জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল নিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া একসময় অহংকার করতেন। ক্ষমতায় থাকতে একবার তিনি বলেছিলেন, বিরোধী আওয়ামী লীগকে মোকাবেলার জন্য তার ছাত্রদলই যথেষ্ট। তখন বিএনপি ক্ষমতায় ছিল, ছাত্রদলের ছিল রমরমা অবস্থা। মনে হতো শুধু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো নয়, গোটা দেশটাই যেন ছাত্রদলের দখলে বা নিয়ন্ত্রণে। কিন্তু এখন সে রামও নেই, নেই সে অযোধ্যাও।
বিএনপি এখন ক্ষমতায় নেই। দীর্ঘদিন ক্ষমতার বাইরে থাকায় এবং সরকার নানামুখী চাপে ও তাপে রাখায় বিএনপির অবস্থাই এখন নাজুক। স্বাভাবিকভাবে ছাত্রদলেরও নেই আগের সেই দোর্দণ্ড প্রতাপ ও প্রভাব। দেশের অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্রদলের প্রবেশাধিকারই নেই। তাই বলে অবশ্য এটা মনে করার কারণ নেই যে, দেশে ছাত্রদলের ‘নেতা’র সংখ্যা কমে গেছে। কেউ কেউ অবশ্য রসিকতা করে ইদানিং বলতে শুরু করেছেন যে, ছাত্রদলে এখন কেবল নেতা আছে, কর্মী এবং সমর্থক নেই। এরকম বলার কারণ হলো, সম্প্রতি ছাত্রদলের পূর্ণাঙ্গ কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে ৭৩৬ সদস্যের। অথচ গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটি হওয়ার কথা ১৫১ সদস্যের।
১৫ মাস আগে, ২০১৪ সালের ১৪ অক্টোবর রাজীব আহসানকে সভাপতি ও মো. আকরামুল হাসানকে সাধারণ সম্পাদক করে ছাত্রদলের আংশিক কেন্দ্রীয় কমিটির ঘোষণা দিয়েছিলেন খালেদা জিয়া। তখনই কমিটির সদস্য ছিল ১৫৩ জনের। ওই সময় বলা হয়েছিল, এবারের কেন্দ্রীয় কমিটি হবে ২০১ সদস্যের। পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা হলো গত ৭ ফেব্রুয়ারি। সংগঠনের গঠনতন্ত্র উপেক্ষা করে ৭৩৬ জনের কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণার পরও দেখা যাচ্ছে সবাইকে সন্তুষ্টু করা যায়নি। কেন্দ্রীয় কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার মতো আরও নাকি অনেকেই আছেন। আংশিক কমিটি ঘোষণার পর বিদ্রোহ হয়েছিল, পদপ্রত্যাশী ও পদবঞ্চিতরা দলীয় কার্যালয়ের সামনে কয়েকদিন ধরে বিক্ষোভ দেখিয়েছিলেন। সেই বিদ্রোহীদের অনেকেই এবার পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে জায়গা পেয়েছেন। তা সত্ত্বেও এবারও কমিটি ঘোষণার পর ‘বিদ্রোহ’ শুরু হয়েছে। এরমধ্যেই বিএনপির নয়াপল্টনস্থ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে পদবঞ্চিত ছাত্রদল নেতারা কিংবা তাদের সমর্থকরা কয়েক দফা হামলা চালিয়েছেন। দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের ভেতরে-বাইরে ভাঙচুর করা হয়েছে, আগুন দেওয়া হয়েছে। দাউ দাউ করে আগুন জ্বালার ছবি সংবাদপত্রে ছাপা হয়েছে।
