X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

লকডাউনের বাংলাদেশ ‘ভার্সন’

সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা
০৭ এপ্রিল ২০২১, ১৫:৪০আপডেট : ০৭ এপ্রিল ২০২১, ১৫:৪০

সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা গত বছর করোনাভাইরাসের মহামারি দেখা দিলে সারা পৃথিবী ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে লকডাউনে গেলেও আমরা লকডাউনের বদলে সাধারণ ছুটি নামের এক তত্ত্ব আবিষ্কার করেছিলাম। এবার আমরা আবিষ্কার করেছি সাত দিনের লকডাউন, কিন্তু সেটাও করেছি অফিস, আদালত, কলকারখানা, ব্যাংক, বিমা সবকিছু খোলা রেখে। খোলা আছে বই মেলা, চলছে বাংলাদেশ গেমস। মাত্র দুইদিন বন্ধ ছিল শহরের গণপরিবহন, মঙ্গলবার সেটিও চালুর ঘোষণা এসেছে এবং ধারণা করা হচ্ছে ব্যবসায়ীরা যেভাবে পথে নেমেছেন, তাতে করে দোকানপাট ও  বিপণি বিতানও খুলে যাবে।
   
গত কয়েক দিন করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বিগত সময়গুলোর রেকর্ড ছাড়িয়ে যাচ্ছে, বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যাও। সংক্রমণের বিস্তার রুখতে বিশেষজ্ঞরা কারফিউর মতো দুই থেকে তিন সপ্তাহের লকডাউন চাইলেও সরকার সাত দিনের এক ঢিলেঢালা লকডাউন ঘোষণা করেছে। তাও সেই গত বছরের মতোই দুই দিন আগে ঘোষণা দিয়ে মানুষকে সুযোগ দেওয়া হয়েছে ট্রেন স্টেশন, বাস ও লঞ্চ টার্মিনালে বিশাল জমায়েত করে ঢাকার বাইরে যাওয়ার জন্য।

এমন লকডাউনের নজির বিশ্বের কোথাও নেই। জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন টেলিভিশন টকশোতে এসে বলেছেন, ইউরোপ বা আমেরিকার সঙ্গে বাংলাদেশের ‘লকডাউন’ মিলবে না। এর অর্থ হলো এবার আমরা ‘লকডাউনের বাংলাদেশ ভার্সন’ আবিষ্কার করতে সক্ষম হয়েছি।

বিশেষজ্ঞরা বলেন, লকডাউন অমান্য মানে জীবন নিয়ে খেলা। এই ভাইরাসের সংক্রামিত হওয়ার প্রবল ক্ষমতা। এই ভাইরাস যত সহজে বা যত দ্রুত সংক্রমিত হতে পারে, অন্য অনেক ভাইরাসই তা পারে না। আমাদের নিশ্বাসের সঙ্গে এটা ভেতরে যায় এবং খুব সহজে ফুসফুসে ঢুকে যায়। এই ভাইরাসের এমন একটা ক্ষমতা রয়েছে, যার কারণে দ্রুত ফুসফুস কার্যক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। সহজে সংক্রমিত হওয়ার এই ক্ষমতা এবং দ্রুত সংখ্যা বৃদ্ধি করতে পারা— এটাই সবচেয়ে মারাত্মক।  

আগেরবারের চাইতে এবার সংক্রমণের হার বেশি, মৃত্যুও বেশি। তবু লকডাউন মানতে চায় না মানুষ। ঢাকায় দোকান ব্যবসায়ী ও কর্মচারীরা বিক্ষোভ করছেন। ফরিদপুরের সালথায় লোকজন লকডাউনের বিরোধিতা করে থানা ও উপজেলা কমপ্লেক্স ঘেরাও করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও এসি ল্যান্ডের গাড়িতে আগুন দিয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে লোকজনের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কয়েক দফা সংঘর্ষের ঘটনায় একজন মারাও গেছে।

কিছু খোলা কিছু বন্ধ করে লকডাউন দেওয়ায় মানুষের ভেতর ক্ষোভ বাড়ছে। আবার গত ২৯ মার্চ সরকার যে ১৮ দফা বিধিনিষেধ ঘোষণা করলো তা ভাঙলো সরকার নিজেই। অফিস আদালত খোলা রেখে গণপরিবহন বন্ধ করায় মানুষ যা পাচ্ছিল তাতে গাদাগাদি করে অফিস যাওয়া আসা করেছে। সরকার বলছে লকডাউন, কিন্তু সব শহরেই লোকজনকে দলবেঁধে বের হতে হচ্ছে অফিস আদালতে যেতে। এই নির্বুদ্ধিতা মারাত্মক, কারণ, মূল বিষয়টাই লঙ্ঘিত হচ্ছে। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পরিণতি ভয়ংকর থেকে ভয়ংকর হবে। তারা বলছেন, এটা আত্মহত্যারই নামান্তর।

