

বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী

রাহমান নাসির উদ্দিন
২৮ মার্চ ২০২১, ১২:০১আপডেট : ২৮ মার্চ ২০২১, ২২:১৯

রাহমান নাসির উদ্দিন বাংলাদেশে উদযাপিত হচ্ছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর জন্মের একশ’ বছর আর বাংলাদেশের স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর। বঙ্গবন্ধুর জন্মের শতবার্ষিকী আর বাংলাদেশের জন্মের সুবর্ণজয়ন্তী। কোথায় জানি একটা রিদম আছে। হয়তো তাই বলা হয় বঙ্গবন্ধু আর বাংলাদেশ এক ও অবিচ্ছিন্ন। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী-কেন্দ্রিক যা কিছু আলোচনা, ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণ, প্রায় সবকিছুতেই বঙ্গবন্ধু প্রবলভাবে উপস্থিত এবং সঙ্গত কারণেই প্রাসঙ্গিক। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্ব, জীবন, দর্শন, নীতি, রাজনীতি এবং রাষ্ট্রনীতি প্রভৃতির সঙ্গে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর একটা সম্পর্ক টানা হয়। কেননা, বঙ্গবন্ধু ছাড়া বাংলাদেশ হতো না আর বাংলাদেশ না হলে তার স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীও হতো না। অতএব, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর আলোচনা প্রকারান্তরে বঙ্গবন্ধু এবং বাংলাদেশের আলোচনা। আমি এ নিবন্ধে মূলত এ মেলবন্ধনটি বোঝার চেষ্টা করেছি।

১৯৭১ আর ২০২১। পঞ্চাশ বছরের ব্যবধান। ১৯৭১ সালের বাংলাদেশ আর ২০২১ সালের বাংলাদেশ। এ দুই বাংলাদেশের একটি তুলনামূলক চিত্রই বলে দিতে পারে বিগত পঞ্চাশ বছরে বাংলাদেশ কোথায় এসে দাঁড়িয়েছে। এক অর্থে পঞ্চাশ বছর যথেষ্ট সময় বিশ্লেষণ করার জন্য যে, ১৯৭১ সালে স্বাধীন হওয়া বাংলাদেশ ২০২১ সালে যেখানে যাওয়ার কথা সেখানে কি ঠিকঠাক মতো পৌঁছাতে পেরেছে? নাকি যেখানে যাওয়ার কথা তার লক্ষ্য-সীমা ছাড়িয়ে গেছে? নাকি যেখানে পৌঁছানের কথা সেখানে এখনও পৌঁছাতে পারেনি! এসব বিচার-বিশ্লেষণ করার জন্য পঞ্চাশ বছর মোটামুটি একটা মান (স্ট্যান্ডার্ড) সময়কাল ধরে নেওয়া যায়। আমি এ নিবন্ধে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে বাংলাদেশের অর্জন এবং এ অর্জনের পেছনে বঙ্গবন্ধুর অবদান, বিশেষ করে বঙ্গবন্ধুর দূরদৃষ্টিসম্পন্ন নীতি, রাজনীতি এবং সোনার বাংলার স্বপ্ন, কতটুকু তা উপস্থাপন ও বিচার-বিশ্লেষণ করার চেষ্টা করবো।