বিদ্রোহীদের সংখ্যা কম না বেশি সেটা বড় কথা নয়, বড় কথা হলো দলের জন্য সমস্যা তৈরি করতে তারা যে সক্ষম সেটা বেশ বোঝা যাচ্ছে। ছাত্রদলের এই অসন্তোষ শেষ পর্যন্ত কিভাবে মেটানো হবে সেটা এখনও স্পষ্ট নয়। তবে অতীত অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে অসন্তোষের জের ধরে সংগঠন কার্যত নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ে। খালেদা জিয়া চেয়েছিলেন ছাত্রদলের এমন একটি কমিটি যারা আন্দোলনের বর্শাফলক হিসেবে কাজ করবে।
ছাত্রদলের ওপর নির্ভর করেই একসময় বিএনপি রাজনৈতিক কর্মসূচি সফল করার কথা ভাবতো। সেই অবস্থা ফিরিয়ে আনার আকাঙ্ক্ষা থেকেই সম্ভবত ছাত্রদলের বিশাল কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণা করে স্বস্তি পেতে চেয়েছিলেন তিনি। কমিটি ঘোষণার পর দেখা যাচ্ছে, হিতে বিপরীত হয়েছে। ছাত্রদলের এই বিশাল কেন্দ্রীয় কমিটি বিএনপির জন্য সম্পদ না হয়ে বোঝা হয়ে ওঠার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। দলের কার্যালয়ে আগুন জ্বলতে দেখে বেগম জিয়ার আশাভঙ্গ হওয়ারই কথা।
পদপ্রত্যাশী বা পদবঞ্চিত ছাত্রদল কর্মীরা বিএনপি কার্যালয়ে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেছে সেটা বিএনপির জন্য স্বস্তিদায়ক নয়। সব কিছুর পেছনে সরকারের হাত আবিষ্কার করা বিএনপির স্বভাবে পরিণত হয়েছে। ছাত্রদলের ক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। বিএনপির মুখপাত্র ও দফতর সম্পাদক রুহুল কবির রিজভী সংবাদ সম্মেলন করে জানিয়েছেন, যারা বিএনপি কার্যালয়ে হামলায় অংশ নিয়েছেন তারা আসলে সরকারি এজেন্ট। গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর থেকে অবশ্য তেমন কোনও তথ্য পাওয়া যায় না। হামলাকারীরা কেউ মুখোশ পরে যায়নি। তাদের সবাইকে দেখা গেছে, চেনা গেছে। ছাত্রদলের পদবঞ্চিত নেতাদের বিক্ষুব্ধ কর্মী-সমর্থকরা তাদের ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটাতে গিয়ে দলীয় কার্যালয়ে যে ‘উন্মত্ততা’ দেখিয়েছে তা খুব অস্বাভাবিক ঘটনা নয়। এতে সরকারের হাত ‘আবিষ্কার’ করে রিজভী সাহেব হয়তো তৃপ্তি পেতে চেয়েছেন। কিন্তু শাঁক দিয়ে কি মাছ ঢাকা যায়? কারা পেছন থেকে এই ঘটনায় ইন্ধন জুগিয়েছে তাদের দু-চারজনের নাম সংবাদপত্রে ছাপা হয়েছে। তারা কেউ সরকারি এজেন্ট নয়, ছাত্রদলেরই পদাধিকারী। পদবঞ্চিত বিক্ষুব্ধদের মধ্যে যদি সরকারের এজেন্ট থেকে থাকে, তাহলে প্রশ্ন আসে যারা পদ পেয়েছেন তাদের মধ্যে কি সরকারি এজেন্ট নেই? যদি থাকে তাহলে তাদের দিয়ে ভবিষ্যতে সরকারবিরোধী আন্দোলন গড়ে তোলা কতটুকু সহজ হবে?
