X
বুধবার, ০১ মে ২০২৪
১৭ বৈশাখ ১৪৩১

মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতিলগ্নে প্রশিক্ষণ ও অস্ত্র সংগ্রহ

মোস্তফা হোসেইন
২৬ মার্চ ২০২৩, ০০:১৯আপডেট : ২৬ মার্চ ২০২৩, ০০:১৯

১৯৭১ সালের ৯ মাসেই কি মুক্তিযুদ্ধের শুরু এবং শেষ? কারও কারও কথায় মনে হতে পারে, ২৭ মার্চের আগে কারও মাথায় আসেনি সশস্ত্র যুদ্ধ  করতে হবে। অথচ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সশস্ত্র যুদ্ধের প্রস্তুতি বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের সুস্পষ্ট নির্দেশনা দিয়েছেন অনেক আগেই। যারা বলেন ৭ মার্চের ভাষণেই তিনি সশস্ত্র যুদ্ধের ইঙ্গিত দিয়েছেন তারা বোধ করি আংশিক তথ্য দিয়ে থাকেন। অনেক আগে থেকেই ছিল প্রস্তুতি এবং যোগাযোগ। আসলে তার নির্দেশনা শুধু প্রশিক্ষণই নয়, গোলা-বারুদ সংগ্রহের বিষয়ও স্পষ্ট ছিল। এমন দুটি তথ্য জানতে পেরেছি বঙ্গবন্ধুর দুই রাজনৈতিক কর্মী যথাক্রমে অধ্যাপক আবু সাইয়িদ ও ১৯৭২ সালের এমসিএ অ্যাডভোকেট আমির হোসেন এর লেখায়।

তাদের লেখায় স্পষ্ট দেখা যায়– বঙ্গবন্ধু ভারতের সঙ্গে যোগাযোগ করে গোলাবারুদ আনার মতো ব্যবস্থা করে রেখেছিলেন।

অধ্যাপক আবু সায়িদ-এর বইয়েও তার স্পষ্ট বিবরণ আছে।  ‘গণযুদ্ধ করতে হবে’ উপশিরোনামে তিনি লিখেছেন, ‘শপথ অনুষ্ঠানের কয়েকদিনের মধ্যে ( এমপিএ ও এমএনএ-দের) আমি এলাকায় চলে যাই। সম্ভবত ফেব্রুয়ারি মাসের মাঝামাঝি। আমি তখন বেড়া বাজারে অবস্থিত পাট ব্যবসায়ী ও সমাজসেবক মাঙ্গিলাল বাবুর গদিঘরে বসে দেশের উদ্বেগজনক পরিস্থিতি নিয়ে আলাপ করছিলাম। হঠাৎ দেখি সেখানে আব্দুর রাজ্জাক ভাই (স্বেচ্ছাসেবক লীগের প্রধান) তিনি বললেন, বঙ্গবন্ধু বলেছেন জয়পুরহাটের পাঁচবিবি যেতে। কিছুই বুঝলাম না, কেন যেতে হবে সেখানে। বললাম, আপনি যান। রাজ্জাক ভাই বললেন, দেশ স্বাধীন করতে হবে গণযুদ্ধ করে, বঙ্গবন্ধু তাই ভাবছেন। এই কথা শোনার পর রাজ্জাক ভাইয়ের সঙ্গে জিপে চড়ে বসি। এরপর শাহজাদপুরের এমএ আব্দুর রহমানকে খুঁজে বের করা হলো। আমরা একসঙ্গে পাঁচবিবির দিকে রওনা হলাম। মাঝখানে রাজ্জাক ভাই আমাদের জয়পুরহাটে আবুল হাসনাত এমপিএর বাড়িতে রেখে হিলি বর্ডারের দিকে একই চলে গেলেন। ওখান থেকে খুব বেশি দূরে নয় হিলি বর্ডার। ঘণ্টা দুই পরে তিনি ফিরে আসেন। গাড়িতে রাজ্জাক ভাই বললেন, কিছু এক্সপ্লুসিভ আসবে। নগরবাড়ী ঘাটে রাখতে চাই।

রাজ্জাক ভাইসহ নগরবাড়ী ঘাটে আসি। ওখানে বৃন্দাবন বাবুর দোতলা ভবনের নিচতলায় এক্সপ্লুসিভ রাখার কথা হয়। বুঝতে পারলাম বঙ্গবন্ধু পরিকল্পিতভাবে স্বাধীনতার লক্ষ্যপাণে এগিয়ে যাচ্ছেন। রাজ্জাক ভাই বললেন সিরাজগঞ্জের এমপিএ ডা. আবু হেনার সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে। পরে জেনেছি আবু হেনাকে কলকাতায় পাঠানো হয়েছিলো চিত্তরঞ্জন সুতার এমপিএর কাছে। বঙ্গবন্ধু তা জানতেন।

