X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

আমরা কি ফুটবলের দর্শক হয়েই থাকবো?

রেজানুর রহমান
২০ ডিসেম্বর ২০২২, ১৮:২৮আপডেট : ২০ ডিসেম্বর ২০২২, ১৮:২৮

বিশ্বকাপ ফুটবলের উন্মাদনা তো শেষ হয়ে গেলো। আমরা এবার কী নিয়ে বাঁচবো? পুরো একটা মাস বিশ্বকাপ ফুটবলের আনন্দে বিভোর ছিলাম। রাত ৯টা, রাত ১টা এই দুই সময়ের কথা কাউকে মনে করিয়ে দিতে হয়নি। এক মাস বলতে গেলে জেগে ছিল গোটা বাংলাদেশের মানুষ। রাত জেগে টিভির পর্দায় ফুটবল খেলা দেখেছে। পছন্দের দল জিতে গেলে গভীর রাতেও আনন্দ মিছিল করেছে। আর্জেন্টিনা ও ব্রাজিলের সাপোর্টারই এই দেশে বেশি। ব্রাজিল যে সময়টা পর্যন্ত বিশ্বকাপে টিকে ছিল সে সময় পর্যন্ত আনন্দ-উচ্ছ্বাস আর উন্মাদনার মাত্রা ছিল অন্যরকম। যেন দুই দলে বিভক্ত দেশ। একদল ব্রাজিল, অন্য দল আর্জেন্টিনা। আনন্দ আয়োজনের বিশালত্বে কে কাকে ছাড়িয়ে যাবে শুরু হয়েছিল তার প্রতিযোগিতা। ‘লাগে টাকা দিবে গৌরিসেন’ এমন মানসিকতায় শুধু পছন্দের দলকে সাপোর্ট করে লাখ লাখ টাকা ব্যয় করেছেন অনেক সমর্থক গোষ্ঠী। আর্জেন্টিনার চেয়ে ব্রাজিলের সমর্থকরা আনন্দ আয়োজনে এগিয়ে থাকবেন। আবার আর্জেন্টিনার সমর্থক গোষ্ঠীই বা কম যাবে কেন? ওরা ইন্টারকন্টিনেন্টালে পার্টি করেছে। আমরা সোনারগাঁওয়ে পার্টি করবো। এমন আর্থিক প্রতিযোগিতাও তো কম হলো না। ব্রাজিল বিদায় নেওয়ার পর উন্মাদনাটা যেন একটু থেমে যায়। তবে আর্জেন্টিনার সমর্থক গোষ্ঠী পুরো দমে জেগে ওঠে। দেশজুড়ে শুধুই আর্জেন্টিনার জন্য শুভকামনার স্রোত বয়ে যায়।

এ কথা জোর দিয়ে বলা যায়, একমাত্র ফুটবলই পৃথিবীতে সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলা। যে খেলাটি পৃথিবীর মানুষকে একমঞ্চে উপস্থিত করতে সক্ষম। এবার বিশ্বকাপ ফুটবলের ফাইনাল খেলাটি টিভি পর্দায় দেখেছেন বিশ্বের ৪০০ কোটি দর্শক। এতেই বোঝা যায় ফুটবলের কত শক্তি। ফুটবলের জয়রথ একটি দেশের উন্নয়ন-অগ্রযাত্রার শ্রেষ্ঠ বিজ্ঞাপনও বটে।

এখন কথা হলো আমাদের ফুটবলটা কোথায়? একটা সময় আমাদের ফুটবলেও গতি ছিল। আবাহনী, মোহামেডান, ব্রাদার্স ইউনিয়ন, রহমতগঞ্জ, ওয়ারী এই নামগুলো তো বেশ জনপ্রিয় ছিল। ঢাকা স্টেডিয়ামে আবাহনী, মোহামেডানের ফুটবল খেলা দেখার জন্য ঢাকার ব্যস্ত রাস্তা ফাঁকা হয়ে যেত। স্টেডিয়ামে ঢোকার টিকিট পাওয়া নিয়ে দেখা দিতো শঙ্কা। সে কারণে খেলা শুরুর কয়েক ঘণ্টা আগেই দর্শক টিকিট কাউন্টারের সামনে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে যেতো। সুযোগ বুঝে কালোবাজারিরা খেলার টিকিট বিক্রি করতো চড়া দামে। তবু টিকিট চাই-ই চাই। আবাহনী-মোহামেডানের খেলার দিন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে আশঙ্কায় বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হতো। এই দেশেও ফুটবল খেলোয়াড়রা জনপ্রিয় তারকার মর্যাদা পেয়েছিলেন। তাদের কারও কারও ভিউকার্ড বিক্রি হয়েছে চড়া দামে। ফুটবল খেলোয়াড়রা কোনও অনুষ্ঠানে হাজির হলে তাদের দেখার জন্য উৎসাহী মানুষের ভিড় লেগে যেতো। আর এখন, দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, দেশের অনেক মানুষ বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের অধিনায়কের নামও জানে না। অথচ সবাই মেসি, নেইমার, রোনালদো, এমবাপ্পেকে চিনে। তারা বিশ্বখ্যাত ফুটবল তারকা। পৃথিবীর সব মানুষ তাদের চিনবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু আমাদের জাতীয় দলের অধিনায়ককে কি দেশের মানুষও চিনবে না? আমাদের ফুটবল জেগে থাকলে নিশ্চয়ই এমন দুর্গতির কথা লিখতে হতো না।