শুরুতেই বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে বাংলাদেশ একটি রাষ্ট্র হিসাবে কোথায় দাঁড়িয়েছে, সে সম্পর্কে অন্যান্য রাষ্ট্র-প্রধান ও সরকার প্রধানদের বক্তব্য শুনি। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী অনুষ্ঠানের অংশ হিসাবে ইতোমধ্যে পাঁচ সরকার/রাষ্ট্র প্রধান বাংলাদেশ ভ্রমণ করেছেন এবং বাংলাদেশের প্রভূত উন্নয়ন নিয়ে ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। মালদ্বীপের রাষ্ট্রপতি ইব্রাহীম মোহাম্মদ সলিহ বলেছে, “বঙ্গবন্ধু আজীবন রাজনৈতিক স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের পক্ষে আপসহীন ছিলেন। ৭ই মার্চ ঐতিহাসিক ভাষণের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু কার্যত বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেছিলেন। তাঁর সেই ভাষণ ইউনেসকোর বৈশ্বিক ঐতিহ্য হিসেবে স্থান পেয়েছে। যারা স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের স্বপ্ন দেখে তাদের সবার হৃদয়ে সব সময় সম্মানের আসনে থাকবেন বঙ্গবন্ধু।” ভুটানে প্রধানমন্ত্রী লোটে শেরিং বলেছেন, “বিশ্বকে বলার মতো গল্প দিয়ে গেছেন বঙ্গবন্ধু’’। শ্রীলংকার প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকসে বলেছেন, “বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে অনুসরণ করেই বাংলাদেশকে সমৃদ্ধ করেছেন।” নেপালের প্রেসিডেন্ট বিদ্যা দেবি ভান্ডারি বলেছেন, “বঙ্গবন্ধুর ধারাবাহিক সংগ্রামের ফলেই বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে। স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর পর আপনার [শেখ হাসিনা] নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে”। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেছেন, “বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাংলাদেশকে আজকে এখানে নিয়ে এসেছে”। এছাড়াও শুভেচ্ছা বক্তব্য দিয়ে বাণী দিয়েছেন অনেকে। যেমন, পোপ ফ্রান্সিস বলেছেন, “বাংলাদেশের বহুত্ববাদি সমাজ বঙ্গবন্ধুর প্রজ্ঞার ফসল”। এছাড়াও ১৭ মার্চের বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনের অনুষ্ঠানে সশরীরে উপস্থিত হতে না পারলেও ভিডিও রেকর্ডিংয়ের মাধ্যমে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো, জাপানের প্রধানমন্ত্রী ইউশিহিদে সুগাও, এবং চীনের প্রেসিডেন্ট শি চিনপিং। কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন  ট্রুডো বলেছেন, “আমি যখন প্রথমবার বাবার সঙ্গে বাংলাদেশ সফর করি সে সময়ের বাংলাদেশ আর আজকের বাংলাদেশের মধ্যে অনেক পার্থক্য রয়েছে। গত ৫০ বছরে এ দেশ ব্যাপক উন্নতি করেছে। অর্থনৈতিক উন্নতি, দারিদ্র্য বিমোচন, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে উন্নতির মতো বিষয়গুলো এ দেশের মানুষের সামনে নতুন নতুন সম্ভাবনা এনে দিয়েছে। বর্তমানে বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে।” জাপানের প্রধানমন্ত্রী ইউশিহিদে সুগাও বলেছেন, “স্বাধীনতার পর থেকেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ‘সোনার বাংলা’ গড়ে তুলতে বাংলাদেশের পাশে আছে জাপান। বাংলাদেশ-জাপানের মধ্যে ভাই-ভাই সম্পর্ক আছে।” চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিন পিং, “জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান চীনের জনগণের পুরনো ও ভালো বন্ধু ছিলেন। ১৯৫২ ও ১৯৫৭ সালে দুবার চীন সফরে তিনি চেয়ারম্যান মাও জেদং ও প্রিমিয়ার চৌ এনলাইর এবং পুরনো প্রজন্মের অন্য চীনা নেতাদের সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়ে তুলেছিলেন।... চীনে একটি কথা আছে, ‘যারা কূপ খনন করেছে, পানি পানের সময় তাদের কথা ভুলে যেয়ো না।’ আমাদের পুরনো প্রজন্মের নেতারা চীন-বাংলাদেশ সম্পর্কের প্রসারে যা করেছেন, তা আমরা অবশ্যই মনে রাখব এবং চীন-বাংলাদেশ সম্পর্কের সেই ‘ব্যাটন’(লাঠি) পরবর্তী প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দেব।” মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, “অগ্রগতি, উচ্চাশা এবং সুযোগের দেশ বাংলাদেশ”। ইংল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন বলেছেন, “৫০ বছরে বাংলাদেশের অর্জন অবাক করার মতো”। এছাড়াও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে শুভেচ্ছাবার্তা পাঠিয়েছেন যুক্তরাজ্যের রানী এলিজাবেথ, কম্বোডিয়ার প্রেসিডেন্ট নরাদম সিহামনি, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মেকরন, দক্ষিণ কোরিয়ার প্রধানমন্ত্রী চুং সেয় কিউন, ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রেসিডেন্ট, ইউনেস্কোর মহাপরিচালক অড্রে আজুলে, জার্মানির প্রেসিডেন্ট ফ্রাঙ্ক-ভাল্টার স্টেইনমের, ইতালির প্রেসিডেন্ট সার্জিও মেটারেলা, সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রেসিডেন্ট খালিফা বিন জাইয়িদ আল নাহিয়ান, স্পেনের রাজা ষষ্ঠ ফেলিপে, ওআইসির মহাসচিব ড. ইউসেফ আল ওথাইমীন, ভারতীয় কংগ্রেসের সভাপতি সোনিয়া গান্ধিসহ আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। এছাড়াও ভিয়েতনাম, ফিলিপাইন, কিউবা, মিশর, জর্জিয়া, ইথিওপিয়া, পোল্যান্ড, এস্থোনিয়া, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড, সুইস ফেডারেশন, চেক রিপাবলিক, ফিলিস্তিন, তুরস্ক, ইউক্রেন, মঙ্গোলিয়া, অস্ট্রিয়া, এবং জাম্বিয়ার মহামান্য রাষ্ট্রপতিরাও শুভেচ্ছা পাঠিয়েছেন। পাশাপাশি, জাপানের, সম্রাট, মরোক্কো, সুইডেন, বেলজিয়াম, স্পেন ও মালয়েশিয়ায় রাজা, ব্রুনাইয়ের মহামহিম সুলতান, কাতারের আমির প্রমুখও লিখিত অভিনন্দন পাঠিয়েছেন।  স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে বিভিন্ন দেশের সম্রাট, রাজা, সরকার প্রধান, রাষ্ট্রপ্রধান ও বিভিন্ন রাজনৈতিক ব্যক্তিদের শুভেচ্ছা বক্তব্য বিশ্লেষণ করলে প্রায় সকলেই তিনটি বিষয় উল্লেখ করছেন–

