X
শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪
৬ বৈশাখ ১৪৩১

গণতন্ত্রে বিতর্ক স্বাগত, সাংবাদিকতা নিয়েও বিতর্ক চলুক

সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা
১২ মে ২০২১, ১৭:২৫আপডেট : ১২ মে ২০২১, ১৭:২৫
সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা দেখতে দেখতে অনলাইন পোর্টাল বাংলা ট্রিবিউন ১৩ মে সাত বছর পার করে ফেলবে। আমার প্রিয় সাইট, দিনে অসংখ্যবার ঢুঁ মারি – এ কারণে নয় যে আমি এখানে কলাম লিখি, এ কারণে নয় যে দেশবরেণ্য গীতিকার ও সাংবাদিক জুলফিকার রাসেল এর সম্পাদক, এ জন্য নয় যে প্রিয় উদিসা, জাকিয়া বা শেরিফ এখানে কাজ করে সে জন্য এবং এ কারণেও নয় যে কাজী শাহেদ ভাই ও আমিনা ভাবির ছেলে কাজী আনিস এর উদ্যোক্তা। এ কারণে যে, আমি এই সাইটে খবর পাই। ব্রেকিং খবর যেমন পাই, পাই বিশেষ রিপোর্ট এবং কোনও কোনও বিষয়ের বিস্তারিত প্রতিবেদন এবং বিভিন্ন বিষয়ের বিশ্লেষণ।

বাংলা ট্রিবিউন এমন একসময় পথ চলছে যখন সংবাদমাধ্যম ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম থেকে অনেক বড় চ্যালেঞ্জের মুখে। যখন সমাজে মননশীল মানুষের চেয়ে ট্রল করা মানুষের প্লাবন বেশি। রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ বিচ্ছিন্ন কোনও জায়গায় বাস করে না যে, তার গায়ে বাকি তিন ক্ষয়িষ্ণু স্তম্ভের আঘাত এসে লাগবে না। গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান শক্তিশালী না হলে, গণতন্ত্র ঠিকমত কাজ না করলে সাংবাদিকতা পরিণত হয় একরৈখিক প্রচারণায়। সেই পরিস্থিতিতে গণমাধ্যম ও এর কর্মীদের লড়াইটা হয় নিজের সঙ্গে, সমাজের সঙ্গে, রাজনীতির সঙ্গে এবং অবশ্যই করপোরেট নামক এক বিরাট দৈত্যের সঙ্গে।

অনলাইন সংবাদপত্র হিসেবে একটি ধারাকেই বেছে নিয়েছে বাংলা ট্রিবিউন – বাঙালির মুক্তিযুদ্ধ এবং সেই চেতনায় উদার-অসাম্প্রদায়িক মানবিক মর্যাদা নিশ্চিত করার জন্য গণতান্ত্রিক শাসন প্রণালির বাংলাদেশ। সমাজে অপ্রীতিকর সংঘাত আছে, দ্বন্দ্ব আছে। কিন্তু সবক্ষেত্রেই এই পোর্টালটির প্রচেষ্টা অসমতা যেন কোথাও অযাচিতভাবে না হয়।

কাজটা কঠিন। শুধু সংবাদের নিরপেক্ষতা বজায় রাখা নয়, নানা স্তরের সংবাদ পরিবেশন করার চেয়েও বড় কাজ বিভিন্ন ঘটনা ও বিষয়ের আগাম তথ্য দেওয়া। নিয়মিত পড়ে, লিখে আমার কাছে মনে হয়েছে বাংলা ট্রিবিউন চায় সাধারণ মানুষের কাছাকাছি যেতে, সাধারণের মাধ্যম হয়ে উঠতে। সত্যনিষ্ঠ দৃষ্টিকোণ থেকে অকুতোভয় সাংবাদিকতার নজির স্থাপন করতে চাইবে বাংলা ট্রিবিউন, এটাই স্বাভাবিক। চাইবে প্রতি মুহূর্তে পাঠকের সামনে সৃজনশীলতার ছাপ রেখে যেতে।

কিন্তু আগামী বছরগুলোতে কী করবে পোর্টালটি? সম্প্রতি বেশ কিছু ঘটনায় মানুষ সামাজিক মাধ্যমে এক হাত নিয়েছে সাংবাদিকদের। এটি একদিক থেকে ইতিবাচক যে, মানুষ সাংবাদিকদের কাছে প্রত্যাশা রাখে। আরেক দিক থেকে বেদনাদায়ক যে, মানুষ যা চায় সেটি সাংবাদিকরা দিতে পারছে না। একটা কথা বলে রাখা ভালো, সমাজে যেমন ভালো পুলিশ এবং খারাপ পুলিশ আছে, আছে চিকিৎসক, শিক্ষকদের মধ্যে ভালো-খারাপ, সাংবাদিকদের মধ্যেও ভালো ও মন্দ, সাদা এবং কালো, বা দক্ষ ও অদক্ষ থাকতে পারে এবং থাকটাই স্বাভাবিক। এটা অস্বাভাবিক হিসেবে ভাবলেই সমস্যা। আমরা কথায় কথায় বলি প্রশাসন ভেঙে পড়েছে, বলি রাজনৈতিক সংস্কৃতি ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে, বলি সাংস্কৃতিক অবক্ষয়ের কথা, বলি শিক্ষা ব্যবস্থা বলে আর কিছু অবশিষ্ট নেই। তাহলে এত অবক্ষয়ের মধ্যে সাংবাদিকতা কি দূরে থাকতে পারে? তবু ভালো সাংবাদিকের নিরন্তর চেষ্টা মানুষকে নির্মোহভাবে সত্য তথ্যের সেবা দিয়ে যাওয়া।

