X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

নারায়ণগঞ্জের রাজনৈতিক গণিত

সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা
১২ জানুয়ারি ২০২২, ১৭:০০আপডেট : ১৩ জানুয়ারি ২০২২, ১৭:০৮

সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচন যতই কাছে আসছে, নারায়ণগঞ্জবাসী তো বটেই, রাজনীতি নিয়ে যারা ভাবেন তারাও একটি বিষয় বেশি বেশি ভাবছেন, আর তা হলো অঙ্ক। শাসক দলের প্রতীক নৌকার ঘরে কোন্দল, মেয়র প্রার্থী সেলিনা হায়াৎ আইভী বনাম স্থানীয় এমপি শামীম ওসমানের প্রকাশ্য দ্বন্দ্ব, দলের কেন্দ্রীয় পর্যায় থেকে নির্দেশনা পেয়ে সংবাদ সম্মেলন ডেকে ‘দলের প্রার্থীর চেয়ে প্রতীকের পক্ষে’ অবস্থান নেওয়া সবই এখন অঙ্ক।

আওয়ামী লীগের দু’পক্ষই বুদ্ধির চর্চা করছে আর অঙ্কের হিসাব কাজে লাগাতে পারদর্শী হওয়ার চেষ্টা করছে। এটা এমন এক পরীক্ষা যেখানে আদর্শের চেয়ে অঙ্কের মাহাত্ম্যেই জয়-পরাজয়।

সম্প্রতি শেষ হয়েছে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন। ব্যাপক সংঘর্ষ, খুন-জখমের উৎসব নির্বাচনি আমেজকে বিতাড়িত করে প্রান্তিক জনপদকে আতঙ্কিত করে রেখেছিল দীর্ঘ সময় ধরে, যার রেশ এখনও চলছে। দলীয় প্রতীকে নির্বাচন, নেই প্রধান প্রতিপক্ষ বিএনপি’র ধানের শীষ। তাই আওয়ামী লীগ বনাম আওয়ামী লীগের এক সংঘাতময় নির্বাচনি চর্চা আমরা দেখলাম। নির্বাচন যে একটা অঙ্ক সেটা বোঝা গেলো শাসক দলের ভেতরকার কোন্দলে। এখন হিসাব চলছে কত জায়গায় দলের বিদ্রোহী প্রার্থী নৌকাকে হারিয়েছেন, হিসাব চলছে ঠিক ঠিক জায়গায় ঠিক ঠিক প্রার্থী দিলে দলীয় কোন্দল না বাধিয়ে দলীয় ঐক্য ধরে রাখা যেতো কিনা তা নিয়ে।

দেশব্যাপী এই ইউপি নির্বাচনের পরে উদভ্রান্ত ব্যস্ততায় দলের নিশ্চয়ই এই কাজটিই করবার কথা। ঠিক তখনই ঢাকার পাশে নারায়ণগঞ্জের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ সিটি নির্বাচনে আবার দলের ভেতর ঐক্য সমস্যা সামনে হাজির। গোষ্ঠীভিত্তিক রাজনীতিই যেহেতু এই গণিতের ভিত্তি, তাই আগামী ১৬ জানুয়ারি নির্বাচনের জয়-পরাজয় যেটাই হোক – চলমান থাকবে অঙ্কের হিসাব।

মেয়র প্রার্থী আইভী একদিন শামীম ওসমানকে বড় ভাই বললেন। কিন্তু স্বতন্ত্র প্রার্থী তৈমুর আলম খন্দকারের মিছিলে শামীম ওসমানের ভাই জাতীয় পার্টি নেতা সেলিম ওসমানের ঘনিষ্ঠ কয়েকজন কাউন্সিলরকে দেখেই অবস্থান পাল্টে শামীম ওসমানকে গডফাদার বলেছেন। এই বন্দর নগরীর দুটি শক্তিশালী পক্ষের দ্বন্দ্ব বাতাস ছড়িয়েছে দলের কর্মী সমর্থকদের মধ্যেও। বিলুপ্ত হয়েছে ছাত্রলীগের মহানগর কমিটি। ফেসবুকেও দেখছি এর আভাস।

জটিল অঙ্ক আঁচ করতে পেরে দলীয় প্রার্থী ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী এবং সংসদ সদস্য শামীম ওসমানের মধ্যকার দ্বন্দ্ব কঠোরভাবে সামলাতে চাচ্ছে আওয়ামী লীগ। নীতিনির্ধারণী জায়গা থেকে বলা হয়েছে, দলীয় শৃঙ্খলা যাতে কেউ না ভাঙে এ নির্দেশনা আমাদের সবসময় সবার প্রতি থাকে। তাই শামীম ওসমানও সংবাদ সম্মেলন ডেকে নৌকার পক্ষে কাজ করতে দলীয় নেতাকর্মীদের বলেছেন। কিন্তু নারায়ণগঞ্জের নাগরিক সমাজ ও রাজনৈতিক সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলো বলছে, শামীম ওসমানের এই সংবাদ সম্মেলনের মধ্য দিয়ে এই শহরে বা জেলায় আইভী-ওসমান পরিবারের পুরনো বিভেদ নতুন মাত্রা পেয়েছে। কারণ, সরাসরি আইভীকে জেতাতে হবে শামীম ওসমান এমন কথা বলেননি, বলেছেন প্রতীকের কথা।