(১) বিগত পঞ্চাশ বছরে বাংলাদেশ সবক্ষেত্রে প্রভূত উন্নতি করেছে এবং অর্থনৈতিকভাবে বাংলাদেশ একটা উল্লেখযোগ্য অবস্থানে পৌঁছে গেছে;

(২) বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্ব, জীবন, দর্শন, চিন্তা, স্বপ্ন এবং শুভযাত্রাই বাংলাদেশের আজকের সাফল্যের পেছনে মূল প্রেরণা, প্রণোদনা এবং স্পৃহা হিসাবে কাজ করেছে; এবং

(৩) বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনা পিতার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করছেন এবং বঙ্গবন্ধুর আদর্শে বাংলাদেশকে পরিচালিত করছেন বলেই সর্বক্ষেত্রে বাংলাদেশ উন্নতি করছে। বিশ্লেষণের খাতিরে এখন প্রশ্ন হচ্ছে, এ কথাগুলো কী বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর প্রাক্কালে কেবলই কূটনৈতিক শিষ্টাচার মেনে দেওয়া স্রেফ বাণী’, যা শুধুই সৌজন্যতার বহিঃপ্রকাশ, নাকি এর পেছন রয়েছে দৃশ্যমান বাস্তবতা! এখানে এসেই আমরা ১৯৭১ এবং ২০২১-এর একটি তুলনমূলক চিত্র উপস্থাপন করতে পারি যা প্রকারান্তরে পৃথিবীর বিভিন্ন রাষ্ট্রপ্রধান ও সরকার প্রধানের শুভেচ্ছাবাণীর সত্যতার সাক্ষ্য বহন করে। হ্যানরি কিসিঞ্জার বাংলাদেশকে ঠাট্টা করে ১৯৭১ সালে বলেছিলেন, “তলাবিহীন ঝুড়ি”। কিন্তু সেই “তলাবিহীন ঝুড়ি” এখন ৪৪ বিলিয়ন ডলারের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে ভরপুর। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ যাত্রা শুরু করেছিল ৭৮৬ কোটি টাকার বাজেট দিয়ে যা আজকে পরিণত হয়েছে ৫ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকার বাজেটে। বাংলাদেশ আজ দক্ষিণ এশিয়ার ‘ইকোনমিক পাওয়ার’, এশিয়ার ‘এমার্জিং ইকোনোমিক টাইগার’, এবং বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য অর্থনৈতিক ‘উন্নয়নের রোল মডেল’। ১৯৭১-৭২ সালে বাংলাদেশের মানুষের মাথাপিছু আয় ছিল একশ’ ডলারের কম কিন্তু আজ বাংলাদেশের মানুষের মাথাপিছু আয় ২ হাজার ডলারের উপরে। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের জিডিপি ছিল ৯ বিলিয়ন ডলারের কম আর আজকে বাংলাদেশের জিডিপির সাইজ হয়ে দাঁড়িয়েছে ৩০০ বিলিয়ন ডলারের উপরে। ১৯৭১-৭২ সালে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষমতা ছিল ৫০০ মেগাওয়াট আর আজ বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উৎপাদন করে প্রায় সাড়ে ২৪ হাজার মেগাওয়াট। এরকম সবক্ষেত্রে বাংলাদেশ বিগত পঞ্চাশ বছরে ঈর্ষণীয় সাফল্য অর্জন করেছে। বিশেষ করে, দারিদ্র বিমোচন, প্রাকৃতি দুর্যোগ মোকাবিলা, জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ, শিশু-মাতৃ মৃত্যুর হার হ্রাস, নারীর ক্ষমতায়ন, শিক্ষার ব্যাপক প্রসার, নারী শিক্ষার প্রসার, লিঙ্গবৈষম্য দূরীকরণ, সাধারণ মানুষের গড় আয়ু বৃদ্ধি, গ্রামীণ উন্নয়ন প্রভৃতি সামাজিক ও অর্থনৈতিক সূচকে বাংলাদেশ অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জন করেছে, যা অনেক উন্নয়নশীল দেশের পাশাপাশি অনেক উন্নত দেশের সমপর্যায়ে বাংলাদেশকে নিয়ে গেছে। এছাড়া ভৌত-অবকাঠামো নির্মাণ, জনসম্পদ রফতানি, তৈরি পোশাক শিল্প, খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন, ক্ষুদ্র-মাঝারি কুটির শিল্পের বিকাশ, রফতানিযোগ্য ফার্মাসিউটিক্যাল প্রডাক্ট, রফতানি-আমদানি বৈষম্য দূরীকরণ, বৈদেশিক সাহায্যের ওপর নির্ভরতা হ্রাস, দেশীয় উৎপাদনে প্রভূত প্রবৃদ্ধি, প্রযুক্তিখাতে বিপুল উন্নয়ন, কৃষিখাতে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন, জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী বাহিনীতে সুনামের সঙ্গে সক্রিয় অংশগ্রহণ এবং মানবসম্পদ উন্নয়নে বাংলাদেশ বিগত পঞ্চাশ বছরে ঈর্ষণীয় সাফল্য অর্জন করেছে।

