X
বুধবার, ০৮ মে ২০২৪
২৪ বৈশাখ ১৪৩১

থানা হেফাজতে নির্যাতন একটি ‘পাপ’

জীবনানন্দ জয়ন্ত
১৭ জুলাই ২০২১, ১৫:৫১আপডেট : ১৭ জুলাই ২০২১, ২৩:২৪

জীবনানন্দ জয়ন্ত সম্প্রতি বরিশালের উজিরপুর থানা হেফাজতে নারী আসামিকে শারীরিক ও যৌন নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে।  প্রকাশিত সংবাদে জানা গেছে, হত্যা মামলায় রিমান্ড শেষে ওই নারী আসামিকে আদালতে উপস্থাপন করা হলে আসামির শারীরিক অসুস্থতার বিষয়টি আদালতের নজরে আসে। আদালত আসামির বক্তব্য শুনে তার শারীরিক পরীক্ষা করে জখম, নির্যাতনের চিহ্ন ও নির্যাতনের সম্ভাব্য সময় উল্লেখ করে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য বরিশাল শেরেবাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালককে নির্দেশ দেয়। হাসপাতালের প্রতিবেদনেও নির্যাতনের সত্যতা পাওয়া গেছে বলেও গণমাধ্যমে উঠে এসেছে।

আইন প্রয়োগকারী সংস্থার হেফাজতে নির্যাতনের ঘটনা এটিই প্রথম নয়। এর আগেও এমন ঘটনা ঘটেছে, প্রায়ই ঘটে এবং প্রচলিত ব্যবস্থাপনায় ভবিষ্যতেও ঘটতেই থাকবে। রাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্যের বিপরীতে ব্যক্তি ও ক্ষমতায় অনুগত থেকে আনুগত্য লাভের প্রকাণ্ড সংস্কৃতি যখন যার পর নেই– জেঁকে বসে তখন আর কি-ই-বা ঘটবে!

ব্যক্তিগত লাভ, নিজেকে বা কাউকে ক্ষমতাশালী প্রমাণ করা, ব্যক্তি-ক্ষমতা-রাজনীতির প্রতিপক্ষ মোকাবিলা, ব্যক্তিগত দ্বন্দ্ব-বিরোধ, কিংবা ভিন্নমত প্রকাশ– সে যাই হোক না কেন, সকল ক্ষেত্রেই ক্ষমতার বলয়ে থাকা বা এর ঘনিষ্ঠ মানুষগুলো সবসময়ই নির্যাতন-নিপীড়নসহ সহিংস পন্থাকেই বেছে নেয়।

এগুলোর সবটাই ব্যক্তির অপরাধ প্রবণতা হিসেবেই থাকতে পারতো, যা প্রতিরোধ্য। কিন্তু প্রতিরোধের বিপরীতে রাষ্ট্র যখন দায়মুক্তির চর্চা করে তখন তা রাষ্ট্রের অপরাধ প্রবণতায় পরিণত হয়ে রাষ্ট্র পাপের জন্ম দেয়; মানবাধিকার বিপন্ন হয়। 

রাষ্ট্রের অপরাধ প্রবণতা সরকারের ভেতরে ‘সরকার’ সৃষ্টি করে। ফলে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাও ক্ষমতাকেন্দ্রিক খুশিতে পরিচালিত হবে– এমনটাই স্বাভাবিক।

ফরমায়েশি আটক, কথিত ‘ক্রসফায়ার’ বা ‘বন্দুক যুদ্ধে’র মৃত্যু, স্বীকারোক্তি আদায়ে ভয়-ভীতি আর নির্যাতন, নির্যাতন ও হেফাজতে মৃত্যু, যৌন নিপীড়ন, একের অপরাধে অপরের সাজাভোগ, অপরাধীর প্রক্সি দেওয়ার মতো রাষ্ট্রপাপ সংঘটিত হচ্ছে। এই সময়ে বিচারিক দীর্ঘসূত্রিতা, ক্ষমতাশালীদের অপরাধ আড়ালের সুযোগ এবং দরিদ্র ক্ষমতাহীন মানুষের বিচার প্রাপ্তির বিড়ম্বনা– সব মিলিয়ে বিচারহীনতার সংস্কৃতি রাষ্ট্রপাপের বৈধতা তৈরি করছে। আমরা বন্দুক যুদ্ধের স্ক্রিপ্ট শুনে থমকে যাই না বরং বন্দুকযুদ্ধই আমাদের প্রত্যাশিত হয়ে ওঠে! পাপের কলেবর ক্রমাগত বাড়ছেই। বড় অদ্ভুত সময়ে আমরা অবতীর্ণ!