এখন প্রশ্ন হলো, বিশ্বকাপ ফুটবলের উন্মাদনা তো শেষ। রাত জেগে খেলা দেখার কাহিনিও শেষ। এই যে আমরা রাত জেগে অন্যের ফুটবল খেলা দেখলাম, হাত তালি দিলাম, পছন্দের দলের পতাকা টাঙাতে গিয়ে গাছ থেকে পড়ে অনেকের মৃত্যু হলো, বিজয় মিছিল করতে গিয়েও কেউ কেউ প্রাণ হারালেন। যদি বলি সবই ঠিক আছে, তাহলেও প্রশ্নটা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়ায়– আমাদের ফুটবলটা আসলে কোথায়? আমরা কি শুধুই ফুটবলের দর্শক হয়ে থাকবো? অন্যের জন্য হাততালি দেবো, প্রাণ বিসর্জন করবো, এটাই কি আমাদের ফুটবলের নিয়তি? এই যে একটা মাসজুড়ে গোটা পৃথিবীতে ফুটবল উৎসব হলো, এই উৎসবকে ঘিরে আমরা কি দেশের ফুটবলের একটা ভবিষ্যৎ নিয়ে আলোচনা করতে পারতাম না? নিজে খেলবো, অন্যের খেলাও দেখবো– এমন কর্মসূচিও নিতে পারি। এর আগেও আমি একটা প্রস্তাব তুলে ধরেছিলাম। আজ আবারও প্রস্তাবটি তুলে ধরতে চাই। বিশ্বকাপ চলাকালেই আমরা এই উদ্যোগটি নিতে পারি। দেশের জনপ্রতিনিধিরা নিজ নিজ এলাকায় একটি ফুটবল টুর্নামেন্টের আয়োজন করলে ৩০০টি স্থানে ফুটবল টুর্নামেন্ট হয়ে যায়। প্রতি টুর্নামেন্ট থেকে যদি একজন শ্রেষ্ঠ খেলোয়াড় ও একজন সেরা গোলকিপার বাছাই করা যায় এবং তাদের ঢাকায় এনে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা যায় তাহলে বোধকরি ভবিষ্যতের জন্য চমৎকার অনেক খেলোয়াড় পেয়ে যাবো আমরা।  

বাংলাদেশের সিটি করপোরেশনগুলোও এমন উদ্যোগ নিতে পারে। আবারও সেই স্বপ্নটার পুনরাবৃত্তি করছি। ৩০০ আসনে ৩০০টি ফুটবল টুর্নামেন্ট। ৩০০ জন সেরা খেলোয়াড় ও ৩০০ জন সেরা গোলরক্ষককে বাছাই করে ঢাকায় এনে দীর্ঘমেয়াদি প্রশিক্ষণের উদ্যোগ নিলে আমাদের ফুটবলেরই একটা গতি হবে বলে আমার বিশ্বাস।

জানি না আমার এই প্রস্তাবনা সংশ্লিষ্টদের কাছে গুরুত্ব পাবে কিনা। তবে এ কথা সত্য, আমাদের ফুটবলের জন্য একটা সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য দরকার। আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অনেক দুঃখ করে বলেছেন, আমি বিশ্বকাপের খেলা দেখি। তখন খুব আফসোস হয় এই ভেবে, আমাদের দেশ বিশ্বকাপে নাই। কেন নাই আমি এর কোনও কারণ খুঁজে পাই না।

যাহোক, এই যে বিশ্বকাপ ফুটবল উৎসব শেষ হয়ে গেলো, এরপর আমাদের সুদূরপ্রসারী একটা পরিকল্পনা জরুরি। বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের নিশ্চয়ই এমন কোনও পরিকল্পনা রয়েছে।

আমরা আর শুধু ফুটবলের দর্শক হয়ে থাকতে চাই না। বিশ্বকাপের মঞ্চে খেলতে চাই। একটা সময় মরক্কো আর বাংলাদেশের ফুটবল র‌্যাংকিং প্রায় কাছাকাছি ছিল। সেই মরক্কো এবার ফুটবলের বিস্ময় হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। মরক্কো পারলে বাংলাদেশ কেন পারবে না? এর জবাব কার কাছে চাইবো?

লেখক: কথাসাহিত্যিক, নাট্যকার, সম্পাদক- আনন্দ আলো। 

/এসএএস/এমওএফ/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
আরও কমলো সোনার দাম  
আরও কমলো সোনার দাম  
 ১ পদে ২৩৮ জনকে চাকরি দেবে ভূমি মন্ত্রণালয়, নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ
 ১ পদে ২৩৮ জনকে চাকরি দেবে ভূমি মন্ত্রণালয়, নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ
চুয়াডাঙ্গার তাপমাত্রা ৪২.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস
চুয়াডাঙ্গার তাপমাত্রা ৪২.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস
৬ মামলায় জামিন পেলেন বিএনপি নেতা গয়েশ্বর
৬ মামলায় জামিন পেলেন বিএনপি নেতা গয়েশ্বর
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