X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

মহামারি ছড়াচ্ছে দ্রুত অথচ প্রচেষ্টার গতি কম

সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা
০৭ জুলাই ২০২১, ১৯:০২আপডেট : ০৭ জুলাই ২০২১, ১৯:২৩

সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা ভয়ংকর এক পরিস্থিতির সম্মুখীন আজ আমরা। কোভিড-১৯ মহামারি আমাদের সব স্বাভাবিকতা ধ্বংস করে দিয়েছে। এখন পরিস্থিতি এমন যে কেউ বলতে পারছে না কে আক্রান্ত হবে আর কে হবে না। ধনী, গরিব, কেন্দ্র-প্রান্ত নির্বিশেষে সব মানুষ, সব এলাকায় ছড়িয়ে গেছে রোগ। গত বছর প্রথম ধাক্কা কিছুটা সামাল দেওয়া গেলেও এবার দ্বিতীয় ঢেউয়ে রোগের বিস্তার আরও ব্যাপকতা লাভ করেছে।

আমরা আবারও লকডাউনের মধ্যে পড়েছি। তবে যত কঠোর বিধিনিষেধের কথা বলা হোক, এই লকডাউনও আসলে কার্যত শিথিল বহু কিছুর জন্য। পৃথিবীতে কোনও মহামারিই চিরস্থায়ী হয়নি। কিন্তু অসংখ্য মৃত্যু শোকের আয়োজন করে তারা গেছে। করোনায় এখন আমাদের দেশে প্রতিদিনই মৃত্যু থাকছে একশ’র ঘরে। আজ তো মৃত্যু দুইশ’ ছাড়িয়ে গেছে। সংক্রমণের হার বাড়ছে দ্রুতগতিতে। মৃত্যুর অঙ্কটা ভয় ধরানোর। হিসাব দেখলে উদ্বেগ বাড়তে বাধ্য। প্রায় প্রতিদিনই রেকর্ড ভাঙছে। সর্বত্র প্রশ্ন– কেন কিছুতেই কোভিড ঠেকাতে সমর্থ হচ্ছে না বাংলাদেশ? কোথায় খামতি? এর ভবিষ্যৎই বা কী? এর শেষই বা কোথায়? 

এখানেই আমাদের উপলব্ধির বিষয়। মহামারি ছড়াচ্ছে যতটা দ্রুতগতিতে, আমাদের প্রচেষ্টার গতি ততটা নয়। আমাদের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার বেহাল দশা গত এক বছরে যতটা ভালো হতে পারতো, তা হয়নি। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা ও অর্থ বরাদ্দ সত্ত্বেও কেন ৫২ শতাংশ সরকারি হাসপাতালে আইসিইউ বসলো না, কেন ৩৭ জেলার সরকারি হাসপাতালে অক্সিজেন প্রবাহ নিশ্চিত করা গেলো না, সেসব নিয়ে আলোচনা করতে গেলে কেবল স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের গাফিলতি আর অদক্ষতার কাহিনিই সামনে চলে আসবে। শুধু আমরা অসহায়ের মতো দেখছি রাজশাহী ও খুলনা বিভাগের জেলাগুলোতে অক্সিজেন সংকটের ভয়াবহতা। অক্সিজেন না পেয়ে মানুষ মারা যাচ্ছেন। সংক্রমণে মারা যাচ্ছেন। উপসর্গ নিয়ে মারা যাচ্ছেন। বলতে গেলে মহামারির গ্রাসে ওষুধ-হাসপাতাল আর চিকিৎসাহীনতায় মানুষ বিপন্ন। 

গত পহেলা জুলাই থেকে সর্বাত্মক বিধিনিষেধ শুরু হয়েছে। এর প্রভাব দেখতে আমাদের অন্তত ১৪ জুলাই পর্যন্ত যেতে হবে। কিন্তু সমস্যা হলো, এই বিধিনিষেধ দীর্ঘ সময় চালানো সম্ভব হবে না। ঈদের আগে এই শিথিল বিধিনিষেধেরই শিথিলতা বাড়াতে হবে। ভাবতে শঙ্কা হয় তখন কী পরিস্থিতি হবে।

আমাদের দেশের চেয়েও বেশি সংক্রমণ যেসব দেশে হয়েছিল, তারা তা দিব্যি সামলে উঠেছে। পারিনি আমরা। এই না পারার নেপথ্যে অনেক কারণ আছে। গত দেড় বছরে সবচেয়ে বড় ব্যর্থতা সব মানুষের মুখে মাস্ক তুলতে না পারা। আমরা দেখছি সেনাবাহিনী নামার পরও স্বাস্থ্যবিধি মানার ব্যাপারে মানুষের চরম অনীহা। এর অর্থ হলো, সরকার সাধারণ মানুষকে করোনার ভয়াবহতা বোঝাতেই পারেনি। অতিমারি মোকাবিলায় সরকারের কাজ তিনটি –

১. মানুষকে স্বাস্থ্যবিধি মানতে সফলভাবে উদ্বুদ্ধ করা;

২. জীবন বাঁচাতে স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ঠিক রাখা; এবং

৩. এ দুয়ের সমন্বয়ে মানুষের জীবিকা তথা দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখা।

আমরা এমন এক জায়গায় এসে উপনীত হয়েছি যে এখন আর সময় নেই পেছনে ফিরে ভুলের গল্প শুনবো। তাকাতে হবে সামনে। সাধারণ মানুষ যদি করোনাবিধি পালন না করে তাহলে বিপদ আরও বাড়বে। করোনার গতিবিধির ওপর নজরদারির পাশাপাশি মানুষকে স্বাস্থ্যবিধি মানার জন্য সর্বাত্মক উপায় খুঁজতে হবে। করোনার ডেল্টা প্লাস ভ্যারিয়েন্ট যে কত বড় ঘাতক সেটা মানুষের মগজে প্রবেশ করাতে হবে।

