X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

ফেক নিউজের রাজনীতিটা বুঝতে হবে

কাজী আনিস আহমেদ
১৩ মে ২০১৮, ১৯:৪১আপডেট : ১৩ মে ২০১৮, ২০:২৯

কাজী আনিস আহমেদ অনলাইন যোগাযোগের এই সময়ে পশ্চিম থেকে বাতাস পূর্বে আসতে বেশি সময় লাগে না। এক ক্লিকে এখন সবকিছু জানিয়ে দেওয়া যায় বিশ্বকে। সেই হাওয়ায় সর্বশেষ আলোড়ন সৃষ্টিকারী বিষয় হলো ‘ফেক নিউজ’। গণমাধ্যমের এই বিস্ফোরণের সময়ে শত শত পোর্টালে হাজারো সংবাদের মধ্যে কোনটি নিউজ আর কোনটি ফেক নিউজ, সেটি যাচাই করা যেমন পাঠকের ঘাড়ে পড়ে, ঠিক তেমনই সংবাদকর্মীদের জন্য চ্যালেঞ্জ ফেক নিউজের চটকদারিত্বে পা না দেওয়া এবং নিজেদের সংবাদবোধ জিইয়ে রাখা। কেননা, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের মধ্য দিয়ে যে ফেক নিউজ আপনার সামনে হানা দেয়, সেটি চট করে সংবাদকর্মীর ধারণ করে ফেলার আকাঙ্ক্ষাকে প্রতিনিয়ত থামানোর বিষয় থাকে।

বাংলাদেশে অনলাইন জগতে যারা কাজ করেন, তাদের জন্য এটি সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জও বটে। কেন চ্যালেঞ্জ, সেই আলোচনার আগে যদি বলি খোদ ‘ফেক নিউজ’ বিষয়টা কী? এটা বোঝার জন্য আমাদের খুব বেশিদূর যেতে হবে না। সম্প্রতি কোটা সংস্কার আন্দোলনের দিকে তাকালেই উদাহরণ পাওয়া যাবে। একটি আন্দোলন যখন চলছে, তখন পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি নানাভাবে মোড় ঘোরানোর জন্য ভুল তথ্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দিতে চেয়েছে। ওই সোর্সহীন ‘কপি-পেস্ট’ অনলাইনগুলো যাচাই-বাছাই না করে যখন সংবাদ আকারে প্রকাশ করেছে, তখন বিশ্বাসযোগ্যতা হারিয়েছে। এখানেই বিপদটা পেশাদার অনলাইন সংবাদ পাঠকদের।

বলা বাহুল্য, ফেক নিউজের সূর্যোদয় হয়েছে পশ্চিমে। বলা হয়ে থাকে, ডোনাল্ড ট্রাম্পের জয়ের পেছনেও এই ফেক নিউজের বড় অবদান রয়েছে। শব্দটি অনেক দিন ধরে থাকলেও মিডিয়ায়, গণমানুষের মুখে বারবারই উচ্চারিত হতে দেখা যায় এই সময়টাতেই। আর জয়ের পর কোনও নিউজ তার বিপক্ষে গেলে বা পছন্দ না হলেই তিনি সেটাকে ফেক নিউজ বলে অভিহিত করতে শুরু করেন। ফলে বোঝা যায়, কেবল মজা করার জন্য ফেক নিউজ ছড়ানো হয় না, এর নেপথ্যে অনেক সময় আরও গভীর উদ্দেশ্য থাকে। এর মাধ্যমে সাইবার ওয়ার ঘোষণা করা হয়। পাল্টাপাল্টি ঘায়েল করার বিষয় থাকে। যখনই আপনি প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে চাইবেন, তখনই অস্ত্র শান দিতে থাকবেন, ‘সহিংসতা’ বাড়বে।

