X
শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪
৭ বৈশাখ ১৪৩১

বন্যার্তদের জন্য রাজস্ব বিভাগও অবদান রাখতে পারে

মোহাম্মদ সিরাজ উদ্দিন
১৯ জুলাই ২০২২, ২০:২৩আপডেট : ১৯ জুলাই ২০২২, ২০:২৩

প্রাকৃতিক দুর্যোগের কথা শুনলে এখন শিশুরাও ভয় পায়। তারা বাবা-মাকে জিজ্ঞাসা করে স্কুল বন্ধ থাকবে না তো। মহামারি করোনাভাইরাস আমাদের মনে এতটা দাগ টেনে গেছে এখন অনেকেই আতঙ্কগ্রস্ত। এই আতঙ্কের মূল কারণ হলো– একদিকে নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগে যেমন মানুষ দিশেহারা তেমনি মানবসৃষ্ট যুদ্ধেও শান্তিপ্রিয় মানুষগুলো অসহায়! বিশ্বব্যাপী খাদ্যদ্রব্যের দামেও নেই লাগাম। এর ফাঁকে মুদ্রাস্ফীতি আঘাত এনেছে অজান্তে। কোনও কোনও দেশের মানুষ ‘বেকুব’ হয়ে শুধু ফেল ফেল করে তাকিয়ে থাকে। কীই বা করার আছে তাদের। নেই অর্থ, নেই চেলা-চামচা, নেই মিথ্যা বলার জোর, নেই ক্ষমতা, নেই কোনও সক্ষমতা। নীরবে অসহ্যকর প্রাপ্তিগুলো সহ্য করেই যাচ্ছে। তারা রাতের বেলায় উপাসনালয়ে, ঘরের কোণে বা অতি গোপন কক্ষে ডুকরে ডুকরে কাঁদে! সে কান্না বিধাতা ছাড়া শোনার শক্তি কারও নেই।

এই পরিস্থিতিতে মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা নিয়ে এলো বন্যা। গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী বিগত ৫২ বছরেও এমন পানির প্রবাহ নাকি আর কেউ দেখেননি। তাহলে পরিস্থিতি কতটা ভয়াবহ, তা অনুমান করা কঠিন। এমন শোনা যাচ্ছে দেশে বড় ধরনের বন্যা হওয়া আশঙ্কা রয়েছে। এই পরিস্থিতি বিবেচনায় আমাদের কোমর বেঁধে নামার প্রস্তুতি নিতে হবে। আমরা অতীতে ছোট বড় সব ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় সরকারি ও বেসরকারিভাবে নানামুখী তৎপরতা লক্ষ করেছি। এখন পর্যন্ত বন্যা আক্রান্তদের পাশে সরকারি প্রশাসন ও সামরিক বাহিনীর সদস্য ছাড়া উল্লেখযোগ্য কোনও সর্বাত্মক সহযোগিতার প্রস্তুতির কথা শোনা যাচ্ছে না।

বরং রাজস্ব বিভাগ বড় রেজিস্টার ও হিসাবের খাতা নিয়ে বসে আছে ট্যাক্স কর্তন আদায় করার কাজে। ভ্যাট অফিস থেকে নোটিশ যাচ্ছে নিয়মিত ভ্যাট রিটার্ন জমা দেওয়ার জন্য। করোনা মহামারিতেও আমরা দেখছিলাম সারা দেশের ব্যবসা বাণিজ্য যখন বন্ধ, আমদানি-রফতানি বন্ধ, বন্ধ দৈনন্দিন জীবনযাত্রার আয় রোজকার, বন্ধ সরকারি-বেসরকারি অফিস। কিন্তু বন্ধ ছিল না রাজস্ব বিভাগের অফিস। তারা যেন অতন্দ্র প্রহরী। দেশ রক্ষার মহান সেবায় তারা জড়িয়ে আছে। অফিস খোলা রাখতে হবে, রাজস্ব আদায় করতে হবে। আমি জানি না আজ বন্যা আক্রান্ত বিভাগ ও জেলাগুলোতে কী হচ্ছে। অতীতে বন্যা ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোতে জরুরি ত্রাণ নিয়ে ছুটে গেছেন অনেক নামি মানুষ, শিল্পপতি। ছুটছেন সরকার, প্রশাসন বিভিন্ন সামরিক বেসামরিক ব্যক্তি, এগুলো স্বাভাবিক ঘটনা। এবারও হয়তো অনেকে যাবেন।

কিন্তু ত্রাণের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করে দেশের কর বিভাগ থেকে নিতে পারে লক্ষণীয় কিছু উদ্যোগ। যা হবে দেশের জন্য একটি মাইলফলক। অনেকে বলবেন রাজস্ব আদায় না হলে সরকার ত্রাণ দেবে কোথা থেকে?

