X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

এই কি আমার বাংলাদেশ?

কাকলী প্রধান
০৭ এপ্রিল ২০২২, ২১:০৯আপডেট : ০৭ এপ্রিল ২০২২, ২১:০৯

কাকলী প্রধান বরেন্দ্রর লাল মাটিতে বর্গা নেওয়া জমি। ফসল ফলাতে সেচের জন্য দরিদ্র কৃষক বিভিন্ন পর্যায়ে ঋণ গ্রহণ করে। জমিতে পানি সেচের জন্যও ঋণ করতে হয় তাদের। অথচ সেচের জন্য নলকূপ অপারেটরের কাছে দিনের পর দিন ধরনা দিয়েও লাভ হয় না বেশিরভাগ দরিদ্র কৃষকের। রাজশাহী জেলার গোদাগাড়ি উপজেলার দরিদ্র সাঁওতাল কৃষক অভিনাথ মার্ডি ও রবি মার্ডি। দীঘ ১২ দিন নলকূপ অপারেটর সাখাওয়াতের কাছে ঘোরাঘুরি করেও সেচের পানি থেকে বঞ্চিত হন তারা। এলাকার জোতদারদের পানি দিতে এদের ভাগ্যে আর পানি জোটে না। ক্রমশ ফসল নষ্ট হওয়ার ঝুঁকি এবং সর্বস্বান্ত হওয়ার ভয় আঁকড়ে ধরে কৃষকদের। মাঠ ফেটে চৌচির হওয়ার আগেই সবুজ ধানের চারা শুকিয়ে মরা। আর সেই সঙ্গে শুকিয়ে চৌচির হতে থাকে কৃষকের বুক। চৈত্রের কাঠফাটা রৌদ্রে নিজের শরীরের নোনা জলটুকু ছাড়া আর কোথাও জলের সন্ধান পায় না এরা। নলকূপ অপারেটর এখন হিরক রাজা। আমি তো সেই সাধারণ হাবাগোবা মানুষ! প্রশ্ন ছুড়বো কার দিকে?

পার্শ্ববর্তী দেশ হলে এতক্ষণে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীসহ আমলা সচিবরা পদত্যাগ করতেন। আমাদের দেশে সেই রাজনৈতিক সংস্কৃতিটি গড়ে ওঠেনি।

আমি নিজেই কৃষক পরিবারের সন্তান। আলবৎ আমি সেসব ফসল শ্রমিকদেরই একজন। কারণ, আমার কৃষক শ্রমিকেরা যে ধান ফলায় তা থেকেই আমি উচ্চশিক্ষা অর্জন করতে পেরেছি। তা থেকেই আমি আমার সারা বছরের অন্ন-বস্ত্রের চাহিদা মেটাই। তাদের ভালো মন্দে তাদের ঘামের ন্যায্যমূল্যের জন্য প্রতি বছর আমিও বুভুক্ষের মতো অপেক্ষা করে থাকি। কারণ, শহুরে জীবনযাপনে আর চাকরির সুবাদে ওই ন্যায্য মূল্যের অধিকার আমার যত না বেশি প্রাপ্য তারচেয়ে অনেক বেশি অধিকার ওই ফসল শ্রমিকদের।

কৃষকের আত্মহত্যা হয়তো নতুন কিছু নয়। শিউরে উঠবার মতোও নয় হয়তো বা। তা না হলে যখন সাধারণ মানুষ হিসেবে মন কেমন করছে ওই হতদরিদ্র মৃত কৃষকের জন্য। যখন বরেন্দ্রর ওই লাল ফসলের মাটি হায় হায় করছে, যে তার জমিনে কোনোদিন আর ওই কৃষকের খরখরে হাত স্পর্শ করবে না। যখন ওই কৃষক পরিবার আছড়ে পড়ছে কান্নায় সবুজ জমিনের ওপর, তখন আমাদের প্রিয় ঢাকা শহর লাল নীল সবুজ আলোয় আলোকিত।

আলোর উন্মাদনায় কৃষকের আত্মহত্যা আর কৃষক পরিবারের আহাজারি হারিয়ে গেলো। এই কি আমাদের বাংলাদেশ! চাল নেই, চুলো নেই। ঋণ আছে স্বপ্ন আছে। দিন আনে দিন খায়। সেচের পানি পায় না, ফসলের ন্যায্যমূল্য পায় না। জীবনের ধূসর স্বপ্নগুলোও নীল আকাশে উড়িয়ে দিয়ে বিষপান করে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে আমার কৃষক!

