X
শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪
১৪ চৈত্র ১৪৩০

শহীদ মিনারে শিশু ধর্ষণ ও হত্যা: উন্নয়নের মুখে এক সশব্দ আঘাত

শারমিন শামস্
০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ১৭:৪১আপডেট : ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ১৭:৪১

শারমিন শামস্ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের পেছনে একটি শিশুর বিবস্ত্র লাশ পাওয়া গেছে। ধর্ষণের শিকার শিশু এবং পরে হত্যা করা হয়েছে। সে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার পথশিশু। বিশ্ববিদ্যালয়ে ফুল, চা, চকোলেট বিক্রি করা অসংখ্য শিশুর একজন। যারা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় নিয়মিত যান, তাদের কাছে সে পরিচিত চেহারার ১৩/১৪ বছরের একটি মিষ্টি বাচ্চা।

শিশুটিকে ধর্ষণ ও হত্যার অভিযোগে একজনকে আটক করেছে পুলিশ। সে স্বীকারোক্তিও দিয়েছে। ঘটনার সাক্ষী কয়েকজন পথশিশুর বয়ান এবং উপস্থিত পুলিশের বক্তব্য অনুযায়ী, শারীরিক সম্পর্কের সময় সে বাধা দেয়, তখন তাকে হত্যা করে ধর্ষক।

কিছু দিন আগে ক্যাম্পাসে নিয়মিত যাতায়াত করেন এমন একজন তরুণী একটি ফেসবুক পোস্ট দিয়েছিলেন। উনি লিখেছিলেন, ক্যাম্পাসে মেয়ে শিশুগুলোকে, বিশেষ করে একটি সুন্দর চোখের মেয়ে শিশুর কথা তিনি উল্লেখ করেছেন, সেই শিশুটিকে নানা ধরনের পুরুষ আদরের নামে বাজেভাবে স্পর্শ করে। মেয়েটি পালাতে চাইলেও বারবার তাকে টেনে আনা হয় এবং আদরের ছলে মেয়েটিকে জোরে চেপে ধরা ও স্পর্শ করা হয়। তিনি বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে দেখতে বলেছেন। তিনি মনে করছেন, বাচ্চাটিকে অ্যাবিউস করা হচ্ছে।

পথশিশুদের নিরাপত্তা বিশেষ করে যৌন নিরাপত্তা পরিস্থিতি অত্যন্ত নাজুক। এক্ষেত্রে ছেলে শিশুরাও চরম হেনস্থার শিকার হয়। পথশিশুদের নিয়ে কাজ করতে গিয়ে জেনেছি রাতের বেলা কতভাবে তারা নির্যাতিত হয়, যা তারা নিজেদের ভেতরে সকালবেলায় আলোচনা করে এবং একসময় এটাকেই জীবনের অংশ বলে মেনে নিতে শেখে। নিরাপত্তাহীনতা, আশ্রয়হীন জীবন এ শহরের অনেককে যৌনতা বিক্রি করতেও শেখাচ্ছে কিনা, সেটি গুরুত্ব সহকারে দেখা প্রয়োজন।

ঢাকা মেট্রোপলিটনের ঝকঝকে নিয়ন আলোর নিচে, সভ্যতা আর উন্নয়নের গালভরা বড় বড় কথার স্তূপের ভেতরে শুয়ে আছে এরকম কত কত শিশু, যারা শরীর বিক্রি করে ভাত কিনতে শিখছে, বাধ্য হচ্ছে, যা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। আর তাই এসবের ভেতরেই তারা ধর্ষণ ও হত্যার শিকার হয়ে যাচ্ছে নীরবে কিংবা সরবে।

পথশিশুদের জন্য শিক্ষা, খাদ্য, চিকিৎসা, আশ্রয়- এসব নিয়ে কত কথা বলছি। কিন্তু যে পথশিশুদের রাতের বেলায় শুয়ে থাকতে হয় ডাস্টবিনের পাশে, ফুটপাতে , ঝোপঝাড়ে- তাদের ধর্ষণ ও অ্যাবিউস থেকে রক্ষা করতে কি ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে? আদৌ কি বিষয়টা গুরুত্ব দিয়ে ভাবা হচ্ছে? যে শিশুটিকে স্নেহ দেওয়ার ছলে অ্যাবিউস করছে তথাকথিত শিক্ষিত ভদ্রলোকেরাই, তাদের হাত থেকে ওই অভিভাবকহীন শিশুকে আগলে রাখবে কে? কারা? নাকি এই শিশুদের সুরক্ষা অতটা জরুরি নয় উন্নয়নের ডামাডোলে?

