X
বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪
৫ বৈশাখ ১৪৩১

কুমিল্লায় ইজ্জতের নির্বাচন

রেজোয়ান হক
১৪ জুন ২০২২, ১৯:৩৩আপডেট : ১৪ জুন ২০২২, ২০:৫৪

কুমিল্লায় যে নির্বাচন হতে যাচ্ছে তা নিয়ে ইজ্জতের প্রশ্ন উঠেছে। আওয়ামী লীগের প্রার্থীর পক্ষে প্রভাব বিস্তারের অভিযোগে দলের স্থানীয় এমপি বাহাউদ্দিন বাহারকে নির্বাচন পর্যন্ত এলাকার বাইরে থাকার নির্দেশ দিয়েছিল নির্বাচন কমিশন। তিনি তা অমান্য করে এলাকাতেই রয়েছেন। ভোটের দুদিন আগে গত সোমবার দুই নির্বাচন কমিশনার সেখানে গেলে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করেন— এতে কমিশনের ইজ্জত গেলো কিনা। জবাবে কমিশনাররা বলেন— ‘আইনপ্রণেতা হয়েও আইনভঙ্গ করায় এমপি সাহেবেরই ইজ্জত গেছে।’

এমপি সাহেবের কথায় অবশ্য মনে হয় না তার ইজ্জতহানি হয়েছে। তিনি দাবি করেছেন, ভোটে কারও পক্ষে কাজ করছেন না এবং সংসদ সদস্য হিসেবে এলাকায় তার আরও কাজ আছে। এই যুক্তি দেখিয়ে কমিশনের চিঠি অগ্রাহ্য করে তিনি বরং নিজের ইজ্জত রক্ষা করেছেন বলেই মনে করছেন।

জনাব বাহার নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে টক্কর দেওয়ার এই সাহস দেখাতে পেরেছেন সরকারি দলের এমপি হওয়ার সুবাদে। সে হিসেবে মনে করি ইজ্জতের প্রশ্নটি ব্যক্তি এমপি সাহেবের নয়— নির্বাচন কমিশন ও সরকারের। যা ঘটেছে তাতে দুই পক্ষেরই ইজ্জত গেছে।

বর্তমান নির্বাচন কমিশনের এটিই প্রথম নির্বাচন। তাই আগের কমিশনগুলোর কিছু ব্যর্থতা বা কাজের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত ভাবমূর্তি ফিরিয়ে আনার প্রথম সুযোগও এটি। তাতে কমিশনের পাস করা দরকার ছিল। কিন্তু তাদের একটি সিদ্ধান্ত একজন সংসদ সদস্যের অমান্য করা এবং তারপরও ‘আর কিছু করার নেই’– কমিশনের এমন জবাব তাদের দুর্বলতাই প্রকাশ করেছে।

কমিশনাররা বলেছেন, তাদের আদেশ অমান্য করার দায়ে ওই সংসদ সদস্যর বিরুদ্ধে পরবর্তী কোনও ব্যবস্থা নেওয়ার আইনগত কোনও ক্ষমতা তাদের নেই। এর মানে দাঁড়াচ্ছে এমপি সাহেবকে চিঠি দেওয়ার ক্ষমতাটি অসম্পূর্ণ। কারণ, চিঠি অগ্রাহ্য হলে আর কোনও ব্যবস্থা নেওয়ার নেই।

এমন খণ্ডিত ক্ষমতা ব্যবহার করার আগে কমিশনের ভাবা উচিত ছিল। তাতে এখন অপমান হজম করতে হতো না।

অন্যদিকে, সুষ্ঠু নির্বাচন করতে কমিশনের যদি কোনও সীমাবদ্ধতা থাকে, তবে সরকারের তা পূরণ করার দায়িত্ব নেওয়া উচিত। সুষ্ঠু নির্বাচন করতে নির্বাচন কমিশনকে সম্ভাব্য সব ধরনের সহায়তা দিতে সরকার সাংবিধানিকভাবেই বাধ্য এবং সরকার তা করতে প্রতিশ্রুতিও দিয়েছে।

আলোচ্য ক্ষেত্রে সরকার বা সরকারি দল তাদের দলীয় এমপি বাহার সাহেবকে নির্বাচন কমিশনের নির্দেশ অনুযায়ী কয়েকদিনের জন্য এলাকার বাইরে থাকতে বলতে পারতো। কারও এটা বুঝতে অসুবিধা হওয়ার কথা নয় যে, এমপি সাহেবরা কমিশনের নির্দেশ অমান্য করতে পারলেও সরকার বা দলের নির্দেশ অবশ্যই মানবেন। কারণ দলই তাদের ক্ষমতার উৎস।

এমনটা হলে সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যাপারে নির্বাচন কমিশন এবং সরকার—দুই পক্ষেরই আন্তরিকতা-দায়িত্ববোধ প্রকাশ পেতো। তাদের ইজ্জত যাওয়ার পরিবর্তে বরং বাড়তো।

বতর্মান কমিশন গঠনের সময় মন্ত্রীবর্গ এবং পরে কমিশনাররাও তাদের মেয়াদকালের সকল নির্বাচন সুষ্ঠু, সুন্দর করার নানা প্রতিশ্রুতি, অঙ্গীকার করেছেন। যেহেতু নতুন কমিশন, তাই মানুষ কিছুটা আশাবাদীও। এসব প্রতিশ্রুতি শুরুতেই হোঁচট খেলে এ আশাবাদ ধরে রাখা কঠিন। কমিশনের পক্ষে দায়িত্ব পালন করা আরও কঠিন।

অথচ আগামী সাধারণ নির্বাচন এ কমিশনের অধীনেই হবে এবং সেই নির্বাচনে সকল দলকে আনার চ্যালেঞ্জও রয়েছে। যে দায় নির্বাচন কমিশন এবং সরকার-উভয়েরই।

লেখক: বার্তা প্রধান, মাছরাঙা টেলিভিশন

/এসএএস/এফএ/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
মিয়ানমারে বিদ্রোহী-নিয়ন্ত্রিত শহরে কোণঠাসা জান্তা
মিয়ানমারে বিদ্রোহী-নিয়ন্ত্রিত শহরে কোণঠাসা জান্তা
দুই ভাইয়ের হাতাহাতিতে প্রাণ গেলো বড় ভাইয়ের
দুই ভাইয়ের হাতাহাতিতে প্রাণ গেলো বড় ভাইয়ের
বিখ্যাত চমচমের কারিগর শংকর সাহা মারা গেছেন
বিখ্যাত চমচমের কারিগর শংকর সাহা মারা গেছেন
চীনে মুক্তি, নতুন ইতিহাস গড়বে ‘টুয়েলভথ ফেল’?
চীনে মুক্তি, নতুন ইতিহাস গড়বে ‘টুয়েলভথ ফেল’?
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