সবুজ ঝলমলে ধানের ক্ষেতে পানি দিতে না পারলে আর উপায় কী? তাই এই আত্মাহুতি? জাতি কি এতটুকুও লজ্জিত হলো আজ! ধানের দেশ প্রাণের দেশ বাংলাদেশের কৃষকের এই পরিণতি? এক সপ্তাহও কাটেনি। নতুন করে যোগ হলো আরও একটি সংবাদ। কৃষকের সন্তান অন্তু রায়ের জীবনের করুণ পরিণতি! কুয়েট শিক্ষার্থী অন্তু রায় আত্মহননের পথ বেছে নিলো কেন? শোনা যায় হলের ক্যান্টিনে আঠারো হাজার টাকা বাকি পড়ে যায় তার। দরিদ্র বাবার পক্ষে এই বিপুল পরিমাণ টাকা শোধ করা সম্ভব হয়নি। আমরা আমাদের কৃষকের মেধাবী সন্তানদেরও জীবন রক্ষা করতে ব্যর্থ হচ্ছি। এই লজ্জা কার? এই দায় কার? এই অপরাধ কার? পুরো রাষ্ট্রব্যবস্থার মোটা দাগে মরুকরণীয়  কী ইঙ্গিত বহন করে না এই আত্মহত্যা। এটা উন্নয়নের জোয়ারে ভাসা নয়। আমরা পতিত অবস্থায় আছি। আমরা জানি না কবে কে বা কারা আমাদের এই পতিত অবস্থা থেকে তুলে কিছুটা আলোর মুখ দেখাবে। এবং আমরা সেই আলোর মুখ দেখে বুঝবো যে- হ্যাঁ, সত্যি আমরা উন্নতি করছি। এটা বড় লজ্জার এটা বড় দুঃখের। এখানে এই সবুজ বাংলায় কৃষকদের জীবন কি অন্ধকারময়। কী বেদনাপূর্ণ হাহাকারময়। তাও কী কৃষকের দেশে ফসলের দেশে অভিসম্পাত দিয়ে গেলো। এর দায়ভার কি আমি আমরা আমাদের দেশ বহন করতে পারবো? কৃষকের অভিসম্পাত থেকে মুক্ত থাকতে পারবে আমাদের সন্তানরা। কী হবে আগামী দিনের কৃষকের?

প্রতিদিন আত্মাহুতি  দেবে কৃষক এবং কৃষকের পুত্র? আমরা কি তবে প্রতিদিন আমাদের সন্তানদের মুখে তুলে দিচ্ছি অভিশপ্ত সাদা অন্ন? ভাবনাটা সাদামাটা নয়। ভাবনাটা ঘনীভূত হওয়া দরকার। বড় বেশি দরকার।

লেখক: আলোকচিত্রী

/এসএএস/এমওএফ/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
বাগেরহাটে কৃষককে পিটিকে হত্যা
বাগেরহাটে কৃষককে পিটিকে হত্যা
একসঙ্গে ৭৩ নেতাকে বহিষ্কার করলো বিএনপি
একসঙ্গে ৭৩ নেতাকে বহিষ্কার করলো বিএনপি
চীনে রুপা জিতে বিশ্বকাপে বাংলাদেশের সুকান্ত ও নয়ন
চীনে রুপা জিতে বিশ্বকাপে বাংলাদেশের সুকান্ত ও নয়ন
বাংলাদেশ ব্যাংকে সংবাদকর্মীদের প্রবেশে বাধা: উদ্বিগ্ন টিআইবি
বাংলাদেশ ব্যাংকে সংবাদকর্মীদের প্রবেশে বাধা: উদ্বিগ্ন টিআইবি
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