এখানে প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, পঞ্চাশ বছরের মধ্যে এরশাদ ও জিয়ার সামরিক শাসন খেয়েছে ১৫ বছর (১৯৭৫-১৯৯০), বিএনপি-জামায়াত খেয়েছে ১০ বছর (১৯৯১-১৯৯৫ ও ২০০১-২০০৬) আর ফখরুদ্দিন-মঈনুদ্দিন খেয়েছে ২ বছর (২০০৭-২০০৮)। অতএব, বাংলাদেশের ৫০ বছরের ২৭ বছর একেবারেই কুসুমাস্তীর্ণ ছিল না। তাই, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে এ কণ্টকাকীর্ণ সময়ের কথাও মনে রাখা জরুরি। তথাপি, বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে এর সাফল্য ও সমৃদ্ধি দেখে এ পৃথিবী ‘অবাক তাকিয়ে রয়’। সুতরাং পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানরা যখন বাংলাদেশের উন্নয়ন ও সাফল্যের ভূয়সী প্রশংসা করেন, তখন সেটা বিগত পঞ্চাশ বছরের অভূতপূর্ব অর্জনের ওপর ভিত্তি করেই করেন। এবং সেটা সম্ভব হয়েছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন, দর্শন, এবং সুদূরপ্রসারী নেতৃত্বগুণের কারণে, যার ধারাবাহিকতা তাঁর কন্যা রক্ষা করছেন। তাই, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী আর বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী একসূত্রে গাঁথা। বঙ্গবন্ধুকে বাদ দিয়ে যেমন বাংলাদেশ হতো না, তেমনই বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলার স্বপ্ন ছাড়াও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর এ সমৃদ্ধ বাংলাদেশ হতো না। আজকে মহান স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীতে জাতির পিতার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা এবং অকৃত্রিম কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি। কেননা, বঙ্গবন্ধু জন্মেছিলেন বলেই আমরা একটি স্বাধীন বাংলাদেশ পেয়েছি আর বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্ন ছিল বলেই আমরা আজ একটি সমৃদ্ধ বাংলাদেশ পেয়েছি। অন্নদা শংকর রায়ের সেই বহুল পঠিত, এবং বহু-উদ্ধৃত কবিতাংশের সাথে বারবার কণ্ঠ মিলিয়ে এ মহান স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে বলতে চাই:

যতকাল রবে পদ্ম যমুনা গৌরি মেঘনা বহমান

ততকাল রবে কীর্তি তোমার শেখ মুজিবুর রহমান

লেখক: নৃবিজ্ঞানী ও অধ্যাপক, নৃবিজ্ঞান বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।

/এসএএস/এমওএফ/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতিতে ‘বড় পরিবর্তন’ দেখছে না যুক্তরাষ্ট্র
বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতিতে ‘বড় পরিবর্তন’ দেখছে না যুক্তরাষ্ট্র
পদে থেকেই ইউপি চেয়ারম্যানরা উপজেলা নির্বাচন করতে পারবেন
পদে থেকেই ইউপি চেয়ারম্যানরা উপজেলা নির্বাচন করতে পারবেন
জীবনানন্দ পুরস্কার পেলেন জাহিদ হায়দার ও মোস্তফা তারিকুল আহসান
জীবনানন্দ পুরস্কার পেলেন জাহিদ হায়দার ও মোস্তফা তারিকুল আহসান
শাকিবের সঙ্গে ব্যক্তিগত সম্পর্কের জায়গা অন্যরকম: চঞ্চল
শাকিবের সঙ্গে ব্যক্তিগত সম্পর্কের জায়গা অন্যরকম: চঞ্চল
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