X
বৃহস্পতিবার, ২৬ জুন ২০২৫
১২ আষাঢ় ১৪৩২

একমাত্র ‘ফাঁসি’ই কি ধর্ষণরোধের সমাধান?

করভী মিজান
১১ জুলাই ২০১৯, ১৭:৪৫আপডেট : ১১ জুলাই ২০১৯, ১৭:৫১

করভী মিজান আমি সমাজবিজ্ঞানী নই। অ্যানালিস্ট নই বা মনোবিজ্ঞানী নই। শুধু আমার অবস্থান থেকে আমার অভিমত দিতে পারি। আমি আমার পরিবারকে, সন্তানদের শিক্ষা দিতে পারি। তাদের ভালো মানুষ হিসেবে তৈরি করতে পারি। তাই করেছিও। যে কোনও নারীর প্রতি সম্মানবোধ তৈরি তাদের মধ্যে মানবিক গুনাবলি বিকাশের সুযোগ করেছি। নিজেদের রক্ষা করার শিক্ষা দিয়েছি। একজন ‘মা’ হিসেবে আমার কর্তব্য দায়িত্ব এমনকি নিজের প্রতিও দায়িত্ব সচেতন থেকেছি।
২০১২ সালে দিল্লিতে চলন্ত বাসে ২৩ বছরের মেয়েটি জয়ন্তী সং পান্ডে গ্যাং রেপ হয়, পাঁচজন ছিল। মেয়েটি বাসে উঠেছিল তার বন্ধুর সঙ্গে। শুধু যে ধর্ষণ তা নয়। প্রধান ধর্ষক বাস চালক একটি রড মেয়েটির যোনিপথ ও পায়ুপথে ঠুকিয়ে দেয়। এরপর হাত ঠুকিয়ে ভেতরের সব নাড়িভূড়ি টেনে বের করে আনে ও মেয়েটিকে তার বন্ধুসহ কাপড় ছাড়া রাস্তার পাশে ফেলে দেয়। দিল্লি পুলিশ ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সবাইকে ধরে। ফাঁসির আদেশ হয়। আশ্চর্যের বিষয় এদের কারও জবানবন্দিতে ন্যূনতম রিগ্রেট ছিল না। প্রধান আসামি খুন হয় ত্রিহার জেলে। বলা হয় আত্মহত্যা। বাকিদের ফাঁসি। একজন ১৮ বছরের কমবয়সী ছিল তার সাজা হয়। আসামিদের বক্তব্য অনেকটাই এমন ছিল যে, ‘যা হয়েছে বেশ হয়েছে। রাত ৯ টায় কোনও ভদ্র মেয়ে বাড়ির বাইরে থাকে না। ওদের কাজ বাসায়, ডিস্কোতে যাওয়ার জন্য নয়। মডার্ন পোশাক পরার জন্য নয়।’ নেটফ্লিক্সে ৭ পর্বের ‘দিল্লি ক্রাইম’–এ ছবিটি দেখে নিতে পারেন। মেয়েটি ২ সপ্তাহ পর মারা যায়। ২০১২ সালের এই ঘটনাটি শিক্ষিত মহলকে হতভম্ব করে দিয়েছিল।

হ্যাঁ, সবার ফাঁসি হয়েছে। ধর্ষণ কমেছে কি?

ভারত বিশ্বের অন্যতম দেশ যেখানে ধর্ষণ রেট সবচেয়ে বেশি। ২০১৮ সালে প্রতিদিন গড়ে পাঁচজন নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছে। আরও অনেক অনেক ধর্ষণ লিপিবদ্ধই করা হয়নি।

ফেসবুকে, টুইটারে ও অন্যান্য গণমাধ্যমসহ প্রতিদিন খবরের কাগজ ও অনলাইন নিউজগুলো একই কথা বলে যাচ্ছে ধর্ষকদের ফাঁসি চাই। Don’t worry. এক ধর্ষক ফাঁসি দেবেন, নতুন ধর্ষকদের দল তৈরি হবে। উদাহরণ তো মাত্র দিলাম। ধর্ষণ কেবল একটি  অপরাধই নয়,  এটি একটি ভয়াবহ সামাজিক ব্যাধি। ধর্ষক তৈরি হচ্ছে কেন–তা কি কেউ ভাবার ন্যূনতম চেষ্টা করছে?