ছাত্রদলের নতুন নেতৃত্ব যারা পেয়েছেন, তাদের প্রায় সবারই বয়স ৩০-এর বেশি। তাদের মধ্যে নিয়মিত ছাত্রও নেই বললেই চলে। কেউ কেউ হয়তো কোনও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কোনও বিষয়ে নাম লিখিয়ে ছাত্রত্ব বজায় রেখেছেন। তবে অনেক নেতাদেরই ছেলেমেয়েরা স্কুলে যাচ্ছে অর্থাৎ নিয়মিত ছাত্রদের পিতারাই এবার ছাত্রদলে নেতৃত্ব পেয়েছেন! নিয়মিত ছাত্র কিংবা কমবয়সীদের কেন ছাত্রদলের নেতৃত্বে রাখা হচ্ছে না সেটা জানতে চাইলে বিএনপি নেতৃত্বের কাছ থেকে খুব একটা সদুত্তর পাওয়া যাবে বলে মনে হয় না। তারা হয়তো এটাই বলবেন যে, দেশে বর্তমানে, তাদের ভাষায়, এক অস্বাভাবিক অবস্থা বিরাজ করছে। গণতন্ত্র চর্চার সুযোগ সীমিত। এই অবস্থায় ছাত্রসংগঠনের পক্ষে স্বাভাবিক কাজকর্ম পরিচালনা করা সহজ না হওয়ায় নিয়মিত সম্মেলন করা যায় না। ফলে সংগঠনে নেতৃত্ব দেওয়ার মতো অসংখ্য নেতাকর্মী তৈরি হয়েছে। এক ধরনের জট তৈরি হয়েছে। তার প্রতিফলনই ঘটেছে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির ঘোষণার মাধ্যমে। দেশে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলন সফল হলেই এই সংকট কেটে যাবে।
যেই সংগঠনের নেতৃত্ব তৈরি হয় কোনও ধরনের গণতান্ত্রিক রীতিনীতির ধার না ধেরে, গঠনতন্ত্রের তোয়াক্কা না করে সেই সংগঠন গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলনে কিভাবে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে সে প্রশ্ন স্বাভাবিকভাবেই সামনে আসে। শরীরের চেয়ে মাথার ওজন যদি বেশি হয়, তাহলে শরীর কি সচল থাকতে পারে? দেশে ইতিপর্বে কোনও ছাত্র সংগঠনেরই এতবড় কেন্দ্রীয় কমিটি ছিল না। এটা এক অস্বাভাবিক ঘটনা। ৭৩৬ জন সদস্য নিয়ে গঠিত কেন্দ্রীয় কমিটির নিয়মিত সভা অনুষ্ঠানও যে সম্ভব হবে না সেটা বেশ বোঝা যায়। কারণ এত জন সদস্য নিয়ে বৈঠক করার মতো জায়গাও খুব বেশি নেই। নিয়মিত বৈঠকই যদি করা না যায় তাহলে সিদ্ধান্ত গ্রহণ হবে কিভাবে? ওপর থেকে ‘নাজেল’ হওয়া সিদ্ধান্তবা বয়ান করা ছাড়া তাদের আর কোনও কাজ থাকবে কি? অবশ্য ছাত্রদের শিক্ষাজীবনের সমস্যা নিয়ে ছাত্রদলকে তো আন্দোলন-সংগ্রাম করতে হয় না। তারা হলো মূল দলের হুকুমবরদার। কমিটিতে নাম থাকাটাই বড় কথা, কমিটির মিটিং করা আর কী দরকার?
মূল দলের জাতীয় সম্মেলনকে সামনে রেখে ছাত্রদলের কমিটি ঘোষণা করে খালেদা জিয়া হয়তো ভেবেছিলেন তার সোনার ছেলেরা জাতীয় সম্মেলন সফল করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে খুঁটিনাটি কাজে দায়িত্ব পালন করবে। কিন্তু কমিটি ঘোষণার পর দলীয় কার্যালয়ে আগুন জ্বলতে দেখে তিনি হয়তো এটাও বুঝেছেন যে, এদের ওপর নির্ভর করে তিনি খুব বেশি দূর এগুতে পারবেন না। রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জাতীয় সম্মেলন করার অনুমতি পেয়েছিল বিএনপি। কিন্তু এখন বসুন্ধরা কনভেনশন সেন্টারে জাতীয় সম্মেলন করা হবে বলে সিদ্ধান্ত হয়েছে। কেন এই স্থান পরিবর্তন? জাতীয় সম্মেলনের মতো বিশাল আয়োজন সম্পন্ন করার জন্য যতটা সময় ও প্রস্তুতি দরকার বিএনপির তা নেই। দলের সবাই জাতীয় সম্মেলন সফল করার জন্য আন্তরিকভাবে কাজে ঝাঁপিয়ে পড়বে কি-না সেটা নিয়েও হয়তো খোদ বেগম জিয়ার মনেই সংশয় আছে। দলের তহবিলেও ঘাটতির কথা শোনা যাচ্ছে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জাতীয় সম্মেলন করতে হলে একদিকে লাগবে বিপুল অর্থ, অন্যদিকে দরকার হবে বিশাল কর্মীদল। এসব ছাড়া নিরাপত্তার প্রশ্নতো আছেই। সব মিলিয়ে বসুন্ধরা কনভেনশন সেন্টারকেই জাতীয় সম্মেলনের জন্য উপযুক্ত বলে বিবেচনা করেছেন বিএনপির নীতিনির্ধারকরা। এতদিন বিএনপির পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হচ্ছিল যে, বিএনপির জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠানে সরকার প্রতিবন্ধকতা তৈরি করতে পারে। কিন্তু সম্মেলন করার জন্য সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের বরাদ্দ পেয়েও সেখান থেকে সরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ায় এখন কেউ যদি বলেন, বিএনপি নিজেই নিজেদের জন্য প্রতিবন্ধকতা তৈরি করছে- তাহলে তাকে দোষ দেওয়া যাবে কি?