ফুটপাতে ঘুমিয়ে থাকা শিশুটিকে শহীদ মিনারের পেছনে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করা হয়েছে। তারপর খুন করা হয়েছে। বিবস্ত্র লাশ পড়ে ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায়- শহীদ মিনারের পাশে। এই ভয়ংকর কুৎসিত দৃশ্যটি আমাদের কতটুকু স্পর্শ করেছে? একটি গরিব, বাচ্চা মেয়ের ধর্ষণ এবং হত্যা কি আমাদের স্পর্শ করে আদৌ? নাকি আমরা ধরেই নিই ফুটপাতে থাকা, ময়লা কুড়িয়ে খাওয়া শিশুদের ভবিতব্য এই ধর্ষণ এবং মরে যাওয়া- এতে কারও কোনও হাত নেই, কিছুই করার নেই!

ফুটপাতে, রাস্তায়, ডাস্টবিনে ঘুমিয়ে থাকা আশ্রয়হীন, অভিভাবকহীন, নিরাপত্তাহীন শিশু কিশোরের সংখ্যা কম নয়। সরকারের এত এত উন্নয়ন প্রকল্পে কেন তাদের জায়গা হয় না আমি জানি না। উন্নয়ন প্রকল্পের প্রথম সারিতে কেন এই শিশুদের অন্তর্ভুক্তি নেই, আমি জানি না।

কিছু দিন আগে কলাবাগান এলাকায় কিশোরী ধর্ষণ ও হত্যার পর আমাদের বিবেক আর গোয়েন্দা মন ইত্যাদি বিশাল আকারে জেগে উঠেছিল। ১৪ বছরের কিশোরীর ধর্ষণ, হত্যা এবং বিবস্ত্র লাশ আমাদের মনকে জাগাতে পারলো কতটা? কীভাবে কোনও শিশু মেট্রোপলিটন নগরের ঝা-চকচকে এলাকায় ধর্ষিত ও খুন হয়ে বিবস্ত্র পড়ে থাকে? একটি নগরের এত এত সভ্য মানুষের ভিড়ে, এত এত সংস্কৃতিমনা মানুষের এলাকায় শিশু ধর্ষণের মতো নারকীয় ঘটনা কীভাবে ঘটে যায়? কেন এসব শিশুর কোনও বাড়ি নেই? কেন ওদের রক্ষা করা যায় না? কেন ওদের নিজেদের রক্ষা করবার এবং প্রয়োজনীয় যৌন শিক্ষা দেওয়ার কেউ নেই? কেন ওদের নিরাপত্তার জন্য বিশেষ বাহিনী নেই? কেন ওদের প্রয়োরিটি লিস্টে রাখা হয় না? কেন কোনও শিশুকে বাঁচার তাগিদে, ক্ষুধার জ্বালায় শরীর বিক্রির পথে যেতে হয়? কেন?

মিমের হত্যা আমাদের সভ্য উন্নত হয়ে ওঠার বাসনার মুখে একটি স্ব-জোরে আঘাত দিয়েছে। যে জাতি শিশুদের রক্ষা করতে পারে না, সেই জাতির মতো অসভ্য আর কেউ হতে পারে না!

লেখক: সম্পাদক, ফেমিনিস্ট ফ্যাক্টর

/এসএএস/এমওএফ/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে মানবাধিকার উইং চালুর পরামর্শ সংসদীয় কমিটির
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে মানবাধিকার উইং চালুর পরামর্শ সংসদীয় কমিটির
পণ্ড হলো না পরাগের শ্রম, দিল্লিকে হারালো রাজস্থান
পণ্ড হলো না পরাগের শ্রম, দিল্লিকে হারালো রাজস্থান
বাসের পেছনের অংশ খোয়া যাচ্ছে কেন?
বাসের পেছনের অংশ খোয়া যাচ্ছে কেন?
বিরল সূর্যগ্রহণ দেখতে নায়াগ্রা জলপ্রপাতে জড়ো হবেন ১০ লাখ দর্শনার্থী
বিরল সূর্যগ্রহণ দেখতে নায়াগ্রা জলপ্রপাতে জড়ো হবেন ১০ লাখ দর্শনার্থী
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