বাংলাদেশ আগে বাড়ছে

যতবার একটি করে ধর্ষণ হচ্ছে বাঙালিরা হুঙ্কার দিয়ে ওঠে ফাঁসি চাই। ফাঁসি চাই। তনু ধর্ষণ হত্যা, নুসরাত, হালের শিশু সায়মা! হাইকোর্টের সেই শিশু তানিয়া’র কথা মনে আছে তো? নাকি হিসেবে নেই? গত ৬ মাসেই ধর্ষণের শিকার হয়েছে ৭৩১ জন নারী ও শিশু। যাদের মধ্যে হত্যা করা হয়েছে ২৬ জনকে। এটা মহিলা পরিষদের রিপোর্ট। গতবছর এই সংখ্যাটি ছিল ৯৪২টি। অর্থাৎ ২০১৮ সালের রেকর্ড ২০১৯ সালের প্রথম ৬ মাসেই অতিক্রম। ‘বাংলাদেশ শিশু অধিকার ফোরাম’ ও ‘শিশু কল্যাণ ফোরাম’ নামের ২টি রিপোর্টে ৩২ জন প্রতিবন্ধী শিশুও ধর্ষণের শিকার। এই রিপোর্টের তথ্য আরও ভয়াবহ। ২০১৯ সালে এখন পর্যন্ত ২১৫৮ শিশু নির্যাতনের শিকার হয়েছে। এরমধ্যে মারা গেছে ৯৮৮। গত বছরের তুলনায় এবছর ইতোমধ্যে শিশু ধর্ষণের হার বেড়েছে ৪১ শতাংশ।

ধর্ষণের শিকার মেয়েদের সারাদেশে আটটি ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারের মাধ্যমে কাউন্সেলিং, পুলিশি ও আইনি সহায়তা দেওয়া হয়। ২০০১ সাল থেকে পর্যায়ক্রমে প্রতিষ্ঠিত এসব কেন্দ্র থেকে ৪ হাজার ৩৪১টি যৌন নির্যাতনের মামলা হয়েছে, যার মধ্যে ৫৭৮টি বিচার হয়েছে এবং সাজা হয়েছে মাত্র ৬৪টি। আমরা পুরো জাতি যেন বসে থাকি কখন আরেকটি নারী বা শিশু ধর্ষণ/খুন/বলি হবে। আর আমরা ফেসবুকজুড়ে পোস্ট দেব। মিডিয়া ফ্রন্ট পেইজে কিছুদিন ছবিসহ হেডলাইন দেবে। কিছু সংগঠন মানববন্ধন করবে। কিছু আঁতেল বক্তব্য পেশ করবে। ব্যস। আবার সবাই ব্যস্ত। অপেক্ষা পরবর্তী ধর্ষণ/খুন/বলি’র। আচ্ছা, বাঙালি পুরুষরা কেউ ধর্ষিত হয় না?

বিশ্বে কি হচ্ছে?

ইদানীং ফেসবুক সয়লাব বিভিন্ন দেশে ধর্ষকদের শাস্তির একটি ফিরিস্তি পোস্ট দিয়ে। সৌদি আরব মুসলিম বিশ্বের পরকাষ্ঠা হয়েও তার নাম বিশ্বের ধর্ষণ রেট তালিকায় (উইকিপিডিয়া রেপ স্ট্যাস্টিসটিক) সামনের দিকেই স্থান করে নিয়ে আছে। সৌদি আরবে ধর্ষণের শাস্তি মৃত্যুদণ্ড। কিন্তু সঙ্গে লাগবে ৪ জন প্রত্যক্ষদর্শীর সাক্ষী। শাস্তির নামে কী প্রহসন! আরেক মুসলিম দেশ পাকিস্তানও তালিকার প্রথম দিকের নাম। সেই দেশের শাস্তিও মৃত্যুদণ্ড।

