X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১১ বৈশাখ ১৪৩১

হাওরের বুকে গাড়ির চাকা ঘোরে

মোস্তফা হোসেইন
৩০ জানুয়ারি ২০২২, ১৮:৪৩আপডেট : ৩০ জানুয়ারি ২০২২, ১৮:৪৩
মোস্তফা হোসেইন স্বপ্নেরা ভেসে বেড়ায়। কবিতার ভাষা বলে নয়, মানুষের স্বপ্ন আর সাধ্যে ফারাক থাকে বলেই স্বপ্নগুলো সব শূন্যে বসত করে। যেমনটা বলা হয়- স্বপ্ন তো স্বপ্নই, বাস্তবের সঙ্গে এর কতটাই বা সাযুজ্য আছে। বিপরীতটা কি হয় না? এ প্রসঙ্গে বিজ্ঞজন অধ্যাপক আব্দুল্লাহ আবু সাঈদের একটি উক্তি মনে পড়ছে, মর্মার্থ ছিল এমন– প্রতিটি মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড় হয়। কী বলা যায় এবার? আসলেও মানুষ স্বপ্নকে বাস্তবে রূপান্তর করতে পারে। যদি স্বপ্ন হয়, আরাধ্য কিছুর। আমরা সেরকম স্বপ্ন কি দেখতে পারি? স্বপ্নের সমান হয়ে যেতে পারি। এমন গর্বিত উচ্চারণ করা কি এখন আর অবাস্তব বলে মনে হয় সবসময়?

সাঈদ স্যারের উক্তির সঙ্গে একটু মিশেল দিয়ে বলি- স্বপ্ন ও সাহস যদি একীভূত হয়, তখন স্বপ্নও বাস্তবে ধরা দেয়। তাহলে একজন স্বপ্নদ্রষ্টার প্রয়োজন, যিনি স্বপ্ন দেখেন এবং নিজেও স্বপ্নের সমান সাহসী মানুষ। সে রকম মানুষ যদি থাকে, তাহলে অসাধ্য সাধনও হতে পারে। যদি কিছু উদাহরণ তৈরি হয়ে যায়, প্রতিকূলতা জয় করে, যদি দুঃস্বপ্ন হিসেবে অভিহিত কোনও কাজ বাস্তবে দেখা যায়, তাহলে নিশ্চয়ই স্বপ্নদ্রষ্টার সাহস সঞ্চারিত হয় সহযোগী-সহকর্মীদের মধ্যেও। তারাও স্বপ্নের জোগান দিতে পারেন, নতুন নতুন স্বপ্ন দেখতে উদ্বুদ্ধ করতে পারেন এবং বাস্তবায়নেও ভূমিকা রাখতে পারেন। স্বপ্ন তখন আর আলাউদ্দীনের চেরাগ থাকে না। ভোক্তার ঘরে বিদ্যুতের আলোয় আলোকিত সত্যের মতো বাস্তব হয়ে যায়।

তেমনই উজ্জ্বল আর সম্ভাবনার আরেকটি স্বপ্নের কথা শুনলাম গত মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মুখ থেকে। তিনি বললেন, হাওরে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে করার কথা যেন চিন্তা করা হয়। উন্নয়নের প্রয়োজনে হাওরের এপার-ওপারের মানুষের সামাজিক ও অর্থনৈতিক বন্ধন তৈরি করতে হবে। প্রধানমন্ত্রীর এই স্বপ্নের পেছনের বিষয়টি ছিল হাওরের বুকে গাড়ি চলার পথ। প্রধানমন্ত্রীর এমন স্বপ্নসূত্রেই মঙ্গলবার রাতেই হাওরপাড়ের মানুষ পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নানকে অনুরোধ করেছিলাম, আসলে এত বড় সাহসী স্বপ্নের পেছনের কথাটা কী?

হাওর এলাকার কষ্টের জীবন পাড়ি দেওয়া মন্ত্রী মহোদয় বললেন, হাওর জেলা সুনামগঞ্জ আর নেত্রকোনার সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকার সংযোগ সড়ক প্রকল্প অনুমোদনের সূত্রেই প্রধানমন্ত্রীর এই স্বপ্ন। মাত্র ৫০ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণ করেই দুটি জেলাকে দৃঢ়বন্ধনে আবদ্ধ করা যায়। দু’টি জেলার মানুষের জীবনমান বদলে দেওয়া যায়। কিন্তু কাজটা কঠিন। গভীর হাওর এলাকায় সড়ক টিকিয়ে রাখা যায় না। প্রাসঙ্গিকভাবেই প্রধানমন্ত্রী জোর দিলেন, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে করার কথা যেন চিন্তা করা হয় গুরুত্বসহ। শুধু তাই নয়, হাওরের প্রাকৃতিক পরিবেশ ঠিক রেখে নৌ-চলাচল পথ বিঘ্ন না ঘটিয়ে যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তোলতে হবে।