রাষ্ট্র কখনও কখনও তার পাপ মোচনের চেষ্টা করে সত্য, কিন্তু তুলনার বিচারে তা নগন্য। একইসাথে চড়ামূল্যে ক্ষতিগ্রস্তের জীবন বিপন্ন নিঃশেষ করেই কেবল সেই চেষ্টা। এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণে মানব জীবনের প্রতি মর্যাদা এবং মানবাধিকার সমুন্নত রাখার রাষ্ট্রীয় নীতিবোধের চর্চা অপরিহার্য।

প্রায় ছাব্বিশ বছর আগে দিনাজপুরে টহল পুলিশের হেফাজতে ইয়াসমিন ধর্ষণ ও হত্যা, ১৯৯৮ সালে ডিবি পুলিশ হেফাজতে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শামিম রেজা রুবেল হত্যাকাণ্ড, ২০১৪ সালে নারায়ণগঞ্জে র‌্যাব কর্তৃক আইনজীবী চন্দন সরকারসহ ৭ জনকে হত্যা করে শিতলক্ষ্যায় লাশ গুম, একই বছর ঢাকার পল্লবী থানায় পুলিশ হেফাজতে ইশতিয়াক হোসেন জনিকে নির্যাতন ও মৃত্যুর ঘটনা, ২০১৮ সালে কথিত বন্দুকযুদ্ধে টেকনাফের একরামুল হক হত্যা, ২০২০ সালে কোটালীপাড়ার রামশীল গ্রামের নিখিল তালুকদারকে আটক পরবর্তী পুলিশ সদস্যের নির্যাতনে মৃত্যু এবং সাম্প্রতিক উজিরপুর থানা হেফাজতে আটক নারী আসামি নির্যাতন কিংবা এর আগে-পরে প্রকাশিত-অপ্রকাশিত আরও অনেক ঘটনার প্রকৃতি একই। সবগুলোই অপরাধ প্রবণ রাষ্ট্র ব্যবস্থার দায়-রাষ্ট্রপাপ। এগুলোর কোনও কোনোটিতে বিচারের উদ্যোগ নেওয়া হলেও অপরাধ প্রতিরোধে রাষ্ট্রীয় পদক্ষেপ শূন্যের কোঠায়। ফলে কয়েকটি ঘটনার বিচারে কারোই কিছু এসে যায়নি। চরম মূল্য তো ক্ষতিগ্রস্তপক্ষকেই দিতে হয়েছে। আজও বাতাসে ভেসে বেঁড়ায়– ‘আব্বু তুমি কান্না করতেছো যে’। কিংবা আরও কোনও বিভৎস আর্তনাদ-গোঙানি। অথচ এমনটি হওয়ার ছিল না। ৩০ লাখ জীবন-মুক্তিকামী মানুষের আর্তনাদ। মা-বোনের করুন চিৎকার আর রক্তে ভেজা সংবিধান থেকে আমাদের যেখানে প্রতি মুহূর্তেই মানবিক হয়ে ওঠার কথা– আমরা তা হইনি, আমরা মানবিক হয়ে উঠি না অথবা উঠতে চাই না অথবা হয়ে ওঠা যায় না!

১৯৯৮ সালে ডিবি হেফাজতে শামিম রেজা রুবেল হত্যাকাণ্ডসহ সমসাময়িক আরও কয়েকটি ঘটনার প্রেক্ষিতে ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৪ ধারায় বিনা পরোয়ানায় গ্রেফতার এবং ১৬৭ ধারায় আটক ব্যক্তির রিমান্ডের ক্ষেত্রে আইনের অপপ্রয়োগকে চ্যালেঞ্জ করে বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট সহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান হাইকোর্ট বিভাগে জনস্বার্থে রিট পিটিশন নং– ৩৮০৬/১৯৯৮ দায়ের করলে হাইকোর্ট ২০০৩ সালে বিনা পরোয়ানায় গ্রেফতার ও রিমান্ড বিষয়ে পর্যবেক্ষণসহ নির্দেশনা দিয়ে রায় ঘোষণা করে। পরবর্তীতে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল করলে ১৩ বছর পর ২০১৭ সালের ২৪ মে রাষ্ট্রপক্ষের আবেদন খারিজ হয়ে যায়। হাইকোর্টের রায়ে রাষ্ট্র-জনগণ-সরকারের স্বার্থ বিরোধী কিছু ছিল না। যা ছিল তা একটি মানবিক রাষ্ট্রে অবশ্য পালনীয়। কিন্তু আমরা তা পালন করতে চাইনি বা করতেও চাই না বা পালন করা যায় না– এ কারণেই ১৩ বছর কেটে গেছে।

