X
শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪
৭ বৈশাখ ১৪৩১

নির্বাচন কমিশন গঠন আইন: অন্যান্য দেশের সঙ্গে তুলনামূলক বিশ্লেষণ

বিপ্লব বড়ুয়া
০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১৮:১৪আপডেট : ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১৮:৫৩

বিপ্লব বড়ুয়া বহুল আলোচিত ও প্রতীক্ষিত নির্বাচন কমিশন গঠন আইন জাতীয় সংসদে পাস হয়েছে। ফলে স্বাধীনতার ৫০ বছর পর বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন গঠন সংক্রান্ত আইন প্রণীত হয়েছে। গত ২৭ জানুয়ারি একাদশ জাতীয় সংসদের ষোড়শ অধিবেশনে ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ বিল-২০২২’ পাস হয়। বিচার ও সংসদ বিষয়কমন্ত্রী আনিসুল হক সংবিধানের ১১৮(১) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী বিলটি পাসের প্রস্তাব করলে তা কণ্ঠভোটে পাস হয়।

১৯৭২ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সংবিধানে স্বাধীন নির্বাচন কমিশন প্রতিষ্ঠাসহ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থার জন্য প্রয়োজনীয় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান সৃষ্টি করার বিধান সংযোজন করেন। সে সময় বিশ্বের অনেক দেশেই নির্বাচন পরিচালনার বিষয়টি নির্বাহী বিভাগের হাতে রাখা হতো। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের সংবিধানে নির্বাচন পরিচালনার সর্বময় ক্ষমতা একটি স্বাধীন ও নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের ওপর ন্যস্ত করেন এবং কোনোরূপ আইনি অস্পষ্টতা ও দুর্বোধ্যতা ব্যতিরেকে একটি স্বাধীন ও নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন প্রতিষ্ঠার বিধান প্রণয়ন করেন। বঙ্গবন্ধুর সময়ই বাংলাদেশের প্রথম নির্বাচন কমিশন গঠিত হয়। আর এই নির্বাচন কমিশনকে শক্তিশালী করার লক্ষ্যে বিভিন্ন পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। কিন্তু নির্বাচন কমিশন গঠন সম্পর্কিত আইন প্রণয়নে সংবিধানে নির্দেশনা থাকলেও বিগত সময়ে তা উপেক্ষিত থেকেছে।

নির্বাচন কমিশন সংক্রান্ত ইতিহাসের দিকে যদি আমরা তাকাই তাহলে দেখি, ২০০৬ সালের মতো নির্বাচন কমিশন গঠন প্রক্রিয়াও ঘটেছে আমাদের দেশে। তখন ক্ষমতাসীন বিএনপি একজন কর্মরত বিচারপতিকে নির্বাচন কমিশনের প্রধান করেছিল। একই ব্যক্তি একই সময় দুটি সাংবিধানিক দায়িত্বে থাকা সংবিধান লঙ্ঘনের শামিল। তারপরও এ ঘটনা ঘটেছে এবং এটা নিয়ে ওই দলের পক্ষ থেকে রাজনৈতিকভাবে কোনও ব্যাখ্যা দেওয়া হয়নি। বিচারপতি এম. এ. আজিজ ২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে বিএনপির কাছে মনোনয়ন প্রার্থনা করেছিল, যদিও বিএনপি তাকে মনোনয়ন দেয়নি।

নির্বাচন কমিশন গঠন ও নির্বাচন ব্যবস্থাকে ধ্বংস করেছে বিএনপি। ১৯৭৭ সালে হ্যাঁ-না ভোটে নুরুল ইসলাম কমিশনের মাধ্যমে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়া যেভাবে রাষ্ট্রপতি হয়েছিল, অতঃপর ১৯৯৬ সালে এ কে এম সাদেক কমিশন এবং সর্বশেষ আজিজ কমিশনের কৃতকর্মের কথা নাই বা বলি। ১ কোটি ২৩ লাখ ভুয়া ভোটের কথা জনগণ ভুলে যায়নি।