১৯ মার্চ জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠানের পরিকল্পনা নিয়ে অগ্রসর হচ্ছে বিএনপি। এই সম্মেলন নিয়ে রাজনীতি সচেতন সবার মধ্যেই একধরনের আগ্রহ তৈরি হয়েছে। বিএনপির জন্ম হয়েছিল ক্ষমতায় থাকতে। সেনাশাসক জিয়াউর রহমান তার শাসন ক্ষমতাকে রাজনৈতিক ভিত্তি দেওয়ার লক্ষ্য থেকেই এই দলের জন্ম দিয়েছিলেন। স্বাভাবিকভাবেই ক্ষমতাকেন্দ্রীক রাজনীতিই বিএনপির প্রধান বৈশিষ্ট্য। জন্মলাভের কয়েক বছরের মাথায় দলের প্রতিষ্ঠাতার মৃত্যু এবং তারপর এরশাদ ক্ষমতা দখল করায় বিএনপি ক্ষমতাচ্যুত হয়। আবার এরশাদ পতনের পর নির্বাচনে জয়লাভ করেই ক্ষমতায় ফিরে আসে দলটি। তারপর একবার ক্ষমতায়, একবার বিরোধীদলের এই নিয়মেই চলছিল। কিন্তু ২০০৬ সালে ক্ষমতা ছাড়ার পর বিএনপির যে ভাগ্য বিপর্যয় ঘটে তা আর কাটছে না।
২০১৪ সালের নির্বাচনে অংশ না নিয়ে বিএনপি এখন সংসদীয় রাজনীতি থেকে ছিটকে পড়েছে। আন্দোলন করে ক্ষমতাসীন সরকারের পতন ঘটানোর কথা বললেও বাস্তবে তা করা সম্ভব হয়নি বিএনপির পক্ষে। সরকারবিরোধী আন্দোলনের নামে বিএনপি দীর্ঘদিন দেশে সন্ত্রাস ও নাশকতা চালিয়ে নিয়মতান্ত্রিক ও গণতান্ত্রিক রাজনীতির ধারা থেকেই সরে গিয়েছিল। জামায়াতের ওপর নির্ভরশীল হয়ে রাজনীতি করতে গিয়ে বিএনপি এখন চরম দুর্দশা ও দুঃসময়ের মধ্যে পড়েছে। রাজনীতিতে ঘুরে দাঁড়ানোর উপায় খুঁজছে। অন্য কথায়, বিএনপি এখন অস্তিত্ব রক্ষার সংগ্রাম করছে। গণতান্ত্রিক ও নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতিতে নিজেদের অবস্থান নতুন করে দৃশ্যমান করে তুলতে চায় দলটি। অনেকেই মনে করছেন, আসন্ন জাতীয় সম্মেলনে নতুন নেতৃত্ব ও রাজনৈতিক কৌশল গ্রহণের মধ্য দিয়ে বিএনপি দেশবাসীর সামনে কিছুটা নতুন চেহারায় হাজির হতে চায়।
শীর্ষ নেতৃত্বে খুব বেশি পরিবর্তনের সম্ভাবনা না থাকলেও দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম স্থায়ী কমিটিতে কিছু পরিবর্তন আসবে বলে শোনা যাচ্ছে। স্থায়ী কমিটিতে যারা নিষ্ক্রিয় বা যাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে তারা হয়তো বাদ পড়বেন। তাছাড়া যারা গত কয়েক বছর ধরে নানা প্রতিকূলতা মোকাবেলা করে দলকে এগিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে ভূমিকা রেখেছেন তাদের বিভিন্ন পদ-পদবি দিয়ে পুরস্কৃত