২ ফেব্রুয়ারি ভারতীয় বিমান হাইজ্যাক এবং পরবর্তীতে সিভিলিয়ান উপদেষ্টা কমিটি ভেঙ্গে দেওয়ার পর বঙ্গবন্ধু একতরফা স্বাধীনতা ঘোষণার ফলাফল সম্পর্কে চিন্তা করছিলেন।’

( রাজনীতিবিদদের স্মৃতিতে বঙ্গবন্ধু, সম্পাদক- মোস্তফা হোসেইন, পৃষ্ঠা ৯০-৯১)

যুদ্ধ প্রস্তুতি নিতে তিনি শুধু মৌখিক নির্দেশ দিয়েই ক্ষান্ত হননি। যুদ্ধ শুরু হলে প্রতিরোধের ব্যবস্থাও করেছিলেন তার প্রমাণ পাওয়া যায়। পাবনার রণেশ মৈত্রও স্মৃতিচারণে লিখেছেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশে তিনি মার্চ মাসে কলকাতায় চিত্তরঞ্জন সূতারের সঙ্গে দেখা করে অস্ত্র সংগ্রহের চেষ্টা করেন। একইভাবে  দেখা যায় বঙ্গবন্ধু সীমান্ত এলাকায় তার বিশ্বস্ত কর্মীদের ভারত থেকে অস্ত্র আনার নির্দেশনা দিয়েছেন। সঙ্গত কারণেই বোঝা যায়- যুদ্ধ শুরু হওয়ার আগে নিশ্চয়ই তিনি কোনও না কোনও সময় ভারত সরকারের সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনা ও সহযোগিতার নিশ্চয়তা পেয়েছিলেন।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কুমিল্লা সীমান্ত এলাকাতেও তার বিশ্বস্ত কর্মী অ্যাডভোকেট আমির হোসেন এমপিএ-কে ভারত থেকে অস্ত্র আনার বিষয়ে নির্দেশ প্রদান করেন। এবং অ্যাডভোকেট আমির হোসেন সেই নির্দেশনা অনুযায়ী ভারত থেকে অস্ত্র আনার প্রাথমিক কাজও সম্পন্ন করেন। এই বিষয়ে তিনি স্মৃতিচারণ করেন–

‘২৫ মার্চ ও তার পরবর্তী ঘটনা

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের সাথে তাহার ৩২ নং ধানমন্ডির বাসায় ১৬ মার্চ সকাল ১০ টায় কথা হইয়াছিল যে, কিভাবে ভারত হইতে ত্রিপুরা বর্ডার দিয়া অস্ত্রশস্ত্র বাংলাদেশে আনা যায়। আমি তাহাকে বলিয়াছিলাম, বড় বড় ট্রাকের ভিতর অস্ত্র রাখিয়া নৌকা যোগে ত্রিপুরা সীমান্ত হইতে বাংলাদেশে আনয়ন করা যাইবে। তিনি বলিয়াছিলেন যে, প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার সাথে আলোচনা দীর্ঘায়িত করিয়া মে মাস পর্যন্ত নেয়ার চেষ্টা করিবেন। ইতিমধ্যে আখাউড়া হইতে সালদানদী পর্যন্ত সীমান্ত আওয়ামী লীগের যেসব কর্মী আছে তাহাদের সাথে আলোচনা করিয়া তাহাদের সহযোগিতা চাইতে। আমি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের কথা গঙ্গাসগরের রফিক, আখাউড়ার লীল মিঞা ও নাজির হোসেনের সহিত প্রাথমিকভাবে আলোচনা করি। তাহার আমার সাথে এ ব্যাপারে কাজ করার ইচ্ছা প্রকাশ করে। আমি তাহাদের বিশ্বাসী সীমিত সংখ্যক কর্মীর সাথে আলোচনা করিতে অনুরোধ করি। তাহাদের কাছে আমি বঙ্গবন্ধুর নাম বলি নাই। আমি শুধু তাহাদের জানাই যে, এইরূপ ঘটনা ঘটিতে পারে। বঙ্গবন্ধু আমাকে বলিয়াছিলেন যে, প্রাথমিকভাবে কিছু কাজ করিয়া মার্চ (১৯৭১) এর শেষভাকে তাহাকে জানাইতে। তাহার কথানুযায়ী আমি প্রস্তুতি নিয়েছিলাম।’ (আমির হোসেন স্মরণগ্রন্থ, সম্পাদক-মামুন সিদ্দিকী,পৃষ্ঠা- ১৬৩-১৬৪)