আপিল বিভাগ তার রায়ে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা এবং ম্যাজিস্ট্রেট, বিচারক ও ট্রাইব্যুনালের জন্য গ্রেফতার ও রিমান্ড বিষয়ে পৃথক নির্দেশনাসহ আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কর্তব্য বিষয়ক ৭ দফা নির্দেশনায় বলেছে– In the performance of their duty, law enforcement agencies shall respect and protect human dignity and maintain and uphold the human rights of all persons (অর্থাৎ আইন প্রয়োগকারী সংস্থাসমূহ তাদের দায়িত্ব পালনকালে মানুষের মর্যাদার প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন ও তা রক্ষা করবে এবং প্রত্যেক ব্যক্তির মানবাধিকার সমর্থন ও সমুন্নত রাখবে); The law enforcing agencies must not only respect but also protect the rights guaranteed to each citizen by the constitution (অর্থাৎ আইন প্রয়োগকারী সংস্থাসমূহকে অবশ্যই প্রত্যেক নাগরিকের জন্য সংবিধান স্বীকৃত অধিকারগুলির প্রতি শুধু সম্মান প্রদর্শনই নয় বরং তা রক্ষা করতে হবে); এবং Human life being the most precious resource, the law enforcing agencies will place its highest priority on the protection of human life and dignity (অর্থাৎ মানবজীবন সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ হওয়ায়, আইন প্রয়োগকারী সংস্থাসমূহ মানবজীবন ও মর্যাদার সুরক্ষায় সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিবে)। এই তিন কর্তব্য অনুযায়ী আমাদের আইন প্রয়োগকারী সংস্থার যেমন আচরণ হওয়া উচিত– তার কতটা আমরা দেখতে পাই?

উজিরপুরে আসামি নির্যাতন, কিংবা একরামুল হক হত্যা কিংবা নিখিল তালুকদার নির্যাতন ও মৃত্যুর ঘটনাসহ অসংখ্য ঘটনাই প্রমাণ করে দেশের সর্বোচ্চ আদালতের রায়ের কোনও প্রতিফলন নেই। তবে রিমান্ড প্রদানকারী আদালত অধস্তন সম্পর্কের বাধ্যবাধকতায় আসামির রিমান্ড আদেশে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা অনুসরণপূর্বক সতর্কতার সাথে জিজ্ঞাসাবাদের নির্দেশ দিয়ে রায়ের প্রতিফলন ঘটায় মাত্র। কিন্তু রিমান্ড চলাকালে সেই নির্দেশ কতটা বাস্তবায়িত হচ্ছে বা হচ্ছে না, সেটি দেখার কেউ নেই। এমনকি রিমান্ড শেষে আসামিকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা বা পর্যবেক্ষণ করার খুব একটা নজিরও নেই। ফলে সংবিধান, আইন, উচ্চ আদালতের নির্দেশনা সবকিছুই কাগুজে বাস্তবতা হিসেবে টিকে থাকে!

সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১৫ (৪) এ “কোন অপরাধের দায়ে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে নিজের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিতে বাধ্য করা যাবে না”– বলা হলেও, আমাদের রিমান্ড চর্চা নিজের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিতেই এমনটি বলা বোধ করি অমূলক নয়। সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৩৫(৫) “কোন ব্যক্তিকে যন্ত্রণা দেওয়া যাইবে না কিংবা নিষ্ঠুর, অমানুষিক বা লঞ্ছনাকর দন্ড দেওয়া যাইবে না কিংবা কাহারও সহিত অনুরূপ ব্যবহার করা যাবে না” এবং নির্যাতন ও অন্যান্য নিষ্ঠুর, অমানবিক অথবা অমর্যাদাকর আচরণ অথবা শাস্তির বিরুদ্ধে জাতিসংঘ ঘোষিত সনদের অনুচ্ছেদ ২(১) ও ৪ এর বাধ্যবাধকতায় বাংলাদেশে “নির্যাতন ও হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইন, ২০১৩” প্রণীত হয়েছে। কিন্তু আইন প্রণয়নের পর দীর্ঘ ৮ বছরে আইনের প্রত্যাশিত প্রয়োগ হয়নি; আমরা শুধু বলতে পারি আমাদের একটি আইন আছে।