যেকোনও সংবাদ নির্ভর করে সোর্সের ওপর। সাংবাদিকরা তাদের সোর্স থেকে নিশ্চিত হয়ে তথ্য নেন। দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের কাছ থেকে মন্তব্য নেন। এরপর তিনি সংবাদ তৈরি করেন। কিন্তু এখন বিপদটা হলো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম। যেখানে হাজারও তথ্যের সমাহার। এত এত চটকদার তথ্যের মাঝখানে পড়ে বিভ্রান্ত হয়ে অহরহ ‘অপেশাদার সাংবাদিকতায়’ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমকেই প্রাইমারি সোর্স বানিয়ে সংবাদ তৈরি হয়ে যাচ্ছে। এখানেই বড় বিপদ তৈরি হয়। একটা কথা মনে রাখা উচিত, যখনই কোনও আলোচিত তথ্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে হাজির হবে, এর সঙ্গে সম্পৃক্ত ব্যক্তির কাছ থেকে আপনি নিশ্চিত হতে না পারলে সেটি বড় সংবাদ হবে না। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের তথ্য যাচাই-বাছাইয়ের মধ্য দিয়ে এগিয়ে একজন সংবাদকর্মী সিদ্ধান্ত নেবেন। এটি গণমাধ্যমের কর্তব্য। আর পাঠকেরও যে এ বিষয়ে কর্তব্য আছে, সেটিও তুলে ধরার দায়িত্ব মেইনস্ট্রিম গণমাধ্যমগুলোরই। কখন, কেন ফেক নিউজ তৈরি হয়, কারা কী স্বার্থে তৈরি করে, সেটি বোঝার উপায়গুলো প্রাথমিক স্তরে কী হতে পারে, সেগুলোর প্রচার-প্রচারণার দায়িত্ব মূলধারার গণমাধ্যমকে নিতে হবে তাদের স্বার্থেই।

কারণ, ফেক নিউজে ক্ষতিটা হয় পেশাদার সাংবাদিকতার। মানুষ সবসময় তথ্য নিয়ে কাজ করছে। এরপরও স্বীকার করতেই হবে, বিশ্বব্যাপী সাধারণ মানুষের মধ্যে সৎ সাংবাদিকতার বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে ধারণা অস্পষ্ট। এডেলম্যান ট্রাস্ট ব্যারোমিটার জরিপে দেখা গেছে, এতে অংশগ্রহণকারীর ৬৩ শতাংশই জানেন না গুজব বা মিথ্যা খবর থেকে পেশাদার সংবাদ কীভাবে আলাদা করবেন। যখন এত বিশাল জনগোষ্ঠী প্রকৃত সংবাদ থেকে ফেক নিউজকে আলাদা করতে পারছেন না, তখন সত্যিকার অর্থে শঙ্কার মুখে পেশাদার সাংবাদিকতা।

ফেক নিউজের সবচেয়ে বড় বিপদ হলো, একটি সংবাদের কারণে সহিংসতা বেড়ে যেতে পারে। কারও জীবন কিংবা ব্যক্তি সম্মান হুমকির মুখে পড়তে পারে। এমনকি মূল ঘটনা থেকে চোখ সরে যেতে পারে। এর দায় তাহলে কে নেবে? আমাদেরই তো নিতে হবে। ভালো সংবাদ হোক কিংবা মন্দ সংবাদ; নিশ্চিত না হয়ে তা উপস্থাপন নয়। এই নীতি ধরে রাখার পথে লড়াই করবেন যে কর্মীরা, তারাই শেষ বিচারে টিকে থাকবেন। চার বছর পথ খুবই ছোট, আবার দায়িত্বের দিকে এগিয়ে চলারও। বাংলা ট্রিবিউন অবিচল থাকুক তার ‘কম কথায় সব কথা বলা’য়। একইসঙ্গে প্রকৃত সাংবাদিকতার নৈতিক দৃঢ়তায়।

লেখক: প্রকাশক, বাংলা ট্রিবিউন ও ঢাকা ট্রিবিউন

/এসএএস/এমওএফ/এমএনএইচ/এমওএফ/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
যুদ্ধ কোনও সমাধান আনতে পারে না: প্রধানমন্ত্রী
যুদ্ধ কোনও সমাধান আনতে পারে না: প্রধানমন্ত্রী
শপথ নিলেন আপিল বিভাগের নতুন তিন বিচারপতি
শপথ নিলেন আপিল বিভাগের নতুন তিন বিচারপতি
চীনে আমেরিকার কোম্পানিগুলোর প্রতি ন্যায্য আচরণের আহ্বান ব্লিঙ্কেনের
চীনে আমেরিকার কোম্পানিগুলোর প্রতি ন্যায্য আচরণের আহ্বান ব্লিঙ্কেনের
সারা দেশে আরও ৭২ ঘণ্টার ‘হিট অ্যালার্ট’ জারি
সারা দেশে আরও ৭২ ঘণ্টার ‘হিট অ্যালার্ট’ জারি
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