জেলায় জেলায় সচিবদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে করোনাভাইরাস সংক্রমণের হার নিয়ন্ত্রণের জন্য কাজ করতে। এ নিয়ে জনপ্রতিনিধিদের মাঝে অস্বস্তি আর ক্ষোভও আছে। কিন্তু সময়টি এখন সেই হিসাব করার নয়। আমরা দেখলাম সাড়ে তিনশ’ এমপির মধ্যে একজন নিজেকে আলাদা করেছেন। তিনি হলেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য ডাক্তার সামিল উদ্দিন আহমেদ শিমুল। তিনি তার নির্বাচনি এলাকা শিবগঞ্জে প্রশাসন, স্থানীয় সরকার প্রতিনিধি, ব্যবসায়ী, বেসরকারি সংস্থা এবং নারী-পুরুষ-তরুণসহ সমাজের সর্বস্তরের মানুষকে সংগঠিত করে কাজ করছেন। বলতে গেলে একটা সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলে করোনাভাইরাসের ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টকে অনেকটা নিয়ন্ত্রণে নিয়ে এসেছেন। সবার প্রচেষ্টায় সেখানে সংক্রমণের হার ৬৬ শতাংশ থেকে ১০ শতাংশে নেমেছে।

নিশ্চয়ই যার যার আসনে আরও অনেক সংসদ সদস্য মানুষকে সাহায্য করছেন এবং সেটাই কাঙ্ক্ষিত। আমাদের বিশাল স্থানীয় সরকার কাঠামো আছে ইউনিয়ন পর্যন্ত। সেই জনপ্রতিনিধিদের কাজে লাগাতে হবে। আমাদের ইতিহাস বলে, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলো দুর্যোগে সব সময় বড় ভূমিকা রেখেছে। এখনই সময় কমিউনিটি মোবিলাইজেশনের এই প্রচেষ্টা নেওয়া। একটা সামাজিক আন্দোলন সৃষ্টি করা গেলে যেমন করে স্বেচ্ছাসেবীরা পৌঁছে যাবে আর্ত-মানুষের কাছে, তেমনই সচেতন করবে স্বাস্থ্যবিধি সম্পর্কে।

মানুষকে বাঁচাতে মানুষ এগিয়ে আসবেই। প্রয়োজন শুধু একটা আলোড়ন সৃষ্টি করা। জনগণের প্রতি দায়বদ্ধতার অঙ্গীকার হিসেবে রাজনীতিবিদরা মানুষের পাশে থাকবেন এটাই প্রত্যাশা। অতীতে ছিলেন, এখনও নিশ্চয়ই আছেন এবং আগামী দিনেও থাকবেন। এটাই আমাদের ঐতিহ্য। তারা তাদের সাধ্য অনুযায়ী মানুষকে রক্ষার জন্য এগিয়ে আসবেন।

সরকার চেষ্টা করছে ব্যাপক হারে টিকা প্রদানের। এটিই সবচেয়ে বড় উপায় সংক্রমণ ঠেকানোর। কিন্তু তার আগে ব্যাপক হারে মানুষকে সচেতন করার প্রয়োজনটা এখন সবচেয়ে বেশি। একই সঙ্গে দরকার হবে সত্যিকারের কঠোরতার। লকডাউন অনেক দিন চালানো যাবে না। সংক্রমণের প্রাবল্যের নিরিখে অঞ্চল চিহ্নিত করে স্থানীয়ভাবে লকডাউন চলতে পারে। কিন্তু সারাদেশ একযোগে বন্ধ করে রাখার উপায় নেই। সবকিছু খুলে দিয়ে কেবল শতভাগ মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক ও কার্যকর করা গেলেই করোনার সংক্রমণ নামিয়ে আনা সম্ভব। মানুষকে উদ্বুদ্ধ করার পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কঠোর হোক, বিনা মাস্কে কাউকে পেলেই জেল-জরিমানা করা হোক।

মানুষকে বুঝতে হবে, এই রোগ সহজে পৃথিবী থেকে বিদায় নেবে না। নিয়ম মানলে, ঠিকঠাকভাবে মাস্ক পরলে, হাত ধোয়ার অভ্যাস বজায় রাখলে অবস্থার উন্নতি হবেই। এ জন্য চাই একটা পরিকল্পিত উদ্যোগ। প্রয়োজন সামগ্রিক চিত্রে রাষ্ট্রের চোখটা রাখা।

লেখক: সাংবাদিক

   

/এসএএস/এমওএফ/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
বৈশাখী মেলায় গানের আয়োজন, কমিটির সঙ্গে দর্শকদের সংঘর্ষে নিহত ১
বৈশাখী মেলায় গানের আয়োজন, কমিটির সঙ্গে দর্শকদের সংঘর্ষে নিহত ১
হলিউডের প্রস্তাব ফিরিয়ে দিলেন ক্যাটরিনা!
হলিউডের প্রস্তাব ফিরিয়ে দিলেন ক্যাটরিনা!
হলও ছাড়েননি আন্দোলনেও নামেননি চুয়েটের শিক্ষার্থীরা
হলও ছাড়েননি আন্দোলনেও নামেননি চুয়েটের শিক্ষার্থীরা
বাংলাদেশ-থাইল্যান্ডের মধ্যে সহযোগিতা বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে: প্রধানমন্ত্রী
বাংলাদেশ-থাইল্যান্ডের মধ্যে সহযোগিতা বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে: প্রধানমন্ত্রী
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