অতীতের অনেক কিছু ভালো ছিল। কিন্তু এ কথাও তো সত্য যে, অতীতে অনেক কিছু খারাপও ছিল। সব ব্যবস্থাতেই যদি ঘুণ ধরে, তবে সংবাদমাধ্যম ব্যবস্থায় ঘুণ ধরবে না কেন? দেখতে হবে কে কতটা লড়াই করে এই ঘুণে ধরা সমাজে সাংবাদিকতাকে বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা করছে।

বাজার অর্থনীতি যেমন মানুষকে পণ্যে পরিণত করেছে, তেমনি পাঠক বা দর্শক শ্রোতাকেও পরিণত করেছে গ্রাহকে। নিউজ এখন পণ্য অনেক ক্ষেত্রেই। সামাজিক ও মনস্তাত্ত্বিক দিক থেকে বদলে গেছে সংবাদমাধ্যম। প্রিন্ট, ইলেকট্রনিক সব মাধ্যমেই। গণমাধ্যমে বড় পুঁজির প্রবেশের কারণে পাঠক-দর্শক-শ্রোতার সঙ্গে বাজারের একটা জটিল সম্পর্ক সৃষ্টি হয়েছে। একটা সময় যারা সংবাদপত্র বের করতেন তারা সরাসরি রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। কেউ কেউ ছিলেন সমাজ হিতৈষী। তারা কেউ বাণিজ্যিক হওয়ার কথা ভাবেননি।

এখন সেই অবস্থা নেই। এখন সংবাদমাধ্যমকে মুনাফা করতে হয়, কর্মীদের স্বচ্ছন্দে রাখার মতো বেতন দিতে হয়, প্রযুক্তিতে খরচ করতে হয় এবং এসব কারণে সম্পাদকীয় প্রতিষ্ঠানে হয়তো কোনও কোনও পরিপ্রেক্ষিতে আপসও করতে হয়। সততার পরাকাষ্ঠা হয়ে নিষ্ফল মাথা কুটে মরে বিলুপ্ত হতে চায় না কেউ। এবং সেই জায়গা থেকেই লড়াই আর কৌশলে মানুষের তথ্য চাহিদা পূরণ করতে হয়।

এতসব সত্যের মাঝেও বলতে হয়, সাংবাদিকদের হাত ধুয়ে ফেলার সুযোগ নেই। পাঠক কী চায়, আর পাঠককে একজন সাংবাদিক কোন বিষয় কীভাবে পরিবেশন করবে সেই নিরন্তর প্রচেষ্টার নামই সৎ সাংবাদিকতা। সেটাই পেশাদারিত্ব।

ফেসবুক ও সোশ্যাল মিডিয়াতে প্রবল নিন্দার ঝড় দেখে হতাশ হলে চলছে না। গণতন্ত্রে বিতর্ক সব সময়েই স্বাগত। সাংবাদিকতার ক্ষেত্রেও যে জোর বিতর্ক শুরু হয়েছে যে নিরপেক্ষ সাংবাদিকতা বলে আর কিছু আছে কিনা – সেটা চলুক। কিন্তু বলতে বাধ্য হচ্ছি, করপোরেট মিডিয়া বা মিডিয়ার রাজনৈতিক মালিকানা নিয়ে যে সমালোচনা হচ্ছে সেটা অতি সরলীকরণ। এর মাধ্যমে অনেক অনেক ভালো সাংবাদিকতা অবহেলিত হয়। বাংলা ট্রিবিউন ভালো সাংবাদিকতাতেই থাকুক।

লেখক: সাংবাদিক
/এসএএস/এমওএফ/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
খিলগাঁওয়ে পরিচ্ছন্নতাকর্মীর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার
খিলগাঁওয়ে পরিচ্ছন্নতাকর্মীর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার
এই জন্মদিনে আরেক সিনেমার ঘোষণা
এই জন্মদিনে আরেক সিনেমার ঘোষণা
বাড়ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানী, নতুন যোগ হচ্ছে স্বাধীনতা দিবসের ভাতা
বাড়ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানী, নতুন যোগ হচ্ছে স্বাধীনতা দিবসের ভাতা
স্থায়ী সংঘাতে পরিণত হচ্ছে ইরান-ইসরায়েল উত্তেজনা: তুরস্ক
স্থায়ী সংঘাতে পরিণত হচ্ছে ইরান-ইসরায়েল উত্তেজনা: তুরস্ক
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