করা হবে। খালেদা জিয়া যে দলের চেয়ারপারসন নির্বাচিত হবেন তা নিয়ে কারও মনে কোনও সংশয় নেই। মহাসচিব পদে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নির্বাচিত হওয়ার সম্ভাবনা উজ্জ্বল। তিনি দীর্ঘদিন ধরে ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবের দায়িত্ব পালন করছেন। তার বিরুদ্ধে দলের মধ্যে একটি ক্ষুদ্র গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে। তারা দলের মধ্যে মির্জা আলমগীরের একচ্ছত্র ক্ষমতা খর্ব করার লক্ষ্য থেকেই দুই মহাসচিবের তত্ত্ব নিয়ে অগ্রসর হচ্ছে। তবে শেষ পর্যন্ত দুই মহাসচিব তত্ত্ব বাস্তবায়ন করা যাবে কিনা তা স্পষ্ট নয়। ভেতরের খবর যতটা জানা যায়, তা থেকে এটাই বরং স্পষ্ট যে, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এবার ভারমুক্ত হচ্ছেন। তাকে নিয়ে আগে লন্ডনপ্রবাসী দলের ‘ভবিষ্যৎ কাণ্ডারি’ বলে পরিচিত তারেক রহমানের কিছুটা সংশয় থাকলেও এখন নাকি তা আর নেই। খালেদা জিয়া এবং তারেক রহমান দুই জনেই যেহেতু মির্জা আলমগীরের পক্ষে সেহেতু মহাসচিব পদ পাওয়া তার পক্ষে কঠিন না হওয়ারই কথা। তবে নেতৃত্ব নির্বাচনে বড় ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে গেলে ছাত্রদলে যেরকম অসন্তোষ তৈরি হয়েছে বিএনপিতেও তার পুনরাবৃত্তি ঘটার আশঙ্কাও করা হচ্ছে। দলের শীর্ষ নেতাদের মধ্যে সন্দেহ-অবিশ্বাস চরমে পৌঁছেছে। বেগম জিয়ার গ্রহণযোগ্যতাও প্রশ্নের উর্ধ্বে নয়। কয়েকজন শীর্ষ নেতার টেলিসংলাপ গণমাধ্যমে প্রচার হওয়ার পর দলের মধ্যে নতুন এক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। কৌশলগত কারণে যারা মুখ খোলেন না, তারা কতদিন চুপ থাকবেন সে প্রশ্নও উঠছে। ছাত্রদলের বিদ্রোহী বা অসন্তুষ্ট গ্রুপ দলীয় কার্যালয়ে আগুন দিয়েছে কিন্তু মূল দলের মধ্যেও যদি অসন্তোষ প্রবল হয়ে ওঠে তাহলে তারা কোথায় আগুন দেবে? দেশে আগুনের রাজনীতির চর্চা শুরু করেছে বিএনপি। যানবাহনে আগুন দেওয়া, পেট্রোল বোমায় পুড়িয়ে মানুষ মারা, সম্পদ বিনষ্ট করার অপরাজনীতিকে মদদ দিয়েছে বিএনপি। এখন দলের মধ্যেই আগুনের উত্তাপ। এই উত্তাপ থেকে বেগম জিয়া দলকে কিভাবে রক্ষা করেন সেটা দেখার জন্য রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মধ্যে আগ্রহ ও কৌতূহল রয়েছে।
লেখক: সাংবাদিক ও কলামিস্ট