আওয়ামী লীগই প্রথম নির্বাচন কমিশন গঠন ও নির্বাচন ব্যবস্থার সংস্কার দাবি করেছিল। তার পরিপ্রেক্ষিতে ছবিসহ ভোটার তালিকা প্রণয়ন করা হয়। আওয়ামী লীগ সরকারই নির্বাচন কমিশনকে স্বাধীন করার লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে পৃথক করে। ২০০৯ সালে ‘নির্বাচন কমিশন সচিবালয় আইন’ প্রণয়নের মাধ্যমে এই কমিশনকে তার প্রয়োজনীয় সব প্রশাসনিক, আর্থিক, লেজিসলেটিভ এবং রেগুলেটরি ক্ষমতা প্রদান করা হয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকার গত ১৩ বছরে মোট ৩২টি আইন প্রণয়ন করে নির্বাচন কমিশনের সক্ষমতা বৃদ্ধি করেছে।

এবার আসি নির্বাচন কমিশন নিয়োগ আইন নিয়ে। গুটিকয়েক রাজনৈতিক দল বলছে তড়িঘড়ি করে এ আইন প্রণীত হয়েছে। কথাটি আদৌ কি সত্যি? ২০১২ ও ২০১৭ সালে মহামান্য রাষ্ট্রপতির সঙ্গে অনুষ্ঠিত সংলাপে অংশগ্রহণকারী সব রাজনৈতিক দল নির্বাচন কমিশন আইন প্রণয়নের দাবি জানায় এবং সে সময় বিএনপিও একই দাবি জানিয়েছিল। প্রয়োজনে রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশের মাধ্যমে এই আইন প্রণয়নের দাবি জানানো হয়। ২০১৭ সালে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা বলেছিলেন, আগামী নির্বাচনের আগে এ আইন প্রণয়ন করা হবে। সর্বশেষ রাষ্ট্রপতির সংলাপেও সব রাজনৈতিক দল এই আইন প্রণয়নের কথা বলেছে। কাজেই নির্বাচন কমিশন আইন প্রণয়নের দাবিটি দীর্ঘদিন ধরে উত্থাপিত হওয়ায় এর প্রাক প্রস্তুতিও চলে আসছে বেশ আগে থেকেই। ফলে এ কথা সহজেই প্রতীয়মান হয়, দীর্ঘদিন ধরে নির্বাচন কমিশন আইন প্রণয়নের দাবি জানিয়েও এখন যারা বিরোধিতা করছেন, তাদের অন্য কোনও মতলব রয়েছে। আর যারা আইনটিকে বলছে এটি সার্চ কমিটি আইন, তাদের আইনটি সম্পূর্ণ সজ্ঞানে পড়ার অনুরোধ জানাচ্ছি। এ আইনের একটি প্রক্রিয়া সার্চ কমিটি। তারপরও আসুন জেনে নিই বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নির্বাচন কমিশন নিয়োগ প্রক্রিয়া কী। ভারত, ভুটান, নেপাল ও পাকিস্তান, সবাই সাংবিধানিক কাউন্সিল বা কমিটির মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন গঠন করে, যদিও প্রতিটি দেশে কাউন্সিলের কার্যকারিতা এবং কাঠামোর মধ্যে কিছু পার্থক্য রয়েছে।

ভারত: আমাদের পাশের দেশ ভারত, সেখানকার রাজনৈতিক কৃষ্টি ও সংস্কৃতি আমাদের কাছাকাছি। আয়তন ও জনসংখ্যার বিচারে ভারত বৃহত্তম গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র। সেখানকার নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ অনেকটা আমাদের মতোই। প্রধানমন্ত্রীর দফতরের পরামর্শ অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি নিয়োগ দিয়ে থাকেন। ভারতের সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার টি এন সেশন (১৯৯০ থেকে ১৯৯৬) ভারতের নির্বাচনের সংস্কৃতিতে আমূল পরিবর্তন নিয়ে আসেন। অনেকে তাকে ‘চেঞ্জ মেকার’ বা পরিবর্তনের রূপকার হিসেবে অভিহিত করেন। ভারতের সংবিধানের ৩২৪ অনুচ্ছেদ রাষ্ট্রপতিকে তার বিবেচনার ভিত্তিতে একটি নির্বাচন কমিশন নিয়োগের ক্ষমতা প্রদান করে। কমিটির সদস্য সংখ্যা এবং তাদের মেয়াদ কত হবে তা নির্দিষ্ট করা হয়নি। নির্বাচন কমিশন (নির্বাচন কমিশনারদের চাকরির শর্তাবলি এবং ব্যবসার লেনদেন) আইন ১৯৯১ সিইসি এবং নির্বাচন কমিশনারদের মেয়াদ ছয় বছর বা ৬৫ বছর বয়স পর্যন্ত সীমাবদ্ধ করে। সিইসিকে শুধু সুপ্রিম কোর্টের বিচারকের মতো একই কারণে রাষ্ট্রপতি পদ থেকে বরখাস্ত করতে পারেন। সিইসি রাষ্ট্রপতির কাছে সুপারিশ করলে অন্য নির্বাচন কমিশনারদের বরখাস্ত করা হতে পারে। ইসি প্রার্থীদের নাম প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রিপরিষদ রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠান।