অ্যাডভোকেট আমির হোসেন তার নিজ নির্বাচনি এলাকায় দলীয় নেতা-কর্মীদের সংগঠিত করায় উদ্যোগী ভূমিকা পালন করেন। তার নির্বাচনি এলাকার কুমিল্লা জেলার তৎকালীন বুড়িচং থানা যুদ্ধ প্রস্তুতি সম্পর্কে তৎকালীন থানা আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক বাহিনীর প্রধান সৈয়দ আব্দুল কাফি এবং স্বেচ্ছাসেবক বাহিনীর অন্যতম নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা আমীর খানের স্মৃতিচারণের ভিত্তিতে তৎকালীন বুড়িচং থানা (বর্তমান বুড়িচং ও ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা) এলাকার মুক্তিযুদ্ধ প্রস্তুতি সম্পর্কে জানা যায়।-

বুড়িচং-ব্রাহ্মণপাড়ায় রাজনৈতিক কাঠামোগত পরিবর্তন আসে পঞ্চাশের দশকে। ষাটের দশকে এসে তা বিস্তৃতি লাভ করে। এই সময় সাংগঠনিকভাবে যেমন দলগুলোর ভিত্তি তৈরি হয়, তেমনি রাজনৈতিক নেতাও তৈরি হয়। পাকিস্তান সৃষ্টিকালে এখানকার সাধারণ মানুষের মধ্যে রাজনৈতিক আগ্রহ ওইভাবে তৈরি হয়নি। সেই শূন্যতা পূরণ করতে গত শতাব্দির পঞ্চাশের দশকে এক ঝাঁক তরুণ রাজনীতিতে প্রবেশ করেন।

এই তরুণেরা মুসলিম লীগের প্রতিপক্ষ হিসেবে আবির্ভূত হন এবং একসময় বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনকে বেগবান করেন, যা একসময় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরোধী সশস্ত্র সংগ্রামে পরিণত করে। ষাটের দশক থেকে বুড়িচং-ব্রাহ্মণপাড়ার রাজনৈতিক নেতৃত্বদানকারীদের মধ্যে অন্যতম চান্দলা গ্রামের সৈয়দ আব্দুল কাফি।  তার সঙ্গে আলাপ হয় মুক্তিযুদ্ধে বুড়িচং-ব্রাহ্মণপাড়ার প্রস্তুতি এবং প্রাসঙ্গিক বিষয়ে। উল্লেখ্য যে আগরতলা সমঝোতা (ষড়যন্ত্র খ্যাত) মামলা চলাকালে বেশ কিছু নেতা এই অঞ্চলের রাজনীতিতে বিশেষ ভূমিকা রাখলেও এই সময় তাদের প্রায় সবাই প্রয়াত।

ষাটের দশকের উত্তাল রাজনীতির পূর্বক্ষণেই তার রাজনীতিতে প্রবেশ। এবং পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে মাদারে মিল্লাত মিস ফাতেমা জিন্নাহ’র পক্ষে কাজের মাধ্যমে  সৈয়দ আব্দুল কাফি বুড়িচং-ব্রাহ্মণাপাড়া এলাকায় বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হন।

১৯৬৫ সালের পাকিস্তান-ভারত যুদ্ধ এবং গণতন্ত্র নির্বাসনের কারণে এবং পূর্ব বাংলার প্রতি পাকিস্তানিদের বিমাতাসুলভ আচরণের কারণে এই অঞ্চলের মানুষ মুসলিম লীগ ও আইয়ুব খানের প্রতি ছিল খুবই বিরক্ত। পাকিস্তানের সামরিক সরকার প্রধান ফিল্ড মার্শাল আইয়ুব খান বুঝতে পারলেন, সাধারণ নির্বাচন হলে তিনি বিজয়ী হতে পারবেন না। তাই অভিনব এক নির্বাচনি পদ্ধতি তিনি আবিষ্কার করেন। নাম দেন ব্যাসিক ডেমোক্রেসি। ব্যাসিক ডেমোক্রেসির সূত্র অনুযায়ী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ভোটার হবেন শুধু ইউনিয়ন পরিষদ সদস্যগণ। উদ্দেশ্য ছিল প্রতিটি ভোটারকে তিনি কিনে নেবেন। দুই হাতে টাকা খরচের পরিকল্পনা করেন তিনি। ইউনিয়ন পরিষদের ভোটারদের তিনি উপঢৌকন দিলেন নগদ টাকায়। তার উদ্দেশ্য সফলও হয়। কিন্তু বুড়িচং এলাকায় ভিন্নতর রেকর্ড তৈরি হয়। আইয়ুব খানের কাছ থেকে টাকা নিলেও বুড়িচং থানার ১৫৬ ভোটের মধ্যে ১০৩ ভোট পেয়ে যান মিস ফাতেমা জিন্নাহ। পাকিস্তানের লৌহমানব হিসেবে পরিচিত ফিল্ড মার্শাল আইয়ুব খানের বিরুদ্ধে বুড়িচংবাসীর এই ঐক্য সমুন্নত ছিল বাংলাদেশ আন্দোলনেও। তারা মুসলিম লীগকে প্রত্যাখ্যান করেছে বারবার।