৫০ কিলোমিটারই কি এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে হবে? পরিকল্পনা মন্ত্রী বললেন, তেমন নয়। হয়তো ১৫ কিলোমিটার এমনটা করতে হবে। আর হাওয়রের পানি চলার সুবিধার্থে ঘন ঘন ব্রিজ করা যেতে পারে। নিকট অতীতের আলোকেই প্রশ্ন জেগেছিল এমন পরিকল্পনা অনেকই নেওয়া হয়, অনেকই আছে যা ফাইলবন্দি থাকে বছরের পর বছর। আর সেই সুবাদে প্রকল্প শুরু হতে হতেই বাজেট বেড়ে যায়। কাজ শুরু হতে আরও দেরি হয়। যা বাংলাদেশের চেনাচিত্র। পরিকল্পনামন্ত্রী বললেন, প্রাথমিক কাজ উদ্বোধন হবে এক দুই মাসের মধ্যে। পরিকল্পনামন্ত্রীর এলাকার প্রয়োজনীয়তা সংশ্লিষ্ট হওয়ায় আশা করা যায় তিনি উঠেপড়ে লাগবেন।

হাওরের যৌবনে সুনামগঞ্জবাসীর কপালে থাকে বার্ধক্যের দুর্ভোগ। অনেকটা জায়গা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে পানির কারণে। এপার ওপারের জেলা নেত্রকোনা যোগাযোগ যেমন কষ্টকর হয় তেমনই ব্যয়বহুলও হয়। এমন অবস্থায় বর্তমান সরকার হাওর এলাকায় উড়াল সড়ক ও ভৌত অবকাঠামো উন্নয়নের লক্ষ্যে প্রায় সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকার বড় একটি প্রকল্প গ্রহণ করে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে স্থানীয় সরকার বিভাগ ও স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর। যা ২০২৫ সালে শেষ হওয়ার কথা। শুধু তা-ই নয়, হাওর জেলাগুলোর জীবনযাত্রায় ব্যাপক পরিবর্তনের জন্য গৃহীত হয়েছে সরকারি বিভিন্ন প্রকল্প। যা সাধারণ উন্নয়ন ধারাকে সমৃদ্ধ করতে যথার্থ বলে মনে করা হচ্ছে।

প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন হলে এই অঞ্চলের হাজার হাজার মানুষের ভাগ্যোন্নয়নও নিশ্চিত হবে। আর পদ্মা সেতু, কর্ণফুলী টানেল, ঢাকা মেট্রোরেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের মতো মেগা প্রকল্পগুলোর অগ্রগতি দেখে আমরা অনুমান করতে পারি হাওরের জেলাগুলোতেও উন্নয়নের ছোঁয়া লাগবে। আর এই মুহূর্তে হাওর এলাকা মিঠামইন, অষ্টগ্রাম ইত্যাদি এলাকা যেমন বাংলাদেশের দর্শনীয় স্থান হিসেবে গণ্য হয়েছে, আগামীতে তেমনি সুনামগঞ্জ-নেত্রকোনার এই উড়াল সেতুও হবে দর্শনীয় স্থান এবং জীবনমান বৃদ্ধির সহায়ক শক্তি তো বটেই। জননেত্রী শেখ হাসিনার স্বপ্নগুলো বাস্তব হয় সেই সুবাদে আমরা অবশ্যই আশাবাদী হতে পারি এই স্বপ্নও বাস্তবায়ন হবে এবং যথাসময়েই।

লেখক: সাংবাদিক, শিশুসাহিত্যিক ও মুক্তিযুদ্ধ গবেষক।
/এসএএস/এমওএফ/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
ছাত্রলীগের ‘অনুরোধে’ গ্রীষ্মকালীন ছুটি পেছালো রাবি প্রশাসন
ছাত্রলীগের ‘অনুরোধে’ গ্রীষ্মকালীন ছুটি পেছালো রাবি প্রশাসন
সাজেকে ট্রাক খাদে পড়ে নিহত বেড়ে ৯
সাজেকে ট্রাক খাদে পড়ে নিহত বেড়ে ৯
বার্সেলোনার সঙ্গে থাকছেন জাভি!
বার্সেলোনার সঙ্গে থাকছেন জাভি!
চার বছরেও পাল্টায়নি ম্যালেরিয়া পরিস্থিতি, প্রশ্ন নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি নিয়ে
চার বছরেও পাল্টায়নি ম্যালেরিয়া পরিস্থিতি, প্রশ্ন নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি নিয়ে
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