নেপাল: নেপালের সংবিধানের (২০১০)-এর আওতায় কনস্টিটিউশনাল কাউন্সিল গঠন করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী, প্রধান বিরোধী দলের নেতাসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা এর সদস্য। কাউন্সিলে নির্বাচন কমিশনের সম্ভাব্য প্রার্থীদের তালিকা তৈরি করা হয় এবং চূড়ান্ত নিয়োগের জন্য তা রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠানো হয়। রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের পর প্রধান ও বাকি চার জন নির্বাচন কমিশনারকে নিয়োগ দেওয়া হয়। নেপালের ইসি সবসময় তার মেয়াদ শেষে সম্পূর্ণরূপে পুনর্গঠিত হয় না। ধারাবাহিকতা বজায় রাখার জন্য, বিদায়ী ইসির সিনিয়র নির্বাচন কমিশনাররা স্বয়ংক্রিয়ভাবে পরবর্তী কমিশনের সিইসি পদের প্রার্থী হিসেবে সংক্ষিপ্ত তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হন।

ভুটান: সেখানে জাতীয় কাউন্সিলের (সংসদের উচ্চকক্ষ) চেয়ারম্যানের সভাপতিত্বে একটি সাংবিধানিক পরিষদ নির্বাচন কমিশনসহ সাংবিধানিক পদে সব নিয়োগের জন্য দায়ী। কাউন্সিলের সদস্যদের মধ্যে রয়েছেন প্রধানমন্ত্রী, প্রধান বিচারপতি, নিম্নকক্ষের স্পিকার এবং বিরোধীদলীয় নেতা। কাউন্সিল ইসির জন্য যোগ্য প্রার্থীদের নাম সংগ্রহ করে, তাদের পর্যালোচনা করে এবং তারপর ভুটানের রাজার কাছে একটি সংক্ষিপ্ত তালিকা পাঠায়, যিনি তাদের মধ্য থেকে সিইসি এবং নির্বাচন কমিশনারদের নির্বাচন করেন। একটি ইসির মেয়াদের শেষের দিকে, কাউন্সিল নতুন ইসির জন্য প্রার্থীদের মনোনীত করার জন্য পুনরায় মিলিত হয়। এই নিয়োগ পদ্ধতি স্বচ্ছ বলে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রশংসিত।

পাকিস্তান: উপমহাদেশের আরও এক দেশ পাকিস্তানের সংবিধানের অনুচ্ছেদ ২১৩-এর ধারা (২এ) এবং (২বি) নির্বাচন কমিশনের নিয়োগ ও ক্ষমতা স্পষ্ট করে দিয়েছে। কমিশন নিয়োগের জন্য পাকিস্তানের পার্লামেন্টে ১২ সদস্যের একটি সংসদীয় কমিটি রয়েছে। এই সংসদীয় কমিটি গঠনে অর্ধেক সরকারি দল থেকে, বাকি অর্ধেক বিরোধী দল থেকে নেওয়া হয়। প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধী দলের নেতার সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে একটা প্রাথমিক তালিকা প্রস্তুত করে সংসদীয় কমিটিতে পাঠান। প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধী দল ঐকমত্যে আসতে না পারলে দুই জন করে আলাদাভাবে সংসদীয় কমিটিতে নাম দিতে পারেন। সংসদীয় কমিটি সেই তালিকা থেকে রাষ্ট্রপতির কাছে চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য পাঠায়। এখানে ১২ জনের সংসদীয় কমিটির অর্ধেক (৬ জন) সরকারি দলের হওয়ায় প্রধানমন্ত্রীর ‘ইচ্ছারই’ প্রতিফলন ঘটে।