১৯৬৯ সালে দেশব্যাপী গণআন্দোলন শুরু হয়। বুড়িচং থানা এই আন্দোলনের পথে চলে গিয়েছিলো আইয়ুব খানের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনকালেই। তবে সাংগঠনিক পরিবর্তন আসে এই লক্ষ্য অর্জনের জন্য। বিরোধী দলীয় জোটের প্রয়োজনীয়তা তখন কেটে যায়। অ্যাডভোকেট আমীর হোসেনের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক কাঠামো তৈরি হয়। মুলফত আলী ভুঞা, বাশার চেয়ারম্যান, আব্দুল গফুর সহসভাপতি, সামসুদ্দীন আহমেদ সাংগঠনিক সম্পাদক মনোনীত হলেন। সাধারণ সম্পাদক ছিলেন সৈয়দ আব্দুল কাফি। আরও ছিলেন গোপালনগরের ছিদ্দিকুর রহমান, দুলালপুরের বৈরাম খান পাঠান, পশ্চিম বুড়িচং এর জয়নাল আবেদীন ভুঞা এবং আব্দুল জলিল প্রমুখ।

১৯৬৯ সালের গণআন্দোলনে শেখ মুজিবুর রহমান মুক্তি পেলেন এবং তিনি বঙ্গবন্ধু উপাধি লাভ করেন। ব্যাপক জনপ্রিয় নেতা হিসেবে তিনি ইতোমধ্যে সারা বাংলায় পরিচিতি পেলেন। আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে তিনি দলকে সুসংগঠিত করলেন। আন্দোলন মাধ্যমে আবার সাধারণ মানুষের ভোটাধিকার আদায় করে নিলেন। ফলে আইয়ুব-ইয়াহিয়ার নয়-ছয় করার পথ বন্ধ হয়ে গেলো।

এলো ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচন। প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেলেন অ্যাডভোকেট আমীর হোসেন। এর আগেই প্রতিটি ইউনিয়নে দলীয় কর্মকাণ্ড বিস্তৃত হয়। বুড়িচং থানা আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ প্রতিটি  ইউনিয়নে জনসভা করতে থাকেন। মানুষকে উদ্বুদ্ধ করতে থাকেন। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে কসবা-বুড়িচং নির্বাচনি এলাকায় জাতীয় পরিষদের সদস্য হিসেবে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেলেন অ্যাডভোকেট সিরাজুল হক বাচ্চু মিয়া, মুসলিম লিগের নেতা ও পাকিস্তানের সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী তোফাজ্জল আলী ও জামায়াতে ইসলামি নেতা আড়াইবাড়ির পীর গোলাম হাক্কানী। প্রাদেশিক পরিষদে আব্দুর রউফ মোক্তার,অ্যাডভোকেট আমীর হোসেন (২) সহ কয়েকজন অংশগ্রহণ করেন।

জাতীয় পরিষদ নির্বাচনে বিপুল ভোট পেয়ে নির্বাচিত হলেন অ্যাডভোকেট সিরাজুল হক এবং বুড়িচং প্রাদেশিক পরিষদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হলেন অ্যাডভোকেট আমীর হোসেন। নির্বাচনি প্রচারণায় আওয়ামী লীগের কর্মী সমর্থকদের মধ্যে যে ঐক্যসূত্র তৈরি হয় তাই তাদের ১৯৭১ সালে মুক্তির লড়াইয়ে উদ্বুদ্ধ করে।