ইউরোপ বা আমেরিকা পিছিয়ে নেই। তবে সেখানে শুধু ধর্ষণ নয়, শাস্তি পেতে হলে যে কোনও নারীকে ইভটিজিং, রেসিস্ট আচরণ বা সেক্সুয়াল হ্যারেসমেন্ট ইত্যাদি করলেই যথেষ্ট। শান্তিপ্রিয় দেশ সুইডেনের প্রতি ১ লাখ মানুষের মধ্যে ৬৯ জন নারী ধর্ষণের (২০১৪) শিকার হয়। তবে ধর্ষকদের বেশিরভাগই বিদেশি। ফ্রান্সে তো সবে ১৯৮০ সালে আইন পাস করা হয়েছে যে ধর্ষণ একটি ক্রাইম।

শ্রেণিবৈষম্য

যতদিন দেশে শ্রেণিবৈষম্য না কমবে হাজার শাস্তি দিয়েও ধর্ষণ রোধ সম্ভব নয়। একটা জিনিস লক্ষণীয় বাংলাদেশের ৯৯ শতাংশ ধর্ষণ নিম্নবিত্ত বা লো ক্লাসে ঘটছে। উচ্চবিত্তের মধ্যে এটা নেই বা খুবই কম। কারণ একটাই উচ্চবিত্তরা শিক্ষিত। আইন জানে এবং উচ্চবিত্ত পুরুষরা তাদের শরীরের খোরাক জোগাতে অর্থ বা প্রেমের বিনিময়ে সহজেই পেয়ে যাচ্ছে। কিন্তু যে পুরুষগুলো সমাজের নিম্ন-শ্রেণির থেকে আসছে তাদের কি সুযোগ? শুধু তাই নয় মেয়ে মানুষের শরীর সম্পর্কে তাদের ধারণাই নেই। অথচ হাতের মুঠোয় স্মার্ট ফোনের কল্যাণে বা ডিভিডি শপে পর্ন দেখছে। তাদের সামাজিক অবস্থান ও স্বপ্নের পর্ন দেখা বা মেয়ে মানুষের শরীর পাওয়া একেবারেই অসামঞ্জস্য তাদের বানিয়ে দিচ্ছে ‘ধর্ষক’। তাদের ক্রিমিনাল রেকর্ড নেই। অথচ ধর্ষণ করে খুন করতে দ্বিধাগ্রস্ত হচ্ছে না। মানুষের মধ্যে পাশবিক প্রবৃত্তির সঙ্গে শিক্ষা বা মানবতাবোধের প্রচণ্ডভাবে অভাব ঘটছে। এই শ্রেণির পুরুষের কাছে মেয়ে মানুষ যে বয়সেরই হোক না কেন তারা শুধু একটি ‘অবজেক্ট’। মানুষ নয়। আমাদের সমাজের ব্যবস্থাই তাদের মাথায় ঢোকাচ্ছে নারী মাত্রই ভোগের সামগ্রী। তাদের ভোগ করো, খুন করো, অত্যাচার করো। কোনও ব্যাপার না।

দেশের পতিতালয়গুলো কোথায়?

বাংলাদেশে যৌনকর্মীদের লাইসেন্স দেওয়া হয়। আমি তো বিশ্বাস করি, যে কোনও ঘুষ খোর, ভেজাল অসৎ ব্যবসায়ী এমনকি স্মাগলার মাদক ব্যবসায়ী–এসব পুরুষ বা নারীর চেয়ে একজন যৌনকর্মীর সম্মান অনেক বেশি। সে চুরি করে না। মিথ্যা বলে না। লিগ্যালি অর্থ উপার্জন করে। হাজার হাজার বছরের পুরনো ব্যবসা এই পতিতালয় হঠাৎ করে বাংলাদেশ থেকে বিদায় নেওয়া শুরু করলো কেন? টান বাজার, নিমতলি বা ইংলিশ রোডের পতিতালয়গুলো গেলো কোথায়?