নিউজিল্যান্ড: নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য গভর্নর জেনারেল একক সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন কাকে কাকে অ্যাপয়েন্টমেন্ট করতে হবে। সে অনুযায়ীই তাদের নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়।

অস্ট্রেলিয়া: গভর্নর জেনারেল অব অস্ট্রেলিয়া এককভাবে সিদ্ধান্ত নেন নির্বাচন কমিশনে কারা থাকবেন।

বাংলাদেশ: ইসি আইন বিল ২০২২ অনুযায়ী, সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের একজন বিচারপতির নেতৃত্বে ছয় সদস্যের একটি সার্চ কমিটি ইসির প্রার্থীদের তালিকা রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠাবে। কমিটিতে আরও একজন হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি, কম্পট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেল, বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যান এবং রাষ্ট্রপতি কর্তৃক মনোনীত আরও দুজন ব্যক্তি থাকবেন। বিলের একটি বিধান সার্চ কমিটিকে রাজনৈতিক দলগুলোর নাম জানতে চাওয়ার অনুমতি দেয়, তবে রাজনৈতিক দলগুলো ইসি গঠন প্রক্রিয়ায় সরাসরি জড়িত নয়।

দেশে এর আগের দুই নির্বাচনে সার্চ কমিটি গঠনের জন্য রাজনৈতিক দলগুলো রাষ্ট্রপতির কাছে সুপারিশ করেছিল। সার্চ কমিটি ইসির প্রার্থীদের একটি সংক্ষিপ্ত তালিকা তৈরি করে রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠায়, পরে তিনি তাদের মধ্য থেকে সিইসি ও নির্বাচন কমিশনারদের নিয়োগ দেন।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে, সার্চ কমিটি নিয়ে এত বিতর্ক সৃষ্টির চেষ্টা কেন? ৪ জন ব্যক্তি সংবিধানের প্রতি দায়বদ্ধ, তাদের রাষ্ট্রপতি বা প্রধানমন্ত্রী ইচ্ছা করলেই প্রভাবিত করতে পারবে না। দুজন বিশিষ্ট নাগরিককে রাখা হবে সেটা নিয়ে কথা হচ্ছে। অথচ আইনে কোথাও বলা হয়নি যে সংসদ সদস্যদের মধ্য থেকে তাদের নিয়োগ দেওয়া যাবে না। বিশিষ্ট নাগরিকের ক্রাইটেরিয়া তো বলে দেওয়া হয়নি। এই আইন কেবল রাষ্ট্রপতিকে এই সুযোগটি দিয়েছি। সার্চ কমিটি আরও স্বচ্ছতার জন্য বিধি প্রণয়ন করতে পারবে। অবসরপ্রাপ্ত ব্যক্তি বা সংবিধানের প্রতি দায়বদ্ধ নয় এমন ব্যক্তি আরও ঝুঁকিপূর্ণ নয় কী?  

আমি পরিষ্কার করছি, এই আইনে কোনও ইনডেমনিটি দেওয়া হয়নি। ইনডেমনিটি আর লিগ্যাল কাভারেজ এক কথা নয়। ইনডেমনিটি হলো বেআইনি কাজ করার পরে তাকে প্রটেকশন দেওয়ার জন্য আইন করা। লিগ্যাল কাভারেজ হলো যেকোনও বৈধ কাজ, যেটার লিগ্যাল কাভারেজ ছিল না সেটা তার আওতায় আনা। ইনডেমনিটি কথা শুনলেই হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হয়। ইনডেমনিটি আওয়ামী লীগ দেয় না, এটা বিএনপি দেয়। তারা ইনডেমনিটি দিয়ে আমাদের রক্তক্ষরণ করিয়েছে। ২১ বছর আমাদের অপেক্ষা করিয়েছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যার বিচার করতে। ইনডেমনিটির কথা আর আমরা শুনতে চাই না। আমরা ওই পথে হাঁটিও না। এই আইনে লিগ্যাল কাভারেজ দেওয়া হয়েছে। ২০১২ সালে যে কাজটা করা হয়েছে সেটা থেকে শুরু করে সেটার লিগ্যাল কাভারেজ। এই আইনের মধ্যে কেউ অন্যায় করে থাকলে তাকে প্রটেকশন দেওয়া হয়নি। 