ঢাকায় রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ভাষণের পর এই এলাকার মানুষের মধ্যেও জাগরন তৈরি হয়। বঙ্গবন্ধুর নির্দেশনা অনুযায়ী এই অঞ্চলেও ঘরে ঘরে দুর্গ তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়। তার আগে সৈয়দ আব্দুল কাফি বুড়িচং থানা আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক বাহিনীর প্রধান হিসেবে দায়িত্ব লাভ করেন। জননেতা এবং কেন্দ্রীয় আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক বাহিনীর প্রধান আব্দুর রাজ্জাক ততদিনে সারাদেশে চূড়ান্ত লড়াইকে সামনে রেখে আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক বাহিনীকে শক্তিশালী সংগঠনে দাঁড় করিয়েছেন। আব্দুর রাজ্জাকের নির্দেশিত পথে প্রতিটি ইউনিয়নে স্বেচ্ছাসেবক বাহিনীর সাংগঠনিক কাঠামো গড়ে ওঠে। বুড়িচং থানায়ও আওয়ামী লীগের অঙ্গসংগঠন হিসেবে আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী প্রতিটি ইউনিয়নে তাদের শাখা গঠন করে। চান্দলা ইউনিয়নে সুবেদার আলী আজম, কল্পবাসে আমীর খান, মাধবপুরে জানু মিয়া চেয়ারম্যান, বৈরাম খান পাঠান দুলালপুরে, সাহেবাবাদে করিম ডাক্তার, বুড়িচং-এ তাহের ডাক্তার, পয়াতের আব্দুল জলিল, পশ্চিম সিং এর ডাক্তার শফিকুর রহমান,নিমসারের ওহাব মাস্টার ও আবু সাঈদ, বাকশিমুলের সৈয়দ হোসেন এভাবে পনেরটি ইউনিয়নেই স্বেচ্ছাসেবক বাহিনীর হয়ে তরুণদের প্রশিক্ষণ দানের ব্যবস্থা করা হয়। তরুণদের বোঝানো হয়, যে কোনও পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে হবে। তবে প্রশিক্ষণের ধরন দেখে সবাই বুঝতে পারে, শিগগিরই পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে তাদের অস্ত্র হাতে নিতে হবে।

সৈয়দ আব্দুল কাফি যুদ্ধ শুরু হলে ভারতে চলে যান। সেখানে গোমতী যুবশিবিরে রাজনৈতিক উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ভারতে আসার আগে তিনি তরুণদের প্রশিক্ষণে পাঠানোর কাজে নিযুক্ত ছিলেন।

ওই সময় বাংলাদেশের গ্রামে গ্রামে তরুণ সমাজ বাঁশের লাঠি হাতে নিয়ে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করতে শুরু করে। এই লেখকও তার নিজ গ্রাম কুমিল্লা জেলার চান্দলায় সুবেদা আলী আজমের অধীনে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। এটা মার্চ মাসের কথা। বীর মুক্তিযোদ্ধা আমির খানও তার নিজ গ্রাম বর্তমান ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার কল্পবাস গ্রামে প্রায় ৩০০ তরুণকে প্রশিক্ষণ প্রদান করেন। যাদের অনেকেই পরবর্তীকালে ভারত থেকে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে মুক্তিযুদ্ধে বীরত্বের সঙ্গে লড়াই করেছেন। সুবেদার আলী আজমের অধীনে প্রশিক্ষণ গ্রহণকারীদেরও অনেকেই মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছেন।

প্রতিটি এলাকার মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি বিষয়ে তেমন একটা তথ্য সংগ্রহ হয়নি। কিংবা তাদের বিষয়ে বই প্রকাশ হয়েছে বলে মনে হয় না।    

লেখক: সাংবাদিক, শিশুসাহিত্যিক ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গবেষক।

/এসএএস/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
বরগুনায় দুই সাংবাদিকসহ পাঁচ জনের বিরুদ্ধে সাইবার ট্রাইব্যুনালে মামলা
বরগুনায় দুই সাংবাদিকসহ পাঁচ জনের বিরুদ্ধে সাইবার ট্রাইব্যুনালে মামলা
ভিনিসিয়ুসের জোড়ায় প্রথম লেগে বায়ার্নকে জিততে দেয়নি রিয়াল
চ্যাম্পিয়নস লিগ, সেমিফাইনালভিনিসিয়ুসের জোড়ায় প্রথম লেগে বায়ার্নকে জিততে দেয়নি রিয়াল
দুই মাস পর ইলিশ ধরা শুরু
দুই মাস পর ইলিশ ধরা শুরু
ঢাকা সাব এডিটরস কাউন্সিলের সভাপতি অনিক, সম্পাদক জাওহার
ঢাকা সাব এডিটরস কাউন্সিলের সভাপতি অনিক, সম্পাদক জাওহার
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