যে কোনও সমাজে পতিতালয়ের প্রয়োজনীয়তা জানার জন্য বই পড়ার দরকার হয় না।

যে মুসলিম দেশগুলোয় পতিতালয় বেআইনি, সৌদি আরব ও পাকিস্তান দুটো দেশই ধর্ষণের তালিকায় শীর্ষেই আছে। পক্ষান্তরে ধর্ষণহীন বা ‘সেইফ কান্ট্রি উইমেন’ যে সব শীর্ষ দেশ যেমন, নিউজিল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, অস্ট্রিয়া, বেলজিয়াম, কানাডা, জাপান ইত্যাদি দেশে পতিতালয় মোটেও বেআইনি নয়। গ্রামে পরিবার রেখে শহরে কাজ ও বাস করা পুরুষের সংখ্যা বেশিই বলা যায়। কখনও কি ভেবেছেন তাদের যৌনবৃত্তির জন্য সমাজ বা সরকার কী পদক্ষেপ নিয়েছে? পতিতালয় বন্ধ করে লাভ কী হয়েছে? এখন পুরো শহরেই ভাসমান যৌনকর্মীরা। নেই তাদের ঠিকানা। পুরুষ গ্রাহকদেরও অবস্থা তথৈবচ। প্রতিদিন প্রতিনিয়ত এই অবস্থা আমাদের শ্রেণির নারীদেরও কি অনিশ্চয়তা এবং অনিরাপত্তা এর দিকে ঠেলে দিচ্ছে না? এমন না যে, ব্রথেল সেন্টার রাস্তার মোড়ে মোড়ে খুললেই ধর্ষণ বন্ধ হয়ে যাবে। তবে ব্রথেল সেন্টার অবশ্যই সমাজের ভারসাম্য রক্ষা করতে  গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সরকারের নাকের ডগা দিয়ে  ব্রথেল সেন্টারগুলো একের পর এক বন্ধ করে সামাজিক ভারসাম্যহীনতার সৃষ্টি করা হয়েছে প্রচণ্ডভাবে।

থাইল্যান্ড পতিতালয়ের রাজধানী বলা যায়। এখানে হাজারে ০ দশমিক ৯৫ ধর্ষণের শিকার হয় নারীরা। তবে ধর্ষণের প্রকারভেদ আছে এই দেশে। বেশিরভাগই ছাত্রদের মধ্যে দেখা যায়। কিন্তু কয়েক মাসের শিশু ধর্ষণের রেকর্ড এই দেশে নেই।

ধর্ষকদের ওপর গবেষণা কোথায়?

আমি আজ পর্যন্ত কোনও পত্রিকায় বা সরকারের পক্ষ থেকে কোনও বিবৃতি দেখিনি যেখানে শিশু-নারী ধর্ষকদের ওপর কোনও প্রকার গবেষণা করা হয়েছে। আমদের দেশে বিকৃত ধর্ষকদের সংখ্যা কেন এত বাড়ছে? তার কারণ জানতে সরকারের কোনও মাথা ব্যথাই নেই। আমরা সাধারণ মানুষরাও জানি না। অথচ ফাঁসি চাই বলে গলা ফাটাচ্ছি। যারা ধর্ষক, তারা সবাই আমাদের সমাজেই বসবাস করে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই শিশুদের ধর্ষকরা শিশু বা পরিবারের পরিচিত। অথচ আমরা তার কারণ ও সমাধান থেকে কত বহু দূরে!