এবারের নির্বাচনের শুরু থেকেই চুপচাপ ছিলেন শামীম ওসমান। তার বিষয়ে প্রথম মুখ খোলেন সেলিনা হায়াৎ আইভী। এটা তার এক প্রকার কৌশল বলেই ভাবা হচ্ছে। এর মাধ্যমে তিনি শামীম ওসমানকে দলীয় চাপে ফেলেছেন, এবং প্রতিপক্ষ তৈমুর আলম খন্দকারের জন্যও পরিস্থিতি কঠিন করে ফেলেছেন আইভীবিরোধী আওয়ামী গ্রুপকে সরাসরি কাছে পাওয়ার ক্ষেত্রে।

একটা স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের নির্বাচনের সময় যে আলোচনা মিডিয়া কিংবা জনপরিসরে হতে পারতো সেটা হচ্ছে না। আলোচনা হওয়া দরকার ছিল মেয়র হিসেবে আইভী কী করেছেন, কী করেননি। তৈমুর নতুন কী করতে চান ইত্যাদি। আলোচনা হতে পারতো নারায়ণগঞ্জে নির্বাচনি পরিবেশ কেমন কিংবা কাউন্সিলররা কীভাবে প্রচারণা চালাচ্ছেন, অবাধ ভোটের শান্তিপূর্ণ পরিবেশ আছে কিনা। কিন্তু এসব আলোচনা কেমন আড়ালে চলে গেলো আইভী-শামীম দ্বন্দ্বের ঝড়ে।

কোন্দল-কাঁটায় বিদ্ধ হয়েছে শাসক দল সারা দেশে ইউপি নির্বাচনের সময়। দু’বছর পর যে জাতীয় নির্বাচন হবে তার জন্য দলের অবস্থান জানার সবচেয়ে বড় উপায় ছিল স্থানীয় নির্বাচনে দলের সাংগঠনিক শক্তি কতটা মজবুত সেটা যাচাই করা। কিন্তু সেটা করা গেলো না। বরং তৃণমূল পর্যায়ে ব্যাপক দ্বন্দ্ব আর সংঘাতের চিত্রটাই বড় হয়ে উঠলো। ধানের শীষ নেই, অথচ একের পর এক হেরেছেন নৌকার প্রার্থীরা। এতে দলের ত্যাগী ও সাধারণ কর্মীদের মনোবলে চিড় ধরেছে কিনা সেই অঙ্কটাও কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে করতে হবে এখন।  

নারায়ণগঞ্জ কেন্দ্রের আরও নিকটে। তাই এখানকার চিত্রটা দলের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। ডাক্তার সেলিনা হায়াত আইভী ব্যক্তি হিসেবে জনপ্রিয়। শামীম ওসমানও তাই। তাদের এই প্রকাশ্য দ্বন্দ্বের কারণে দলের সব স্তরের নেতাকর্মীদের মধ্যে জল্পনা রয়েছে, ভোটের দিন দলের সব অংশ ময়দানে নামবে তো? দলীয় রাজনীতির ঊর্ধ্বে যে ব্যক্তিগত সৌজন্য থাকে, তাও কি এই দু’পক্ষ শীতরক্ষায় উৎসর্গ করে এসেছেন কিনা সেই পাটিগণিতও নাগরিক মনের ভাবনায়। কীভাবে ব্যক্তিগত সৌজন্য বজায় রেখেও রাজনৈতিক বিরোধে অবিচলিত থাকা যায় সেটা যে আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতি থেকে হারিয়ে যাচ্ছে তা নতুন নতুন নির্বাচনে আমাদের সামনে উপস্থিত হচ্ছে।

লেখক: সাংবাদিক

/এসএএস/এমওএফ/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
সৌন্দর্যের সংজ্ঞা বদলাতে চান ম্রুনাল
সৌন্দর্যের সংজ্ঞা বদলাতে চান ম্রুনাল
পিএসজির অপেক্ষা বাড়িয়ে দিলো মোনাকো
পিএসজির অপেক্ষা বাড়িয়ে দিলো মোনাকো
অস্ট্রেলিয়ার সৈকতে আটকা পড়েছে শতাধিক পাইলট তিমি
অস্ট্রেলিয়ার সৈকতে আটকা পড়েছে শতাধিক পাইলট তিমি
যুদ্ধ কোনও সমাধান আনতে পারে না: প্রধানমন্ত্রী
যুদ্ধ কোনও সমাধান আনতে পারে না: প্রধানমন্ত্রী
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