নির্যাতন ও হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইনে সর্বপ্রথম রায় আসে গত বছর। পল্লবী থানায় পুলিশ হেফাজতে নির্যাতনের শিকার ইশতিয়াক হোসেন জনির মৃত্যুতে ২০১৪ সালে নির্যাতনকারী পুলিশ কর্মকর্তা ও পুলিশের সোর্সের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলায় গত বছর ৯ সেপ্টেম্বর ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালত তিন পুলিশ কর্মকর্তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও প্রত্যেককে দুই লাখ টাকা ক্ষতিপূরণসহ দুই সোর্সকে সাত বছরের কারাদণ্ডের রায় ঘোষণা করেন। এই রায়টি পেতে আমাদের সময় লেগেছে ৬ বছর। যদিও আইনের ১৪ ধারার বিধান অনুযায়ী মামলা দায়েরের সর্বোচ্চ ২১০ দিনের মধ্যেই বিচার সম্পন্ন হওয়ার কথা।

উজিরপুরের ঘটনায় শারীরিক নির্যাতনের পাশাপাশি যৌন নিপীড়নের অভিযোগও উঠছে। এক্ষেত্রে নির্যাতন ও হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইনের প্রয়োগ দৃশ্যমান হলেও যৌন নিপীড়নের ঘটনায় পৃথক আইনের প্রয়োগ দৃশ্যমান নয়। ফলে তদন্তে যৌনপীড়নের প্রমাণ পাওয়া গেলে অপরাধীর বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট আইনে ব্যবস্থা নেওয়া হবে কিনা এ নিয়ে শঙ্কা থেকেই যায়। আর ভুক্তভোগী যখন ক্ষমতাহীন তখন শঙ্কাটাই বাস্তবতা। এ জন্য শারীরিক নির্যাতনের জন্য নির্যাতন ও হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইন এবং যৌন নিপীড়নের জন্য নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে পাশাপাশি অপরাধের তদন্ত হওয়া আবশ্যক।

নির্যাতন ও হেফাজতে মৃত্যুর ঘটনায় সাধারণত সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ প্রথমে অপরাধের বিষয়টি অস্বীকার করেন, না হলে তা চেপে যান অথবা স্থানীয়ভাবে মিটিয়ে ফেলেন। উজিরপুরও এর ব্যতিক্রম নয়। সেখানকার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ভুক্তভোগী নারীর অভিযোগকে ভিত্তিহীন দাবি করে অপরাধ অস্বীকার করেছেন। এভাবে যারা অপরাধ আড়াল-গোপন অথবা অস্বীকার করেন বা আপস-মীমাংসা করেন, তাদের অপরাধের সহযোগী হিসেবে গণ্য করার সুযোগ প্রচলিত আইনে নেই। এ জন্য নির্যাতন ও হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইন, ২০১৩ এর সংস্কারও প্রয়োজন।

লেখক: আইনজীবী ও অ্যাকটিভিস্ট

/এসএএস/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
পিএসজিকে হারিয়ে ফাইনালে ডর্টমুন্ড
চ্যাম্পিয়নস লিগপিএসজিকে হারিয়ে ফাইনালে ডর্টমুন্ড
রাজস্থানকে হারিয়ে প্লে অফের আশা বাঁচিয়ে রাখলো দিল্লি
রাজস্থানকে হারিয়ে প্লে অফের আশা বাঁচিয়ে রাখলো দিল্লি
ঢাকা আসছেন মার্কিন অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি ডোনাল্ড লু
ঢাকা আসছেন মার্কিন অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি ডোনাল্ড লু
প্রথম ধাপের উপজেলা নির্বাচন আজ
প্রথম ধাপের উপজেলা নির্বাচন আজ
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