২০০৭-২০০৮-এ তৎকালীন নির্বাচন কমিশন একটি খসড়া আইন তৈরি করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে জমা দিয়েছিল। তৎকালীন সরকার নির্বাচন কমিশনকে জানায়, তারা যেন খসড়াটি পরবর্তী সরকারের কাছে জমা দেয়। আরও যাচাই-বাছাইয়ের পর ২০১১ সালে আরেকটি খসড়া তৈরি করা হয়। যার সব থেকে বড় দুর্বলতা বর্তমান সিইসি সার্চ কমিটির প্রধান হবেন, এর সঙ্গে অন্য সদস্যরা সাংবিধানিকভাবে দায়বদ্ধ নয় এমন ব্যক্তিদের কথা বলেছেন। যোগ্যতা উল্লেখ নেই এবং অযোগ্যতা খুব দুর্বলভাবে উল্লেখ করেছেন। বাকিটা বেশ মিল রয়েছে। সুজনের প্রস্তাবিত খসড়ার সিংহভাগ মিল রয়েছে।

সর্বশেষ বলতে চাই, ‘সুজন’ কিংবা নুরুল হুদা কমিশনের রেখে যাওয়া ‘খসড়া’ এমনকি বিশ্বের অনেক দেশের সিইসি ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশন নিয়োগ আইনের চেয়ে আমাদের আইন শক্তিশালী, পরিপূর্ণ ও অধিক গ্রহণযোগ্য।

৪৮(৩) অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রী ও প্রধান বিচারপতি নিয়োগ ব্যতীত অন্য সকল কাজ প্রধানমন্ত্রীর সাথে আলোচনা করে করবেন, যদিও এখানে বলা নেই রাষ্ট্রপতিকে প্রধানমন্ত্রীর সাথে পরামর্শ করতে হবে না, তারপরেও স্বচ্ছতা ও আরও গ্রহণযোগ্য করার স্বার্থে রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রীর সাথে পরামর্শ নাও করতে পারেন। প্রধানমন্ত্রীর কাছে রাষ্ট্রপতি পরামর্শ নাও নিতে পারেন। এই যে সার্চ কমিটি সবার পরামর্শ নিয়ে ১০ জনের নাম সুপারিশ করবেন, এরমধ্যে থেকে রাষ্ট্রপতি ৫ জনকে নিয়োগ দেবেন, এর বাইরে যাবার রাষ্ট্রপতির সুযোগ নেই।

জাতীয় সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী সব রাজনৈতিক দলের মাননীয় সংসদ সদস্যগণের উত্থাপিত ২২টি সংশোধনী গ্রহণের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের সংসদীয় ইতিহাসে নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে। অর্থ বিল ছাড়া আইন প্রণয়নকালে সব বিরোধী দলের ২২টি সংশোধনী গ্রহণ একটি বিরল ঘটনা। গণতন্ত্রের আসল বিকাশ আওয়ামী লীগ অতীতের মতো এখানেও বিকশিত করেছে। সার্বিক উন্নতির দিকে আরও অগ্রসর হোক আমাদের প্রিয় বাংলাদেশ।

লেখক: ব্যারিস্টার; দফতর সম্পাদক, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ।

/এসএএস/এমওএফ/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
৫ বছর বন্ধ সুন্দরবন টেক্সটাইল, সংকটে শ্রমিকরা
৫ বছর বন্ধ সুন্দরবন টেক্সটাইল, সংকটে শ্রমিকরা
বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গমাতা গোল্ডকাপের ফাইনাল আজ
বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গমাতা গোল্ডকাপের ফাইনাল আজ
টিভিতে আজকের খেলা (২০ এপ্রিল, ২০২৪)
টিভিতে আজকের খেলা (২০ এপ্রিল, ২০২৪)
চাটমোহরে ঐতিহ্যবাহী ঘোড় দৌড় প্রতিযোগিতা শুরু
চাটমোহরে ঐতিহ্যবাহী ঘোড় দৌড় প্রতিযোগিতা শুরু
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