এই যুক্তি মোটেও গ্রহণযোগ্য নয়। সরকার কর নিয়ে সার্বিকভাবে মানুষের কল্যাণেই ব্যয় করে। বরং প্রাকৃতিক দুর্যোগে কর অব্যাহতি দিলে দুদিকে লাভ। একদিকে রাজস্ব আদায়ে যে বাড়তি ব্যয় হতো তা করতে হচ্ছে না, অন্যদিকে প্রায় দ্বিগুণ টাকা করদাতাগণ মানুষের কল্যাণে ব্যয় করবে। কর-ছাড় থাকলে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র উদ্যোগগুলো ঘুরে দাঁড়াবে এবং মানুষের জীবনযাত্রা স্বাভাবিক হতে ভূমিকা রাখবে।

এছাড়া এই জাতীয় প্রাকৃতিক দুর্যোগে কর ছাড়ে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ও সরাসরি ৬টি নির্দিষ্ট লক্ষ্যমাত্রায় অবদান রাখবে। যেমন: দারিদ্র্য বিমোচন (লক্ষ্যমাত্রা-১), ক্ষুধামুক্তি (লক্ষ্যমাত্রা-২), স্বাস্থ্য ও কল্যাণ (লক্ষ্যমাত্রা-৩), বিশুদ্ধ পানি ও পয়ঃনিষ্কাশন (লক্ষ্যমাত্রা-৬), সবার জন্য ভালো কাজ এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি (লক্ষ্যমাত্রা-৮), শান্তি ও ন্যায়বিচার (লক্ষ্যমাত্রা-১৬)।

এছাড়া এই উদ্যোগে বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনায় সুশাসন ও জবাবদিহি ও জনকল্যাণের একটা বড় উদাহরণ তৈরি হতে পারে। নিম্নে এই সংক্রান্ত কতিপয় সুপারিশ উপস্থাপন করা হলো–

১/ বন্যাকবলিত এলাকায় যতদিন পানি নেমে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা চালু না হবে; ততদিন সকল প্রকার পণ্যের ওপর ভ্যাট প্রত্যাহার করা;

২/ বন্যাকবলিত মানুষের মাঝে ত্রাণ বিতরণের উদ্দেশ্যে ক্রয়কৃত জরুরি খাদ্যসামগ্রী থেকে ভ্যাট ও আয়করমুক্ত ঘোষণা করা;

৩/  যেসব করদাতা বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করবেন; তাদের ত্রাণের সম্পূর্ণ অর্থ আয়করমুক্ত ও সমপরিমাণ অর্থ কর রেয়াত ঘোষণা করা;

৪/ বন্যায় আক্রান্ত জেলাগুলোতে বন্ধকৃত কলকারখানার মালিকদের বন্ধকালীন সময়ের জন্য আয়করমুক্ত ঘোষণা করা;

৫/ বন্যাকবলিত জেলাগুলোতে আয়কর ও ভ্যাট রিটার্ন দাখিল স্থগিত রাখা;

৬/ যে করদাতা এই প্রাকৃতিক দুর্যোগে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের পাশে দাঁড়াবে পরবর্তী সময়ে আয়কর বিভাগ থেকে তাদের বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে সম্মাননা প্রদান করা ইত্যাদি।

এই উদ্যোগে দেশের শিল্পপতি, সচেতন নাগরিকগণ ও সর্বমহলে আয়কর ব্যবস্থাপনার প্রতি একটা বড় আস্থা তৈরি হবে; যাতে নাগরিকদের একটা বড় অংশ কর দিতে উৎসাহিত হবেন।

লেখক: আয়কর আইনজীবী, ঢাকা

[email protected]

/এসএএস/এমওএফ/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
তাপদাহে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবীদের গাউন পরিধানে শিথিলতা
তাপদাহে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবীদের গাউন পরিধানে শিথিলতা
সারা দেশে প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা
সারা দেশে প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা
উপজেলা নির্বাচন: জেলা-উপজেলায় আ.লীগের সম্মেলন বন্ধ
উপজেলা নির্বাচন: জেলা-উপজেলায় আ.লীগের সম্মেলন বন্ধ
মিয়ানমার-থাই সীমান্তে আবারও বিদ্রোহীদের হামলা, থ্যাইল্যান্ডে পালাচ্ছে মানুষ
মিয়ানমার-থাই সীমান্তে আবারও বিদ্রোহীদের হামলা, থ্যাইল্যান্ডে পালাচ্ছে মানুষ
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