অবশ্য বিশেষজ্ঞদের কথা গুরুত্ব পেয়েছে কবে সেটা এক বড় প্রশ্ন। গত বছরের ২৬ মার্চ থেকে শুরু হওয়া সেই সাধারণ ছুটি ৬৬ দিন পর্যন্ত স্থায়ী হয়েছিল। এক বছর পর সংক্রমণ পরিস্থিতি মোকাবিলায় আবারও একই ধরনের সিদ্ধান্ত নিতে হলো সরকারকে, এবং সেটা আরও ঢিলেঢালাভাবে।  অথচ সরকার নিজেই বলছে, প্রথম ঢেউয়ের চেয়ে এবার সংক্রমণ বেশি তীব্র। দেশে করোনা সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউয়ের পরিস্থিতি খারাপের দিকে যাচ্ছে।

প্রথম ধাক্কার পর সরকারের যা করে ফেলার কথা ছিল, তা এখনও 'করা হবে' পর্যায়েই আছে। করোনা সংক্রমণের উচ্চ ঝুঁকিতে থাকা ৩১ জেলার মধ্যে ১৫টিতেই আইসিইউ নেই। অথচ ১০ মাস আগেই সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে প্রতিটি জেলা সদর হাসপাতালে আইসিইউ ইউনিট স্থাপনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। জেলা পর্যায়ে আইসিইউ ইউনিট তৈরি না হওয়া স্বাস্থ্য বিভাগের বড় গাফিলতি। কিন্তু দায় নেবে কে? গত বছর সারা দেশে ৭৯টি হাসপাতালে সেন্ট্রাল অক্সিজেন প্ল্যান্ট  বসানোর পরিকল্পনা নেয় সরকার। কিন্তু এখন পর্যন্ত মোট ৩৮টিতে অক্সিজেন সরবরাহ শুরু হয়েছে। সরকার, সাধারণ মানুষকে স্বাস্থ্যবিধি মানার যখন তাগিদ দেয় তখন প্রশ্ন আসে সরকারের যা করার কথা ছিল, তা কি সে করেছে?

করোনাভাইরাস প্রতিরোধের একমাত্র পথ জনসংযোগ বিচ্ছিন্ন করা। কিন্তু লকডাউনের বাংলাদেশ ভার্সন জনসমাগম বাড়ানোর কাজ করছে। লকডাউন করলে সংক্রমণটা আয়ত্তের মধ্যে থাকবে। কিন্তু সেটা প্রকৃত লকডাউন হতে হবে এবং প্রকৃত অর্থে কার্যকরও করতে হবে। প্রশাসনিক স্তরের সিদ্ধান্তে নানা ক্ষেত্র ছাড় পেয়েছে লকডাউনের থেকে। কোন বিবেচনায় এটা করা হয়েছে সেটার কোনও ব্যাখ্যা নেই। তবে এটা বুঝতে কষ্ট হয় না যে, লকডাউনে বিজ্ঞানের দিকটি কম গুরুত্ব পেয়েছে। এই কিছু খোলা, কিছু বন্ধের লকডাউনে সংক্রমণটা বাড়তে পারে বিপজ্জনকভাবে। মনে রাখা প্রয়োজন, করোনাভাইরাস কাউকেই ছাড়ছে না,  প্রতিটি মানুষ এক, তাই লকডাউনের সিদ্ধান্তটাও তেমনভাবেই নেওয়া উচিত ছিল।

লেখক: সাংবাদিক

 

/এসএএস/এমওএফ/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
থাই প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে শেখ হাসিনাকে উষ্ণ অভ্যর্থনা
থাই প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে শেখ হাসিনাকে উষ্ণ অভ্যর্থনা
পশ্চিমাদের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে চীনকে যা করতে হবে
পশ্চিমাদের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে চীনকে যা করতে হবে
আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ জয়ী মিডফিল্ডারকে নিয়ে দুঃসংবাদ
আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ জয়ী মিডফিল্ডারকে নিয়ে দুঃসংবাদ
টেবিলে রাখা ‘সুইসাইড নোট’, ফ্ল্যাট থেকে দম্পতির মরদেহ উদ্ধার
টেবিলে রাখা ‘সুইসাইড নোট’, ফ্ল্যাট থেকে দম্পতির মরদেহ উদ্ধার
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