অভাব/ শিক্ষা/ স্বপ্ন/ বাস্তবতা

আমাদের দেশটিকে ‘ডিজিটাল’ স্বপ্নের দেশ দেখাচ্ছে সরকার। অথচ এই শব্দটার মানে শ্রমিক শ্রেণির কয়জন জানে? বস্তিতে বা মানবেতর জীবনযাপনে অভ্যস্ত ও জন্ম নেওয়া পুরুষরা একদিকে অভাবের তাড়নায় সমাজের প্রতি বিতৃষ্ণা ও হাতাশার জন্ম হচ্ছে। অন্যদিকে   চলছে ইন্টারনেটে পর্ন দেখা। ইউটিউব বন্ধ করেও লাভ নেই। আগের যুগের মতো ডিভিডি, ভিসিডি চল শুরু হয়ে যাবে। বিশ্বের যে কোনও দেশেই ধর্ষক বা ক্রিমিনালদের ওপর নানা গবেষণায় এসব তথ্য উঠে এসেছে। শিক্ষার অভাবে তারা বাস্তবতা ও স্বপ্ন বা চাহিদার মধ্যে তখন তফাৎ করতে পারে না। সবচেয়ে সহজ ভিকটিম শিশু। মর‌্যালিটি যেখানে মৃত। সেখানে শিশুটিকে সুযোগ মতো রেহাই দিতে নারাজ ধর্ষকরা। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের মতো বিশাল বাজেট আমাদের আছে। কিংবা ৫০ বছর উদযাপনের বাজেট। কিন্তু সরকারের কাছে বস্তিতে বস্তিতে বা মিল কারখানায় বা স্কুলে অন্য যে কোনও জায়গায় ‘মর‌্যাল’ শিক্ষা দেওয়ার মতো মুড বা বাজেট নাই। ধর্মীয় শিক্ষালয়ে তো মাদ্রাসার কিছু শিক্ষকই ধর্ষক হয়ে বসে আছে। এমনকি মফস্বলের শিক্ষকরাও।

বেড়ে ওঠা ও পরিবার ও সমাজ

এই যে ভাসমান পরিবারগুলোর শিশুরা ভিকটিম হচ্ছে বা তাদের মধ্যে থেকেই ধর্ষক তৈরি হচ্ছে। কারণটা কী? প্রথমত এইসব পরিবার অভাবের তাড়নায় স্বামী-স্ত্রী দুজনেই কাজ করে। বাড়ির শিশুটিকে দেখে রাখার সময় বা এফোর্ড করার মতো ক্ষমতা তাদের নেই। কাজেই সহজেই শিশুরা বলি হচ্ছে। ধর্ষকরা তাদের আশেপাশেই ঘুরছে। শুধু তাই নয়, এসব পরিবারের মধ্যে অনেক মেয়েরই শিক্ষার ব্যবস্থা নেই। বাড়ির কাজ বা গার্মেন্টসের কাজে দিয়ে দেয়। পক্ষান্তরে ছেলে সন্তানগুলো সব ধরনের স্বাধীনতা ভোগ করে। খুব কম বয়সেই সমাজের সব অন্ধকার দিকগুলো দেখে ফেলে। নিজের মা ও বোন ছাড়া অন্য নারী সংস্পর্শ ওদের কাছে নেই। নারীকে সম্মান দেওয়ার বিষয়টি তারা শেখেনি। গ্রাম্য সমাজ তো আরও ভয়াবহ। বহুবার খবরে দেখেছি, গ্রামে মা-মেয়েদের ধর্ষণ করে গ্রামবাসীর সামনেই মাথা মুড়িয়ে প্রদক্ষিণ করানো হয়।  ওদের শেখাবে কে?

শহুরে শিক্ষিত পুরুষরাই বা কম কিসে?

বুকে হাত দিয়ে আপনারা শহরের শিক্ষিত পুরুষরা বলুন তো, আপনাদের অনেকের সামনে দিয়ে কোনও সুন্দরী নারী বা যে কোনও নারী হেঁটে গেলে ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে থাকেন না? বা চোখের কোনায় তাকে ফলো করেন না? কমেন্টস করেন না? আপনার বন্ধুর স্ত্রীর দিকে নজর দেন না? নারী কলিগদের স্মার্টলি বিরক্ত করেন না? আপনাদের জ্ঞাতার্থে বলে রাখছি এসবই সেক্সুয়াল হ্যারাসমেন্ট এর আওতাভুক্ত। অন্যের ফাঁসি চাওয়ার আগে নিজের মধ্যে ডুব দিয়ে দেখুন আপনি নিজে কতটুকু পরিষ্কার! একবার নারী সেজে ঢাকার রাস্তায় হেঁটে আসুন না? সহ্য করতে পারবেন? মার্কেটে ঘুরে আসুন না?  আমার তো মনে হয়, এর ধরনের পুরুষদের মগজ হারপিক দিয়ে পরিষ্কার করা উচিত।

আরো কিছু

নারীদের পোশাককে ধর্ষণের জন্য দায়ী করেন যেসব কুলাঙ্গার পুরুষ, আমার মতে, তাদেরও শাস্তির আওতায় আনা উচিত। এসব অজুহাত মানুষকে পরোক্ষভাবে ধর্ষণে ইন্ধন জোগায়। হাজার হাজার শিশুর ধর্ষণ ও হত্যার কারণ হিসেবে এদের বক্তব্য কী হতে পারে? আমার ধারণা, মাত্র শতকরা ১০ ভাগ ধর্ষক অপরিচিত। বাকি সব ধর্ষকই শিশু অথবা নারীর পরিবারের, পাড়ার, আত্মীয়, বাপের বয়সী গুরুজন, খালু, দুলাভাই, কাজিন  অথবা পরিচিত জন। পোশাক নয় ধর্ষকের সমস্যা মানসিক বিকৃতি। আমরা কেউই সমস্যার গভীরে যাই না। সাইকোলজিক্যাল বা সোশ্যাল কারণ চিহ্নিত করি না। বিশ্ব ব্যাংকের পরিক্রমায় ২০১৮ অব্দি বাংলাদেশের শ্রমজীবী নারীদের (১৫ বছর ও অধিক) অংশগ্রহণ শতকরা মাত্র ৩৬ ভাগ। যে কোনও উন্নয়নশীল দেশের তুলনায় এই সংখ্যা লজ্জাজনক। শুধু মুখে মুখে দেশে ‘উন্নয়নের জোয়ার’ বললেই তো চলবে না। যে দেশে নারী সংখ্যা পুরুষদের সমান বা বেশি। সেই দেশে যতদিন কর্মক্ষেত্রে নারী অংশগ্রহণ না বাড়বে।পুরুষ নারীদের মানুষ হিসেবে গণ্য করবে না। সম্মান করা দূরে থাকুক।

সবচেয়ে আগে জরুরি জামিন নামঞ্জুর 

ফাঁসি তো অনেক পরের ব্যাপার। ধর্ষকরা জামিনে খালাস পাচ্ছে কীভাবে? আমাদের দেশে সম্ভব নয় এমন কিছু নেই। তবে পুলিশ বিভাগের উদাসীনতা অগ্রহণযোগ্য।

যদি সরকার নারী নির্যাতন আইন প্রণয়ন সম্ভব করতে পারে। তবে শিশু ও নারী ধর্ষণ আইন সংশোধন ও দ্রুত প্রণয়ন সম্ভব নয় কেন? ধর্ষকদের জামিন দিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এরপর বছরের পর বছর ধরে বিচারের নামে নাটক চলছে। এসব বন্ধ করা অতি জরুরি। বিশেষ ট্রাইবুন্যালে ১ মাসের মধ্যে বিচার প্রয়োজন। বিচারে সর্বোচ্চ শাস্তি দেওয়া জরুরি। কিন্তু মনে রাখতে হবে ১ ধর্ষককে ফাঁসিতে চড়ালেই নতুন আরও ১০ ধর্ষক তৈরির পথ বন্ধ হবে না। আর ফাঁসিতে চড়ালেই সমস্যার সমাধান হবে না। তা নাহলে বাংলাদেশের নামও অতিসত্তর ধর্ষণকারী দেশ হিসেবে শীর্ষ তালিকায় থাকবে।

লেখক: সাংবাদিক ও মিডিয়া ব্যক্তিত্ব

 

 

/এসএএস/এমএনএইচ/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
আল নাসরে রোনালদোর নতুন চুক্তি
আল নাসরে রোনালদোর নতুন চুক্তি
‘রাজধানীর যানজটে প্রতিবছর নষ্ট হচ্ছে ৫ মিলিয়ন কর্মঘণ্টা’
‘রাজধানীর যানজটে প্রতিবছর নষ্ট হচ্ছে ৫ মিলিয়ন কর্মঘণ্টা’
এইচএসসি পরীক্ষায় প্রথম দিনে অনুপস্থিত ১৪৫১৩ জন
এইচএসসি পরীক্ষায় প্রথম দিনে অনুপস্থিত ১৪৫১৩ জন
প্রধান উপদেষ্টার মালয়েশিয়া সফর আগস্টে
প্রধান উপদেষ্টার মালয়েশিয়া সফর আগস্টে
সর্বশেষসর্বাধিক